চাই যাকাতের সুষম ও কল্যানকর বন্টন

লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ২৩ জুলাই, ২০১৩, ১০:৫৫:৩৪ সকাল

বেশ কযে়ক বছর যাবত মাহে রমযানের শেষ দিকে পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয় যাকাতের কাপড় আনতে গিযে় পদদলিত হযে় একাধিক লোকের প্রানহানী ও আহত হওয়ার মতো চমকপ্রদ খবর। মনে প্রশ্ন জাগে যাকাতের কাপড় কি , এবং কেন সেটি আনতে গিযে় অমন মৃত্যূ বরণ? প্রথমত জানতে হবে যাকাত হিসাবে কাপড় দেয়া বিধান নাকি অন্য কোন কল্যাণকর উপাযে় যাকাত দেওয়ার নিয়ম।

ইদানিং কালে আমাদের দেশের কথিত ধনীরা সংবাদের শিরোনাম হওয়ার সস্তা খাযে়সে যাকাত প্রদানের নামে কথিত শাডি় কিংবা লুঙ্গি বিতরন করে আসছেন। হুজুগে থাকা গরীব শ্রেনির লোকেরাও তা আনতে গিযে় হুমডে় পড়ছে। আবার তাড়াহুডে়া করতে গিযে় মৃত্যূকেও আলিঙ্গন করছে। এদিকে তথা কথিত ধনী বাবুরা তাদের দামী অট্টালিকার ঝুল বারান্দায় দাঁডি়যে় স্বস্ত্রীক এই রঙ্গ প্রাণ ভরে উদযাপন করছেন।

যাকাতের পরিমান নির্ধারন ও যাকাত কাদের দেয়া যাবে কিভাবে দিতে হবে তা অত্যন্ত পরিষ্কার ও সাবলীল ভাষায় পবিত্র কোরআন হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামি বইতে দেয়া আছে। এ ব্যাপারে দেশের বড় বড় আলেমরা প্রতিযি়তই বক্তৃতা বিবৃতি দিযে় যাচ্ছেন। সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই।

বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র নয়, তাই কেন্দ্রীয় ভাবে সকলের যাকাতের পরিমান নির্ধারন ও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। যদিও দেশের বেশ কযে়কটি বেসরকারি সংস্থা নামে মাত্র তা করছে বটে কিন্তু বন্টনের বেলায় তা অদৃশ্য থেকে যাচ্ছে।

লেখার শুরুর দিকে কাপড় বা লুঙ্গিকে কথিত বলার কারন হল যাকাত প্রদানের নামে যে সব শাডি় বা লুঙ্গি দেয়া হয় গডে় প্রতি পিসের দাম পডে় ১০০ টাকা বা তারও সামান্য বেশি। এসব শাডি় লু্িঙ্গ পরিধান করাতো দুরের কথা কাঁথাও সেলাই করা কঠিন হযে় পডে়। শাডি় দেয়ার মাধ্যমে গরীবদের সাথে হেয়ালি করা হয়। শাডি়র দাম কম হওয়ায় প্রকৃত যাকাতের নিসাব অনুযায়ী নির্ধারিত টাকার শাডি়ও কেনা হয় না। দেখা যায়, যাকাত আসলো দুই লক্ষ টাকা কিন্তু শাডি় দিল আশি হাজার টাকার। বেশির ভাগ সময়ই এসব শাডি় অর্ডার কিংবা লট হিসাবে নিলামে কেনা হয়।

যাকাত প্রদানের নামে এই নাটক রোমন্থন করে তথা কথিত ধনীরা কিসের আনন্দ পায় তা বোঝা মুশকিল। যাকাত প্রদানের এ উদ্ভট পদ্ধতি কি যাকাত প্রদানের প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল করে নাকি সমাজে ধনী গরীবের বিস্তর ফাঁরাক নিযে় চরম রসিকতা করা হয় তা বিবেকবান মুসলিম ভাইদের নিকট প্রশ্ন।

আমি যাকাত ফরজ হওয়া সকল মুসলিম ভাইদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যাকাত প্রদানের এ অগ্রহন যোগ্য পদ্ধতি ছেডে় আসুন সামাজিক কল্যানকর ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে যাকাত প্রদান করি। সত্যিকার অর্থে যাকাত দিই। সামান্য একটি উদাহরন দিলেই আপনারা যাকাত প্রদানের গুরুত্ব টি বুঝতে সক্ষম হবেন। ধরুন যাকাতে নিসাব অনুযায়ী আপনার এবার দুই লক্ষ টাকা যাকাত দেয়া নির্ধারিত হযে়ছে। এক্ষেত্রে যাকাত প্রদানের উপযুক্তদের থেকে বাছাই করে চার জনকে পঞ্চাশ হাজার করে হিসেব করে বিভিন্ন স্বাবলম্বী হওয়ার উপকরন যেমন রিকসা, ট্রলি, ভ্যানগাডি়, জমি, ঘরবাডি় তৈরি কিংবা গরু, গাভী কিনে দিতে পারেন। যাকাতের পরিমান কম বেশি হলে এ পদ্ধতিটি বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রযে়াগ করতে পারেন। অর্থ্যাৎ ঐ ব্যক্তি বা পরিবার যেন উপার্জন করে স্বাবলম্বী হতে পারে এমন উপকরণের কথা বলতে চাইছি। পরবর্তীতে এসে দেখা যাবে ঐ ব্যক্তি যাকাত খাওয়ার আর প্রযে়াজন হবে না। এমনকি এক বছরে সেও যাকাত দেয়ার উপযুক্ত হতে পারবে। তাহলে দেখা গেল প্রতি বছর এভাবে আপনি যদি যাকাত প্রদান করেন প্রতি বছর অন্তত চারজন লোক উপকার ভোগী হবে এবং দেশে প্রকৃত দরিদ্র শ্রেনীর লোক কমতে থাকবে। আপনি হয়তো শাড়ী/লুঙ্গী যাকাত দিযে় সামযি়ক প্রশান্তি বোধ করতেন কিন্তু ওদের তা কোন উপকারে আসত না। তবে নগদ টাকা না দেয়াই ভালো কারণ অন্য কোন ভাবে খরচ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। এবার দেখুন, দেশের সকল মুসলিম যদি এ পদ্ধতি অনুসরণ করে যাকাত দেয় তাহলে দেশের প্রকৃত অবস্থান কোথায় গিযে় দাঁড়াবে। ১৫/২০ বছর পর ইনশাআল্লাহ যাকাত নেয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

তাই আসুন সবাই মিলে উপরোক্ত কল্যানকর পদ্ধতি অনুসরন করে যাকাত প্রদান করি । তবেই যাকাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন হবে। মনে রাখবেন যাকাত প্রদান কোনভাবেই খয়রাতি প্রদান নয়। তাই কাপড় লুঙ্গি কিংবা সেমাই চিনি দেয়াকে যাকাত প্রদানের পদ্ধতি মনে না করে এ পদ্ধতিতে যাকাত দেই। দেশকে স্বাবলম্বী করার সংগ্রামে শরীক হই। যাকাত আপনার উপর গরীরদের হক। সম্পদকে পূত পবিত্র করার হাতিয়ার । সম্পদ বৃদ্ধির নৈতিক পদ্ধতি।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File