কৃত্রিম সান্তনা
লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৫৬:১৮ সকাল
ওগো শুনতে কি পাও? তোমার দেয়া উপহার এক টাকার নোট টা আজো সযতনে রেখেছি আমার মানি ব্যাগের এক কোনায়।প্রতিদিন ঘুমুতে যাওয়ার আগে চুমু খাই ওটাতে। টাকাটার গণ্ধ না শুকলে আমার ঘুমই আসেনা। তোমার ছোঁয়া পাওয়া টাকাটির আজো অমর্যাদা হতে দেইনি, কখোনোও দেবওনা। দীর্ঘ চারটি বছর ধরে ঐ টাকাটির ছোঁয়ায় আমি তোমাকে খুঁজে ফিরি। তোমার সত্যিকার ছোঁয়া অনুভব করি ঐ টাকাতে। খুব ভালোবেসে তুমি আমাকে দিয়েছিলে ঐ একটি মাত্র টাকা। কোটি টাকার উপহার মনে করে তাতক্ষনিক ওটা লুফে নিয়েছি কোন বাক্য বিনিময় না করেই। অনেক টাকার মাঝেও আলাদা রাখি তোমার টাকা টিকে। পাচে যদি ওটার অমর্যাদা হয়। আলাদা একটি পকেট করেছি তার জন্য । প্রতি সাপ্তাহে দু’তিনবার ইস্ত্রি করি ওটাকে। দামি দামি সুগন্ধি মেরে শুকাতে দিই রোদেলা দুপুরে। পাহারা দেই যতক্ষন না চকচক করে ততক্ষণ । রাত দুপুরেও ওটাকে হাঁতড়ে খুঁজি অবচেতন মনে। ঐ টাকাটার জন্য পরিবারের সব সদস্যকে আমার মানি ব্যাগ না ধরার সপথ করিয়েছি। মেসে কতো বন্ধুদের সাথে ঝগড়া করেছি ঐ টাকা নিয়ে। কতো বার ওটা জিম্মি করে বন্ধুরা টাকা নিয়েছে। শতো বঞ্চনার মাঝেও হারাতে দেইনি তোমার একমাত্র স্মৃতিটিকে। আগলে রেখেছি নবজাতকের মতো পরম বিশালতায়। কোন লোভাতুর চোখকে তাকাতে দেইনি ওটাতে। হিংস্র থাবাও প্রতিরোধ করেছি বুক পেতে। অপরাধ জেনেও কচকচে টাকার গায়ে তারিখটা লিখে রেখেছি শুধু তোমার স্মৃতি মঞ্চত্ব করার আশায়। ওটি এখন আমার নিজস্ব সম্পদ। তোমার দেয়া সান্তনা। চলার পথের পাথেয়।
বোধহয় আজ তোমার মন খারাপ শতো প্রাচুয্যের মধ্যে থেকেও। আমার দুঢ় বিশ্বাস তুমি ভালো নেই। জানো! ইদানিং টাকাটা না কেমন যেন হয়ে উঠছে। বিমর্ষ আর কচকচে আওয়াজটাও যেন হ্রাস পাচ্ছে । দেখতে কেমন যেন বিবর্ণ মনে হয়। ইস্ত্রিতেও এখন আর ঝলকায় না। রোদে দিলে ওড়োওড়ি করে। সুগন্ধিটাও যেন ফিকে হয়ে আসে।
শোনো, ঐ দিন কলেজ থেকে আসতে বৃষ্টিতে টাকাটা সামান্য ভিজে গেছে। আগুনের তাপে শুকিয়েছি ওটাকে আর ভাবছি – তোমাকে হারিয়ে আমিও কি কম পুড়ছি। তুমি ভালো আছো তো প্রিয়? নাকি টাকাটির মতো ক্ষয়ে ক্ষয়ে হারানোর মাঝে নিজেকে খুঁজে ফিরছো?
কেঁদোনা প্লিজ, তোমার টাকাটাকে বাঁচাতে যত্নের কোন কমতি করছিনা। প্রাণ পণ লড়ে যাব ওটার ঔজ্বল্য অমলিন রাখতে। চিন্তা কোরোনা তুমি, কেউ একজন বলেছে ওটাকে লেমেনিটিং করাতে। আমি রাজি হইনি। বলো, বাঁধাই করার পর ওটার মৌলিকত্ব থাকবে? হয়তো টিকবে বহুদিন কিন্তু তোমার সত্যিকার ছোঁয়া আর পবো কই। তাই এ প্ল্যানটাও ভেবে চিন্তে বাতিল করেছি ।
তোমাকে হারানোর বেদনা ভুলতে আমি এটি সযতনে রেখে দেব যুগ যুগবধি। যে অধিকারে তুমি টাকাটি আমায় দিয়েছিলে সেই অলিখিত অধিকারে। কেঁদোনা প্লিজ! প্লিজ কেঁদোনা। তোমার কান্না শুনে টাকাটিও কোনো এক অজানা ভয়ে কাঁপছে। মুছে ফেল চোখের জল, এমন আশাহত কান্না আমি কোন কালেই চাইনি।
--ঝরাপাতা
বিষয়: বিবিধ
১৩০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন