ভোট ও নির্বাচন পদ্ধতি : ইসলামের দৃষ্টিকোণ
লিখেছেন লিখেছেন অনুসন্ধান ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৫৭:৫৬ সকাল
ভোট ও নির্বাচন পদ্ধতি : ইসলামের দৃষ্টিকোণ
বর্তমান যুগে ইলেকশন বা ভোট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচনের যে ধারা বিশ্বজুড়ে পরিলক্ষিত হয়, সে ব্যাপারে সমকালীন পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম মনীষার অভিমত হলো, এ পদ্ধতি গ্রহণ করায় কোন আপত্তি নেই। এ পদ্ধতি অমুসলিমদের দ্বারা উদ্ভাবিত এ দাবি তুলে তা প্রত্যাখ্যান করার কোন যুক্তি নেই।
এ প্রসঙ্গে ড. ইউসূফ কারাদাভী বলেন:
“জীবন ধারণের উন্নততর কোন পদ্ধতি অমুসলিমদের থেকে সংগ্রহ করায় কোন দোষ নেই। কারণ, হিকমত বা প্রজ্ঞা হলো মুমিনের হারানো সম্পদ। সে-ই তার অধিক হকদার, যেখানেই তা পাওয়া যাক না কেন। এজন্যই :
ক. রাসূলে কারীম (স.) হযরত সালমান ফারসীর পরামর্শক্রমে খন্দকের যুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য পারস্যবাসীদের অনুকরণে খন্দক খনন করেছিলেন।
খ. রাসূলে কারীম (স.) কে যখন বলা হয়েছিল যে, রাজা-বাদশাহগণ সিলমোহর ব্যতীত কোন পত্রাদি গ্রহণ করেন না, তখন রাসূলে কারীম (স.) তাঁর পত্রাদি সিলমোহর করার জন্য তাঁর নামাঙ্কিত আংটি পরিধান করেন।
গ. অমুসলিমদের অনুকরণে ওমর (রা). ও মুআবিয়া (রা.) যথাক্রমে দিওয়ান ও ডাক বিভাগ পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন।
তবে অমুসলিমদের উদ্ভাবিত বা অনুসৃত কোন পদ্ধতি বা ধারা গ্রহণ করার জন্য কয়েকটি শর্ত অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
* তাতে অবশ্যই মুসলমানদের জন্য প্রকৃত স্বার্থ ও কল্যাণ (مصلحة حقيقية) থাকতে হবে। কিংবা ক্ষতির চেয়ে তাতে কল্যাণের পরিমাণ বেশী হতে হবে। কারণ ইসলামী শরীয়াতের ভিত্তি হলো এই নীতির উপরঃ
اعتبار المصالح الخالصة أو الغالبة، وإلغاء المفاسد الخالصة أو الراجحة
“অর্থাৎ নিছক কিংবা প্রণিধানযোগ্য মাছলাহাহ (কল্যাণ) সংরক্ষণ এবং নিছক কিংবা প্রণিধানযোগ্য অকল্যাণকে প্রতিহতকরণ”।
* তাতে এমন সংস্কার সাধন করতে হবে, যেন তা ইসলামী মূল্যবোধ, আমাদের জীবনদর্শন ও ধারা-প্রথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়।
এজন্যই ভোট-পদ্ধতি অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবেঃ
এক. ভোটপ্রদান ইসলামের দৃষ্টিতে সাক্ষ্যদানের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে একজন সাক্ষীর মধ্যে যে সব শর্ত আরোপ করা হয়, ভোটারের মধ্যেও সেসব শর্ত আরোপ করা হবে।
দুই. অযোগ্যপ্রার্থীকে ভোট দেয়া মিথ্যাবলা ও মিথ্যাসাক্ষ্যদানের অন্তর্ভুক্ত, মহাপাপ। তা কুরআনের মধ্যে শিরকের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ (الحج: ৩০).
“তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক”- (আল্-হাজ্জ: ৩০)।
যে ব্যক্তি ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, যেমন অর্থের বিনিময়ে কিংবা শুধুমাত্র আত্মীয়তা, দলপ্রীতি বা স্বদেশী হওয়ার কারণে কোন অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়, সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করল।
وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ (الطلاق: ২).
“তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দেবে”Ñ (আত্-তালাক: ২)।
তিন. নির্বাচনে ভোটপ্রদানে বিরত থাকার কারণে যদি কোন যোগ্য প্রার্থী হেরে যায় এবং অযোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হয়, তাহলে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও সত্য সাক্ষ্য গোপন করার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গুণাহগার হবে। ইরশাদ হচ্ছেঃ
وَلاَ يَأْبَ الشُّهَدَاء إِذَا مَا دُعُواْ (البقرة: ২৮২).
“যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়”Ñ (আল্-বাকারাহ: ২৮২)।
وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آَثِمٌ قَلْبُهُ (البقرة: ২৮৩).
“তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে”- (আল্-বাকারাহ: ২৮৩)।
চার. শুধুমাত্র ইজতিহাদী বিষয়েই ভোটগ্রহণ পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে, ইসলামের বুনিয়াদি ও স্থায়ী নীতিমালা, অকাট্য-দ্ব্যর্থহীন, ধ্রুবক শিক্ষার ব্যাপারে কোন ভোটাভুটি চলবে না।
পাঁচ. ভোট-প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠদের শাসন সম্পর্কে কোন কোন চিন্তাবিদ দ্বিমত পোষণ করলেও নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুসারে এতে কোন প্রকার আপত্তি নেই। কারণঃ
ক. রাসূলে কারীম (স.) বলেনঃ
"إن الشيطان مع الواحد، وهو مع الاثنين أبعد". (الترمذي)
“শয়তান একজনের যত কাছে থাকে, দু’জন থেকে তত দূরে থাকে ”।
খ. রাসূলে কারীম (স.) হযরত আবু বকর ও ওমর (রা.) কে বলেছিলেনঃ
"لو اجتمعتما على مشورة ما خالفتكما" (أحمد).
“তোমরা দু’জনে যদি একটি পরামর্শের উপর ঐকমত্য হও, তাহলে আমি তোমাদের বিরোধীতা করব না ”।
গ. রাসূলে কারীম (স.) উহুদ যুদ্ধের সময় অধিকাংশ সাহাবীর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন এবং মদীনার বাহিরে গিয়ে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। যদিও তাঁর ও প্রবীণ সাহাবীদের অভিমত ছিল মদীনার ভেতরে থেকে প্রতিরক্ষা করা।
ইমাম গাজ্জালী তাঁর কোন কোন কিতাবে সংখ্যাধিক্যতার ভিত্তিতে সমপর্যায়ের দু'টো অভিমত থেকে একটিকে প্রণিধানযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১৫০২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু আল্লামা ইউসুফ কারদাভীও অনভিপ্রেত বিশেষণে ভূষিত হওয়া থেকে রক্ষা পাননি- এবং সে ধারা এখনো অব্যাহতই আছে!
১। ভোট এবং গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রার্খক্য নির্ণয় জরুরী।
২। পরামর্শ দুইভাবে হয় ক) আমভাবে ২) খাস ভাবে। এই দুইটির পার্থক্য নিণর্য় জরুরী।
দ্বিতীয়ত
১। ক্ষমতার জন্য পাঁচ বছর, তিন বছর , ছয় বছর ইত্যাদি নিদিষ্ট সময় নির্ধারণ কিসের ভিত্তিতে?
২। ভোট দানের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে ইসলামিক শরীয়াহ বাস্তবায়ন করবেন কিসের ভিত্তিতে?
তৃতীয়ত
১। বর্তমান পার্লামেন্টের কাজ হচ্ছে আইন তৈরি করা এবং আল্লাহর আইনের প্রতিস্থাপন করা। এই যখন অবস্থা তখন কে আপনাকে বাধ্য করলো সংবিধানিক শপথ নিতে?
২। বর্তমান পার্লামেন্টগুলিতে সকল ধর্মের অনুসারীদের (ধর্মনিরেপক্ষ, সমাজতন্ত্র, হিন্দু ইত্যাদী)অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এটা কিভাবে সম্ভব যে, যে র্পালামেন্টে শরীয়হ আইন বাস্তবায়ন হবে (যদি কখনও ইসলামী গণতন্ত্রপন্থীরা পার্লামেন্টের মাধ্যমে শরীয়হ আইন বাস্তাবয়ন করতে চাই)সেই পার্লামেন্টে একদল শরীয়হ আইনের বিরোধীতা করবে!! এই ধরনের শরীয়হ সংসদ কিসের ভিত্তিতে?
৩। শরীয়াহ সংসদের (যদি কখনও ইসলামী গণতন্ত্রপন্থীরা পার্লামেন্টের মাধ্যমে শরীয়হ আইন বাস্তাবয়ন করতে চাই)একদল স্পষ্টভাষায় আল্লাহর আইনের বিরোধীতা করবে অথচ শরীয়াহ সংসদ তাদের শাস্তি দিবে না!!কোন শরীয়াহর আলোকে আল্লাহর আইনের বিরোধীতাকারী ক্ষমা প্রাপ্ত।
======================
আশা করছি জবাব দিবেন।
১। ডেমোক্রাটিক শব্দটির উৎপত্তি কোথায় কিভাবে হয়েছিল। এই শব্দের উৎপত্তি ও কিকাশকারীরা এই শব্দ দ্বারা যা বুঝিয়ে থাকে সেটায় চূড়ান্ত, নাকি আপনি ঐ শব্দ দ্বারা যা ব্যাখ্যা করবেন সেটাই ছূড়ান্ত?
২। কম সংখ্যক আসন নিয়ে সংসদে গেলে ইসলাম বিরোধী আইনের বিরোধিতা করতে হবে এমনকি সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সোচ্চার থাকতে হবে। প্রয়োজনে সংসদ বর্জন করতে হবে?
এগুলি কি সম্ভব?
এগুলি কি
মন্তব্য করতে লগইন করুন