ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে বর্তমান সমাজ ও অবস্থার মুল্যায়ন
লিখেছেন লিখেছেন পথিক মুসাফির ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১২:২৯:৪৭ দুপুর
মানুষ যখন আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে যায় এবং আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে পড়ে,তখন তাদের নৈতিক চরিত্রে ধস নামে। বিভিন্ন প্রকার শির্ক ও বিদায়াতে লিপ্ত হয়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তখন তার সত্যকে গ্রহণ করাতো দুরের কথা সত্যের দাওয়াত পেয়েও তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশটুকু পায় না। কারণ ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার কোন মন মানসিকতা আর অবশিষ্ট থাকে না। তখন হকের দাওয়াতকে তারা ভোগ বিলাস ও স্বেচ্ছাচারিতার পথে প্রধান বাধা মনে করে। তাই তাকে দমন করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এই অব্স্থাকে বলা হয় জাহেলিয়াত।
যে সমাজে যতটুকু জাহেলী কাজকর্ম চলে সে সমাজ ততটুকু জাহেলী সমাজ। এই জাহেলিয়াতের সংগা দিতে গিয়ে আল্লামা শাওকানী বলেনঃ"জাহেলী যুগ হলো ইসলামের অবৈধ বস্তুকে যে সময়ে বৈধ মনে করা হয় এবং প্রাক ইসলামী যুগ ও তার কার্যাবলী যে যুগে পাওয়া যায়"
আসুন এবার আমরা একটু তুলনা করে দেখি আমাদের সমাজ ও ইতিহাস উল্লেখিত সমাজ ও সভ্যতার চেয়ে কতটুকু ভাল ।
ক) অতীত যুগে কাফের মুশরিকগণ নবী ও রাসুলদেরকে হত্যা ও নানা রকম নির্যাতন করত ।
বর্তমানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যারা চেষ্টা করছে, সেইসব ওলামা মাশায়েখ.খাটি মুসলমান ও আল্লাহর প্রিয় বান্দারেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে এবং ষঢ়যন্ত্র ও নির্যাতন করা হচ্ছে ।
খ) তারা মানুষের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করতো এবং নিজেদের খেয়াল খশী মতো চলত। আল্লাহর আইনের ধার ধারত না।
এখনো আল্লাহর আইনের পাত্তা দেয়া হয় না । মানুষের সার্বভৌমত্ত স্বীকার করে মানব রচিত আইন কানুন দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় ।
গ) অতীত যুগের লোকেরা কবিতা, বক্তৃতা ও গাথার মাধ্যমে হকের বিরোধীতা করত।
বর্তমান যুগে বক্তৃতা,বিবৃতি,বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, কবিতা, সাহিত্য, রেডিও, টিভি, নভেল-নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে হকের ও হকপন্থীদের বিরোধীতা করা হচ্ছে ।
ঘ) অতীত সমাজেনারী পুরুষেরা অবাধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। আল্লামা শাওকাণী বলেনঃ" পুর্ব যুগের মহিলাদের এমন অবস্থা ছিল যে, যে অঙ্গগুলো প্রকাশ করা
অবৈধ ছিল তা তারা উন্মক্ত করে চলতো। এমনকি একজন মহিলা তার স্বামী ও তার বন্ধুর সাথে বিনা দ্বিধায় একই আসনে বসতো। তারপর তার বন্ধু নাভী থেকে উপরের অংশ দ্বারা তৃপ্তি গ্রহণ করতো এবং স্বামী নীচের াংশ নিয়ে তৃপ্তি লাভ করতো। কোন কোন সময় তারা দুজন উপভোগের অংশ বদলের প্রস্তাব দিত" । (ফাতহুল কাদীর ৪র্থ খন্ড-২৭৮ পৃ)
কিন্তু বর্তমানে সমাজে আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে এখন আর কেউ শরীরকে ভাগাভাগি করে না বরং পালাক্রমে ব্যবহার করে। স্বামীদের একাধিক বান্ধবী থাক এবং স্ত্রীদের একাধিক বন্ধু থাকা বর্তমান সমাজে স্বীকৃত।
ঙ) প্রতিটা অনৈসলামিক সভ্যতার যুগে চরিত্রহীন লম্পট ও বখাটেদেরকে সম্মান করা হতো।
বর্তমান সমাজে দুষ্কৃতিকারী,মাস্তান ও গুন্ডাদেরকে সমীহ করা হয় এবং ক্ষমতায় থাকার বা ক্ষমতায় যাবার অস্ত্র হিসাবে তাদেরকে ব্যবহা করা হচ্ছে ।
চ) আগে দ্বীনের বিরোধীতা নারী পুরুষ সম্মিলিত ভাবে করতো্ পুরুষ যুদ্ধ করলে নারীরা অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোক গাথা আবৃতি করে প্রতপক্ষকে হেয় করার চেষ্টা করতো।
বর্তমানে পুরুষের পাশপাশি নারীরাওু কবিতা,নভেল নাটক, বক্তৃতা, বিবৃতি প্রভৃতির মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় লিপ্ত।
ছ) অতীতে জাহেলী সমাজে শির্ক ও পৌত্তলিক পুজা, জোতিষী বিদ্যার চর্চা,ভাগ্য গনণা,দেব দেবীর নিটকমানত ও বলীদান ইত্যাদির প্রচলন ছিল ।
বর্তমানে সমাজে জোতিষী বিদ্যার চর্চা,ভাগ্য গনণা, বিভিন্ন বুজুর্গ ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়ে মান্নত করা, পীরের দরবারে ছেলে মেয়ে হাসিলের জন্য গমন করা ইত্যাদি প্রথা প্রচলন আছে।
উপরের সংক্ষিপ্ত তুলনামুলক আলোচনার মাধ্যমে দিবালোকের মত ষ্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বর্তমান সমাজ ও সভ্যতা আগের জাহেলী সভ্যতার চেয়ে কোন অংশেই পিছনে নয় ।
পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, সে সভ্যতায় রেলগাড়ী,মোটরগাড়ী, উড়োজাহাজ ইত্যাদি বিজ্ঞানের অবদানগুলো ছিল না কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় বিজ্ঞানের অবদানসমুহ বিদ্যমান।
তখন হকের দাওয়াত প্রত্যাখান করার পরিণতি যেমন ভয়াবহ হয়েছে তদ্রুপ বর্তমানেও সত্যকে প্রত্যাখান করার পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য ।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন