দেশপ্রেম, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, আইনের শাসন, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ, জনগণ, গণজাগরণ ইত্যাকার সবকিছুর সংজ্ঞা ও অর্থ আমাদের বর্তমান আওয়ামী সরকার থেকেই নতুন করে শিখে নিন।
লিখেছেন লিখেছেন পথিক মুসাফির ২০ মার্চ, ২০১৩, ১১:২৯:১৮ সকাল
এ লেখাটি এনামুল হক জীবন সাহেবের কপি পেষ্ট করা হলো ব্লগার ভাইদের অবগতির জন্য ।
দেশপ্রেম, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, আইনের শাসন, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ, জনগণ, গণজাগরণ ইত্যাকার সবকিছুর সংজ্ঞা ও অর্থ আমাদের বর্তমান আওয়ামী সরকার থেকেই শিখতে হবে; পৃথিবীর কোনো কিতাব কিংবা অভিধান থেকে শিক্ষা থাকলেও সেটা বাদ দিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় রাজাকার কিংবা যুদ্ধাপরাধী হতে হবে। যেমন—
দেশপ্রেম বলতে দেশের প্রতি দরদ, ভালোবাসা, মমত্ববোধ যা-ই আমরা বলি না কেন, আওয়ামী অভিধানে দেশপ্রেম মানেই হলো দেশের সব স্বার্থই ভিন দেশের জন্য জলাঞ্জলি দেয়া, দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি ও লোপাটের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে দেয়া এবং কানাডা, ইউরোপ ও আমেরিকায় স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সবাইকে পাঠিয়ে দেয়া।
গণতন্ত্রতো যিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট, তার পাঠশালায় তালিমই যথেষ্ট। কেননা তিনি নিজেই গনতন্ত্রের মানসকন্যা। অন্য কোনো পাঠশালায় সেটার তালিম নেয়ার প্রয়োজন নেই। আর এ আওয়ামী গণতন্ত্র মানে ‘আনপ্যারালাল ডেমোক্র্যাসি(?)’, যেখানে হাসিনাতন্ত্র ছাড়া আর কোনো তন্ত্র নেই, আর কারও রাজনৈতিক অধিকার নেই, মিছিল করা-হারাম, মিটিং করা-জঙ্গি তত্পরতা, রাজনৈতিক মোকাবিলার চেষ্টা করা-তাণ্ডব চালানো, লেখালেখি করা-উসকানি দেয়া, মতপ্রকাশ করা-রাষ্ট্রদ্রোহ, মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা-জনগণকে উত্তেজিত করা, রাস্তায় বের হওয়া-অবৈধ কাজ, হরতাল ডাকা-অনধিকার চর্চা করা, মানববন্ধন করা-পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদান করা, আর এক কথায় সব তত্পরতাই রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের রক্ষার চেষ্টা করা! জামায়াত নেতা মকবুল আহমদ বলেছিলেন, এ কী গণতন্ত্র, আমরা কাঁদতেও পারব না!
মুক্তিযুদ্ধ মানে যে যুদ্ধ করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু, তার মেয়ে, নাতি-নাতনি বা বংশপরম্পরায় তারা রাষ্ট্রের কর্ণধার কেয়ামত অবধি থাকার জন্য। কেননা সে যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত গোটা পরিবার পাকিস্তান থেকে অনেক রণকৌশল করে, রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে, আওয়ামী লীগের ৩০ লাখ নেতাকর্মী শহীদ করে স্বাধীনতার সেই লাল সূর্যটি ছিনিয়ে এনেছেন। তাই যিনি আওয়ামী লীগ করেন না, তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী হন আর বড় সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল হন কিংবা জিয়াউর রহমান হন নয়তো বীরাঙ্গনা হন, যা-ই হন, তিনি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা নন। কিন্তু রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠক ম. খা. আলমগীর হন, নুরুল ইসলাম নুরু রাজাকার হন কিংবা সরাসরি রাজাকার মোশাররফ হোসেনও হন, তবুও আপনি অনে...ক উঁচুমানের মুক্তিযোদ্ধা; কেননা আওয়ামী ডিকশনারিতে এভাবেই লেখা আছে। আওয়ামী লীগ করলে সাত খুন মাফ। বর্তমান প্রেসিডেন্ট স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চসংখ্যক খুনের আসামিকে মাফ করে দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন। এত বড় উদারতা আর কোনো প্রেসিডেন্ট দেখাতে পারেননি।
রাজাকার—যারা ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানিদের ভোটে পরাজিত করেছেন, যারা ফিল্ড-মার্শাল লৌহমানব আইয়ুবের পতন ঘটিয়েছেন, ১৯৭১ সালে যারা (আবালবৃদ্ধবনিতা) যা-ই ছিল, তা দিয়ে পৃথিবীর সেরা সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করেছেন। সর্বশেষ যারা (৯৮%) ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রেসিডেন্ট করেছেন, তারা রাজাকার—যেহেতু তারা এখন আওয়ামী লীগ করেন না।
যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী—এভাবে আওয়ামী ডিকশনারিতে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী ৩২ হাজার কিংবা ৩০ হাজার অপরাধীর তালিকায়ও ছিলেন না, চূড়ান্ত ১৯৫ জনের তালিকাতেও ছিলেন না কিংবা গত ৪০ বছরেও যাদের বিরুদ্ধে একটি ছোট্ট অভিযোগও কোনো কোর্টে দাখিল হয়নি, এন্ট্রি হয়নি বাংলাদেশের কোনো থানায় একটি জিডিও, যারা কোনো হিন্দু কিংবা মুসলমানের কোনো দোকান, বাড়ি, গাড়ি কোনটাই দখল করেননি, যারা রাজনীতি শুরু করেছেন আশির দশকে যারা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়ও বারবার নির্বাচন করেছেন, পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সব মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন, দেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন, কোনো ধরনের অমানবিক-অসামাজিক কর্মের স্বাক্ষর রাখেননি, দুর্নীতির অনু-পরমাণু পরিমাণ দাগও যাদের স্পর্শ করেনি, তারাই যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী! কারণ বঙ্গবন্ধুর অভিধানে জাতিকে বিভক্ত বা বিভাজন করে সংঘাত-সংঘর্ষ জিইয়ে রাখা, সমন্বয়হীনতা তৈরি করা অনুচিত হলেও কিংবা ৩০ হাজার বা ১৯৫ জনের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখা প্রয়োজনীয় হলেও গণতন্ত্রের মানসকন্যার (?) অভিধানে এমনটি ডিজিটালের কারণে ডিলিট হয়ে গেছে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা এবং তার আইনমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এক অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন রেখে যাচ্ছেন! তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার জসীম উদ্দিন মানিককে দিয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করান এবং পরে তাকে পুরস্কৃতও করেন, বিশ্বজিেক নিজ দলীয় ক্যাডার দিয়ে পুলিশকে সাক্ষী গোপাল রেখে দিবালোকে পিটিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করান এবং ২৮ অক্টোবের ইতিহাসের জঘন্যতম পৈশাচিক ও বর্বর লগি-লাঠি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ড আর চরম নিষ্ঠুর-নির্মমতায় মৃত লাশের ওপর নৃত্য করান; আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ প্রহরায় ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীকে রাম-দা, চায়নিজ কুড়াল, কিরিচ, হকিস্টিক, রড, পিস্তল, গুলি ব্যবহারে প্রকাশ্যে ক্ষত-বিক্ষত, আহত ও খুন করান এবং বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা, অপমানিত করা, উত্তম-মধ্যম দিয়ে পরিশেষে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করার নজির স্থাপন করান। আইনের শাসন কায়েমের জন্যই ঘরে-বাইরে, মসজিদে, রাজপথে—সর্বত্রই নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে একদিনে বাংলা ভারত এবং পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড করে মানবতার কবর রচনা করেন। করবেনই তো, কারণ আজকে যিনি আইনের শাসনের এমন কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেন, তিনি তো অনেক আগেই পাকিস্তানি শাসকদের পদলেহী থাকা অবস্থায় পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর এমন মানবতাবিধ্বংসী কর্মে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ও অভ্যস্ত।
নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগেরও আওয়ামী সংজ্ঞা রয়েছে, যাতে রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিচারকদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল। যারা সুপ্রিমকোর্টের দরজায় লাথি মারে তাদের বিচারক নিয়োগ করা, নিজেরা নিজেদের ইচ্ছেমত আইন তৈরি করা, নিজেদের খোয়াল-খুশি বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেয়া, নিজেদের পছন্দসই প্রসিকিউশন নিজেরা নিযুক্ত করা, বিচারকদের নিজেদের খায়েশ মোতাবেক রায় দেয়ার জন্য নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করা, বিচারককে উপেক্ষা করে নিজেরা রায় ও রায়ের তারিখ ঘোষণা করা, এর পরও রায় খায়েশ মোতাবেক না হওয়ায় রায় প্রত্যাখ্যান করা, রাতারাতি আইন পরিবর্তন করা এবং বাদীপক্ষকে আপিলের নজিরবিহীন সুযোগ দেয়া আবার বিবাদী পক্ষকে আপিলের জন্য মাত্র এক মাসের সুযোগ দেয়া—তদুপরি আপিল থেকে মাত্র সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যেই (তথা নিজেদের ক্ষমতা শেষ হওযার আগে) রায় দিয়ে নিজেদের খায়েশ চরিতার্থ করতে বিচারকদের বাধ্য করা, ইতিহাসের জঘন্য কালো অধ্যায় রচনা করা। একে বলা হয় আওয়ামী নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ।
গণজাগরণ আর জনগণের ক্ষেত্রেও নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগের চশমায় কিছু স্বঘোষিত, নাস্তিক, মুরতাদ, খোদাদ্রোহী, চরম ইসলামবিদ্বেষী গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী আর যুবক-যুবতী যারা শাহবাগে বাস করে, তারাই হলো জনগণ, তাদের চিত্কারই (ফাঁসি, খতম, জবাই, আগুন জ্বালাও, ধ্বংস, বাজেয়াপ্ত, বয়কট, বীর খেতাব কেড়ে নেয়াসহ বহু আওয়াজ) গণজাগরণ। এদের এমন উচ্ছৃঙ্খল বেলেল্লাপনার সর্বোত্তম পৃষ্ঠপোষকতা দেয় আওয়ামী লীগ সরকার, পুলিশ, র্যাব, এমনকি বিজিবি পর্যন্ত নিয়োগ করে বেষ্টনী দিয়ে পাহারা দেয়। এখানেই শেষ নয়, এদের জন্য দেশের শ্রেষ্ঠ দুটি হাসপাতাল এবং ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম স্কয়ার হলেও শাহাবাগে শাহাবগিদের জন্য তৈরি করে দেয়া হয়, মঞ্চে ব্যবস্থা করা হয় ব্যাপক আলোকসজ্জার, সিসি ক্যমেরা, নাস্তিকতার ব্যাপক প্রসারের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণে ল্যাপটপ কম্পিউটার, নিয়মিত খাবারের প্যাকেট, জনপ্রতি নগদ টাকা ইত্যাদি। আর এ গণজাগরণ মঞ্চই এখন প্রকৃত বিচেনায় বাংলাদেশ সরকার, যাদের নির্দেশে রাতারাতি আইন তৈরি হয়, যাদের কথামত প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন, যাদের কথায় বিচার বিভাগ বিচারের রায় ঘোষণা দেয়। পক্ষান্তরে সারাদেশের লাখ-লাখ জনতা, সাধারণ মানুষ, ঈমানদার, মুসল্লি হাজার হাজার ঝাড়ু-জুতা মিছিলকারী পুরুষ-মহিলা—যারা সরকারের, পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশ, র্যাব, এমনকি বিজিবি কর্তৃক নির্বিচারে গুলি খেয়ে অসংখ্য অগণিত শহীদ হয়, পঙ্গু হয়, সীমাহীন হামলা আর মামলার শিকার হয়ে অপ্রতিরোধ্য আন্দেলন করে, মিছিল-মিটিং-অবরোধ-পিকেটিং করে, তারা কোনো জনগণ নয়! তাদের আন্দোলন গণজাগরণ নয়! আর সেজন্যই কি স্বল্প কয়েকজন নাস্তিক, মুরতাদ, খোদাদ্রোহী, ইসলামবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ ব্লগারচক্রই গণজাগরণ? গণজাগরণ মানে কি আনন্দ-ফুর্তি করা, গণজাগরণ মানে কি নর্তন-কুর্দন করা, গান-বাদ্য করা, ঢোল-তবলা-হারমোনিয়াম বাজানো? গণজাগরণ মানে কি সব অপশাসন, জুলুম, নির্যাতন আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও না করা! গণজাগরণ মানে কি বহুমুখী নিরাপত্তা বিধান করা?
লেখক : কবি, সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও ব্যবসায়ী
বিষয়: বিবিধ
১১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন