সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন,তত্ত্বাবধায়ক এবং ড.মিজান
লিখেছেন লিখেছেন পথিক মুসাফির ২৩ জুন, ২০১৩, ১২:৩১:৩০ দুপুর
আওয়ামীদের মাঝে যত গুলো পাগল এবং ধান্ধাবাজ আছে এই গোত্রেরই নতুন আমদানিকৃতদের অন্যতম একজন সরকারি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব ড. মিজানুর রহমান।
মহাজোট সরকার তাকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বানিয়েছে। তার যোগ্যতা আছে কি নেই সে বাছ-বিচার করেনি নিয়োগের সময়। তো কৃতজ্ঞতা বলে তো একটা কথা আছে? এই কৃতজ্ঞতার জন্যই তিনি মাঝে মধ্যে সরকারের পক্ষে হম্বিতম্বি করেন যেন তার নিয়োগদাত্রী এতে খুশি হন। কারণ তার খুশির ওপরই নির্ভর করছে তার মানবাধিকারে থাকা না থাকা প্রসঙ্গ। অর্থাত্ মহা নিমকহালাল তিনি। এই মহা নিমকহালাল ব্যক্তিটি আবার মাঝে মধ্যেই তার সীমারেখার আইল ভেঙে হামলে পড়েন অন্যদের সীমানায়। তখন বেধে যায় দক্ষ যজ্ঞকাণ্ড।
সেই ড. মিজান ৪ সিটি করপোরেশনে তার প্রভুর ভরাডুবি দেখে মাত্রাজ্ঞান বজায় রাখতে পারেননি। ফলে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ দাবিটি তার কাছে অসহ্য মনে হয়েছে। এ কারণেই বলেছেন, ‘এ (চার সিটি করপোরেশন) নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।’
বুঝুন ঠেলা! কোথায় মানবাধিকার, কোথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামীরা ছাড়া সারা বাংলাদেশের মানুষ এক কাতারে এসে গেছে। কিন্তু এই তত্ত্বাবধায়ক শব্দ শুনলেই নাকি আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের অনেকের মাথা খারাপ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে খালি খিস্তি বের হয়। তারা গণহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেসামাল উক্তি করতে থাকেন?
পাকিস্তানের জিয়াউল হকের নাকি ‘গণতন্ত্র’ শব্দ শুনলেই এমন হতো। তার নাকি চুল খাড়া হয়ে যেত। এজন্য তার ব্যক্তিগত নাপিত তার চুল কাটার সময় খালি গণতন্ত্র গণতন্ত্র শব্দ করতো। আর জিয়াউল হকের চুল দাঁড়িয়ে যেত। এতে চুল কাটা খুব সহজ হতো।
মুজিবী খানদানের চার-চারটি গরু (৪টি সিটি কর্পোরেশন) কোরবানি করে বিরোধী দলকে খাইয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধরে নিয়েছিলেন, এবার বিরোধী দলগুলো তার তত্ত্বাবধানেই নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু বিরোধী দলগুলো তার মনের মতো ‘সুবোধ’ নয়। সেজন্যই তো এত গোস্বা। সেজন্যই তো তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সেজন্য তত্ত্ববধায়ক সরকারের আর কোনো যৌক্তিকতাই নেই। আমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলাম, তখন তার একটা যুক্তি ছিল। এখন তো কোনো যুক্তি নেই।
উনি রাষ্ট্রের টাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বই প্রকাশ করেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মানবাধিকার দর্শন’। শেখ মুজিব একজন জাতীয় নেতা ছিলেন। তার এ ব্যাপারে দর্শন থাকতেই পারে। কিন্তু কথাবার্তা নেই, হঠাত্ তার মানবাধিকার দর্শন গ্রন্থ প্রকাশের দরকার পড়লো কেন?
শেখ মুজিবের আগে এ দেশে শহীদ সিরাজদৌলা ছিলেন, ছিলেন জ্ঞানী শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা, ছিলেন শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর, ছিলেন ঈশা খাঁ, শহীদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, ছিলেন সলিমুল্লাহ, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানীর মতো বটবৃক্ষতুল্য ব্যক্তিত্ব। ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ছিলেন আরও অনেকে। যারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সব শক্তি ও সামর্থ্য উত্সর্গ করেছিলেন। তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বন্দনার হেতু কি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তেল’।
গ্রন্থ রচনার সময় এই অতি বাকমুখর ডক্টর সাহেবের কি মনে পড়েনি শেখ মুজিবের দুঃশাসনে তার লাল বাহিনী, নীল বাহিনী, রক্ষী বাহিনী, দলীয় ক্যাডারদের হাতে নিহত ৪০ হাজার নিরপরাধ মানুষের কথা। কী তাদের অপরাধ ছিল? কেন তাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল? মহান সাম্যবাদী নেতা কমরেড সিরাজ সিকদার কি মানুষ ছিলেন না? তার কি মানবাধিকার থাকতে নেই? তো মুজিব বন্দনার কালে তার হাতে নিহত সেই মানুষদের মানবাধিকার নিয়ে কি একটা শব্দও আজ অবধি উচ্চারণ করেছেন মিজান সাহেব? কেন করেননি? আপনার বিবেচনায় যারা আওয়ামী লীগ করে না, তাদের কি মানবাধিকার থাকতে নেই? কেন থাকবে না?
প্রতিদিন শত শত মানুষ বিনা বিচারে প্রাণ হারাচ্ছে, শিকার হচ্ছে গুমের, শিকার হচ্ছে অপহরণের, নারী হারাচ্ছে সম্ভ্রম—তাদের বিষয়ে ঠোঁটে তালা লাগিয়ে বসে আছেন কেন? এই যে বিরোধী দল দমনে উন্মত্ত সরকারি তাণ্ডব, রিমান্ডের ভয়াবহতা, র্যাব-পুলিশের হত্যাযজ্ঞ, বিভীষিকাময় নির্যাতন, লাখ লাখ মিথ্যা মামলা, কয়েক লাখ লোকের বিনা কারণে কারাবাস, ডাণ্ডাবেড়ি, এই যে শাহবাগিদের দাঁত ও নখে ক্ষতবিক্ষত মুসলমানদের হৃদয়, এই যে হেফাজতে ইসলামের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড—সেসব বিষয়ে আপনার ঠোঁট প্রগলভ হয়ে ওঠে না কেন? ওই নিয়ে কথা বলাই তো আপনার কাজ। ওগুলোই আপনার ক্ষেত্র। কিন্তু নিজের কাজ ফেলে রেখে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও যৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে আপনার জিহ্বা এত ব্যগ্র কেন?
শেষে এতটুকু বলা যায় যে মিজান সাহেব, আপনার দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মাথায় গোলমাল বাধিয়ে দিয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন