ইকামা কেটে ফেলে চলছে গ্রেপ্তার: নিরুপায় প্রবাসীর
লিখেছেন লিখেছেন জাবির ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:০৯:৪৪ সন্ধ্যা
বৈধ ইকামা (ওয়ার্ক পারমিট) কেটে ফেলে দিয়ে প্রবাসীদের গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। প্রবাসীদের আশ্রয়স্থল দূতাবাস পালন করছে নীরব দর্শকের ভূমিকা। এই অবস্থায় চরম আতঙ্কিত হয়ে পরেছে সোনার ডিম পাড়া হাঁস প্রবাসীরা।
সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়ের বেঁধে দেয়া সময়সীমা গত বুধবার শেষ হওয়ার পর গত কয়েকদিনে অবৈধ ছাড়াও বৈধ ইকামাধারীদের ইকামা কেটে ফেলে দিয়ে কয়েক হাজার প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে আইঙ্গশৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনি। কিছু বলার পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বলতে গেলে চালানো হচ্ছে অমানসিক নির্যাতন।
সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস "অফিসিয়াল চিঠি পাইনি, এটা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয়" বলে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রবাসীরা বলছেন সরকার এবং দূতাবাসের অবহেলার আর স্বেচ্চাচারিতার কারণেই বাংলাদেশিদের আজকের এই করুন পরিণতি।
তারা বলছেন, দূতাবাস যদি সৌদি সরকারের সাথে আলোচনা করে ইকামা ট্রান্সফার চালু করতে পারতো তাহলে আজকে বৈধ বাংলাদেশিদের বিনা কারনে দেশে ফেরত যেতে হতো না।
দূতাবাস কর্মকর্তারা শুধু কথার ফুলঝুরি ঢেলে তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন প্রবাসীদের জন্য কোনো কাজই দূতাবাস করছে না এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি প্রবাসীরা। তারা বলছেন দূতাবাস ডিজিটাল পাসপোর্ট ছাড়া সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্রতার পরিচয় দিয়েছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতীয় দূতাবাসের উদাহরণ টেনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি বলেন, ভারতীয় কোনো লোক যেকোনো অভিযোগ নিয়ে দূতাবাসে গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয় এমনকি নিজেদের অপরাধ থাকলেও সেটা চেপে রেখে ব্যবস্থা নেয়া হয় অথচ কোনো বাংলাদেশি যৌক্তিক অভিযোগ নিয়ে দূতাবাসে গেলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
দূতাবাস দালালাদেরও আখড়া উল্লেখ করে ঐ প্রবাসী বলেন, দালাল ছাড়া দূতাবাস থেকে কোনো উপকার পাওয়া যায়না। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দূতাবাসের সামনে শত শত দালালদের দেখা যায়। অন্য কোনো দেশের দূতাবাসের সামনে বিনা কারনে একজন লোক দাড়াতে দেখা যায়না বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মদিবসে প্রভাবশালী(দলীয়, দালাল) শ্রেণির লোকদের পদচারনায় মুখর থাকে দূতাবাস প্রাঙ্গন এবং তাদের সাথে খোশ গল্পে মেতে ওঠেন কর্মকর্তারা। দূতাবাস কর্মকর্তাদের সামনেই তাদের নিরুব্ধে এই প্রতিবেদকের কাছে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন অসহায় প্রবাসীরা।
বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বন্ধ হওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের ইকামা ঠিক রেখে কাজের ধরন পরিবর্তন এবং ইকামা টান্সফার(কফিল পরিবর্তন) শত চেষ্টা করেও চালু করতে পারেনি বর্তমান সরকার। ইকামা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি অবৈধ হতে বাধ্য হয়েছেন। যারা এখন শুন্য হাতে দেশে ফেরার সময় গুনছেন।
একটু পর চেক আসছে, অমুক জায়গায় এতো জনকে ধরে নিয়ে গেছে, এতো জনের ইকামা কেটে ফেলেছে এই কথাগুলো সৌদি আরবে টক অফ দ্যা কমিউনিটিনিতে পরিনত হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে কেউ কেউ রুম থেকে বের হচ্ছে না বলেও খবর পাওয়া গেছে। অনেককেই কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা গেছে।
এভাবেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার আর ইকামা কেটে ফেলার খবরে চরম আতংক বিরাজ করছে খেটে খাওয়া সাধারণ প্রবাসীদের মাঝে। প্রবাসীদের এই আতংকের খবর এখন ছড়িয়ে গেছে ফেসবুকেও। মোহাম্মদ উল্লাহ নামের একজন রিয়াদ প্রবাসী তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেছেন "গ্রেফতার আতংকে ভুগছি। যেকোনো সময় পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যেতে পারে, পুরো সৌদি আরবে গণগ্রেপ্তার চলছে। মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছে...।
আজিজ খান নামের জেদ্দা প্রবাসী তার স্টাটাসে লিখেছেন, আমি জেদ্দা আল খোমরাতে আছি, অবস্থা খুব খারাপ, চেক আর চেক। আবার কেউ কেউ ইতিপুর্বে গ্রেফতারকৃদের ফটো দিয়ে সবাইকে সতর্ক করার চেষ্টা করছেন।‘
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের সর্বশেষ তথ্য মতে গত তিনমাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মধ্য প্রাচ্য থেকে এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে এক নম্বরে সৌদি আরবের অবস্থান।
এই অবস্থায় বাংলাদেশিদের কফিল পরিবর্তিনের ব্যবস্থা না করতে পারলে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে প্রায় ৪/৫ লক্ষ বাংলাদেশিকে একেবারে শূন্য হাতে দেশে ফিরে যেতে হবে। আর এই ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের বেকারত্বের বোঝা চাপবে সরকারের মাথায়।
প্রবাসীরা বলছেন, যেকোনো শর্তে সৌদি আরবের সাথে আলোচনা করে প্রবাসীদের এই সমস্যা সমাধান করা জরুরি। নতুন ভিসা চালু করার চাইতে পুরাতন অভিজ্ঞ প্রবাসীদের এদেশে থাকার ব্যবস্থা করা বেশি প্রয়োজন মনে করছেন সাধারণ প্রবাসীরা।
বিষয়: বিবিধ
১২২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন