কালোদিবস এবং মিডিয়ার আওয়ামী প্রীতি: তরুণ প্রজন্মের যা জানা আবশ্যক।
লিখেছেন লিখেছেন বিমুগ্ধ রজনী ১৮ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৫৩:১০ সকাল
অলিউল্লাহ নোমান: ১৬ জুন পার হয়ে গেছে। লেখাটি যখন লিখতে বসলাম তখন ১৮ জুন। তারপরও মনের তাগিদে এ লেখা। কারণ ১৬ জুন সংবাদপত্রের কালোদিবস ছিল। যদিও একশ্রেণীর দালাল সাংবাদিক ১৯৯১ সালের পর থেকে আর দিবসটি পালন করেন না। তবে সাংবাদিকদের বড় অংশ ১৬ জুনকে মনে রেখেছেন এবং কালোদিবস হিসেবে পালন করছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসের কারণে আমিও ভুলে গিয়েছিলাম ১৬ জুনের কথা। আসলে কোনদিন যে কত তারিখ যাচ্ছে সেটাই আমার জানা থাকে না। তবে যুক্তরাজ্য বিএনপি সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও দিবসটি পালন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৫ জুন রাত ১টা ৪০ মিনিটে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খয়সর আহমদ আমাকে ফোন করেন। পরের দিন বিকাল সাড়ে ৭টায় সংবাদপত্রের কালোদিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। এতে আমাকে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। তিনি এও বলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শেই তাত্ক্ষণিক সব আয়োজন। সুতরাং উপস্থিত হতে হবে যে কোনো মূল্যে। এটা তার বিশেষ অনুরোধ। যথাসময়ে আলোচনা সভাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করি। এত সংক্ষিপ্ত সময়ে কোনো পেপার রেডি করতে পারিনি। কিছু পয়েন্ট নোট করেছি মাত্র। সংবাদপত্রের এই কালোদিবস যখন সৃষ্টি হয়, তখন আমি ছোট। গল্পের মতো শুনেছি অনেক সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিটি দিন-ই যেন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এক একটি কালোদিবস পার করছে। বর্তমান আমলে সাংবাদিক নির্যাতন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নিহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি সাংবাদিক। রিমান্ডে দিনের পর দিন নির্যাতিত হচ্ছেন সত্য বলায় আমার দেশ সম্পাদক। এগুলো ভাবতে ভাবতেই আলোচনা সভায় উপস্থিত হই।
দিনটি ছিল ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন। স্বাধীন বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর গণমাধ্যমের ওপর বড় ঘূর্ণিঝড়। মাত্র পাঁচ মাস আগে শেখ মুজিবুর রহমান সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল গঠন করেছেন। কোনো রাজনৈতিক দল নেই বাংলাদেশে। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বাতিল করে ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সেই আলোকে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। বহুল আলোচিত চতুর্থ সংশোধনী সেদিন মাত্র কয়েক মিনিটে জাতীয় সংসদে পাস হয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, সংসদীয় পদ্ধতি থেকে রষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে রাষ্ট্রপতিকে বিচার বিভাগের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করা হয় এ সংশোধনীতে। সর্বশেষ ১৬ জুন বন্ধ করে দেয়া হয় সব গণমাধ্যম। মাত্র চারটি পত্রিকা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এর মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক অবজারভার ও টাইমস্্ ব্যক্তিমালিকানা থেকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। দৈনিক বাংলা আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ছিল। বাকি সব গণমাধ্যম বন্ধ। এই চারটি পত্রিকা রাখা হলো শুধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার বাকশাল সরকারের জয়গান গাইতে। শুধু তা-ই নয়, গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেও তত্কালীন দৈনিক গণকণ্ঠসহ অনেক পত্রিকায় আক্রমণ চালিয়েছে রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা। তারা রাতে পত্রিকা অফিসে প্রবেশ করে সরকারবিরোধী কোনো সংবাদ থাকলে সবকিছু তছনছ করে দিত।
সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ায় সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীর কেউ কেউ বাদাম বিক্রি শুরু করলেন, কেউ শুরু করেন তরকারি বিক্রি। কেউ ফলের আড়তে, কেউ কারওয়ান বাজার আড়তে চাকরি নিলেন। নিরুপায় হয়ে সবাই এদিক-সেদিক চলে গেলেন। কেউ নিজের গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজে যোগ দিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য এটাই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বিষয়গুলো ইতিহাস থেকে পাওয়া।
শুধু কি তা-ই! জাতীয় প্রেস ক্লাব যে জায়গাটিতে বর্তমানে রয়েছে, সেই জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল তখন। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের দাবির মুখে বেঁচে থাকা পর্যন্ত আর পারেননি শেখ মুজিবুর রহমান। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে বোঝা যেত কী হয়। হয়তোবা প্রেস ক্লাবটি বর্তমান জায়গায় নাও থাকতে পারত।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পটপরিবর্তন। তবে ক্ষমতায় থেকে যায় আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান নেই। ক্ষমতা গ্রহণ করলেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমদ। আওয়ামী লীগের নেতারাই তখন মুশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন। বেশিদিন টিকতে পারলেন না তারাও। গণমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তখনও প্রত্যাহার হয়নি। আরেকটি পাল্টা ক্যু’র মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফ। তিনি মাত্র তিনদিন ক্ষমতায় ছিলেন। তিনদিনের মধ্যে তিনি খন্দকার মুশতাক আহমদ ও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দি করলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েম। এর সব ইতিহাসে আর না-ই বা গেলাম। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের প্রতি আওয়ামী লীগের দরদ বোঝানোর জন্যই মূলত সংক্ষেপে এ কথাগুলো বলা।
নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সিপাহি-জনতার সম্মিলিত সফল বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লবের মাধ্যমে গৃহবন্দি থেকে মুক্ত করা হয় জিয়াউর রহমানকে। সেনাপ্রধানের পদে তিনি বহাল হন। দেশের মানুষ ও সেনাবাহিনী মিলিতভাবে অর্থাত্ সিপাহি-জনতা সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন। এজন্য তার প্রতি ছিল মানুষের অবিচল আস্থা। রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি মানুষের আস্থার প্রতি সম্মান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতন্ত্র অর্থাত্ একদলীয় বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে হরণ করা বিচার বিভাগের সর্বময় ক্ষমতা আবার জিয়াউর রহমান সুপ্রিমকোর্টকে ফিরিয়ে দেন। প্রত্যাহার করে নেয়া হয় গণমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা। অর্থাত্ সংবাদপত্র প্রকাশে শেখ মুজিবুর রহমান যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সাংবাদিকরা হারানো কলম আবার হাতে তুলে নেন। ইত্তেফাক, অবজারভার রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় মূল মালিকদের কাছে।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে চাই, যেসব ‘বনেদী’ সম্পাদক এবং সাংবাদিক আজ বড় বড় কথা বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের এই অধিকার ফিরিয়ে না দিলে তারা কেউ সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারতেন না। তাদের মধ্যে যারা সাংবাদিকতা পেশাকে ধারণ করে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন, কেউ কেউ কেএফসি’র মালিকানায় রয়েছেন, তাদের হয়তো কেএফসিতে চাকরি করতে হতো। সাংবাদিক হিসেবে যারা ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন; তাদের অনেকেরই হয়তো আবেদন করারও যোগ্যতা থাকত না জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে।
শুধু তা-ই নয়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের মান উন্নয়ন ও সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রতিষ্ঠা করেন। এই পিআইবি প্রতিষ্ঠার পর মহাপরিচালক বানিয়েছিলেন বর্তমান প্রবীণ সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় এবিএম মূসাকে। অথচ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপরও তার মেধার মূল্যায়ন করেন জিয়াউর রহমান। তাকে পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রেস ক্লাবের যে ভবনটিতে বসে আওয়ামী দালাল সাংবাদিকরা জিয়াউর রহমানের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন, সেই ভবনটি তারই অবদান। প্রেস ক্লাবের জায়গা ক্লাবের মালিকানায় রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয় বেগম খালেদা জিয়ার অবদানে। জিয়াউর রহমানই প্রথম সাংবাদিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। মিরপুরে সাংবাদিক আবাসিক এলাকায় অনেক আওয়ামী সাংবাদিকও জিয়াউর রহমানের কল্যাণেই জমি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এরপর আরেকবার বেগম খালেদা জিয়া তার বিগত আমলে সাংবাদিক আবাসনের জন্য আরেকটি জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। তবে বর্তমান সরকারের কল্যাণে সেই জায়গাটিতে আর সাংবাদিকরা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাচ্ছেন না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
স্বৈরাচার এরশাদের আমলে আবার গণমাধ্যমের ওপর খড়গ নেমে আসে। এরশাদ যখন-তখন সংবাদপত্র বন্ধ করে দিতেন। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন বন্ধ করে দিয়ে এরশাদ সম্পাদক শফিক রেহমানকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এরকম অনেক সংবাদপত্র বন্ধ করেছেন এরশাদ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ চুয়াত্তরের বিশেষ ক্ষমতা আইনের সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া সংক্রান্ত এই বিধিটি (কালো আইন) অধ্যাদেশ জারি করে তুলে দেন। এর আগে সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতাদের নিয়ে তিনি একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। পরে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জারি করা অধ্যাদেশটি সংসদে আইনে পরিণত করেন। অর্থাত্ শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি ধারা ছিল—সরকার চাইলে যে কোনো সময় সংবাদপত্র বন্ধ করে দিতে পারবে। সেই ধারাটি বেগম খালেদা জিয়া উঠিয়ে দেন।
এরপর বলা যায় ১৯৯১ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত ছিল সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে এক স্বর্ণযুগ। বর্তমানে অনেকে, যারা নিজেদের ‘বনেদী’ সম্পাদক হিসেবে মনে করেন, তারা বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় পত্রিকা বের করার সুযোগ পেয়ে সম্পাদক হিসেবে আবির্ভূত হন। তখনই অনেকে দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক জনকণ্ঠ থেকে শুরু করে অনেক নতুন নতুন পত্রিকা বের করার সুযোগ পান। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার কল্যাণে সংবাদপত্র বের করার সুযোগ পেয়ে অনেকেই এখন আবার তাদের গালি দিতে পারছেন। না হলে হয়তো জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার দলকে গালি দেয়ার এ সুযোগটি তাদের থাকত না। আওয়ামী লীগের পক্ষে দালালি করার সুযোগও তারা পেতেন না জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে। বেগম খালেদা জিয়া গণমাধ্যম প্রকাশের ক্ষেত্রে উদার নীতি অনুসরণ না করলে হয়তো অনেকেই সম্পাদকও হতে পারতেন না।
সে বিষয়ে যা-ই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ আবার স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এখন আর শুধু ১৬-ই জুন নয়, আওয়ামী লীগের আমলের প্রতিটি দিনই হচ্ছে গণমাধ্যমের জন্য কালোদিন। আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় এসেই ভিন্নমতের মালিকানাধীন চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিয়েছে। ২০১০ সালের ১ জুন বন্ধ করে দিয়েছিল দৈনিক আমার দেশ। যদিও তখন আদালতের নির্দেশে আমার দেশ বের করার সুযোগ আবার হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আবারও আমার দেশ-এর ছাপাখানায় বাকশালি রক্ষীবাহিনী স্টাইলে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১০ সালের ১ জুন বাকশালি কায়দায় পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। এবারও আবার তাকে দিনের পর দিন রিমান্ডে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার জীবনকে শংকার মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে নির্যাতনের মাধ্যমে। মাহমুদুর রহমানের ওপর এই নির্যাতন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের বাকশালি নির্যাতনকেও হার মানায়। তখন সম্পাদকদের গ্রেফতার করা হলেও এভাবে বানোয়াট মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়নি। আমি মনে করি, মাহমুদুর রহমানের রিমান্ডের প্রতিটি দিন স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য কালোদিন হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। সত্য লেখার কারণে কোনো সম্পাদককে অতীতে কখনও এভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়নি। এই নির্যাতন পাক বাহিনীর নির্যাতনকেও হার মানায়। কথায় কথায় স্বাধীনতার চেতনা বলে যারা মুখে ফেনা তোলেন, স্বাধীনতার চেতনা ছিল গণতন্ত্র, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও বাকস্বাধীনতা। এর কোনোটাই আজ নেই। আইনে নয়, দেশ চলে আজ ব্যক্তির ইচ্ছায়। আদালত রায় দেয় সরকারের নির্দেশনায়। অর্থনৈতিক মুক্তির বদলে মানুষ না খেয়ে মরছে। আর বাকস্বাধীনতা কতটা রয়েছে, এর প্রমাণ হলো দৈনিক আমার দেশ, মাহমুদুর রহমান, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, শীর্ষ নিউজসহ মফস্বলের অনেক পত্রিকা। ১৯৭৫ সালের মতো আজও হাজার হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আর আমার নিজের কথা না-ই বা বললাম।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
বিষয়: রাজনীতি
২০৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন