একজন সমীরন বুড়ি

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:৩৬:০৩ সকাল



-কিরে দিলি না? কতক্ষন দইরা বইসা আছি, দুয়ারে, চাইট্টা ভাত খামু, খবর নাই ছেমড়ির।দে, দে না, কিরে কই গেলি?

মরিয়ম সমিরুন্নেসা বুড়ি গেট যেনো ভেঙেই ফেললো।আশি পঁচাশি বছরের অশীতিপর বৃদ্ধা, শত ছিন্ন মলিন পোষাক,খালি পায়ে বাশের লাঠি ভর করে টুক টুক করে শব্দে প্রতি শুক্কুর বারে সুমনার বাসায় আসবেই, আর এসেই একতলার গাড়ী বারান্দার কলাপসিবল গেট ধরে মারে ঝাকুনি। মামুন নামাজ পরে এসে প্রতি শুক্কুর বারেই এই উৎপাত সহ্য করে।সুমনার অতিথি কিছু বলাও যায় না।বুড়িটা এমনিতে হাটতে পারে না অথচ গেটে এমন জোড়ে শব্দ করে মনে হয় ইনক্রিডিবল হাল্ক।বাড়ীওয়ালা থাকে না,দোতলার ভাড়াটে ইসহাক সাহেব গোবেচারা মানুষ এসব নিয়ে তার অভিযোগ নেই,কিন্তু তবুও সুমনার জন্য মামুন বুড়ির সব অত্যাচার সহ্য করে যায়।একবার হলো কী, খাবার খেয়ে দেয়ে দরোজার বড় ইরানি পাপোষেই শুয়ে পড়ল বুড়ি।শুয়েই ঘুম।ঘুম ভাঙলো সেই বিকেলে,আর পাপোষেই মুতে টুতে নাশ বিনাশ।মামুন রাস্তা থেকে পরিচ্ছন্নতার লোক এনে নগদ দুশো টাকা খরচা করে সেই মুত্র সাফ করেছে।মামুনের বুঝে আসে না সুমনার মতো বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার এই বুড়ির মধ্যে কি পেয়েছে।পারে তো তাকে এনে ড্রয়িং রুমে এনে বসায়।বুড়ির প্রতি অতিরিক্ত আদিখ্যেতায় মাঝে মাঝে সুমনার প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় মামুনের।তবুও কিছু বলা হয় না।মামুন মনে মনে ঠিক করলো বুড়ি আজ বিদেয় হলে কিছু বলবে সে সুমনাকে।

-ও ওই ছেমড়ি দিলি না খাওন, আইজ কি পুলাও কুরমা দিবি, এত সময় নিতাছস?

আবারও হাঁক দিলো বুড়ি।

এইবার রান্না ঘর থেকে ম্যালামাইনের বড় জামাই থালায় সত্যি সত্যি পোলাও, মুরগীর রোষ্ট, মাছভাজা, সবজি ও খাসির রেজালা, আর বোতলে খাবার পানি সাজিয়ে বুড়িকে খেতে দিল সুমনা।

-আইছস, তুই ম্যালা দিন বাঁচবিরে ছেমড়ি

-নেও খাও, অত কতা কইয়ো না

সুমনা ছোট্ট পাটি পেড়ে খাবার পরিবেশন করলো দরোজার সামনে।

-তুই কত্ত ভালা, আর তর সোয়ামীডা কিমুন হিংসুট্টা, দুইলা খামু তাও কেমন করে।মইরা গেলে এই বুড়িরে কই পাইবো?

-ছি,এই কথা কইয়ো না।তুমি মরবা ক্যা

সুমনা কেমন কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।

-দেহ দেহ ছেমড়ি কান্দে, ধুর ধুর, আমি এমনি কইছি। আহ বুড়ি ফোকলা দাঁতে হাসে।

-একটা কতা কই?

-ক রে ছেমড়ি।

-আম্মা বাড়ীত যাওয়ার আগে বলছে আমি যেনো তোমারে আমার কাছে আইন্যা রাখি।বুড়ি তুমি আমার লগে থাকবা? সুমনা পারে তো বুড়ির পা ধরে।

মামুন দরোজার আড়াল থেকে সব শোনে।ওর গা ঘিনঘিন করে ওঠে।এতটা বাড়াবাড়ি সুমনা কেন করছে?

-ধুর, ছেমড়ি, তাই কি হয়।জামাই কী ভাববো, আর আমার বস্তির ঘরে ছাওয়ালডার কত স্মৃতি। ছেলেটা আমার যমুনাসেতুর কাম করবার গিয়া এক্সিডেন্টে মরলো।তার শইল্যের গিরান এহনও বিছানাত পাই।আহা কেমনে হেই গিরান থুইয়া তর এইহানে আহি।

বুড়ি খাওয়া দাওয়া করে, সুমনা বুড়িকে বড়গেট পার করে নিজে রিক্সায় তুলে দেয়, হাতে টাকাও দেয় কিছু, বুড়ি প্রথমে নিতে চায় না।তারপর জোড়াজুড়ির কারনে নেয়।সুমনা ফিরে এলে মামুন কড়াকথা কিছু বলবে বলেও বলতে পারে না।সুমনার চোখভেজা।সুমনার ভেজাচোখে চোখ পড়তেই মামুনেরও মন নরম হয়ে যায়।সুমনাই দ্বিধা ভেঙে বলতে থাকে,

-জানো সমীরন বুড়িকে মা চাচী ডাকতেন।বাসায় ছিটে বুয়ার কাজ করতো।আমি তখন খুব ছোট।একদিন আমার প্রচন্ড জ্বর হলো। ডাক্তার দেখানোর পর টেষ্টে ধরা পড়ল আমার দুটো কিডনীই অকেজো, সে সময় বাবার এত টাকাও ছিল না।যাই হোক এই সমীরন বুড়ি তার একটা কিডনী আমায় দেয়।আশপাশের আত্মীয় পরিচিতদের মধ্যে তার সাথেই আমার ব্লাডগ্রুপ পুরোপুরি ম্যাচ হয়, বাবা মা-চাচা- খালা কারো সাথেই ম্যাচ করেনি। অথচ সমীরন বুড়ি এর বিনিময়ে কিচ্ছু নেয় নাই, সেই যে সে জীবন দিলো আমিও বাঁচলাম, সেও প্রায় নব্বই বছর বয়েসের হয়ে গেল।মামুন এই কথাগুলো জানলে হয়তো বুড়িকে তুমিই রাখতে চাইবে।অথচ দেখো সেই আমাকে এসব তোমাকে বলতে নিষেধ করেছে।

সুমনার কাছ থেকে শোনার পর মামুনের বেশ অপরাধী লাগে নিজেকে।সুমনাকে কিছু না বলেই সে বেড়িয়ে পড়ে সাহারা বস্তির দিকে, যেখানে সমীরন বুড়ি থাকে।বড়মনের মানুষগুলোকে তুচ্ছ করেই ছোট মানুষেরা হরহামেশা যে পাপ বাড়িয়ে চলেছে একজন ছোট মানুষ মামুন, সমীরন নামের বিশাল মানুষের কাছে কড়জোড়ে ক্ষমা চেয়ে তার কিছু পাপমোচন করবে আজ।

কিন্তু মামুন কি সে সুযোগ পাবে?

এই যে কিছুক্ষন আগে বড়রাস্তায় সিএনজি অটো ট্যাক্সির সাথে রিক্সার সংঘর্ষে একটা বড় অঘটন ঘটে গেছে।

মামুন সমীরন বুড়ির থেতলে যাওয়া মাথার দিকে তাকিয়ে ভাবছিল বুড়িটা এত মমতা দিয়ে সুমনাকে যেভাবে মাথায় রেখেছিল সে মাথায় কোথথেকে এত মাছি এলো?clt

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৩ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

313844
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:১৮
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : গল্প শেষে চুখে পানি চলে এলে।
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৯
255091
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : ধন্যবাদ
313846
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভাইজান আপনার গল্পটা পড়ে সত্যি ভাল লাগলো
জাজাকাল্লাহ
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৯
255092
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck
313851
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৫৫
সুমন আখন্দ লিখেছেন : ভাল লাগলো ভাইজান, অনেক ধন্যবাদ
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৬
255088
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : কিডনি র চেয়েও কত গুরুত্বপূর্ন জিনিস এই না দিয়ে যাচ্ছেন সমীরণ রা আমাদের নিয়মিত..।
313855
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৫৮
হতভাগা লিখেছেন : কোথায় কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছিল ?

সমীরনের বয়স যদি এখন ৯০ হয় তাহলে সুমনাকে ( যে কি না বুয়েট পাশ, মিনিমাম ২৩ বছর ) যখন সে কিডনী দিয়েছিল (খুব ছোট ছিল , মানে ৫-৬ বছর) তখন তার বয়স ছিল ৭০+।

এ বয়সের একজন মানুষের কাছ থেকে যে কিডনী নেওয়া হয়েছিল সেটা কোথায় হয়েছিল ? ডোনারের যদি রিক্স থেকে থাকে তাহলে ডাক্তারেরা তা সহজে এটা করতে চায় না ।

কিডনী দান করার ব্যাপার স্যাপারটা কিন্তু খুব একটা সহজ না , অনেক আইন কানুন আছে ।

আর আজ থেকে ১৭-১৮ বছর আগে বাংলাদেশের কোথায় কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট হওয়া শুরু করেছিল এবং তা সফলও হয়েছিল ?

কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্টের সবচেয়ে রিক্স হলো রিজেকশন , এটা ট্যাকল দেওয়ার মত এবিলিটি বাংলাদেশের সে সময়ের কোন হাসপাতালের ছিল ?

১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৪০
255093
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : কিডনি র চেয়েও কত গুরুত্বপূর্ন জিনিস এই না দিয়ে যাচ্ছেন সমীরণ রা আমাদের নিয়মিত..।
313872
০৯ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:০০
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৮
255089
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : ধন্যবাদ
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৮
255090
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : ধন্যবাদ
313875
০৯ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৫৬
আফরা লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
314094
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৩৮
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File