সংস্কারবাদী প্রত্যেকটি মানুষের পক্ষে অপরিহার্য কর্তব্য

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৭:১৪ সকাল



মাঝে মাঝে শব্দ হারিয়ে অনুভুতি হীন হয়ে পড়ি। আসলে কি অনুভুতিরা কখনো হারায়?

নাকি শব্দ যোগ্যতা হারিয়ে অনুভূতি প্রকাশে ব্যর্থ হয় ?

এটি কি শব্দের দোষ ? নাকি আমার শব্দ ধারনের অক্ষমতা ?

হায় আল্লাহ ক্ষমা করো। সঠিক সময়ে সঠিক অনুভূতি প্রকাশে যেন আমার শব্দরা প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়ায়। আমিও মুসা (আঃ) এর মত তোমার কাছে বলি রাব্বি জিদনি ইল্মা রাব্বি ইয়াসসির আলা তোয়াসসির অতামিন আলাইনা বিল খায়ের।রাব্বিস রাহালি সদরি ওয়াসসিরলি আম্রি অহালাল ওকুদাতাম মিল লিসানি ইয়াফ খাহু খাউলি।

অনেক কিছু নিজে পড়লে বুঝা যায়না, অন্যকে বুঝাতে গেলে বলতে গেলে , পৌছে দিতে গেলে সঠিক জ্ঞান উপলব্ধ হয় । এই জন্যই কি নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন আমার কাছ থেকে এক লাইন পরিমাণ জানলে ও তা অপরের নিকট পৌছে দাও।

গতকাল আমার একটি আলোচনা ছিল একটি প্রশিক্ষন কর্মশালায়। বিষয়ঃ ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি

এই ভিত্তি আলোচনা করতে গিয়ে আমার নিজেরই চিন্তার ভিত্তিমূল নড়েচড়ে উঠে।

আমাদের সমাজের চিন্তা চেতনায় যে অসৎ নেতৃত্বের উৎখাত করে সৎ নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠাকে ও যে রাজনৈতিক কর্ম সুচি মনে করা যে কত বোকামী তা গতকাল আলোচনা না করলে বোধগম্য হতো না।

আপনারা জানেন, আমাদের ইসলামী আন্দোলনের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন। এই দুনিয়াতে আমরা যে লক্ষ্যে উপনীত হতে চাই, তা এই যে, মানব জীবনের সর্বক্ষেত্র হতে ফাসেক, আল্লাহদ্রোহী ও পাপীষ্ঠ লোকদের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য নির্মূল করে দিয়ে তদস্থলে আমরা সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করবো। এই উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সাধনা ও সংগ্রাম করাকে আমরা ইহকাল ও পরকাল সর্বত্রই আল্লাহর সন্তোষলাভের একমাত্র উপায় বলে বিশ্বাস করি।

কিন্তু আমরা যে জিনিসকে নিজেদের চরম উদ্দেশ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করে নিয়েছি, বর্তমান মুসলিম অমুসলিম কেউই এর গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্ণরূপে সচেতন ও অবহিত নয়। মুসলমানগণ একে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মাত্র বলে মনে করে। দীন ইসলামে এর গুরুত্ব যে কতোখানি, তা তারা মাত্র অনুধাবন করতে সমর্থ হয় না। অমুসলিমগণ কিছুটা হিংসার বশবর্তী এবং অনেকটা অজ্ঞতাবশত মানব সমাজের মূলগত সমস্যা সম্পর্কে একেবারেই অচেতন হয়ে আছে। এই দুনিয়ায় মানব সমাজের সকল দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদ-মুসিবতের মুলীভূত কারণ হচ্ছে মানুষের উপর ফাসেক আল্লাহদ্রোহী পাপী ও অসৎলোকদের নেতৃত্ব। পৃথিবীর সর্বাধিক কাজ-কর্মের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কেবলমাত্র সৎ ও আল্লাহর অনুগত লোকদের হাতে ন্যস্ত হওয়ার উপরই মানবতার কল্যাণ একান্তভাবে নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানে মানুষ এই কথা মাত্রই হৃদয়ংগম করতে পারছে না। আজ বিশ্বের মানব সমাজে যে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, অত্যাচার-জুলুম ও নির্যাতন-নিষ্পেষণের স্বপ্লাবী সয়লাব বয়ে চলছে, মানব চরিত্রে যে সর্বাত্মক ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, মানবীয় সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রতি রন্দ্রে রন্দ্রে যে বিষ সংক্রমিত হয়েছে, পৃথিবীর যাবতীয় উপায়-উপাদান এবং মানব বুদ্ধির আবিস্কৃত সমগ্র শক্তি ও যন্ত্র যেভাবে মানুষের কল্যাণ ও উন্নতি বিধানের পরিবর্তে ধ্বংস সাধনের কাজে নিয়োজিত হচ্ছে এসবের জন্য মানব সমাজের বর্তমান নেতৃত্বই যে একমাত্র দায়ি, তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। দুনিয়াতে সৎ ও সত্য প্রিয় লোকদের কোনো অভাব নেই একথা ঠিক, কিন্তু দুনিয়ার যাবতীয় কাজ-কর্মের কর্তৃত্ব এবং সমাজযন্ত্রের কোনো চাবিকাঠি তাদের হাতে নয়, এই স্বতঃসিদ্ধ। বরং বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্রই কর্তৃত্ব রয়েছে আল্লাহদ্রোহী, আল্লাহবিমুখ, জড়বাদী ও নৈতিক চরিত্রহীন লোকদের মুষ্ঠিতে। এমতাবস্থায় যদি কেউ দুনিয়ার সংস্কার-সংশোধন করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয় এবং বিপর্যয়, উচ্ছৃংখলা, অশান্তি, অসচ্চরিত্রতা এবং অন্যায়কে পরিবর্তিত করে শান্তি-শৃংখলা এবং সুসংবদ্ধতা-সচ্চরিত্রতা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টানুবর্তী হয়, তবে পুণ্য ও সওয়াবের ওয়াজ আল্লাহর বন্দেগী করার সদুপদেশ, সচ্চরিত্রতা, নির্মল নৈতিকতা গ্রহণের মৌখিক উৎসাহ দেয়াই কখনো উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য যথেষ্ট হতে পারে না। বরং মনুষ্য জাতির মধ্যে সত্য প্রিয়তা ও ন্যায়পন্থী যতো লোকই পাওয়া যাবে, তাদের একত্রিত ও সংঘবদ্ধ করে সমষ্টিগত শক্তি অর্জন করা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব ফাসেক ও আল্লাহদ্রোহী লোকদের হাত হতে কেড়ে সত্যপন্থী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করাই সংস্কারবাদী প্রত্যেকটি মানুষের পক্ষে অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে পড়ে।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291693
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
235282
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আমিন, চুম্মা আমিন।
291709
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : "ফিরআউর এর দেশে ইখওয়ান" বইটিতে যা পড়েছিলাম সেই অবস্থা এখন এই দেশের।
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
235281
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : জ্যি ভাইয়া..।
291819
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৫
ভিশু লিখেছেন : এতো অত্যাচার-অনাচার, ইসলামের ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ দেখে কোনো যথাযথ মানসম্পন্ন আল্লাহ-প্রেমিক মানুষ শুধুই চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্ভাব্য কিছু একটা তাঁকে ভাবতেই হবে, সংঘবদ্ধ হতে হবে, সক্রিয় হতেই হবে। না হয়, আল্লাহকে ভালোবাসি, ভয় করি, তাঁর ক্ষমা ও করুণা চাই - এসব কথাগুলো তার ক্ষেত্রে খুব যৌক্তিক এবং বাস্তব বলে মনে হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File