ফিরকা.............।
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৬ জুলাই, ২০১৪, ১০:৫৬:৫৬ সকাল
ইসলামে ফিরকা গুলো একই ফুল গাছের বিভিন্ন মঞ্জুরির মত।
ধর্মতত্ত্বে মতামতের ভিন্নতার কারণে বিবিধ ফিরকা গড়ে উঠতে পারে না। ইখতেলাফ মানে ভিন্ন দল তা হতে পারে না। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম উম্মাহ এক সুন্দর বৈচিত্রতার ঐতিহ্য লালন করেছে। ফিরকা-দলাদলির উপদ্রব বাড়িয়েছে কেবলমাত্র আকীদা, আমলের বড় বিষয়গুলো। উদাহরণস্বরুপ, তাক্দির নিয়ে উদ্ভব ঘটেছে দুটো ফিরকার। একদল তাক্দিরকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আর অন্য দল তা করে না। মুসলিমরা ছোট ছোট বিষয়গুলোকে পরিণত করেছে আকীদা ও ধর্মতত্ত্বের বড় আলোচনায় । উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, নামায কিভাবে পড়বেন, আমিন জোরে পড়বেন না আস্তে পড়বেন, তারাবিহ ৮ রাকাত না ২০ রাকাত, চাঁদ দেখা নিয়ে দ্বন্ধ ইত্যাদি। এক মহা মুশকিল। চাঁদ দেখা নিয়ে আলাদা সম্প্রদায় গড়ে উঠতে পারে না। দেখতে হবে কোন মত পার্থক্যগুলো বড় আর কোনগুলো ছোট বা অতি নগণ্য। তাহলে উপসংহার কি?
প্রথমত, মুসলিম উম্মাহর বিশাল অংশ আকায়েদ ও ফিক্হী ইখতেলাফের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। সাধারণ মুসলিমদের আকীদার সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার দরকার ও নেই। গড়পড়তা মুসলিম যদি ইসলামের ছয়টি স্তম্ভ মানে, নামায পড়ার চেষ্টা করে, পাপ থেকে বিরত থাকার তদবির চালায়; তাহলে সে ভাল মুসলিম। অপরপক্ষে, যারা ইসলামিক ডিসিপ্লিন নিয়ে পড়াশুনা করেন, যারা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন, যাদেরকে মসজিদে ভূমিকা রাখতে হয়; তাদেরকে অবশ্য যে কোন বিষয়ে একটা তাত্ত্বিক অবস্থান নিতে হয়। ওলামারা নয় বরং তাদের অনুসারীরা ফিরকাগত সহিংসতায় সবচে বেশি জড়ায়।
একই বাগানের সব গাছ কি সমান??
সংলাপে সমাধানের সম্ভাবনা লুকায়িত। কুরআন ও সুন্নাহ অন্য ফিরকার উপর নিজের আকীদা চাপানোর জন্য কখনো শারীরিকভাবে আঘাতের অনুমোদন দেয় নি। খুব পরিস্কারভাবেই বলি, আমি সুন্নি। আমার স্পেশেলাইজেশন আকীদার উপর। আমি সুন্নি মতাদর্শ মানি, প্রচার করি ও শিক্ষা দিই। আমি শিয়াদের আকীদার সাথে ভিন্ন মত পোষণ করি। তাই বলে আমি কখনো শিয়াদের উপর হামলা করা, তাদের মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া বা বোমা হামলার অনুমতি দিতে পারি না। আমি যতই আমার আকীদার ব্যাপারে উৎসাহী হই না কেন আমি কারো উপর এই আকীদা জোর করে চাপানোর অনুমোদন দিতে পারি না, বোমা হামলা সমর্থন করতে পারি না। যারা বোমার সাহায্যে, তলোয়ারের সাহায্যে অন্যের উপর নিজের আকীদা চাপাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাকে সোচ্চার হতে হবে। আপনি যা বিশ্বাস করতে চান তা বিশ্বাস করুন। যখন যুক্তি-তর্কে করতে চান তাও করুন কিন্তু অন্য জন যা বিশ্বাস করতে চাই, তা তাকে বিশ্বাস করার স্বাধীনতা দিন।
সমাজের দা’য়ী, শাইখ, আয়াতুল্লাহ ও ওলামাদের অত্যন্ত সতর্কভাবে তাদের বক্তব্য পেশ করতে হবে। প্রত্যেক বিতর্কিত বিষয় আলোচনার একটা সময়, শ্রোতা, ভাষা ও পদ্ধতি আছে। যদিও ওলামারা সহিংসতা প্রচার না করে, তথাপি তাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা তাদের অনুসারীদেরকে শারীরিক হামলা চালাতে উস্কে দিতে পারে। ইসলামি চিন্তাবিদ ও ওলামাদের উচিত হিকমাহর সাথে তাদের আদর্শ প্রচার করা। ভাই ও বোনেরা, অতীত জীবনের ভুল থেকে আমিও প্রচুর শিখেছি। দুই দশক আগে আমি নিজেও বিদ্রোহাত্মক বক্তৃতার স্ফূলিঙ্গ ছড়াতাম। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি আজও অনুতপ্ত। এসব ছিল তরুণ বয়সের কথা। আমি অজুহাত দিতে পারি এসব আমার ২০-২২ বছর বয়সের কথা কিন্তু তা আমার ভুল শুধরাবে না। ইস! আমি যদি আমার কথাগুলো ফিরিয়ে নিতে পারতাম!! দা’য়ী ইলাল্লাহ এবং ওলামাদের আদর্শ প্রচারে স্বাধীনতা থাকলেও ঘৃণা, বিদ্বেষ, সহিংসতা ও রেষারেষি ছড়ানোর অনুমতি ইসলামে নেয়।
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যারা আকীদা নিয়ে উৎসাহী আমার মত তাদের মনে রাখা উচিত ইসলাম সবসময় মহৎ কোন উদ্দেশ্যে একে অপরকে সহযোগিতার তাগিদ দিয়েছে সে যেই দল, মত বা ধর্মেরই হোক। কোরআনের ভাষায়, “তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপাচার ও সীমালঙ্ঘনে মদদ দিয়ো না”। আপনার আকীদা ও সামাজিক পরিবেশ যাই হোক, বড় লক্ষ্যে একে অপরকে সহযোগিতা করা যায়। কিছু বিষয়ে আমাদের একে অপরকে সহযোগিতা করা উচিত। সহযোগিতার স্বার্থে সমজাতীয় হওয়া অত্যাবশ্যক নয়।
অতীতে ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে আমেরিকার মুসলমানদের মধ্যে নিজেকে সুন্নি, শিয়া, বেরলভী, আহলে হাদিস পরিচয় দেওয়ার মত বিলাসিতা ছিল না। সকল আমেরিকান মুসলিম মিলে তখন তারা মসজিদ নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তখনকার অল্পকয়েক মুসলিমরা যদি ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, তাহলে আর মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব হতো না। এরপর ১৯৭০ সালে এবং ৮০ এর দশকের গোড়ায় আমেরিকায় মুসলিম অভিবাসির অনুপ্রবেশ বাড়তে লাগল এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজনও প্রকাশ পেতে শুরু করল। আলহামদুলিল্লাহ তখনও কোন সমস্যা হয় নি; মুসলিম ও শিয়া যে যার মত চলতে লাগল। কিন্তু সংকট তখনই তৈরি হয় যখন সরকার শরীয়া নিষিদ্ধ করতে চাই বা মুসলিমদের উপরে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়; তখন সকল মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য থাকা চাই, সম্মিলিত অবস্থানে সবার একটি কণ্ঠস্বর থাকা চাই। সময় ও স্থান বুঝে সকলকে হাতে হাত মিলানো প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ হলেও কোন সমস্যা নেই। ব্যবধানগুলো ভুলে এক হওয়া মানে এই নয় যে, মতের পার্থক্যগুলোকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। বরং এর দ্বারা আমরা ছোট বিষয়ের উর্ধ্বে উঠে বড় বিষয় দেখবো।
ভাই ও বোনেরা, দলাদলি ও সাম্প্রদায়িকতার সবচে বড় ক্ষতির দিক অহমিকা বা আত্মম্ভরিতা। আল্লাহর চোখে অহংকার অত্যন্ত ভয়াবহ অপরাধ। যে কেউ তার আকীদা ও ধর্মতত্ত্ব সঠিক মনে করতে পারে। তার মানে যেন এই না হয়, যে আমার মতের সাথে যে ভিন্ন মত পোষণ করবে, আমি তার চেয়ে উত্তম। হতে পারে আমার বিশ্বাস সহীহ, কিন্তু আমি ব্যক্তি হিসেবে ভাল না। আকীদা ও ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা জরুরী। সঠিক পথে থাকার এই আত্ম-নিশ্চয়তা আমাকে জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারে। আকীদার বিষয়ে বিনয়ী হওয়া বাঞ্চনীয়।
যদি আমি আর আপনি দুজনেই মনে করি নিজ নিজ অবস্থানে কেবল আমিই সঠিক তবে আমাদেরকে সেই কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে যা রাসূল (সঃ) এর জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছে, এমন সত্য যা বিনয়ের দিকে ধাবিত করে, অহংকার দূর করে। আমাদের সেই নিয়মে ফিরে যেতে হবে যা রাসূল (সা) ও ঈসা (আ) আমাদের শিখিয়েছেন, প্রত্যেক নবী শিখিয়েছেন- অন্যদের সাথে ঠিক ঐ রূপ আচরণ করুন, যেমনটি আপনি নিজে তাদের কাছ থেকে আশা করেন। এটিই স্বর্ণসূত্র, সেই নিয়ম যা আল্লাহ এবং তাঁর দূত মুহাম্মদ (সা) আমাদের জন্য দিয়েছেন এবং যা রহমত ও সহমর্মিতার নিয়ম।
আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লহি ওয়া বারাকাতুহু।--ইয়াসির ক্বাদী সংক্ষেপিত
বিষয়: বিবিধ
২১৪৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'' বুনিয়াদু ইসলামি 'আলা খামছি .......''
অর্থ : ইসলাম ধর্ম পাঁচটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে আছে ....
১. কালেমা ২. নামাজ ৩. রোজা , ৪.হজ্জ ও ৫. যাকাত এগুলো হলো সেই ৫ টি স্তম্ভ ।
এখানে আপনি ইসলামের যে ছয়টি স্তম্ভের কথা বলেছেন , সেগুলো কি কি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন