সেইদিন কারাগার হতে বোনদের বাহীর করার শেষ কিছুক্ষন........

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৬ জুলাই, ২০১৪, ০২:২৮:১২ দুপুর



''সকল কিছুর বদলাতে দাও খোদা তোমার রাজ... ''

জেল খানায় যাওয়া আসা হয় কদাচিৎ। সেইদিন বোনদের আনতে গিয়েছিলাম । এক বোন ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে তার অবিভাবক কে জেল অফিসের ভিতর থেকে ডেকে বললেন আপনারা ইফতার করে নিন । আমাদের ছাড়বে ইফতারের পর। আমি এক কারা রক্ষীকে ৫০০ টাকা দিয়ে রেখে ছিলাম আমাদের ৫ জনের ইফতারী তার বাসায় করার জন্য । সে টাকা নিতে চায়নি আমি জোর করে দিলাম। তার কি আন্তরিকতা সে বার বার কল করছে বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু অনুরোধ গাড়ী আর মটর সাইকেল যেন না নিয়ে হেটে যাই । এদিকে আমরা যাব এই সময় একজন কারারক্ষী যে গেইটে দ্বায়ীত্ব পালন করেন তার ডিউটি শেষে বের হয়েই প্রকাশ্যে টাকা চায় । এর আগে বিকাল ৫ টার দিকে সরাসরি চায় ১০০০০ টাকা। না দিলে রাত ১০:০০ টা বাজাবে। বলে কি সকাল থেকে বসে আছেন না , বুঝেন না কি করতে হবে? আমি বলি ১০:00টা বাজুক সমস্যা নাই। যা হোক তার হাতে খেজুর ছিল গেইত হতে বাহির হওয়ার সময়ই নিয়ে বাহির হইছে। আমি তার হাত থেকে সে গুলো নিলাম তারপর বললাম ইফতার করান । অনেক কিছু বলার পর বলে কি চলেন । আমি আর দেরী না করে তাকে গাড়ীতে উঠতে বললাম সে উঠল । ড্রাইবারকে বললাম সে যেদিকে যেতে বলে সে দিকে চলেন। ড্রাইভার ভঁয়ে ভঁয়ে চালায় বাসায় পৌছে আর গাড়ী থেকে নামে না। আমি আর জাহাঙ্গীর নগরের একভাই যে তার বোনকে নিতে এসেছে , তাকে নিয়ে যার বাসায় ইফতার করার কথা ছিল তার বাসায় গেলাম তাকে বললাম আপনি তো আমাদের ভালবাসেন তাই আপনাকে কালার করে বিপদে ফেলতে চাই না। সে বলল কি করব ভাই বলেন জামাত শিবির সাথে নিয়ে ইফতার করেছি এটি জানলে আই জি সাথে সাথে বদলী করে দিবেন। তারপর ও সে বাসায় নিয়ে গেলেন রিকোয়েস্ট করছেন ইফতার করার জন্য । আমি বললাম আমাদের জন্য যা কিনেছেন পলিথিনে দেন আমরা ওমুকের বাসায় গাড়ী রেখে অন্যদের ঐ খানে রেখে এসেছি আপনার যেন সমস্যা না হয় এজন্য । কালার হলে ঘোষ খোর হবে । আমাদের ভাই কেন বিপদে পড়বে? ইতোমধ্যে উনার ছেলে চলে আসল সে অন্য কারাগারের কারারক্ষী, সে দেলোয়ার ভাইয়ের কথা বললেন সাবেক CP , বলে কি আমাদের কোরআন হাদিস শুনায় । খুব ভাল লাগে , আমিও আলীয়ায় পড়া শুনা করেছি। যা হোক লজ্জ্বা শরমের মাথা খেয়ে পলিথিনে ইফতার নিয়ে চলে আসলাম গেইটের রক্ষীর বাসায় , প্রতিমধ্যে আরেক কারারক্ষির সাথে দেখা সে বলল আমি সাঈদী হুজুরের ডিউটি করে আসছি আমাকে একটা উপহার দিয়েছেন। সে খুব খুশি , আমাদের ডাকলেন ইফতার করতে। আমাদের সাথে ছিলেন ঢাবির দুই বোনে শ্রদ্ধেয় পিতা , তারা ও খুব ডেডিকেটিভ , সবাই উৎসুক আমি কি করছি উপলব্ধি করার চেষ্টা করছেন। গেইট কারা রক্ষীর বাসায় যখন ডুকি তখন সে খুব ব্যাস্থ আমাদের ইফতার করা নিয়ে ছেলেকে বিভিন্ন কিছু আনার জন্য মোবাইলে বলতে ছিলেন। আমার হাতে অনেক ইফতারী দেখে স্বস্থি ফেলেন বেচারা । সে ও কাঠাল শরবৎ আরো কিছু দিলেন , উনি সহ ইফতার করার পূর্বে ঢাবি সভানেত্রীর বাবাকে বললাম দোয়া করুন। তিনি প্রান খুলে দোয়া করলেন। অনেক আনন্দের সাথে সবাই মিলে প্রান খুলে ইফতার করলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌। ইফতার শেষে গেইট রক্ষির নাতিকে ১০০০ টাকা দিলাম বললাম জামা কিনার জন্য তোমার উপহার। ছোট্ট ছেলে সে কি চীৎকার সে নিবে না। তাও দিয়ে আসলাম , এদিকে তা দেখে তো কারারক্ষী দাদার মন গলে গেল। আমাদের সাথে নামাজ পড়ে কারা গেইটে গেলেন সহযোগিতার জন্য যদি ও তার ডিউটি ছিল না এবং লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। উনাকে বললাম কারারক্ষীরা হবে উন্নত নৈতিকতার তারা অপরাধীদের ভাল করবেন। তাদের স্লোগানে আছে "রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ" । যদি তারা ভাল মানুষ না হন অন্যদের কিভাবে ভাল করবেন? (যে কিনা ১০০০০ টাকা না দিলে রাত ১০টা বাজাবে সে এখন কত তাড়াতাড়ি মুক্ত করা যায় সে চিন্তায় অস্থির, বেচারা কত জনকে যে কল করল, আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়েত দান করুন) ।

কারা গেইটে এসে দেখি চোখ চলচল সফেদ দাঁড়ির এক কারা রক্ষী তিনি বললেন এই রকম ভাল মেয়ে আমি আগে আর দেখি নি ।কত সুন্দর করে পর্দা করে কত সুন্দর নামাজ পড়ে । আমি অফিস রুমে তাদের নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমি বললাম এরা জামাত শিবিরের মেয়ে । কোরাআনের দাওয়াত দেওয়ার অপরাধেই এরা অপরাধী । তিনি সরকারকে অভিসম্পাত করলেন। অতঃপর আমাদের বোনেরা বাহীর হয়ে আসলেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

আমি বলি অপরাধ করে সাহসীরা, তারা সমাজের বড় একটা অংশ তাদের ঠিক করার জন্য আল্লাহ্‌ হয়ত আমাদের মনোনীত করেছেন । তাই জেল খানার এই সুযোগটা কাজে লাগানো দরকার।

সেইদিন কারারক্ষী এক মহিলাকে দেখলাম সে বলে উরা চলে যাছে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে , তাদের সংসর্গে থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছি , তাদের মত মেয়েই হয় না। মহান প্রভু সর্বাবস্থায় দায়ী হিসাবে যথাযত ভুমিকা পালন করার আমাদের তৌফিক দিন । আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৬৪০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

242267
০৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:৪৬
হতভাগা লিখেছেন : আল'হামদুলিল্লাহ ! কিন্তু আবারও তো এরকম গ্রেফতার + হয়রানি করতে পারে ?!
০৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
188110
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : তা পারে । তাঁতে কি?? মানুষ একবারের বেশী মরে না। জীবন একটাই তা যদি দ্বীনের প্রয়োজনে লাগে , এটাইতো সফলতা ।
242274
০৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১২
বেআক্কেল লিখেছেন : প্লাস প্লাস বহু প্লাস ++++++++++++++++++++ ্+++++++++++++++++++++++++++++++++্
০৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
188111
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : মাইনাস মাইনাস অসীম মাইনাস।
242279
০৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
আমি মুসাফির লিখেছেন : আপনার বর্ননায় মনটা ভরে গেল । খুব ভাল লাগল ও অনুপ্রেরণা ও সহাস পেলাম।

জাজাকাল্লাহ খায়ের্
০৬ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০৩
188124
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : তাই বুঝি? সবাইতো মানুষ ,সবার ভিতরে ভালো একজন মানুস বসবাস করে।
242283
০৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
Anwarulhaque67 লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। খবর সরবরাহ করার জন্য ধন্যবাদ। মেয়েগুলোর জন্য খুব খারাপ লাগছিল। আমার এক আত্মীয় তার খালাকে জানালো সেও ঐ অনুষ্ঠানে ছিল।কি একটা জরুরী কাজে বাসায় এসেছিল। কাজ সেরে আবার যেত।যাহোক হয়ত জেলখানায় তার রিজিক ছিল না।
০৬ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০৫
188125
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : হয়ত
242303
০৬ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৫
রাইয়ান লিখেছেন : এই সন্মানিত মেয়েরা হচ্ছেন বাতির মত , যেখানেই যান ... আলো জ্বালিয়ে রেখে আসেন। শুধু যারা জালিম , তাদের ঘন অন্ধকারে ঘেরা হৃদয়টি ওই আলোর ছোঁয়া পায়না , তারা বড়ই বদনসীব। এই মেয়েদের কয়েকদিনের অবস্থানে জেলখানা কিছুদিনের জন্য হলেও ধন্য হয়েছে।
০৭ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০২
188334
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন। এরা হল আলোর মশাল। দেশের ঘন কালো অন্ধকারে এক চিলতে আলো।
242375
০৬ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৭ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
188335
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : ভালো লাগা রেখে যাওয়ার জন্য আন্তরিক মোবারকবাদ।
242452
০৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:০১
লেখার আকাশ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ধন্যবাদ আপনাকে। বোনদের কথা মনে করে কত যে মানুষ চোখের পানি ফেলে দোয়া করেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। আমাদের বোনেরা সেই জোনাকি যারা অন্ধকার দূর করতে আলো জ্বালে কিন্ত আন্ধকার দূর হয় না, শুধু তারাই জোনাকি হয়ে আলো হয়ে যায়, ইতিহাস গড়ে যায়।
০৭ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:৩০
188336
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : এরা বলে কি জানেন?? এরা বলে " আমরা হয়ত হজরত সোমাইয়া (রাঃ) হইতে পারব না, কিন্ত হজরত সোমাইয়া (রাঃ) এর বোন তো হতে পারব"
তাইতো বলি.........
এই কাফেলা রুখতে পারে সাধ্য কার...............
এই কাফেলা আল্লাহ্‌ ছাড়া বাধ্য কার............
242558
০৭ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:১৩
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : ধন্যবাদ। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জেলে নেয়া মানেই সেখানেই দ্বীনের আলো ছড়ানো। ধন্যবাদ।
০৭ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:১৮
188431
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : হ্যা ভাই অন্ধকারে আলো এরা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File