ঘুরে আসলাম কক্সবাজার .....................৫

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৩ জুন, ২০১৪, ০৯:৫৯:৩১ সকাল



দেখুন না কি চমৎকার সাগর মেঘ একাকার.........

হ্যা বলেছিলাম অপর দুই বাবুর কথা। দুইজনেই ঢাকা শহরের চার দেওয়ালে বন্দী হয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে । বাহিরে গেলেই তাদের প্রান মন ভরে যায়। ছেলেটি তো প্রায় প্রতিদিন অফিসে আমার সাথে আসার জন্য কান্নাকাটি করে , আমার পথ আগলে ধরে। আজ এদের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ, তাদের থামায় কে? এদিকে আসে পাশের লোকজন বার বার সতর্ক করছে ছেলেটি জানালা দিয়ে পড়ে যাবে দরুন।ছেলে মেয়েটি কৌশলে বসেছে আমার মা অর্থাৎ তাদের দাদীর সাথে। আমি মাকে বারবার বলছি কিন্তু মা তাদের ছাড় দিচ্ছে। কিন্তু আমার যে একদিনের চরম অভিজ্ঞতা আছে?

হ্যা সেদিনের কথা রাত ১১ টার তূর্ণা নিশিতা আসছিলাম চট্টগ্রাম থেকে । সবে ছেড়েছে ট্রেন এমন সময় একটি পাথর এসে পড়ল আমার সামনের সিটে বসে থাকা সেনা সদস্যের কপালে। আহ সে কি রক্ত, প্রায় এক ইঞ্চি গর্ত হয়েছিল কপালে। দুর্ভাগ্য সাথে সাথে ঐ বগীর বিদ্যুৎ লাইন ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল অজানা কারনে। রেল কর্মকর্তাদের কাছে ফাস্ট এইড বক্স চাইলাম, বলল নেই। আমার পিছনের সিটে ছিল এক মেডিক্যাল ছাত্রী। সে আর আমি মিলে রুমাল আর কটন(কোথা থেকে পাওয়া ঠিক মনে নেই) দিয়ে কোন রকম ব্যান্ডেজ করি। সে দিন দেখেছিলাম আমার দেশের সৈনিকদের দ্রিঢ়তা ও স্থির চিত্ততা ,একটু ও সে আহ ওহ করেনি বরং এই অবস্থায় সে তার সাথে থাকা ব্যাগ আর ট্রাংক নিয়ে একাই বাটিয়ারী সেনা ক্যাম্পে নেমে যায়।

মার তো আর সে অভিজ্ঞতা নেই? কয়দিন আগে ও মারা গিয়েছে ট্রেনে পাঁথরের আঘাতে এক ছাত্রী।

তাই আমি মায়ের পাশে ছেলের সাথে চলে গেলাম। সে জানালা দিয়ে একটা গরু কিংবা ছাগল দেখলে ও চীৎকার করছে খুশিতে।

এক পর্যায়ে সে ঘুমিয়ে পড়লে আমি আমার পূর্বের সিটে চলে আসি বৌকে একটু রিলাক্স দেওয়ার জন্য আমার ছোট বাবুটিকে কোলে নিয়ে।

কিন্তু একটু পরে দেখি কি আমার ছোট্ট মেয়েটি পরম মমতায় তার ছোট্ট ভাইটির মাথাটি কোলে নিয়ে বাবু কে কিনে দেওয়া বই পড়ছে। মেয়েরা সম্ভবত জন্ম থেকেই বেশ কেয়ারিং হয়!

চলতে চলতে দেখি বাংলার দৃষ্টি নন্দন মাঠ, ঘাট প্রান্তর..।

সামনে বৈরব নদী ,সুন্দর ব্রীজ।

দুলিতে দুলিতে চলিতে চকিতে রেল ব্রীজের বিদ্গুটে আওয়াজে সজাগ হয় আমার আত্নজারা। তাদের মা কুল ড্রিংস কিনে নিয়েছিল ট্রেন থেকেই। ট্রেনের সেবকরা সেবা করে কিনা জানিনা তবে ব্যবসা করে ভালই। সব কিছুর দাম একটু বেশী , সমস্যা না এই খা খা ট্রেনে ভর দুপুরে তাও বা কোথা পাই। ছেলে তো আর ড্রিংস কাউকে খেতে দেয় না। তাই ট্রেন এক স্টেশানে থামাতে বাহিরের দোখান থেকে একটু বড় দেখে একটা কিনে নিয়ে আম্মাকে দিই। এখন তো ছেলে আমার লজ্জ্বায় পড়ে গেল...। মনে পড়ে গেল শিবিরের জেলা টি সি র সেই তিন দিনের কথা। এক আলোচক বলেছিলেন আমরা কেমন জানেন? সে শিশুদের মত । যাদেরকে তাদের মা বাবা কিছু একটা কিনে দেয়, তারপর আরো বেশী কিছুর দেওয়ার কথা বলে যদি সে জিনিষ টি চায় , তারপরও কি তারা দেয়? দেখুন মহাজ্ঞানী আল্লাহ আমাদের জানমাল দিয়েছেন, দিয়েছেন আমানত হিসাবে, আমাদেরকেই খরচ করতে বলেছেন তার নির্ধারিত প্তহে,আর তা যদি আমরা করি তবে আমাদেরকে দিবেন সুমহান জান্নাত ও তার সন্তুষ্টি। সেখানে যা চাই তা এই পাওয়া যায়, কি না আছে সেখানে। তবুও কি আমরা তার বিধান মেনে তার আমানত রক্ষা করি??

মহাজ্ঞানী আল্লাহ বলেন....

[﴿إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾

১১১) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন৷ ১০৬ তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে৷ তাদের প্রতি তাওরাত ,ইনজীল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ৷ ১০৭ আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো৷ এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য৷

১০৬ . আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ঈমানের যে ব্যাপারটা স্থিরকৃত হয় তাকে কেনাবেচা বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, ঈমান শুধুমাত্র একটা অতি প্রাকৃতিক আকীদা -বিশ্বাস নয়। বরং এটা একটি চুক্তি । এ চুক্তির প্রেক্ষিতে বান্দা তার নিজের প্রাণ ও নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দেয়। আর এর বিনিময়ে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ওয়াদা কবুল করে নেয় যে, মরার পর পরবর্তী জীবনে তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু অনুধাবন করার জন্য সর্বপ্রথম কেনা -বেচার তাৎপর্য ও স্বরূপ কি তা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

নিরেট সত্যের আলোকে বিচার করলে বলা যায় মানুষের ধন -প্রাণের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ । কারণ তিনিই তার কাছে যা কিছু আছে সব জিনিসের স্রষ্টা । সে যা কিছু ভোগ ও ব্যবহার করেছে তাও তিনিই তাকে দিয়েছেন। কাজেই এদিক দিয়ে তো কেনাবেচার কোন প্রশ্নেই ওঠে না। মানুষের এমন কিছু নেই, যা সে বিক্রি করবে। আবার কোন জিনিস আল্লাহর মালিকানার বাইরেও নেই, যা তিনি কিনবেন।কিন্তু মানুষের মধ্যে এমন একটি জিনিস আছে ,যা আল্লাহ পুরোপুরি মানুষের হাতে সোপর্দ করে দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে তার ইখতিয়ার অর্থাৎ নিজের স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতা ও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (Free will and freedom of choice)।এ ইখতিয়ারের কারণে অবশ্যি প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু মানুষ এ মর্মে স্বাধীনতা লাভ করে যে, সে চাইলে প্রকৃত সত্যকে মেনে নিতে পারে এবং চাইলে তা অস্বীকার করতে পারে। অন্য কথায় এ ইখতিয়ারের মানে এ নয় যে মানুষ প্রকৃত পক্ষে তার নিজের প্রাণের নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ও শারীরিক শক্তির এবং দুনিয়ায় সে যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা লাভ করেছে, তার মালিক হয়ে গেছে। এ সংগে এ জিনিসগুলো সে যেভাবে চাইবে সেভাবে ব্যবহার করার অধিকার লাভ করেছে, একথাও ঠিক নয়। বরং এর অর্থ কেবল এতটুকুই যে, তাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে , আল্লাহর পক্ষে থেকে কোন প্রকার জোর -জবরদস্তি ছাড়াই সে নিজেরই নিজের সত্তার ও নিজের প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর আল্লাহর মালিকানা ইচ্ছা করলে স্বীকার করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে নিজেই নিজের মালিক হয়ে যেতে পারে এবং নিজেই একথা মনে করতে পারে যে, সে আল্লাহ থেকে বেপরোয়া হয়ে নিজের ইখতিয়ার তথা স্বাধীন কর্মক্ষমতার সীমানার মধ্যে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার অধিকার রাখে । এখানেই কেনা -বেচার প্রশ্নটা দেখা দেয়। আসলে এ কেনা -বেচা এ অর্থে নয় যে, মানুষের একটি জিনিস আল্লাহ কিনতে চান, বরং প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে , যে জিনিসটি আল্লাহর মালিকানাধীন যাকে তিনি আমানত হিসেবে মানুষের হাতে সোপর্দ করেছেন এবং যে ব্যাপারে বিশ্বস্ত থাকার বা অবিশ্বস্ত হবার স্বাধীনতা তিনি মানুষেকে দিয়ে রেখেছেন সে ব্যাপারে তিনি মানুষের দাবী করেন, আমার জিনিসকে তুমি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে (বাধ্য হয়ে নাও) । এ সংগে খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছি তা তুমি নিজেই প্রত্যাহার করো। এভাবে যদি তুমি দুনিয়ার বর্তমান অস্থায়ী জীবনে নিজের স্বাধীনতাকে (যা তোমার অর্জিত নয় বরং আমার দেয়া) আমার হাতে বিক্রি করে দাও তাহলে আমি পরবর্তী চিরন্তন জীবনে এর মূল্য জান্নাতের আকারে তোমাকে দান করবো। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কেনা -বেচার এ চুক্তি সম্পাদন করে সে মুমিন। ঈমান আসলে এ কেনা-বেচার আর এক নাম । আর যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে অথবা অঙ্গীকার করার পরও এমন আচরণ করবে যা কেবলমাত্র কেনা- বেচা না করার অবস্থায় করা যেতে পারে সে কাফের। আসলে এ কেনা -বেচাকে পাস কাটিয়ে চলার পরিভাষিক নাম কুফরী ।কেনা -বেচার এ তাৎপর্য ও স্বরূপটি অনুধাবন করার পর এবার তার অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করা যাকঃ

এক এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ মানুষকে দুটি বড় বড় পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন। প্রথম পরীক্ষাটি হচ্ছে, তাকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেবার পর সে মালিকাকে মালিক মনে করার এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহের পর্যায়ের নেমে না আসার মতো সৎ আচরণ করে কিনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নিজের প্রভু ও মালিক আল্লাহর কাছ থেকে আজ নগদ যে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে, না বরং মরার পর পরকালীন জীবনে যে মূল্য আদায় করার ওয়াদা তার পক্ষ থেকে করা হয়েছে তার বিনিময়ে নিজের আজকের স্বাধীনতা ও তার যাবতীয় স্বাদ বিক্রি করতে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে রাজী হয়ে যাবার মত আস্থা তার প্রতি আছে কিনা।

দুইঃ যে ফিকাহর আইনের ভিত্তিতে দুনিয়ার ইসলামী সমাজ গঠিত হয় তার দৃষ্টিতে ঈমান শুধুমাত্র কতিপয় বিশ্বাসের স্বীকৃতির নাম। এ স্বীকৃতির পর নিজের স্বীকৃতি ও অংগীকারের ক্ষেত্রে মিথ্যুক হবার সুষ্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত শরীয়াতের কোন বিচারক কাউকে অমুমিন বা ইসলামী মিল্লাত বহির্ভুত ঘোষণা করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য ঈমানের তাৎপর্য় ও স্বরূপ হচ্ছে, বান্দা তার চিন্তা ও কর্ম উভয়ের স্বাধীনতা ও স্বাধীন ক্ষমতা আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দিবে এবং নিজের মালিকানার দাবী পুরোপুরি তার সপক্ষে প্রত্যাহার করবে। কাজেই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের কালেমার স্বীকৃতি দেয় এবং নামায -রোযা ইত্যাদির বিধানও মেনে চলে, কিন্তু নিজেকে নিজের দেহ ও প্রাণের নিজের মন, মস্তিস্ক ও শারীরিক শক্তির নিজের ধন-সম্পদ ,উপায়, উপকরণ ইত্যাদির এবং নিজের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত জিনিসের মালিক মনে করে এবং সেগুলোকে নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করার স্বাধীনতা নিজের জন্য সংরক্ষিত রাখে, তাহলে হয়তো দুনিয়ায় তাকে মুমিন মনে করা হবে কিন্তু আল্লাহর কাছে সে অবশ্যী অমুমিন হিসেবে গণ্য হবে। কারণ কুরআনের দৃষ্টিতে কেনা-বেচার ব্যাপারে ইমানের আসল তাৎপর্য ও স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সে আল্লাহর সাথে আদতে কোন কেনা-বেচার কাজই করেননি। যেখানে আল্লাহ চান সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ না করা এবং যেখানে তিনি চান না সেখানে ধন প্রাণ নিয়োগ ও ব্যবহার করা- এ দুটি কার্যধারাই চূড়ান্তভাবে ফায়সালা করে দেয় যে, ইমানের দাবীদার ব্যক্তি তার ধন প্রাণ আল্লাহর হাতে বিক্রি করেইনি অথবা বিক্রির চুক্তি করার পরও সে বিক্রি করা জিনিসকে যথারীতি নিজের মনে করেছে।

তিনঃ ঈমানের এ তাৎপর্য ও স্বরূপ ইসলামী জীবনাচরণকে কাফেরী জীবনাচরণ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়। যে মুসলিম ব্যক্তি সঠিক অর্থে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে সে জীবনের সকল বিভাগে আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে কাজ করে। তার আচরণে কোথাও স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভংগীর প্রকাশ ঘটতে পারে না। তবে কোন সময় সাময়িকভাবে সে গাফলতির শিকার হতে পারে এবং আল্লাহর সাথে নিজের কেনা -বেচার চুক্তির কথা ভূলে গিয়ে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা অবলম্বন করাও তার পক্ষে সম্ভব । এটা অবশ্যি ভিন্ন ব্যাপার। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের সমন্বায়ে গঠিত কোন দল বা সমাজ সমষ্টিগতভাবেও আল্লাহর ইচ্ছা ও তার শরয়ী আইনের বিধিনিষেধমুক্ত হয়ে কোন নীতি পদ্ধতি রাষ্ট্রীয় নীতি, তামাদ্দুনিক ও সাংস্কৃতিক পদ্ধতিএবং কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক আচরণ অবলম্বন করতে পারে না। কোন সাময়িক গাফলতির কারণে যদি সেটা অবলম্বন করেও থাকে তাহলে যখনই সে এ ব্যাপারে জানতে পারবে তখনই স্বাধীন ও স্বৈরাচারী আচরণ ত্যাগ করে পুনরায় বন্দেগীর আচরণ করতে থাকবে। আল্লাহর আনুগত্য মুক্ত হয়ে কাজ করা এবং নিজের ও নিজের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নিজে নিজেই কি করবো না করবো, সিদ্ধান্ত নেয়া অবশ্যি একটি কুফরী জীবনাচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যাদের জীবন যাপন পদ্ধতি এ রকম তারা মুসলমান নামে আখ্যায়িত হোক বা অমুসলিম নামে তাতে কিছু যায় আসে না।

চারঃ এ কেনা-বেচার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর যে ইচ্ছার আনুগত্য মানুষের জণ্য অপরিহার্য হয় তা মানুষের নিজের প্রস্তাবিত বা উদ্ভাবিত নয় বরং আল্লাহ নিজে যেমন ব্যক্ত করেন তেমন। নিজে নিজেই কোন জিনিসকে আল্লাহর ইচ্ছা বলে ধরে নেয়া এবং তার আনুগত্য করতে থাকা মূলত আল্লাহর ইচ্ছা নয় বরং নিজেরই ইচ্ছার আনুগত্য করার শামিল। এটি এ কেনাবেচার চুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী। যে ব্যক্তি ও দল আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর হেদায়াত থেকে নিজের সমগ্র জীবনের কর্মসুচী গ্রহণ করেছে একমাত্র তাকেই আল্লাহর সাথে কৃত নিজের কেনা-বেচার চুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করা হবে।

এ হচ্ছে এ কেনা -বেচার অন্তনিহিত বিষয়। এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর এ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে বর্তমান পার্থিব জীবনের অবসানের পর মূল্য (অর্থাৎ জান্নাত।) দেবার কথা বলা হয়েছে কেন তাও আপনা আপনিই বুঝে আসে। বিক্রেতা নিজের প্রাণ ও ধন -সম্পদ আল্লাহর হাতে বিক্রি করে দেবে কেবলমাত্র এ অংগীকারের বিনিময়েই যে জান্নাত পাওয়া যাবে তা নয়। বরং বিক্রেতা নিজের পার্থিব জীবনে এ বিক্রি করা জিনিসের ওপর নিজের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার প্রত্যাহার করবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত আমানতের রক্ষক হয়ে তার ইচ্ছা অনুযায়ী হস্তক্ষেপ করবে। এরূপ বাস্তব ও সক্রিয় তৎপরতার বিনিময়েই জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে পারে। সুতরাং বিক্রেতার পার্থিব জীবনকাল ও শেষ হবার পর যখন প্রমাণিত হবে যে, কেনা-বেচার চুক্তি করার পর সে নিজের পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তির শর্তসমূহ পুরোপুরি মেনে চলেছে একমাত্র তখনই এ বিক্রি সম্পূর্ণ হবে। এর আগে পর্যন্ত ইনসাফের দৃষ্টিতে সে মূল্য পাওয়ার অধিকারী হতে পারে না।

এ বিষয়গুলো পরিষ্কার ভাবে বুঝে নেবার সাথে সাথে এ বর্ণনার ধারাবাহিকতায় কোন প্রেক্ষাপটে এ বিষয়বস্তুটির অবতারণা হয়েছে তাও জেনে নেয়া উচিত। ওপর থেকে যে ধারাবাহিক ভাষণ চলে আসছিল তাতে এমন সব লোকের কথা ছিল যারা ঈমান আনার অংগীকার করেছিল ঠিকই কিন্তু পরীক্ষার কঠিন সময় সমুপস্থিত হলে তাদের অনেকে গাফলতির কারণে, অনেকে আন্তরিকতার অভাবে এবং অনেকে চূড়ান্ত মুনাফিকীর পথ অবলম্বন করার ফলে আল্লাহর ও তার দীনের জন্য নিজের সময় ধন সম্পদ স্বার্থ ও প্রাণ দিতে ইতস্তত করেছিল । কাজেই এ বিভিন্ন ব্যক্তি ও শ্রেনীর আচরণের সমালোচনা করার পর এখন তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেয়া হচ্ছে, তোমরা যে ঈমান গ্রহণ করার অংগীকার করেছো তা নিছক আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ব মেনে নেবার নাম নয়। বরং একমাত্র আল্লাহই যে তোমাদের জান ও তোমাদের ধন-সম্পদের মালিক ও অকাট্য ও নিগূঢ় তত্ত্ব মেনে নেয়া ও এর স্বীকৃতি দেয়ার নামই ঈমান। কাজেই এ অংগীকার করার পর যদি তোমরা এ প্রাণ ও ধন -সম্পদ আল্লাহর হুকুমে কুরবানী করতে ইতস্তত করো এবং অন্যদিকে নিজের দৈহিক ও আত্মিক শক্তিসমূহ এবং নিজের উপায় -উপকরণ সমূহ আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে থাকো তাহলে এ থেকে একথাই প্রমাণিত হবে যে, তোমাদের অংগীকার মিথ্যা। সাচ্চা ঈমানদার একামাত্র তারাই যারা যথার্থই নিজেদের জান-মাল আল্লাহর হাতে বিকিয়ে দিয়েছে এবং তাকেই এ সবের মালিক মনে করেছে। তিনি এগুলো যেখানে ব্যয় করার নির্দেশ দেন সেখানে নির্দ্বিধায় এগুলো ব্যয় করে এবং যেখানে তিনি নিষেধ করেন সেখানে দেহ ও আত্মার সামান্যতম শক্তিও এবং আর্থিক উপকরণের নগন্যতম অংশও ব্যয় করতে রাজী হয় না।

১০৭ . এ ব্যাপারে অনেকগুলো আপত্তি তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে , এখানে যে ওয়াদার কথা বলা হয়েছে তা তাওরাত ও ইনজীলে নেই। কিন্তু ইনজীলের ব্যাপারে এ ধরনের কথা বলার কোন ভিত্তি নেই। বর্তমানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে যে ইনজীলসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোর হযরত ঈসা (আ) এর এমন অনেকগুলো উক্তি পাওয়া যায় যেগুলো এ আয়াতের সমর্থক। যেমনঃ

ধন্য যাহারা ধার্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বার্গরাজ্য তাহাদেরই। (মথি ৫:১০)

যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহা হারাইবে, এবং যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায় ,সে তাহা রক্ষা করিবে। (মথি ১০:৩৯ )

আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী কি ভ্রাতা, কি ভাগীনি কি পিতা ও মাতা , কি সন্তান ,কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে , সে তাহার শতগুণ পাইবে এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে। (মথি ১৯:২৯)

তবে তাওরাত বর্তমানে যে অবস্থায় পাওয়া যায় তাতে অবশ্যি এ বিষয়বস্তুটি পাওয়া যায় না। শুধু এটি কেন, সেখানে তো মৃত্যুর পরবর্তী জীবন, শেষ বিচারের দিন ও পরকালীন পুরস্কার ও শাস্তির ধারণাই অনুপস্থিত। অথচ এ আকীদা সবসময় আল্লাহর সত্য দীনের অবিচ্ছেদ্য অংগ হিসেবেই বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান তাওরাতে এ বিষয়টির অস্তিত্ব না থাকার ফলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করাও ঠিক নয় যে, যথার্থই তাওরাতের এ অস্তিত্ব ছিল না।আসলে ইহুদীরা তাদের অবনতির যুগে এতই বস্তুবাদী ও দুনিয়াবী সমৃদ্ধির মোহে এমন পাগল হয়ে গিয়েছিলো যে, তাদের কাছে নিয়ামত ও পুরস্কার এ দুনিয়ায় লাভ করা ছাড়া তার আর কোন অর্থই ছিলো না। এ কারণে আল্লাহর কিতাবে বন্দেগী ও আনুগত্যের বিনিময়ে তাদেরকে যেসব পুরস্কার দেবার ওয়াদা করা হয়েছিল সে সবকে তারা দুনিয়ার এ মাটিতেই নামিয়ে এনেছিল এবং জান্নাতের প্রতিটি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্টকে তারা তাদের আকাংখিত ফিলিস্তিনের ওপর প্রয়োগ করেছিল । তাওরাতের বিভিন্ন স্থানে আমরা এ ধরনের বিষয়বস্তু দেখতে পাই। যেমনঃ

হে ইস্রায়েল শুন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভূ একই সদাপ্রভু, তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভূকে প্রেম করিবে। (দ্বীতীয় বিবরণ ৬: ৪,৫)

আরো দেখিঃ

তিনি কি তোমার পিতা নহেন, যিনি তোমাকে লাভ করিলেন। তিনিই তোমার নির্মাতা ও স্থিতিকর্তা।(দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৬)

কিন্তু আল্লাহর সাথে এ সম্পর্কের যে পুরস্কার বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, তোমরা এমন একটি দেশের মালিক হয়ে যাবে যেখানে দুধ ও মধুর নহর প্রবাহিত হচ্ছে অর্থাৎ ফিলিস্তিন। এর আসল কারণ হচ্ছে, তাওরাত বর্তমানে যে অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে তা প্রথমত সম্পূর্ণ নয়, তাছাড়া নির্ভেজাল আল্লাহর বাণী সম্বলিত ও নয়। বরং তার মধ্যে আল্লাহর বানীর সাথে অনেক ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য ও সংযোজিত করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ইহুদীদের জাতীয় ঐতিহ্য, বংশপ্রীতি , কুসংষ্কার আশা -আকাংখা ভূল ধারণাও ফিকাহভিত্তিক ইজতিহাদের একটি বিরাট অংশ একই ভাষণ ও বানী পরষ্পরার মধ্যে এমন ভাবে মিশ্রিত হয়ে গেছে যে, অধিকাংশ স্থানে আল্লাহর আসল কালামকে তার মধ্যে থেকে পৃথক করে বের করে নিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।]

যা হোক ছেলে আমার এখন বড়টা নিবে, চোখ মুখের চাহনিতে তা বুঝা যায় কিন্তু লজ্জায় বলতে পারে না। আমি ও উপভোগ করি আর ভাবী আমরা ও ছিলাম এক সময় এই রকম। দাদী ও বেশ মজা করে এক সময় তাকে দেয়, হাজার হলে ও দাদীতো , তবে বুঝা যায় নাতনী টিকে বেশী ভালবাসে, হয়ত নিজের মেয়ে নেই বলে।

চলতে ফিরতে কত স্টেশান পার হল কি জানি । নামাজের সময় হয়েছে ওযু করতে গেলাম। অবৈধ মানে টিকিট বিহীন লোক সকলের জন্য ওযু করা দায় । একজন সিগারেট ফুঁকছে আর আমার কষ্ট করে ওযু করা দেখে ওয়াজ শুরু করছে , আপনার নামাজ কবুল হয়ে গেছে আর ও কত কি!! আমল না করলে ও সমাজে ওয়াজ করার লোকের অভাব নেই।

এই তো কিছু দিন আগে ট্রেনে নামাজ পড়ব বলে নির্দিষ্ট জায়গায় গেলাম , ওযুর জায়গায় বসে ঘুমাচ্ছে এক পুলিশ। আরেক পুলিশ নামাজ রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। ভীতরে টিকিট বিহীন লোকজন ঘুমাচ্ছে দিব্যি । পুলিশ ব্যাটারে বললাম নামাজ পড়ব জায়গা খালি করুন। ওমা সে কি ওয়াজ ঘুমের লোকরে জাগায়া নামাজ পড়া ঠিক না আর ও কত কি! সেদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছিলাম। আজ তাই আর নামাজ রুম খুঁজি নি । সিটে এসে কোন রকম দুই রাকাত কসর পড়লাম।

ঘরের রান্না বিরানী খেলাম অনেক স্বাদ করে। এটি শিখেছিলাম এক যাত্রী পরিবার থেকে , তারা নুডুলস, পিঠা, চানাচুর, পানীয় নিয়ে উঠেছিল । দেখলাম ভালই তো খরচ ও বাঁচল ফ্রেশ জিনিস ও খাওয়া গেল।

ট্রেনের চা বিক্রেতা থেকে গরম পানি নিলাম বাবুকে চেরেলাক্স খাওয়ানোর জন্য , পানির টাকা নিল না মায়া করে , ভালই লাগল ফ্রি ফ্রি গরম পানি.........। চলবে

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

229856
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১০:০৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Fantastic!!!!
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১০:২২
176604
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : সন্ধ্যাতারা দিনের আলো সত্যিই পড়েছেন?? যাযাকাল্লাহ। মন্তব্য লিখে আনন্দ দেওয়ার জন্য মোবারকবাদ।
229870
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৩১
ইয়াফি লিখেছেন : ভালো লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২৯
176649
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : মাশেআল্লাহ অপেক্ষায় থাকার এক লোক পাওয়া গেল। আলহামদুলিল্লাহ্‌। তো শুনি এমন কি পড়েছেন যে অপেক্ষায় থাকার স্বাদ জাগল??? কষ্ট নিবেন না প্লিজ।
229890
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
আহমদ মুসা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ চালিয়ে যান, সাথেই আছি।
০৩ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:০৯
176669
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : সাথে থাকার জন্য প্রিয় মুসা ভাইকে মোবারকবাদ।
229910
০৩ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ছবিটা্ ভাল লাগল।
০৩ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
176671
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : কোন ছবিটা??.. ২ না ১ । নাকি ৩?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File