উৎসর্গঃ যারা এ+ পাও নি.....!!
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২১ মে, ২০১৪, ১২:৫২:৫৯ দুপুর
আমার লাশটা গত তিন ঘন্টা ধরে সিলিং এর সাথে ঝুলে আছে !
কেউ আসছে না ঘরে।
আসতে পারছে না আসলে।
মা এসে এর মধ্যে দু তিনবার নব ঘুরিয়েছে, টের পেয়েছি।
প্রথমবার ভেবেছে হয়তো একা থাকার জন্য লক করেই রেখেছি।
তবুও পরে আবারো এসেছে এর মধ্যে লক খুলেছি কিনা দেখতে।
যদিও আমি ভেবেছিলাম মা আর আমার রুমে আসবে না।
যে কড়া ধমক দিয়ে শেষবার বলেছি মা কে ঘরে না আসতে!
তারপরও মা কি উৎকণ্ঠা নিয়ে পায়চারি করছে ঘরের বাইরে।
বাবাও ডাইনিং এ কয়েকবার এসে খুব চিন্তিত মুখে বসে থেকে থেকে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
খুব অদ্ভুত ব্যাপার, মৃত্যুর পর থেকে কে কি ভাবছে আমি সব বুঝতে পারছি।
আমি ভেবেছিলাম আমি এ প্লাস না পাওয়ায় বাবা কি চরম কষ্টই না পেয়েছেন।
হয়তো সকাল থেকে ভাবছেন কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না।
এদিকে বাবা এখনো ভাবছেন কিভাবে আমার মন একটু ভালো করা যায়।
এ প্লাস পেলে যে বলেছিলেন ল্যাপটপ কিনে দেবেন সেটা দুদিন আগে থেকেই কিনে আলমারিতে রাখা হয়েছে।
বাবা ভাবছেন কখন আমি দরজা খুলব, ল্যাপটপটা আমার হাতে তুলে দেবেন।
তাতে যদি আমার মন খারাপ একটু কমে।
আমার বন্ধুরা কি ভাবছে তাও বুঝতে পারছি।
পল্টু আর আকাশ এর মধ্যেই প্ল্যান করেছে কাল দলবল মিলে বাসায় এসে আমাকে চমকে দেবে।
সবাই মিলে কেএফসি তে নিয়ে যাবে।
আকাশ আমাকে নিয়ে মজার একটা কবিতা লিখেছে,বেঁচে থাকলে এই মুহুর্তে যেটা পড়ে আমি হো হো করে হেসে ফেলতাম।
অথচ আজ বিকালেও আমি ভাবছিলাম সবাই আমাকে নিয়ে কত উপহাসই না করছে।
হয়তো আমার সাথে এখন আর কথা বলবে না মিশবে না।
আচ্ছা সবার বন্ধুরাই কি এতো ভালো হয়?
মা ভাবছে আমার প্রিয় ইলিশ মাছের ডিমের তরকারিটা ঠান্ডা হয়ে গেলে আমি আর খেয়ে তেমন মজা পাবো না।
তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে খাওয়াতে নিয়ে যাবে।
আমি সেই দুপুর থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম বলে মা সারাদিন কিছুই খায়নি।
তবু সে ভাবছে আমি সারাদিন না খেয়ে আছি তাই নিয়ে।
একবার বাবাকে গিয়ে কি ভীষণ বকাও দিয়ে দিল, “তোমাকে বলেছিলাম না রেজাল্ট নিয়ে এত চাপাচাপি করো না?
ছোট মানুষ, এত কি বোঝে?”
আমার ধারণা ছিল বাবা পাল্টা তর্ক করবেন, কিন্তু কি অদ্ভুত, বাবা চুপচাপ মেনে নিয়ে বললেন, ঠিকই বলেছ।
এবার কলেজে উঠলে ও যেভাবে পড়ুক, যা রেজাল্ট করুক, কোন চাপাচাপি করবো না।
রেজাল্ট এর চেয়ে ছেলে বড় !!”
কথাটা শুনে আমি বেঁচে থাকলে কাদতাম, অবশ্যই কাঁদতাম।
হঠাৎ মনে হলো অযথাই সারাদিন কেঁদে চোখ ফুলাচ্ছিলাম, অযথাই কান্ডটা করলাম।
জীবন কত সুন্দর।
এ প্লাস পাওয়ার চেয়ে আরো অনেকগুণ সুন্দর মায়ের হাতে এক নলা ভাত খাওয়া! বাবার পাশে বসে ফুটবল খেলা দেখা, বন্ধুদের সাথে ক্ষণিকের খুনসুটি। মা এখন দরজায় জোরে জোরে নক করছে।
বাইরে থেকে বলছে, “বাবা খেয়ে নে, আর কখনো বকবো না, দরজা খোল বাবা”। খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, এই দরজা কখনো খুলো না মা। কখনো খুলো না এই দরজা !!!
উৎসর্গঃ যারা এ পাও নি.....!!
Collected by Galib Chowdhury
বিষয়: বিবিধ
১০৪২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
...
আপনার আত্মহত্যার ডিসিশন সঠিক । এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল ।
হতভাগার হতাশা দেখি চরমে
লোড শেডিং বুঝি এখন চরমে!!
নিজের হাতে জীবন ধ্বংস কোরো না প্লিজ। এটি এমন এক পাপ যা সকল পূণ্যকে ধ্বংস করে দেয় এবং স্থান হয় জাহান্নামের কঠিন আযাব, যার কোন শেষ নাই।
কয়জনে বুঝেছে এটি কবিতা??????
আপনাকে অশেষ মোবারকবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন