এক ভাইয়ের অভিজ্ঞতার ঝুলিঃ আমার দাম্পত্য
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১২ মে, ২০১৪, ১২:২৯:১১ দুপুর
গতকাল প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে প্রথমবারের মত মনে হয় Umme Salma আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমার রিসার্স টপিক কি। দেশ থেকে এসেছি প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো। প্রথমে মার্স্টার্সের জন্যে সাউথ কোরিয়াতে। সেখানে দুইবছর যদিও কাগজে কলমে কোর্স বেসড মাস্টার্স করেছি, বাস্তবে রাতদিন ল্যাবরেটরিতে কাটাতে হয়েছে রিসার্স করার জণ্যে। সালমাকে দুটি কনফারেন্সে নিয়ে গিয়েছিলাম, একটি Daejon এ, আরেকটি কোরিয়ার সবচেয়ে সুন্দর জায়গা Jeju Island এ। ঘটনাক্রমে একটিতেও সালমা আমার প্রেজেন্টেশন শোনেনি। অন্য কিছু কাজে ব্যস্ত ছিল।
ডেনমার্কে এলাম প্রায় দেড় বছর আগে পিএইচডির জন্যে। দুটি কনফারেন্সে গিয়েছিলাম পর্তুগাল আর পোল্যান্ডে। সালমাকে নিয়ে যাইনি। কিন্তু পর্তুগালের কনফারেন্সের জন্যে লেখা রিসার্স পেপারটিতে সালমারও ছবি ছিল। কারন ভিডিও ডাটা কালেকশনের সময় আমি সালমার Facial Video নিয়েছিলাম। গতকাল গল্পচ্ছলে সালমা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার রিসার্স টপিক কি।
এটিই হয়তো একটি সাধারন মুসলিম ফ্যামিলির গল্প। আমার যখন কাজের চাপে দিশেহারা অবস্থা যায়, তখন সালমা অন্যান্য কাজের চাপ থেকে আমাকে মুক্তি দেয়। বাচ্চাদের দেখাশোনা একহাতে করে, অন্যহাতে চলে তার আন্ডারগ্রাজুয়েটের পড়াশোনা। পাশাপাশি মাঝে মাঝে আমার জন্যে মজার মজার রান্নাতো থাকছেই (গতকালও খেলাম ফিস বিরিয়ানী )। বাইরের বিষয় নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করে না সে। আমিও ঘরোয়া ছোটখাট বিষয়াদী নিয়ে বেশী একটা চিন্তা করি না। সে ঘর সামলায়, আমি বাইরের দিক। আমি মাঝে মাঝে তাকে সাহায্য করি অপশনালি, সেও আমাকে সাহায্য করে বাইরের কিছু কাজে। কিন্তু তা নিতান্তই ব্যতিক্রম। এভাবেই আমাদের জীবনে একটি ব্যালেন্স গড়ে উঠেছে। অপরিচিত দুজন মানুষের মাঝে এই ব্যালেন্স গড়ে উঠেছে বিয়ের পর থেকে।
ইসলাম নারীদেরকে বানিয়েছে গৃহের সৌন্দর্য হিসেবে, তাদেরকে করেছে গৃহের রানী। পুরুষের বানিয়েছে পৌরুষদীপ্ত, বাইরের জীবনের কাঠিন্যকে সামাল দেয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন। এই দুই বিপরীত চরিত্রকে এক করেছে বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে। পরিবার মানবসভ্যতার পাওয়ার হাউজের মত, এখানে গড়ে ওঠে পরবর্তী প্রজম্ম, এখানেই গড়ে থাকে সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার পাচমিশালী অবস্থান যা আমাদেরকে জীবনে হতাশা কাটিয়ে বৈচিত্রতার মাঝেই কল্যানমুখী জীবন দেয়। এটিই ইসলামী ফিলসিফি, পরিবারের ব্যাপারে।
কিন্তু না কিছু মানুষের এটি পছন্দ নয়, তারা চায় ফুলে ফুলে মধু খেতে। তারা চায় নারী গৃহের রানী হয়ে না থেকে বরং হোটেল রেস্তরায় হ্যাফপ্যান্ট পরে ঝাড়ুদারের কাজে নামুক, ঠোটে উচ্চ মাত্রার লিপ্সটীক দিয়ে অফিসে আগত গ্রাহকদের মনোরঞ্জন করুক মিষ্টী কথায়, টেলিফোনে কথা বলুক সুরেলা কন্ঠে আর গ্রাহকদের মনে জাগিয়ে তুলুক কামস্পৃহা। এভাবে নারীরা বের হয়ে আসুক। আর কিছু নারীও চায় তার নিজের স্বামী নয়, বরং অন্য পুরুষরা তার দিকে চোরা চোখে দেখুক, তাকে নিয়ে নিজে আলোচনা চলুক পুরুষদের মাঝে, ছেলেবন্ধু-ক্লাসমেট-কলিগ বা রাস্তার পুরুষরা তার রুপের প্রসংশা করুক। ফেসবুকে তার ছবিতে তাকে সেক্সি বলুক (শুদ্ধভাষায় রুপবতী) এখান থেকেই শুরু হয় ভাঙ্গন। নারী তখন ঘরে থাকতে পারে না, তাকে নিয়মিত বাইরে যেতে হয়, উচ্চ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে হয় উচ্চ থেকে উচ্চতর বেতনের আশায়, স্বামীস্ত্রীর স্বাভাবিক ধৈর্যশীলতা-বন্ধন-ভালোবাসা ভুলে, জীবন হয়ে ওঠে প্রতিযোগীতার বিষয়। আরো দামী কিছু চাই, আরো উপরে উঠতে চাই, আরো টাকা চাই, আরো আরো প্রসংশা চাই পরপুরুষ বা পরনারীদের থেকে। এভাবেই ভেঙ্গে যায় পরিবার। না একদিনে ভাঙ্গে না। ইউরোপে পরিবার ছিল ৬০-৭০ বছর আগে, দক্ষিন কোরিয়াতে ছিল মাত্র ১৫-২০ বছর আগে, আমাদের দেশে এখন আছে, কিন্তু আর কতদিন টিকবে এই প্রতিযোগিতা শুরুর পর?
আল্লাহ বলেনঃ পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। তা এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন (নারীত্বের সৌন্দর্য ও সম্পদ) লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। (সুরা নিসা-৩৪)
হযরত আবু হুরাইয়া (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সবচাইতে উত্তম, ঈমাদের দৃষ্টিতে সে-ই পূর্ণাঙ্গ মুমিন। তোমাদের মধ্যে সেই সব লোক উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। (তিরমিযী)
কতৃত্ব-আনুগত্যের পাশাপাশি ভালোবাসার অটুট সম্পর্ক আছে কিনা তার বিবেচনায় দেখতে হবে "স্ত্রীর কাছে উত্তম কিনা"। এভাবে চলাতেই আছে সুন্দর ব্যালেন্স। যে কতৃত্ব করতে জানে না কেবল স্ত্রী কাছে উত্তম হতে চেষ্টা করে, একইভাবে যে কতৃত্ব করতে চায় কিন্তু স্ত্রী কাছে উত্তম হতে চায় না এই দুয়ের কোনটিই ইসলাম নয়। পুরুষরা হাফ-লেডিস বা স্বৈরাচারী কোনটাই হওয়া উচিত নয়। একইভাবে নারীরাও দাইউস-বিদ্রোহী-প্রতিযোগী বা স্বামীর খারাপগুনের তোষক হওয়া উচিত নয়। আধাপুরুষটাইপ স্ত্রী বা ব্যক্তিত্বহীন স্ত্রী হওয়া ইসলাম নয়। তাই বলে কি নারীদের ক্যারিয়ার কেবল পরিবারের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ। না তা কখনোই নয়, বরং প্রতিটি মুসলিম নারীর একটি স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার থাকা উচিতঃ জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরনের ক্যারিয়ার (কেউ আবার এটাকে শিক্ষকতার চাকুরি ভাইবেন না )। টাকা লোভে আর পরপুরুষের মনোরঞ্জনে ছোটার নাম ক্যারিয়ার নয়।
Recommended Reading: ১/ ইসলাম ও আধুনিক নারী - মরিয়ম জামিলা।
২/ আদর্শ সমাজ গঠনে নারী ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নারী - শামসুন্নাহার নিজামী।
৩/ মহিলা সাহাবী - তালেবুল হাসেমী।
৪/ স্বামী-স্ত্রীর অধিকার - সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী।
বইগুলো পাবেন এখানেঃ http://icsbook.info/
-Mohammad Ahsanul Haque Arif
বিষয়: বিবিধ
১৩৪০ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন