আমার দেখা ৫ ই মে ২০১৩। লিখা ও ছবি। -২
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৫ মে, ২০১৪, ০৮:২৩:৫০ রাত
আমার দেখা ৫ ই মে ২০১৩। লিখা ও ছবি -১Click this linkএগিয়ে গেলাম সাথে ছিল কলেমার পতাকা। নাইটেঙ্গেল মোড় হয়ে বায়তুল মোকারমের দিকে যাব। মুহুর্মুহু গুলির শব্দ । পথচারীরা নিষেধ করল ওইদিকে যেতে । ঘুরিয়ে নিলাম মোটর সাইকেল । বি এন পি অফিসের সামনে অপেক্ষা করলাম ।
উদ্দেশ্য জন শ্রুত বায়তুল মোকারমের দিকে মুব করানো । না পারলাম না । তৃষ্ণার্ত ছিলাম পানি খেলাম। আমি ও অগ্রসর হলাম মিছিলের সাথে। পৌছলাম শাপলা চত্ত্বরের সোজা পশ্চিম দিকের অর্থাৎ বায়তুল মোকারম এর কাছের মোড় । মসজিদের দিকে অগ্রসর হতে চাইলাম মোটর সাইকেল রেখে। সাউন্ড গ্রেনেডের কলিজা কাপানো শব্দ আর গুলাগুলি । রক্তাক্ত দেহ নিয়ে কারো ফিরে আসা। কারো সারা শরীর বুলেটে জাজরা। কেউ রিক্সা ব্যান এ করে কাউকে এম্ব্যুল্যান্সে করে পাঠানো হচ্ছে ইসলামী ব্যাঙ্ক হাসপাতালে/ অন্য কোথাও। চারদিকে যুদ্ধের দামামা। শুনলাম আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী কয়েক জনকে শহীদ করে ফেলেছেন। আকাশে উড়ছে র্যাবের হেলিকপ্টার। রাস্তায় বিক্রি করছে কালেমা খচিত ব্যান্ড । কিনে নিলাম একটা। ফিরে আসলাম বি এন পি অফিসের সামনে ।উদ্দ্যেশ্য মোটর সাইকেল রাখা । তখন সম্ভবত ৪।০০ টা বাজে । চারদিকে গুলির শব্দ । কেও নিরাপদ আশ্রয়ে মসজিদের ভিতর। আর কেও আত্বীয় স্বজনের বাসায়। বই এন পি অফিসের পিছনে পরিচিত এক ভাই থাকত । সে বাসায় ছিল না । কল ও ধরে না । তার পরিচয় দিয়ে দারোয়ান কে মেনেজ করে মোটর সাইকেল রাখলাম। বের হয়ে আসরের নামাজ পড়লাম। মসজিদে কাদুনে গ্যাসের দোয়া। বুলেটের ঝন ঝন শব্দ। নামাজ পড়েই বের হয়ে পড়লাম রাস্তায়। রাস্তায় ইটের টুকরা কাঁচের টুকরা। আল্লাহর দোহায় দিয়ে ও কোন হেফাজতিকে মসজিদ থেকে বাহির করতে পারিনি সে দিন। রাস্তায় কিছু ছোট ছোট ছেলে সম্ভবত শিবিরের হবে । তাদের যে সাহস দেখেছি সে দিন। বুক পেতে দেয় তবু ফিছু হটে না । সে দিন জামাত শিবিরের ছেলেরা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে হেফাজতের পক্ষে এক ঘণ্টা টিকে থাকা ও সম্ভব হত না শাপলা চত্ত্বরে। তবু কতক্ষণ লড়াই করবে তারা । বি এন পি অফিসের পূর্ব পার্শের মসজিদ গলিতে আটকে পড়ি । কিছুক্ষণ পর গলিতে দাঁড়ানো ও মুশকিল। গলি মুখে দাড়িয়ে সরাসরি গুলি করছে পুলিশ। এক পর্যায়ে চারদিকের অবস্থা দেখা জরুরী মনে করলাম। উঠে গেলাম রাস্তার পার্শের এক ছাঁদে। দেখি বায়তুল মোকারমের দিকে আকাশে কুন্ডলি পাকিয়ে উঠছে কালো দোয়া । আকাশের নিঃসীম সীমানায় পৌছে গেছে এই দোয়া। চার দিকে লড়াই শুরু হয়ে গেছে । মতিজিলের চারদিকের প্রবেশ পথে আওয়ামী হায়েনা আর পুলিশ লীগ মিলে চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করেছে শুনলাম।
ইতি মধ্যে কল আসল আমার এক কর্মী গুলি বিদ্ধ। মাগরিবের আযান চলছে। গুলাগুলি ও চলছে। আযান কি আর তারা মানে? হায়েনার দল। রাস্তা ফাঁকা । গুলি চলছে গলি মুক লক্ষ্য করে। ছাঁদেই নামাজ পড়লাম। কল দিলাম বাড়ীর ড্রাইবার কাম কেয়ারটেকার ভাইকে। সে সাইকেল চালিয়ে উত্তরা হতে আমার জন্য গেঞ্জি , ট্রাউজার আর খেজুর নিয়ে প্লটন আসল । আমি নামলাম বাড়ীর ছাঁদ থেকে। গলিতে বি এন পির কোন নেতা / কমিশনার কিছুড়ির বাক্স পাঠাইছে রিক্সা ব্যানে আমিও নিলাম । দুইজন মিলে খেলাম । সে চলে গেল। আমার ওয়ার্ডের একজন ভাইকে ডাকলাম । সে এল আমার কাছে। পাঞ্জাবী পাল্টালাম। নির্দেশনা আসল শাপলা চত্ত্বরে যেতে। গুলি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিতরের গলি দিয়ে রওয়ানা দিলাম শাপলা চত্ত্বর। প্রতিমধ্যে একটি মসজিদে এশার নামাজ পড়লাম। অতঃপর পৌছলাম কাঙ্ক্ষিত শাপলা চত্ত্বর। ইতি পূর্বের কয়েকটি সমাবেশে অবস্থান করার কথা থাকলে ও শেষ পর্যন্ত অবস্থান না করায় জনশক্তি অবস্থান করতে হবে এমন মানসিকতা নিয়ে ম্যদানে আসেনি। তাই যে যার যার মত ছিল । ছিল বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মত । তাই কোন কমান্ড দাতা ও ছিল না ।অনুসরণ কারী ও ছিল না। যা হোক পৌঁছেই জামাত শিবিরের কিছু পরিচিত ভাই পেয়ে গেলাম।
সারা দিনের ক্লান্তিতে শরীর আর চলছিল না। কিছু পেপার জুগাড় করে রাস্তায় শুয়ে পড়লাম। যদি ও চারদিকে জ্বলছে আগুন । থামছে না বুলেটের শব্দ। সে এক ভয়ানক অবস্থা ।
কিছুক্ষণ পর হই হই করে সবাই উঠে গেল। অগত্যা আমি উঠলাম যদি ও ক্লান্তি ঘুম আর অবসাদে আক্রান্ত।
উঠে দাঁড়ালাম শুয়া থেকে । অগ্রসর হলাম মঞ্চ থেকে উত্তর দিকের রাস্তায়। ফাঁকা ফাঁকা জায়গা । লাঠি হাতে হেফাজত কর্মীরা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেও কেও রাস্তার ডিভাইডারের লোহা লঙ্কর উপড়াচ্ছে। কেও তুলছে ফুটপাতের ইট। কেউ কাটছে রাস্তার গাছের ডালপালা। সবার উদ্দেশ্য একটাই যেন রাত টা নিরাপদে পার করতে পারে।
হেফাজতের মাইক হতে নরম স্বরে ওয়াজ চলছে। বেশীর ভাগ লোক ঘুমন্ত। কিছু লোক জিকিরে মশগুল কিছু লোক নামাজেরত। না কেউ আসেনি বুক ঝাঁঝরা করতে এখনো।
হাত লাগালাম রাস্তায় বেরিকেট দিতে । চিন্তায় আসল যদি খন্দক করা যাইত?? না এত রাতে তা আর সম্ভব না, বেরিকেটে সহযোগিতা করার জন্য হেফাজতি অনেকের সযোগীতা চাইলাম । না তারা বীর বাহাদুর । লাটি নিয়েই তারা হাটবে । সরকারী কুত্তা দৌড়াবে কিন্তু কোন বেরিকেট তৈরি করবে না...... এইদিকে কিছু কিছু খবর আসছে ছাত্রলীগ যুবলীগের জানুয়ার রা কোন কোন গলিতে অবস্থান করে কিছু লোককে আহত করছে। চারিদিকে ব্যারিকেট। কিছু লোক আযতা বিল বোর্ড এর উপর বাড়ী দিয়ে সাউন্ড তৈরি করছে। কিছু লোক রাস্তার সিসি ক্যামেরা ভাঙ্গছে । কিছু লোক অদূরেই টিয়ার সেল থেকে বাঁচার জন্য বা আতঙ্কিত করার জন্য রাস্তার পোস্টার ব্যানার ছিড়ে আগুন জ্বালাচ্ছে।
যা হোক এত রাতে কোন জানোয়ার বাহিনী হামলা করবে বলে মনে হল না। তাই পূর্বের জায়গায় ফিরে এসে শুয়ে পড়লাম।
মাত্র দুমিনিট হুড়মুড় করে সবাই উঠে গেল । আমি উঠি না। আমার শক্তি নাই । বিশ্বাস ও হচ্ছে না কেও হামলা করবে। কিন্তু না । পাঁচ মিনিট যায়নি। একদম গায়ের কাছে বুলেট , পুলিশ , বি ডি আর র্যাব , হায়েনার দল ।
কোন রকম উঠে পাঁচ ফিট দূরে সামান্য একটু আড়াল। কলাপ সিবল গেইট দেওয়ার জন্য ওয়াল থেকে মাত্র এক ফিট গভীরে ডুকানো । আমরা দশজন লোকানো। আমি স্ফস্ট দেখতে পাচ্ছি হায়েনাদের দুগজ দূরে দাঁড়িয়ে গুলি করতে।
কিন্তু না একদল যুবক দাঁড়িয়ে গেল প্রতিরোধে। একজন সাহসী যুবক দৌড়ে আসল তাদের দিকে। দাঁড়াল রাস্তার মাজখানে উঠানো ময়লাকে আড়াল করে। হুঙ্কার দিল সিংহ শাবকের মত। " যদি পোলা মাইয়াদের এতিম করতে চাস তবে এদিকে আয়। যদি জাহান্নামে যাইতে চাস তবে এদিকে আয়। সে কি হুঙ্কার। পড়ে গেলাম দু দলের মাজখানে। জানোয়ারদের হাতে টর্চ লাইট বারবার খুঁজে ফিরে তাকে । সিলেক্টিব গুলি করে তাকে লক্ষ্য করে । সে এদিক ওদিক পাস কাটিয়ে কি যেন ছুটে মারে । জানুয়ারের দল পিছু হটে সাইটে চলে যায়। আমি পকেট হতে পেস্ট বের করে নাকে মুখে লাগায় । অন্যদের লাগিয়ে দিই। দোয়া করি মহান রবের দরবারে অনুচ্চ স্বরে আল্লাহ্ জালিমদের ধ্বংস করে দাও । সবায় বলে আমীন ।
দশ পনের কি আধা ঘণ্টা এভাবে আঠকে থাকি। আশপাশ দিয়ে যাচ্ছে বুলেট। একদম কাছে চলে আসল হায়েনারা মাত্র একগজ দূরে। আর না ।যা হয় হবে। রাস্তায় কাঁচ বাঙ্গা। সেন্ডেল হাতে নিই । দৌড়ে পনের ফিট যায়। পা কেটে যায় বা স্প্রিন্টাল ডুকে। সামনে গলি পথ । কিছুটা এগিয়ে আবার ফিরে আসি । সামনে এক মহিলা তার বাড়ীর গেইট খুলে দেয় ভীতরে সারা শরীর থেতলানো একভাইকে মালিশ করছে স্বতীরথ রা । আমি নিচের ওয়াশ রুমে ডুকে হাত মুখ পরিষ্কার করলাম। দ্বায়িত্বশীল কে কল দিলাম। বিজি বিজি । এক সময় ফেলাম । চলে আসার নির্দেশ দিলেন। গলি পথ ভূতুড়ে অন্ধকার ।
সাথের জনকে বললাম পাঞ্জাবী ইন করতে । তা করল । সামনে গলিপথে আওয়ামী গুন্ডারা দাঁড়িয়ে । সারাদিন মারতে মারতে তারা ও মনে হয় ক্লান্ত। দুজন দূরত্ব বজায় রেখে হাটলাম । সঙ্গীকে পাঞ্জাবী ইন করায় টিটকারী মেরেই ছেড়ে দিল আওয়ামীরা। বেঁচে গেলাম আরেক দফা। ভিতরের গলি পথে কোন রকম পৌছালাম মোটর সাইকেল রাখার স্থানে। ঘুম থেকে ডেকে তুললাম দারোয়ানকে। সে সদয় হল । বের করে দিল মোটর সাইকেল । দুইজনে প্রাণ নিয়ে ছুটলাম রাজপথের দিকে। রাস্তায় সারি সারি হেফাজত কর্মী ছুটছে লাইন ধরে আপন ঠিকানায়। মাঝে মাঝে হায়েনার দল উতপেতে আছে। রাস্তার রং সাইড ধরে এগিয়ে চলল মোটর বাইক। যখন বাসায় পৌছি তখন মোয়াজ্জিন ডাক দিচ্ছে আসসালাতু খায়রুম মিনান নউম আসসালাতু খায়রুম মিনান নউম । বাইক রেখে মসজিদে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করলাম। তারপর ঘুম দিলাম দুপুর পর্যন্ত। ততক্ষণে গুম হল খুন হল হাজারো ভাই। আমি শুধু হারালাম আমার প্রিয় পছন্দের মোবাইল খানা হাজারো প্রিয়জনের নাম্বার শ।তাই তাদের অনেকের সাথে আজো যোগাযোগ করতে পারিনা। ধন্যবাদ সকল কে আল্লাহ্ হাফেজ।
বিষয়: বিবিধ
৩৯৩৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন