অধ্যাপক গোলাম আযমের কারাজীবনের ৮৩৭ তম দিন।
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৫২:৪৫ সকাল
অধ্যাপক গোলাম আযম অসুস্থ - সবার দোআ চাই
গতকাল, ২৬শে এপ্রিল, আমার বাবা অধ্যাপক গোলাম আযম এর সঙ্গে ‘প্রিজন সেল’ এ দেখা হলো। দু’ সপ্তাহ পর পর পরিবারের সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ ছিল এটা। কাল ছিল বাবার কারাজীবনের ৮৩৭ তম দিন।
বিকেল ৪.১৫ ঘটিকায় বাবার সেল এ গিয়ে দেখলাম তিনি তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। বিস্মিত হয়ে দেরিতে খাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, গত ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছেন। মাথার বাম পার্শ্বেও (কানের উপর) আঘাত পেয়েছেন। এর দু’দিন আগেও একবার পড়ে গিয়েছিলেন বলে জানালেন। তবে, সেদিন তেমন ব্যথা বা আঘাত পাননি। দুর্বলতাজনিত কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানালেন। আজ (২৭শে এপ্রিল) সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ করে জানলাম যে, গরমে উনার পেট নরম হয়ে ‘লুজ মোশন’ হয়েছিল। এতে প্রেসার কমে যাওয়ার ফলে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। গতকাল আমরাও উনাকে বেশ দুর্বলই দেখেছি Ñ কথাই বলতে পারছিলেন না, ঠোঁট কাঁপছিল, দুজন ধরে বাথরুমে নিতে হয়েছিল।
১১০/১২০ বর্গফুটের স্যাঁতসেতে রুম, ততধিক স্যাঁতসেতে বাথরুম, জানালা-দরজা সব বন্ধ, বাইরের কোন আলো-বাতাস নেই, টিমটিমে লাইট, ফ্যানের বাতাস যেন গরমের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয় - বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের এই নেতা এখন এমন অমানবিক পরিবেশেই তাঁর দিনগুলো কাটাচ্ছেন। এই অসহ্য গরমে উনার রুচিহীনতা ও পেটের পীড়াই বর্তমান এই দূরাবস্থার মূল কারণ মনে হচ্ছে।
৯২ বছর বয়স অতিক্রমকারী জীবন্ত কিংবদন্তী, বিরল ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক গোলাম আযম, এই ন্যূব্জ বয়সে যাঁর পারিবারিক সান্নিধ্যে থেকে সেবা-শশ্রƒষা-যতœ-আত্মিœ পাওয়ার কথা ছিল, তাঁকে আজ বিনা অপরাধে মিথ্যে মামলার শিকার করে কারান্তরীণ করে রেখেছে জালিমরা। চরম অবহেলা আর অযতেœই কাটছে তাঁর দিন। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী মহলের এই অমানবিক আচরণে পরিবারের সদস্যসহ তাঁর লক্ষ-কোটি ভক্তের হৃদয়ে অবিরত রক্তক্ষরণ ঘটছে। তাঁর মত এমন একজন দেশ-জাতি ও ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মহামানবের শেষ বয়সের এই কষ্ট-শোক জেনে-শুনে নিরবে নিভৃতে ঝরছে ব্যথিত মানুষের চোখের পানি। প্রহসনের বিচারকারীরা, মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা তাঁর উপর এই অমানবিক জুলুম করেই যাচ্ছে।
তাঁকে নিয়ে আমরা দারুণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। তিনি অবশ্য নিজেকে নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। আল্লাহ্তে পূর্ণ বিশ্বাসী এই অকুতোভয় সিপাহসালার জীবনের এমন কঠিন মুহূর্তেও ‘উনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’ বলে দৃঢ়ভাবে মনে বিশ্বাস করেন। ‘ফায়সালা আসমান থেকে আসে, জমিনে নয়,’ তাঁর এই মানসিক শক্তিকে তাই স্যালুট জানাই।
আমরা দেশ-বিদেশে তাঁর লক্ষ-কোটি ভক্ত-অনুরাগীর কাছে তাঁর জন্য দোআ চাই - তিনি যেন সুস্বাস্থ্য সহ দীর্ঘায়ূ লাভ করেন এবং সম্মানজনকভাবে জালিমের কারাগার থেকে যথাশীঘ্র মুক্তি পান।
জালিমদের যেন আল্লাহ এ দুনিয়াতেই চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন, আমীন।
Abdullahil Amaan Azmi
তারিখ : ২৭ এপ্রিল ২০১৪
বিষয়: বিবিধ
১২২৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের নেতৃবৃন্দসহ দ্বীনের মুজাহিদদের হেফাজত করুন।
হয়তো যে কোন দিন তিনি আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে দুনিয়াবী জীবনকে গুডবাই জানাবেন। কিন্তু যে সব জালেমরা তার উপর অন্যায়ভাবে সীমাহীন জুলুম-অত্যচার করেছে তাদের করুণ পরিনতির সময় অপেক্ষা করছে। আমার একান্ত বিশ্বাস- অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেব তার রবের দরবারে দুনিয়াবী হায়াতের সুষ্ঠ ব্যবহারের কারণে উত্তম প্রতিদান পাবেন। যারা আজ তার প্রতিপক্ষ হয়ে তার উপর মিথ্যা এলজাম দিয়ে প্রতিশোধের আক্রোশ চরিতার্থ করছেন তাদের জীবন তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি কত নোংরা! কত কদর্য!! তারা কবরে গিয়ে কি জবাব দিবেন আল্লাহর দরবারে? তথন তাদের এসব মিথ্যাচার কাজে আসবে?
যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে বেচে আছে শুধু জ্ঞানীরাই। জ্ঞানীদের বিতরণকৃত জ্ঞান থেকে যারা লাভবান হচ্ছেন তারাই জ্ঞানীদের ইসালে সাওয়াবের উসিলা হিসেবে কাজ করছে। অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেব উম্মাহর জন্য যা কিছু রেখে যাচ্ছেন তা যুগ যুগ ধরে, হয়তো শত শত বছর ধরে মানুষের মাঝে বিচরণ করতে থাকে। আর এর মাঝেই অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেব জীবন্ত এক কিংবদন্ধী হিসেবে বেচে থাকবেন। পক্ষান্তরে জালিমরা এমন কিছু দিয়ে যেতে পারছেন না, অথবা এমন কোন মৌলিক কিছু সৃষ্টি করতে পারছেন যার কারণে তাদেরকে মানুষ যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে। বরং তারা কোটি কোটি মানুষের অভিষাপ নিয়েই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে আমরা দেখতে পারছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন