আল্লাহর হুকুম পালন করা দরকার কেন?পর্ব- ৩
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৪১:০০ দুপুর
দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে এই যে, আপনি আপনার মনের খাহেশের কথা না শুনে আপনারই মতো অন্য মানুষের ওপর একান্তভাবে নির্ভর করবেন এবং প্রত্যেক কাজেই আপনি সেই লোকদের কথামত কাজ করবেন। তারা যেদিকে চালায়, আপনি অন্ধভাবে সেদিকেই চলবেন। এ পথ যদি অবলম্বন করেন, তবে কোনো স্বার্থপর লোক এসে আপনাকে তার নিজের ইচ্ছামত পরিচালিত এবং নিজের স্বার্থোদ্ধারের জন্য ব্যবহার করতে পারে, এর খুবই আশংকা আছে। কিংবা কোনো মূর্খ ও পথভ্রষ্ট লোক এসে আপনাকেও বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। অথবা কোনো যালেম ব্যক্তি আপনাকেও বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যেথে পারে। অথবা কোনো যালেম ব্যক্তি আপনাকে হাতিয়ার স্বরূপ গ্রহণ করে আপনার দ্বারা অন্যের ওপর যুলুম করাতে পারে। মোটকথা, অন্য লোকের অনুসরণ করলেও আপনি জ্ঞানের সেই জরুরী আলো লাভ করতে পারেন না, যা আপনাকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝাতে, ন্যায় ও অন্যায় বলে দিতে পারে এবং আপনার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
এরপর একটি মাত্র উৎসই থেকে যায় যেখান থেকে আপনি আপনার এ অত্যাবশ্যক জ্ঞানের আলো লাভ করতে পারেন। সেই উপায়টি হচ্ছে আপনার ও নিখিল জাহানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা সবকিছুই অবগত আছেন, সবকিছুই দেখতে পান, প্রত্যেকটি জিনিসের প্রকৃতি তিনি ভাল করেই জানেন ও বুঝেন। একমাত্র তিনিই বলে দিতে পারেন যে, কোন্ জিনিসে আপনার প্রকৃত উপকার, আর কোন জিনিসে আপনার আসল ক্ষতি হতে পারে, কোন্ কাজ আপনার করা উচিত, কোন্ কাজ করা উচিত নয়-- তা একমাত্র তিনিই বলে দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলার কোনো কিছুর অভাব নেই, তাঁর নিজের কোনো স্বার্থ আদায় করবেন না। কারণ তিনি পাক-পবিত্র, তিনি সবকিছুরই মালিক, তিনি যা কিছু পরামর্শ দিবেন তার মধ্যে তাঁর নিজের স্বার্থের কোনো গন্ধ নেই এবং তা কেবল আপনারই উপকারের জন্য। এছাড়া আল্লাহ তাআলা ন্যায় বিচারক, তিনি কখনই কারো ওপর অবিচার করেন না। কাজেই তাঁর সকল পরামর্শ নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ, ন্যায় ও ফলপ্রসূ হবে। তাঁর আদেশ অনুযায়ী চললে আপনার নিজের ওপর বা অন্য কারো ওপর কোনো যুলুম হবার আশংকা নেই।
আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে যে আলো পাওয়া যায়, তা থেকে কল্যাণ লাভ করা দু’টি জিনিসের ওপর একান্তভাবে নির্ভর করে। প্রথম জিনিস এই যে, আল্লাহ তাআলা এবং তিনি যে নবীর সাহায্যে এ আলো পাঠিয়েছেন সেই নবীর প্রতি আপনাকে প্রকৃত ঈমান আনতে হবে, আপনাকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহর কাছ থেকে তাঁর রাসূল যে বিধান ও উপদেশ নিয়ে এসেছেন, তা সম্পূর্ণ সত্য ; তার সত্যিকার উপকারিতা যদি আপনি অনুভব করতে না-ও পারেন তবুও আপনাকে একথা বিশ্বাস করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ঈমান আনার পর আপনি আপনার জীবনের প্রত্যেকটি কাজেই আল্লাহর সেই বিধান অনুসরণ করে চলবেন। কারণ তার প্রতি ঈমান আনার পর কার্যত তাঁর অনুসরণ না করলে সেই আলো হতে কিছুমাত্র ফল পাওয়া যেতে পারে না। মনে করুন, কোনো ব্যক্তি আপনাকে বললো, অমুক জিনিসটি বিষ, তা প্রাণীর প্রাণ নাশ করে ; কাজেই তা খেও না। আপনি বললেন, হাঁ ভাই, তুমি যা বলেছ তা খুবই সত্য, তা যে বিষ এবং তা প্রাণ ধ্বংস করে, তাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সত্য জেনে-শুনে বিশ্বাস করে এবং মুখে স্বীকার করেও আপনি তা খেলেন। এখন বিষের যা আসল ক্রিয়া তা তো হবেই। জেনে খেলেও হবে, না জেনে খেলেও হবে। আপনি তা না জেনে খেলেও জেনে খাওয়ার মত একই ফল হতো। এরূপ জানা ও না জানার মধ্যে কার্যত কোনো পার্থক্য নেই। আর এরূপ জানা এবং স্বীকার করার প্রকৃত ফল ও উপকারিতা আপনি ঠিক তখনই পেতে পারেন যখন আপনি কোনো সত্য জানার ও স্বীকার করার সাথে সাথে সেই অনুসারে কাজ করবেন। আপনাকে যে কাজের হুকুম দেয়া হয়েছে, কেবল মুখে মুখে তাকে সত্য বলে স্বীকার করেই বসে থাকবেন না বরং তাকে কাজে পরিণত করবেন। আর যে কাজ করতে আপনাকে নিষেধ করা হয়েছে, শুধু মুখ মুখে তা থেকে ফিরে থাকার কথা মেনে নিলে চলবে না, বরং আপনার জীবনের সমস্ত কাজ-কারবারেই সেই নিষিদ্ধ কাজ হতে ফিরে থাকতে হবে। এজন্য আল্লাহ তাআলা বার বার বলেছেন ঃ
﴿أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ﴾ (النساء: ٥٩)
“আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মেনে চল।”-সূরা আন নিসাঃ ৫৯
﴿وَإِن تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا﴾ (النور: ٥٤)
“যদি তোমরা রাসূলের অনুসরণ কর, তবেই তোমরা সৎপথের সন্ধান পাবে।” -সূরা আন নূরঃ ৫৪
﴿فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَة﴾ (النور: ٦٣)
“যারা আমার রাসূলের হুকুমের বিরোধিতা করছে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের ওপর বিপদ আসতে পারে। ” -সূরা আন নূরঃ ৬৩
আমি আপনাদেরকে বারবার বলছি যে, কেবল আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলেরই আনুগত্য করা উচিত ; এর অর্থ এই নয় যে, কোনো মানুষের হুকুম আদৌ মানতে হবেনা। আসলে এর অর্থ এই যে, আপনারা অন্ধ হয়ে কারো পিছনে চলবেন না। সবসময়ই আপনি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে কেবল এটাই দেখবেন যে, যে ব্যক্তি আপনাকে কোনো কাজ করতে বলে, তা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের অনুরূপ, না তার বিপরীত। যদি তার অনুরূপ হয়, তবে তা মেনে নেয়া অবশ্যই কর্তব্য। কারণ, সেই হুকুম মতো কাজ করলে তাতে আসলে সেই ব্যক্তির নিজের হুকুম পালন করা হয় না, তা করলে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলেরই আনুগত্য করা হবে। আর সে যদি আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমের বিপরীত হুকুম দেয়, তবে তা তার মুখের ওপর নিক্ষেপ করুন, সে যে ব্যক্তি হোক না কেন। কারণ, আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম ছাড়া অন্য কারো হুকুম পালন করা একেবারেই জায়েয নয়।
আপনারা একথা সহজেই বুঝতে পারেন যে, আল্লাহ তাআলা নিজে মানুষের সামনে এসে হুকুম দেন না, তাঁর যা কিছু হুকুম-আহকাম দেয়ার ছিল, তা সবই তাঁর রাসূলের মারফতে পাঠিয়েছেন। আমাদের সেই প্রিয় নবীও প্রায় চৌদ্দ শত বছর পূর্বে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। তাঁর কাছে আল্লাহ তাআলা যা কিছু হুকুম-আহকাম দিয়েছিলেন, তা সবই এখন পবিত্র কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নিহিত আছে। কিন্তু এ কুরআন শরীফ এমন কোনো জিনিস নয়, যা নিজেই আপনাদের সামনে এসে আপনাদেরকে আল্লাহর কথা বলতে ও হুকুম দান করতে পারে এবং আপনাদেরকে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথ হতে বিরত রাখতে পারে। মানুষই আপনাদেরকে কুরআন ও হাদীস অনুসারে পরিচালিত করবে। কাজেই মানুষের অনুসরণ না করে তো কোনো উপায় নেই। অবশ্য অপরিহার্য কর্তব্য এই যে, আপনারা কোনো মানুষের পিছনে অন্ধভাবে চলবেন না। আপনারা সতর্কভাবে শুধু এতটুকুই দেখবেন যে, সেই লোকেরা আপনাদেরকে পবিত্র কুরআন ও হাদীস অনুসারে পরিচালিত করে কিনা। যদি কুরআন ও হাদীস অনুসারে চালায় তবে তাদের অনুসরণ করা আপনাদের কর্তব্য এবং তার বিপরীত পথে চালালে তাদের অনুসরণ করা পরিষ্কার হারাম।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this linkআল্লাহর হুকুম পালন করা দরকার কেন?পর্ব- ১
এগিয়ে চলুন...
মন্তব্য করতে লগইন করুন