আল্লাহর হুকুম পালন করা দরকার কেন?পর্ব- ২

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০৩:১৮:৩৭ দুপুর



আপনারা দেখছেন, দুনিয়ায় আপনাদের জীবন অসংখ্য রকম সম্পর্কের সাথে জড়িত। আপনাদের প্রথম সম্পর্ক আপনাদের দেহের সাথে। হাত, পা , কান, চোখ, জিহ্বা, মন, মগয এবং পেট সমস্তই আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে দান করেছেন আপনাদের খেদমত করার জন্য। কিন্তু এগুলো দ্বারা আপনারা কিভাবে খেদমত নিবেন, তা আপনাদেরই বিচার করতে হবে। পেটকে কি খেতে দেবেন এবং কি খেতে দিবেন না ; হাত দ্বারা কি করবেন, কি করবেন না ; পা দু’খানিকে কোন্ পথে চালাবেন কোন্ পথে চালাবেন না ; মনে কোন্ কথার খেয়াল রাখবেন আর কোন্ কথার রাখবেন না ; মন-মগয দিয়ে কোন্ কথার চিন্তা করবেন আর কোন্ কথার করবেন না-এসবই আপনাকে সবদিক চিন্তা করে ঠিক করতে হবে। এরা সবাই আপনার চাকর এদের দ্বারা আপনি ভালো কাজও করাতে পারেন, আর পাপের কাজও করাতে পারেন। এরা আপনার কাজ করে আপনাকে উচ্চতম মর্যাদার মানুষেও পরিণত করতে পারে আবার এরা আপনাকে জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট ও নীচ জীবও বানিয়ে দিতে পারে।

অতপর আপনার নিকটতম সম্বন্ধ আপনার ঘরের লোকেদের সাথে-বাপ-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য আত্বীয়-স্বজন সকলের সাথে-আপনাকে রাত-দিন সকল সময়ের জন্য সম্বন্ধ রেখে চলতে হয়। কিন্তু এদের সাথে আপনি কিরূপ ব্যবহার করবেন, তা আপনাকে বিশেষভাবে চিন্তা করেই ঠিক করতে হবে। এদের ওপর আপনার কি ‘হক’ (অধিকার) আছে এবং আপনার ওপরই বা এদের কি অধিকার আছে, তা আপনার ভালো করে জেনে নেয়া দরকার। মনে রাখবেন, এদের সাথে আপানার ব্যবহার সুষ্ঠু হওয়ার ওপরই আপনার দুনিয়ার ও আখেরাতের সুখ-শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে। যদি এদের সাথে আপনি ভুল ব্যবহার করেন তবে দুনিয়াকেই আপনি নিজের জন্য জাহান্নামে পরিণত করবেন। আর শুধু দুনিয়াই নয়, পরকালেও আপনাকে আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।

এরপর আসে দুনিয়ার অন্যান্য অগণিত লোকের সাথে আপনার সম্পর্কের কথা। অনেক লোক আপনার পাড়া-পড়শী, বহুলোক আপনার বন্ধু, কতগুলো লোক আপনার দুশমন। বহুলোক আপনার খেদমত করে এবং আপনি বহুলোকের খেদমত করেন। আপনি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করেন এবং কাউকে আপনি কিছু দেন। কেউ আপনার ওপর ভরসা করে তার কাজের ভার আপনাকে দেয়, আবার আপনি কারো ওপর ভরাসা করে আপনার কাজের ভার তার ওপর অর্পণ করেন। কেউ আপনার বিচারক আর আপনি অন্য কারো বিচারক। আপনি কাউকে হুকুম দেন আবার আপনাকে কেউ হুকুম দেয়। ফলকথা, কত সংখ্যক লোকের সাথে আপনার রাত-দিন কোনো না কোনো সম্পর্ক রেখেই চলতে হয়, যার হিসেব করে আপনি শেষ করতে পারেন না। এ সম্পর্কগুলো আপনাকে খুব ভালোভাবেই রক্ষা করতে হয়। দুনিয়ায় আপনার সুখ-শান্তি, পছন্দ-অপছন্দ, স্ফুর্তি, সফলতা, মান-সম্মান ও সুনাম অর্জন একান্তভাবে এরই ওপর নির্ভর করে। সেগুলোকে খুব ভালোভাবে রক্ষা করতে পারলে আপনি দুনিয়ায় সুখ-শান্তি এবং আনন্দ ও গৌরব লাভ করতে পারেন, নতুবা পারেন না। অনুরূপভাবে যদি পরকালে আপনি আল্লাহর কাছে কারোও অধিকার হরণকারী সাব্যস্ত না হয়ে হাজির হতে পারেন, তাহলে আপনি তার কাছে উপস্থিত হতে হবে যেন আপনি কারো হক নষ্ট করেননি, কারো উপর যুলম করেননি, কেউ আপনার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ করে না, কারো জীবন নষ্ট করার দায়িত্ব আপনার ওপর নেই এবং কারো জান-মাল ও সম্মান আপনি অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেননি। কাজেই এখন আপনাকে এই ফায়সালা করতে হবে যে, এই অগণিত লোকের সাথে সঠিকভাবে সম্পর্ক কিভাবে রাখা যাবে এবং যেসব কারণে এসব সম্পর্ক ছিন্ন, নষ্ট বা তিক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তা জেনে নিয়ে তা থেকে আপনাকে ফিরে থাকতে হবে।

এখন আপনারা চিন্তা করুন যে, আপনাদের দেহের সাথে, আপনাদের পরিবারের লোকদের সাথে এবং দুনিয়ার অন্যান্য সমস্ত লোকের সাথে সঠিক সম্পর্ক রাখার জন্য জীবনের প্রতি ধাপে জ্ঞানের উজ্জল আলো লাভ করা আপনাদের কতখানি আবশ্যক। প্রতি ধাপে আপনার জানা চাই যে, কোনটা মিথ্যা ? সুবিচার কি এবং যুলুম কি ? আপনার ওপর কার কি পরিমাণ অধিকার আছে এবং আপনারই বা তার ওপর কি পরিমাণ অধিকার আছে ? জীবনের কোন কাজে প্রকৃত উপকার পাওয়া যাবে আর কিসে আসলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে ? ------কিন্তু এসব কিছুর জ্ঞান আপনি কোথায় পেতে পারেন ? এটা যদি আপনি আপনার মনের কাছে জানতে চান, তবে সেখানে তা পাবেন না। কারণ আপনার মন নিজেই অজ্ঞ ও মূর্খ, নিজের স্বার্থ ও অসৎ কামনা ছাড়া আর কিছুই জানা নেই। সে তো বলবেঃ মদ খাও, যেনা কর, হারাম উপায়ে টাকা রোজগার কর। কারণ এসব কাজে খুবই আনন্দ আছে। সে বলবে, সকলেরই হক মেরে খাও, কাউকে হক দিও না। কারণ তাতে লাভও আছে, আরামও আছে। এমন একটা অজ্ঞ-মূর্খের হাতে যদি আপনি আপনার জীবনের রজ্জু ছেড়ে দেন-মন যা চায়, যদি কেবল তাই করেন, তবে এটা আপনাকে একেবারে অধপতনের চরম সীমায় নিয়ে যাবে। এমনকি, পরিণামে আপনি একজন নিকৃষ্ট স্বার্থপর, হীনচেতা ও পাপিষ্ঠে পরিণত হবেন। এতে আপনার দ্বীন-দুনিয়া সবকিছুই নষ্ট হবে।

চলবে..... হাকিকত সিরিজ

বিষয়: বিবিধ

১১৯১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

200309
৩০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
ভিশু লিখেছেন : Rolling Eyes Rolling Eyes Rolling Eyes
ভালো লাগ্লো খুব...Happy Good Luck
Praying Praying Praying
৩০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
150080
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আসলেই ভাল লেগেছে আপনার ?? জেনে খুবই আনন্দ পাচ্ছি!! আপনার উপস্থিতিতে এত প্রেরণা পাই কেন??
৩০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৯
150085
ভিশু লিখেছেন : একই মিছিলের সহযাত্রী যে?! যার সমাপ্তি হবে জান্নাতের বাগানে সমাবেশের মাধ্যমে...ইনশাআল্লাহ...Praying Happy Good Luck Rose
200348
৩০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৪
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : দায়িত্ব পালনের সুন্দর পন্থা! আপনিতো দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের জন্যও দোয়া করুন যেন আমরাও নিতে পারি জ্ঞানের সবটুকু নির্যাস.. Praying Praying
৩১ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫৩
150359
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আমিন,চুম্মা আমীন।
200413
৩০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : মাশাল্লাহ বেশ ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
৩১ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫৪
150360
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আপনাকে ও অনেক মোবারকবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File