আল্লাহর হুকুম পালন করা দরকার কেন?পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২৯ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১৬:৫৭ বিকাল
নয়ন সম্মুখে দেখিবনা সে হাসি
জানি তব হাসিতেছ জান্নাতেরই পরে
তোমার আলোয় আলোকিত হোক ধ্বরনি
আসুক নব সমাজ মম দৃষ্টির পরে........................।
পূর্বেই কয়েকটি পোস্টে আপনাদেরকে আমি বার বার একথাই বলেছি যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম মেনে চলার নামই ইসলাম এবং মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের খাহেশ, বাপ-দাদার কুসংস্কার, দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ ও লোকেদের আদেশ অনুযায়ী চলা ছেড়ে দিয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই মুসলমান হতে পারবে না।
কিন্তু আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পালন করার ওপর এত জোর কেন দেয়া হয়, এখানে আমি সেই কথারই বিস্তারিত আলোচনা করবো। একজন মানুষ জিজ্ঞেস করতে পারে যে, আল্লাহর আনুগত্য করার দরকারটা কি, তিনি কি আমাদের আনুগত্য পাবার মুখাপেক্ষী ? আর সে জন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে তাঁর নিজের এবং তাঁর রাসূলের হুকুম পালন করে চলার দাবী করছেন ? দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা যে রকম নিজেদের হুকুমাত চালারবার জন্য লালায়িত, আল্লাহ কি তেমন লালায়িত ? দুনিয়ার জনগণ যেমন বলে যে, আমার প্রভুত্ব স্বীকার করো আল্লাহও কি তেমনি বলেন ? এখন একথারই আমি জবাব দিতে চাই।
আসল কথা এই যে, আল্লাহ তাআলা মানুষের কাছে তার আনুগত্য দাবী করেন তাঁর নিজের স্বার্থের জন্য নয়। বরং এ মানুষেরই কল্যাণের জন্য তিনি তা চাচ্ছেন। আল্লাহ দুনিয়ার রাজা-বাদশাহর মত নন, দুনিয়ার রাজার ও রাজকর্মচারীগণ তো শুধু নিজেদেরই স্বার্থের জন্য লোকেদের ওপর তাদের হুকুমাত চালায়-লোকদেরকে নিজেদের মর্জীর গোলাম বানাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কোনো স্বার্থ নেই, তিনি সকল রকম স্বার্থের নীচতা হতে পবিত্র। আপনার কাছ থেকে টাকা আদায় করার কোনো দরকার আল্লাহর নেই । প্রাসাদ তৈরি করা, মোটর গাড়ী ক্রয় করা কিংবা আপনাদের টাকা-পয়সা, বিলাস-ব্যসন বা আরাম-আয়েশের সামগ্রী সংগ্রহ করার কোনো প্রয়োজনই তাঁর নেই। তিনি পাক, তিনি কারো মোহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার সবকিছুই তাঁর, সমস্ত ধন-সম্পদের তিনিই একমাত্র মালিক। তিনি আপনাদেরই মঙ্গলের জন্য-আপনাদেরই কল্যাণ করতে চান। তিনি মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ করে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর এ শ্রেষ্ঠ মাখুলুক বা বিরাট সৃষ্টি মানুষেরা শয়তানের গোলামী করুক, কিংবা অন্য মানুষের দাস হোক অথবা দুনিয়ার সামান্য ও হীন জিনিসের সামনে মাথা নত করুক এটা তিনি মাত্রই পছন্দ করেন না। তিনি যে মানুষকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়েছেন, তারা মূর্খতার অন্ধকারে ঘুরে মরুক এবং পশুর মতো নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী চলে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত হোক-এটাও তাঁর মনপুত নয়। এজন্যই তিনি মানুষকে বলেছেনঃ “হে মানুষ ! তোমরা আমারাই হুকুম মেনে চল-কেবল আমারই নির্দেশ মত চল-কেবল আমারই আনুগত্য কর। আমি আমার নবীর মারফতে তোমাদের কাছে যে জ্ঞানের আলো পাঠিয়েছি, তা গ্রহণ কর ; তবে তোমরা সরল ও সোজা পথের সন্ধান পেতে পারবে। আর এ সোজা পথে চলে তোমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বত্রই সম্মান লাভ করতে পারবে ।”
﴿لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدمِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ- اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوُرِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ (البقره: ٢٥٦- ٢٥٧)
“দীন ইসলামের ব্যাপারে কোনো জোর-যবরদস্তি নেই। হেদায়াতের সোজা পথ গোমরাহীর বাঁকা পথ হতে ভিন্ন করে একেবারে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছে। এখন তোমাদের মধ্যে যারাই মিথ্যা খোদা এবং ভ্রান্ত পথে চালনাকারীদেরকে ত্যাগ করে কেবল এক আল্লাহর প্রতিই ঈমান আনবে, তারা এত মযবুত রজ্জু ধারণ করতে পারবে, যা কখনই ছিঁড়ে যাবার নয়। আল্লাহ সবকিছুই শুনতে পান এবং সবকিছুই তিনি অবগত আছেন। যারা ঈমান আনলে তাদের রক্ষাকারী হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে মুক্তি দান করে আলোকের উজ্জলতম পথে নিয়ে যান। আর যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদেরকে রক্ষা করার ভার তাদের মিথ্যা খোদা ও গোমরাহকারী নেতাদের ওপর অর্পিত হয়। তারা আদেরকে আলো হতে পথভ্রষ্ট অন্ধকারে নিমজ্জিত করে । তারা দোযখে যাবে ও সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” -সূরা বাকারাঃ ২৫৬-২৫৭
আল্লাহকে ছেড়ে অন্যান্য মিথ্যা খোদার হুকুম মানলে ও তাদের আনুগত্য করলে মানুষ কেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, আর কেবল আল্লাহর আনুগত্য করলেই কেন আলোকোজ্জল পথ লাভ করা যাবে তা আপনাদের বিচার করে দেখা আবশ্যক। চলবে..... হাকিকত সিরিজ
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগছে...
মন্তব্য করতে লগইন করুন