ইসলামের নির্ভুল মানদন্ড ......পর্ব-২

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২১ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৫:৩৫ সকাল



ইসলামের নির্ভুল মানদন্ড ......পর্ব- ১ Click this link

এক ধরনের মুলমান দেখা যায় যারা আল্লাহ ও রাসূলকে স্বীকার করে ইসলামকে শুধু একটি ধর্ম হিসেবে মেনে নেয় ; কিন্তু এ ধর্ম নিজেদের সামগ্রিক জীবনের শুধু একটি অংশ বা একটি বিভাগের মর্যাদাই দেয়-তার অধিক নয়। ফলে এ বিশেষ অংশ বা একটি বিভাগের ইসলামের প্রতি বিশ্বাস পূর্ণ মাত্রায় স্থাপন করা হয়। ইবাদাত-বন্দেগীর অনুষ্ঠানসমূহ যথারীতি পালন করা হয়। তাসবীহ পাঠ ও যিকির-আযকার করা হয়। পানাহার ও কোনো কোনো সামাজিক ব্যাপারে পরহেযগারীও অবলম্বন করা হয় ; ধর্ম পালন বলতে যা করণীয় তা প্রায় সবই করা হয়। কিন্তু এ অংশ ও বিভাগ ছাড়া জীবনের অন্যান্য দিকে ও বিভাগে মুসলমানী কাজসমূহ করার কোনো সুযোগই দেয়া হয় না ; সেখানে ভালবাসা হলে তা হয় নিজের প্রতি, নিজ স্বার্থের প্রতি, দেশ ও জাতি কিংবা অন্য কোনো জিনিসের প্রতি আর দুশমনী বা যুদ্ধ করলেও তা করা হয় অনুরূপ কোনো বৈষয়িক স্বার্থের জন্য। তাদের লেন-দেন, তাদের কাজ-কারবার, সম্পর্ক-সম্বন্ধ, তাদের সন্তান-সন্ততি, বংশ-পরিবার, দেশ ও সমাজ এবং অন্যান্য লোকের সাথে ব্যবহার ইত্যাদি সবই হয়ে থাকে দ্বীন ইসলামকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে নিছক বৈষয়িক দৃষ্টিতে। জমিদার, ব্যবসায়ী, শাসনকর্তা, সৈনিক যে যাই হোক না কেন, প্রত্যেকেই একজন স্বাধীন পেশাদার হিসেবে কাজ করে, মুসলামন হিসেবে নয়। এ দিক দিয়ে মুসলমানীকে বিন্দুমাত্র স্থান দেয় না। তারা মিলিত ও সমষ্টিগতভাবে যে তমুদ্দুনিক, শিক্ষামূলক ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় অংশ গ্রহণ করে তার ওপর তাদের মুসলমানীর আংশিক প্রভাব পড়লেও তার সাথে ইসলামের কোনোই সর্ম্পক স্থাপিত হয় না।

দ্বিতীয় প্রকার মুসলমান দেখা যায়, যারা নিজেদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বকে, নিজেদের সমগ্র সত্তাকে ইসলামের কাছে সোপর্দ করে দেয়। তাদের জীবনের সমগ্র দিকেই তারা মুসলিমরূপে কর্তব্য সম্পাদন করে। তারা হয় মুসলিম পিতা, মুসলিম সন্তান, মুসলিম স্ত্রী, ব্যবসায়ী, জমির মালিক, মজুর, চাকর-যাই হোক না কেন, সর্বত্র মুসলিম হিসেবেই তাদের জীবন চালিত হয়, তাদের মনের ভাবধারা, আশা-আকাংখা, চিন্তা ও মতবাদ, তাদের রায় ও সিদ্ধান্ত, তাদের ঘৃণা ও ভালবাসা তাদের পছন্দ অপছন্দ সবকিছুই ইসলামী আদর্শের অনুসারেই হবে। তাদের মন ও মগযের ওপর তাদের চোখ ও কানের ওপর, তাদের উদর ও লজ্জাস্থানের ওপর, তাদের হাত-পা ও দেহের যাবতীয় অংগ-প্রত্যংগের ওপর সর্ম্পূণ রূপে ইসলামের আধিপত্য বিরাজ করবে। তাদের স্নেহ ভালবাসা বা শত্রুতা ইসলামের সীমালংঘন করবে না। কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে ইসলামের জন্যই করবে, কারো সাথে লড়াই করলে ইসলামেরই জন্য লড়াই করবে, কাউকে কিছু দান করলে শুধু এ জন্য দান করবে যে, এরূপ দান করা ইসলামের নির্দেশ। পক্ষান্তরে কাউকে কিছু দেয়া বন্ধ করলে তা ঠিক ইসলামের নির্দেশ অনুসররে বন্ধ করবে। তাদের এরূপ কর্মনীতি ব্যক্তিগত জীবনেই কার্যকর হবে না, তাদের সামগ্রিক জীবনেও সর্বতোভাবে ও সম্পূর্ণরূপে ইসলামেরই ভিত্তিতে স্থাপিত হবে। সমষ্টিগতভাবে তাদের সম্পূর্ণ সত্তাই হবে ইসলামের জন্য নিয়োজিত- ইসলামের জন্য উৎসর্গীকৃত। তাদের গোটা জাতীয় চরিত্র ও ভুমিকা ও তাদের কর্মতৎপরতা ইসলামের মূলনীতির বুনিয়াদে স্থাপিত ও পরিচালিত হবে।

এ দু’প্রকারের মুসলমান মূলত সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী। আইনের দৃষ্টিতে উভয় শ্রেণী একই উম্মাত তথা একই জাতির মধ্যে গণ্য হলেও এবং ‘মুসলিম’ শব্দটি উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হলেও প্রকৃত ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। প্রথম প্রকারের মুসলমানের কোনো কীর্তিই ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বা গৌরবের বস্তুরূপে পরিগণিত হয়নি। তারা এমন কোনো কাজই করেনি, যা পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের কোনো গুরূত্বই কোনো দিন অনুভব করেনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ইসলামের পশ্চাদমুখী গতি এ ধরনের মুসলমানের দ্বারা এবং এদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মুসলিম সমাজে এ ধরনের মুলমানদের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণেই মানব জীবনের ওপর কুফরির কর্তৃত্ব স্থাপিত হওয়া এবং তার অধিক সীমাবদ্ধ ধর্মীয় জীবন যাপনের সুযোগ লাভ করেই মুলমানদের তুষ্ট হওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ কখনই এ ধরনের মুসলমান চাননি। এ ধরনের মুসলমান বানাবার জন্য তিনি কিতাব নাযিল করেননি। বস্তুত এ ধরনের মুসলমান দুনিয়ায় না থাকলেও বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভাব অনুভুত হতো না। আর তা পূরণের জন্য অহী নাযিল করার এ দীর্ঘস্থায়ী ধারা পরিচালনারও প্রয়োজন দেখা দিত না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যে ধরনের মুসলমান তৈরি করার জন্য নবী পাঠিয়েছেন ও বিতাব নাযিল করেছেন, আর যারা ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মূল্যবান ও উল্লেখযোগ্য কার্যসম্পাদন করেছে এবং এখনও করতে সমর্থ তারা হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলমান। চলবে ......হাকিকত সিরিজ।

বিষয়: বিবিধ

১২৫০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

195669
২১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো।
শেখ ইবনে তাইমিয়ার উক্তির মধ্যে সব কথার সারসংক্ষেপ নিহিত রয়েছে।
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
147054
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : শুক্রিয়া মন্তব্য প্রদানের জন্য।
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
147055
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : শুক্রিয়া মন্তব্য প্রদানের জন্য।
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
147056
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : শুক্রিয়া মন্তব্য প্রদানের জন্য।
195684
২১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : ধন্যবাদ সঠিক তথ্যগুলু অংশিদার করার জন্য। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ চেনার তৌফিক দান করুক।( আমীন )
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
147057
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আমিন চুম্মা আমিন।
196860
২৪ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:৪৭
ভিশু লিখেছেন : খুব ভালো...Happy Good Luck
Praying Praying Praying
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
147058
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : কি ভালো?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File