ইসলামের নির্ভুল মানদন্ড ......পর্ব- ১
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৩৭:৩০ সকাল
মাঝে মাঝে মনেহয় বিশাল এক মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমি...........।
যার কোথাও কিছু নেই, চারিদিকে শুধু ধূ ধূ প্রান্তর....................।
যা বলা হয় সেটা প্রতিধ্বনিত হয়ে নিজের কাছেই ফিরে আসে...............।
আবার কখনো কখনো মনেহয় কালবৈশাখীর ঝড়ের কবলে পড়েছি......................আমি ।
চারপাশে মটমট করে ভাঙছে ডালপালা, উড়ে যাচ্ছে টিনের চালা.............।
কখন না জানি কি এসে আঘাত হানে এই আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে উঠে মনটা...................।
আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে বলেছেনঃ
﴿قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِين﴾ (الانعام: ١٦٢- ١٦٣)
“(হে মুহাম্মাদ !) বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ইবাদাত অনুষ্ঠান এবং আমার জীবন ও মৃত্যু--সবকিছুই আল্লাহর জন্য ; যিনি সারা-জাহানের মালিক ও প্রভূ। তাঁর কেউ শরীক নেই। এরূপ বলার জন্যই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর সর্বপ্রথম আমি তাঁরই সামনে আনুগত্যের মস্তক নত করে দিচ্ছি।”--সূরা আল আনআমঃ ১৬৩-১৬৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেনঃ
مَنْ اَحَبَّ ِللهِ وَ اَبْغَضَ ِللهِ وَ مَنَعَ ِللهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْاِيْماَنَ
“আল্লাহর জন্য যে ভালবাসলো, আল্লাহর জন্য যে দুশমনী করলো, আল্লাহরই জন্য যে দান করলো এবং আল্লাহরই জন্য দেয়া বন্ধ করলো, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করলো। অর্থাৎ সে কামিল ঈমানদার হলো।”
প্রথমে আমি যে আয়াতের উল্লেখ করেছি তা হতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম মানুষকে তার সমস্ত দাসত্ব-আনুগত্যের এবং নিজের জীবন ও মৃত্যুকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠা সহকারে উৎসর্গ করার এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিচ্ছে। অন্য কথায় মানুষ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব ও আনুগত্য কারবে না। তার জীবন-মৃত্যুও আল্লাহ ছাড়া আর কারো উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত হবে না।
ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায় যা পেশ করা হয়েছে তাতে জানতে পারা যায় যে, মানুষের ভালবাসা, শুত্রুতা এবং নিজের বৈষয়িক জীবনের সমস্ত কাজ-কারবার ও লেন-দেন একান্ত ভাবে আল্লাহরই জন্য উৎসর্গকৃত হওয়া মূল ঈমানের ঐকান্তিক দাবী। তা না হলে উচ্চমর্যাদা লাভ তো দূরের কথা ঈমানই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। এ ব্যাপারে যতটুকু অপূর্ণতা থাকবে মানুষের ঈমানের ঠিক ততটুকুই অপূর্ণতা থেকে যাবে । পক্ষান্তরে এদিক দিয়ে মানুষ যত পূর্ণতা সহকারে আল্লাহর কাছে সমর্পিত চিত্ত হতে পারবে তার ঈমানও ততটুকুই পূর্ণ হবে।
অধিকাংশ লোকের ধারণা এই যে, নিজেকে সর্বোতভবে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দেয়া শুধু উচ্চ মরতবা বা মর্যাদা লাভের জন্যই প্রয়োজন, শুধু ঈমান ও ইসলামের জন্য কারোও মধ্যে এতদূর উন্নতভাবের সৃষ্টি হওয়া কোনো জরুরী শর্ত নয়। অন্য কথায় তাদের ধারণা এই যে, উক্ত রূপ ভাবধারার মূলের দিক দিয়েই ভুল আর সাধারণ মানুষ আইনগত ইসলাম ও আল্লাহর কাছে গণ্য প্রকৃত ইসলামের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না বলেই এরূপ ভূল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
ফিকাহ সম্মত ও আইনগত ইসলামে মানুষের মনের প্রকৃত অবস্থা দেখা হয় না-আর তা দেখা সম্ভবও নয়। বরং মানুষের মৌখিক স্বীকৃতির বাস্তব প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটি জরুরী বাহ্যিক নিদর্শন বর্তমান থাকার ওপরই লক্ষ্য আরোপ করা হয়। কেউ যদি মুখে আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, পরকাল ও অন্যান্য জরুরী বিষয়ে ঈমান রয়েছে বলে স্বীকার করে অতপর এ মৌখিক স্বীকারোক্তির বাস্তব প্রমাণের জরুরী শর্তগুলো পূরণ করে তবে তাকে ইসলামের সীমার মধ্যে গণ্য করা হবে। তাকে মুসলামন মনে করেই তার সাথে সকল কাজ-কর্ম করা হবে। কিন্তু মূলত এসব বিষয়ই শুধু এ দুনিয়ার জন্য সীমাবদ্ধ এবং এটাতে শুধু বৈষয়িক দৃষ্টিতে মুসলিম সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ও তমুদ্দুনিক ভিত্তিই লাভ হয়ে থাকে। এরূপ স্বীকারোক্তির সাহায্যে যারা মুসলিম সমাজে প্রবেশ করবে তারা সকলেই মুসলিম বলে গন্য হবে। তাদের মধ্যে কাউকে কাফের বলা যাবে না। তারা পরস্পরের কাছ হতে শরীয়াত সম্মত নৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারবে, মীরাস বন্টন হবে এবং অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
কিন্তু পরকালে মানুষের মুক্তি লাভ, তার মুসলিম ও মু’মিন রূপে গণ্য হওয়া এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের মধ্যে শামিল হওয়া কেবলমাত্র উক্ত রূপ আইনগত ও মৌখিক স্বীকৃতি দ্বারা সম্ভব নয়, বরং মানুষের মনে স্বীকৃতি আল্লাহর দিকে অন্তরকে সমাহিত করা এবং ঐকান্তিক আগ্রহ ও উৎসাহ সহকারে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে সোপর্দ করে দেয়াই এর জন্য অপরিহার্য শর্ত। পৃথিবীতে মৌখিক স্বীকৃতির মূল্য হয় শুধু কাযীর দরবারে ও সাধারণ মানুষ বা মুসলমানদের মধ্যে ; কেননা তারা কেবল বাহিরকেই দেখতে পারে। কিন্তু আল্লাহ দেখেন মানুষের মন বা অন্তরকে- তার ভিতরকার আসল অবস্থা ও ভাবধারাকে। আল্লাহ মানুষের ঈমানের পরিমাপ করেন। মানুষ তার জীবন ও মৃত্যুকে তার যাবতীয় কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্ব, আনুগত্য, দাসত্ব ও গোটা জীবনের কর্মধারাকে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করেছে, না অপর কারোও জন্য, আল্লাহর দরবারে ঠিক এ মাপকাঠিতেই মানুষকে যাচাই করা হবে। এ যাচাইয়ের ফলে যদি প্রমাণিত হয় যে, সে এসব কিছু একমাত্র আল্লাহরই জন্য উৎসর্গ করেছিল তবে সে মুসলিম এবং মু’মিন বলে গণ্য হবে, আর অন্য কারো জন্য উৎসর্গ করে থাকলে সে না মুসলিমরূপে গন্য হবে, না মু’মিরূপে । এ দৃষ্টিতে যে যতদূর কাঁচা ও অপরিপক্ক প্রমাণিত হবে তার ঈমান এবং ইসলামও ঠিক ততদূরই অপরিপক্ক হবে। ----- দুনিয়ায় যে অতিবড় মুসলিমরূপে গণ্য হলেও এবং সেখানে তাকে অতুল্য মর্যাদা দান করা হলেও আল্লাহর দরবারে তার কোনোই গুরুত্ব হবে না। আল্লাহ যা কিছু আপনাকে দিয়েছেন, আপনি তার সবকিছুই আল্লাহর জন্য --আল্লাহরই নির্দেশিত পথে প্রয়োগ করলেন কি না শুধু এ দিক দিয়েই আল্লাহর কাছে মানুষের মূল্য স্থির হবে। আপনি এরূপ করে থাকলে আপনাকে ঠিক অনুগত ও বন্ধুত্বের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হবে। আর কোনো জিনিস যদি আপনি আল্লাহর বন্দেগী হতে দূরে রাখেন, আল্লাহর নির্দেশিত পথে প্রয়োগ না করেন তবে আপনার মুসলিম দাবী করার - অর্থাৎ নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করার মৌখিক উক্তি দ্বারা প্রতারিত হয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে আপনাকে স্থান দিতে এবং মুসলিম হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা দান করতেও পারে। কিন্তু আল্লাহ কখনও তাতে প্রতারিত হবেন না এবং আপনাকে তাঁর বিশ্বস্ত ও অনুগত বন্ধুদের মধ্যে গণ্য করবেন না।
আইনগত ইসলাম ও প্রকৃত ইসলামের এ পার্থক্যের যে ব্যাখ্যা দান করা হলো, তা গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায় যে, এর ফলাফল কেবল পরকালেই ভিন্ন ভিন্ন হবে না ; বরং দুনিয়ায়ও এ পার্থক্যের বাস্তব ফল ভিন্ন ভিন্ন হতে বাধ্য। এজন্য দুনিয়ায় যত মুসলামন এসেছে এবং যত মুসলমান এখন দুনিয়ায় রয়েছে তাদের সকলকে উপরোক্ত দু’ভাবে ভাগ করা যেতে পারে। চলবে ......হাকিকত সিরিজ।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন