ঈমানের পরীক্ষা........পর্ব- ৩
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৯ মার্চ, ২০১৪, ১১:২৭:৩৯ সকাল
আমি প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ্র সাহায্য টের পেতাম। আর এটাই আমাকে আরো বেশি আল্লাহ্র প্রতি ঝুকিয়ে দিয়েছিল। আমি বিশ্বাস করেছিলাম আল্লাহ্কে, আর বিশ্বাস করতাম যে, তিনি বিশ্বাস করেন আমাকে। এ আত্মিক সম্পর্কের ভীত আমাকে সাহস যোগায় যখন আমি কোন নতুন সিদ্ধান্ত নিই। আমি তাঁর উপর নির্ভর করি এই ভেবে যে, আমার যেকোনো হক্ সিদ্ধান্তে তিনি আমাকে সাহায্য করবেন, যেভাবে করেছেন আগেও। আর কাঠিন্য তো জীবনেরই অংশ! আমি বারংবার আল্লাহ্কে সালাতে, তিলাওয়াতে, যিকিরে যে আশ্বাস দিচ্ছি, তা কি তিনি একবারও যাচাই করে দেখবেন না!? আর তিনি যাচাই করতে গেলেই যদি আমি তার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ি, তাহলে আমার কথায় আর কাজে কি মিল থাকলো?
যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছিল, তখন তারা কিভাবে কাজ করেছিল তা কি আপনার জানেন ? শত শত বছর ধরে যেসব মূর্তিকে তারা এবং তাদের বাপ-দাদারা পূজা করেছে, যেসবের সামনে নানা প্রকারের ভেট ও ভোগ হাযির করেছে এবং যেগুলোর সামনে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করেছে, ঈমানদার ব্যক্তিগত তা নিজেদেরই হাতে এক একটা করে চূর্ণ করে ফেলেছে। শত শত বছর ধরে যেসব বংশীয় রীতিনীতি ও রসম-রেওয়ায চলে আসছিল তা সবই তারা পরিত্যাগ করেছিল ; যেসব জিনিসকে তারা মহান ও পবিত্র বলে ধারণা করতো, আল্লাহর হুকুম পেয়েই তারা তাকে পায়ের তলে দলিত করলো। যেসব জিনিস তারা ঘৃণা করতো আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তাকে ভাল মনে করে গ্রহণ করতে লাগলো। চিরকাল যেসব জিনিসকে পাক ও পবিত্র মনে করা হতো, আল্লাহর বিধান মতো সেই সবকে অপবিত্র মনে করতে শুরু করলো। আর যেসব জিনিসকে অপবিত্র মনে করতো, সহসা তা পবিত্র হয়ে গেল। যেসব কাফেরী চালচলনে তারা আরাম ও সুখ মনে করতো, আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্রই তা সবই ছেড়ে দিয়েছিল এবং ইসলামে যেসব হুকুম পালন করা মানুষের পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হতো তারা সেই সবকে সানন্দে কবুল করে নিলো। এরই নাম ঈমান এবং একেই বলা হয় ইসলাম। কিন্তু ভেবে দেখুন, আরব দেশের লোকেরা যদি তখন তাদের বাপ-দাদাদের মতো বলতো, অমুক অমুক কাজ আমরা মানব না, কারণ এতে আমাদের ক্ষতি হবে-অমুক কাজ আমরা নিশ্চয় করবো কারণ বাপ-দাদার কাল হতেই এটা চলে এসেছে এবং রোম দেশের লোকদের কিংবা ইরান দেশের লোকদের অমুক কাজ আমাদের খুব ভালো লাগে বলে তা আমরা ছাড়তে পারবো না। এরূপে ইসলামের এক একটা হুকুম বাতিল করে দিতো তাহলে দুনিয়ায় এখন একজন মুসলমানও থাকতো কি ?
কুরআন শরীফে বলা হয়েছেঃ
﴿لَن تَنَالُواْ الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَ﴾ (ال عمران: ٩٢)
“তোমাদের প্রিয় জিনিসগুলোকে যদি তোমরা আল্লাহর জন্য কুরবানী না কর তাহলে তোমরা প্রকৃত কল্যাণ কিছুতেই লাভ করতে পারবে না।” -সূরা আলে ইমরানঃ ৯২
এ আয়াতটিই ইসলাম ও ঈমানের মূল কথা। ইসলামের আসল দাবী হচ্ছে, তোমাদেও সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দাও। জীবনের সব রকমের কাজ-কারবারেই আপনারা দেখতে পাবেন যে, আল্লাহর হুকুম একদিকে আপনাকে ডাকে, আর আপনাদের নফস ডাকে এর সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। আল্লহ এক কাজের হুকুম করেন অথচ আপনাদের নফস ডাকে সে কাজে আপনার ভয়ানক কষ্ট কিংবা ক্ষতি হবে বলে প্ররোচিত করে। আল্লাহ এক কাজ করতে নিষেধ করেন, কিন্তু আপনার নফস তাকে অত্যন্ত মজাদার উপকারী জিনিস মনে করে তা ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয় না। প্রত্যেক কাজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে একদিকে আর সারা দুনিয়ার সুখ-সুবিধার আকর্ষণ আপনাকে ডাকতে থাকে সম্পূর্ণ অন্যদিকে। মোটকথা জীবনের প্রত্যেক পদেই মানুষের সামনে দু’টি পথ এসে পড়ে ; একটি ইসলামের পথ, অপরটি কুফর ও মুনাফিকীর পথ। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রত্যেক জিনিসকে পদাঘাত করে একমাত্র আল্লাহর হুকুমের সামনে মাথা নত করে দেবে, মনে করতে হবে যে, কেবল সেই ব্যক্তিই ইসলামের পথ ধরেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের ওপর পদাঘাত করতে নিজের মনের বা দুনিয়ার খুশী চরিতার্থ করবে, বুঝতে হবে যে, সে কাফেরী এবং মুনাফিকীর পথ গ্রহণ করেছে।
বর্তমান কালে মানুষ সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী নীতি গ্রহণ করেছে। তারা ইসলামের সরল নিয়মগুলো তো অত্যন্ত আনন্দের সাথে স্বীকার করে, কিন্তু কুফর ও ইসলামের প্রকৃত মোকাবিলার সময় নিজেদের গতি পরিবর্তন করে ফেলে। ইসলামের বড় বড় দাবীদার লোকদের মধ্যেও এ রকম দুর্বলতা রয়েছে। ইসলাম ! ইসলাম ! করে তারা চীৎকার তো খুবই করে, ইসলামের তা’রীফ করতে গিয়েও তাদের মুখে খৈ ফোটে আর সে জন্য লোক দেখানো কাজও তারা যথেষ্ট করে, কিন্তু যে ইসলামের তারা এত তা’রীফ করে থাকে, সকলে মিলিত হয়ে সেই ইসলামের পরিপূর্ণ বিধানকে নিজেদের ওপর জারী করার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানালে তারা অমনি বলে উঠেঃ ঐ কাজ সহজ নয়, এতে নানা প্রকারের কষ্ট আছে কিংবা এখন তা হতে পারে না। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ইসলাম একটা সুন্দর খেলনা মাত্র। তাকে তাকের ওপর উঠিয়ে রেখে দিলে এর সৌন্দর্য দেখা যায়। মুখে এর খুবই তা’রীফ করা যেতে পারে, কিন্তু নিজের ও পরিবারের লোকজনের ওপর, আত্বীয়-স্বজনের ওপর, নিজেদের কাজ-কারবারের ওপর তাকে একটা পরিপূর্ণ আইন হিসেবে জারী করার নাম নেয়া তাদের মতে একটা অপরাধ। আমাদের আজকালকার ধার্মিক বলে পরিচিত ব্যক্তিদের অবস্থা হয়েছে এই-তারপর দুনিয়ার অন্য লোকদের কথা আর কি বলা যায় ? মনে রাখবেন, ঠিক এ কারণেই আজ আমাদের নামায, রোযা, কুরআন তেলাওয়াত ও শরীয়াতের প্রকাশ্য অনুসরণের মধ্যে পূর্বের সেই প্রভাব আর বর্তমান নেই এবং সে জন্যই তাতে আমরা বাস্তব জীবনে কোনো ফলই লাভ করতে পারছি না। কারণ প্রাণটাই যখন না থাকে, তখন প্রাণহীন দেহটা আর কি সুফল দেখাতে পারে ?
বিষয়: বিবিধ
১০৩৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈমানের দাবি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা ভালবাসা দেখাতে যতটা উৎসাহি ততটাই পিছিয়ে ইসলাম এর বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে। আমরা বেহেস্তে যেতে চাই। কিন্তু শর্টকার্ট পথে!
ভালো লাগ্লো খুব...
মন্তব্য করতে লগইন করুন