ঈমানের পরীক্ষা........পর্ব- ১

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৬ মার্চ, ২০১৪, ১১:০৮:৩৭ সকাল



উনাকে ফাঁসীর সেলে এ আর কতদিন রাখা হবে??

পূর্বের প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, কুরআনের মতে মানুষের গুমরাহ হবার আসল কারণ হচ্ছে তিনটি। প্রথম, আল্লাহর আইন ত্যাগ করে নিজের নফসের খাহেশাতের গোলাম হওয়া ; দ্বিতীয়, আল্লাহর আইনের মোকাবিলায় নিজের বংশের রসম-রেওয়াজ ও বাপ-দাদার পথ অনুসরণ করা এবং তৃতীয়, আল্লাহ ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পথ নির্দেশ করেছেন, তাকে দূরে নিক্ষেপ করে দুনিয়ার মানুষের আনুগত্য করা -সেই মানুষ তার নিজের জাতির প্রতিপত্তিশীল লোক হোক, কিংবা জাতিরই হোক।

মুসলমানের খাঁটি পরিচয় এই যে, সে এ তিন প্রকারের রোগ ও গোমরাহী হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে। মুসলমান শুধু তাকেই বলে, যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাস নয় এবং রাসূল ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করে না । সেই ব্যক্তি মুসলমান, যে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ এবং তাঁর নবীর শিক্ষাই সম্পূর্ণ সত্য, এর বিপরীত যা, তা সবই মিথ্যা। মানুষের দীন-দুনিয়ার মংগল ও উন্নতি কেবলমাত্র আল্লাহ ও রাসুলের মহান শিক্ষার ভেতরেই নিহিত আছে। একথা যে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে পারবে, সে তার জীবনের প্রত্যেক কাজেই কেবল অনুসন্ধান করবে আল্লাহর হুকুম কি, রাসূলের বিধান কি ? আর যখনই তা সে জানতে পারবে তখনই সে সোজাসুজি এর সামনে তার মাথা নত করে দেবে। অতপর তার মন যতই অস্থির হোক না কেন, তার বংশের লোক তাকে ফিরাতে যতই চেষ্টা করুক না কেন এবং দুনিয়ার লোক তার যতই বিরোধিতা করুক না কেন, সে তাদের কারো পরোয়া করবে না। কারণ সে প্রত্যেককেই এই একমাত্র জবাব দিবে, ‘বাঃ আমি তো একমাত্র আল্লাহ তাআলারই বান্দাহ-তোমাদের কারো বান্দাহ নই আর আমি রাসুলের ওপর ঈমান এনেছি-তোমার ওপর ঈমান আনিনি।” কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ ও রাসূলের যদি এটা হুকুম হয়ে থাকে তবেই হোক না, আমার আন্তর তা মানে না; অথবা তাতে আমার ক্ষতি হবার আশংকা আছে ; কাজেই আমি আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম ছেড়ে আমার নিজের মতে চলবো -তাহলে এমন ব্যক্তির মনে ঈমানের নাম গন্ধও অবশিষ্ট থাকবে না। সে মু’মিন নয় -বরং মুনাফিক ; মুখে মুখে যদিও সে কেবল আল্লাহর বান্দাহ ও নবীর অনুসরণকারী হবার দাবী করে ; কিন্তু আসলে সে নিজের নফসের বান্দাহ আর তার নিজের মতেরই অনুসরণকারী।

অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি যদি বলে যে, আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম যাই হোক না কেন ; কিন্তু অমুক নিয়ম যেহেতু বাপ-দাদার কাল হতে চলে এসেছে, সুতরাং তাকে কেমন করে ছাড়া যায় ? অথবা অমুক নিয়ম তো আমার বংশ বা গোত্রে আবহমানকাল হতে চলে এসেছে, আজ আমি এর বিপরীত কেমন করে করবো? তাহলে এমন ব্যক্তিকেও ঐ মুনাফিকের দলে গণ্য করতে হবে। নামাজ পড়তে পড়তে তার কপালে যতই দাগ পড়ুক না কেন, আর প্রকাশ্যে সে যতই ধার্মিকের বেশ ধারণ করে থাকুক না কেন ; কিন্তু আসলে সে একজন মুনাফিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর কারণ এই যে, ধর্মের মূল তত্ত্ব তার মনে মোটেই স্থান পায়নি- তার মন খাঁটিভাবে ইসলামকে কবুল করে না। শুধু রুকু’-সিজদাহ বা রোজা ও হজ্জকে ‘দ্বীন ইসলাম’ বলা হয় না। আর মানুষের বাহ্যিক বেশকে মুসলামনের মত করে নিলে ‘দীন’ পালন করা হয় না। বরং আসলে ‘দীন’ বা ধর্ম বলা হয় আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করাকে। যে ব্যক্তি নিজের জীবনের সমস্ত কাজ-কারবারে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে তার মনে প্রকৃতপক্ষে ‘দীন’ -এর নাম গন্ধও বর্তমান নেই। তার নামায, রোযা এবং তার পরহেযগারী ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।

অনুরুপভাবে কোনো মানুষ যদি আল্লাহ এবং তাঁর নবীর হেদায়াতের প্রতি বেপরোয়া হয়ে বলে যে, যেহেতু ইউরোপীয় বা আমেরিকান জাতির মধ্যে অমুক জিনিসের খুব প্রচলন আছে এবং তারা উন্নতি লাভ করেছে, অতএব তা আমাদেরও গ্রহণ করা উচিত ; কিংবা অমুক জাতি অমুক কাজ করছে, অমুক বড় লোক একথা বলেছেন, কাজেই তা আমাদেরও পালন করা কর্তব্য, তাহলে এমন ব্যক্তির ঈমান আছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ঈমান থাকলে এসব কথা কেউ বলতে পারে না। বাস্তবিকই যদি মুসলমান হয়ে থাকেন এবং মুসলমানই থাকতে চান, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের বিপরীত যে কথাই হবে তাই দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। এরূপ করতে না পারলে ইসলামের দাবী করা কারো পক্ষে শোভা পায় না। “আল্লাহ ও রাসূলকে স্বীকার করি” বলে মুখে দাবী করা আর জীবনের সমস্ত কাজ কারবারে সবসময়ই আল্লাহ ও রাসূলের কথাকে বাদ দিয়ে দুনিয়ার লোকদেরকে অনুসরণ করা -এটা না ঈমান না ইসলাম, এর নাম মুনাফিকী ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

পবিত্র কুরআনের ১৮শ পারায় আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ

﴿لَقَدْ أَنزَلْنَا آيَاتٍ مُّبَيِّنَاتٍ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ- وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِّنْهُم مِّن بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُوْلَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ- وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُم مُّعْرِضُونَ- وَإِن يَكُن لَّهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ- أَفِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَن يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ- إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ- وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَائِزُون ﴾ (الانور: ٤٦-٥٢)َ

“আমি হক ও বাতিলের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী আয়তসমূহ নাযিল করে দিয়েছি। আল্লাহ যাকে চান এ আয়াতের সাহায্যে তাকে সোজা পথ দেখিয়ে দেন। লোকেরা বলে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা (তাঁদের) আনুগত্য স্বীকার করছি ; কিন্তু পরে তাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক আনুগত্য করা ছেড়ে দেয়। এ শ্রেণীর লোকেরা ঈমানদার নয়। তাদের কাজ-কারবারের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার আইন অনুসারে ফায়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে ডাকা হয় তখন কিছু লোক অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। কিন্তু আল্লাহর আইনের ফায়সালা যদি তাদের মনের মত হয় তবে অবশ্য তা স্বীকার করে নেয়। তাদের মনের মধ্যে কি রোগ আছে ? না তারা শুধু অকারণ সন্দেহের মধ্যে ডুবে রয়েছে ? অথবা তাদের এ ভয় আছে যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তাদেও ‘হক’ নষ্ট করবেন ? কারণ যাই হোক, তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে। প্রত্যেক ঈমাদার লোকের নিয়ম এই যে, আল্লাহর আইন অনুসারে বিচার করার জন্য যখন তাদেরকে ডাকা হয় তখন তারা ‘আমরা শুনেছি এবং তা অনুসরণ করি’ বলে মাথা নত করে দেয়। বাস্তবিক পক্ষে এ শ্রেণীর লোকেরাই মুক্তি ও উন্নতি লাভ করতে পারে। আর যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের হুকুম পালন করবে, আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাঁর নাফরমানী হতে ফিরে থাকবে কেবল তারাই সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে ।”- সুরা আন নূরঃ ৪৬-৫২

এ আয়াতসমূহে ঈমানের যে পরিচয় দেয়া হয়েছে আপনারা তা একটু বিশেষভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন। বস্তুত নিজেকে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হেদায়াতের সামনে সোপর্দ করে দেয়ার নামই হচ্ছে ঈমান। সেখান হতে যে হুকুম আসে তার সামনে মাথা নত করে দাও। এর বিরোধী কোনো কথা শুনবে না-না নিজের মনের কথা, না বংশ ও পরিবারের কথা আর না দুনিয়ার লোকের কথা। যে ব্যক্তির মনের মধ্যে এ গুণ বর্তমান থাকবে প্রকৃতপক্ষে সেই হবে মু’মিন ও মুসলমান। আর যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না তাকে মুনাফিক ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

192873
১৬ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১০
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : চলবে..... হাকিকত সিরিজ
192927
১৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৩৭
জোস্নালোকিত জ্যাস লিখেছেন : আল্লাহ তুমি মজলুমের প্রতি সদয় হও....ফিরিয়ে দাও আমার প্রিয় নেতাকে....
১৬ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:২৮
143711
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আমিন
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:২৩
144522
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আমিন চুম্মা আমিন।
193141
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:২৪
144524
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আপনাকে ও অনেক অনেক মোবারকবাদ মন্তব্য করে উৎসাহ প্রদানের জন্য ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File