মুসলমান কাকে বলে?? ২য় পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৫:১৫:৩৩ বিকাল
মুসলমান কাকে বলে?১ম অংশClick this linkআমার ধারনাকে মিথ্যা প্রমান করে আগের পোস্টটি এই অংশ দেওয়া পর্যন্ত ১৯০ বার পঠিত হইয়াছে আলহামদুলিল্লাহ্। এমন রস হীন ব্লগ পড়ে ও অনেকে আছেন যারা মন্তব্য প্রদান করেন তাদের পেত্যেক্কে মোবারকবাদ।
আজ ও কারাগারে গিয়েছিলাম আমাদের একজন মুসলিম ভাই জালিমের কারাগার হতে বাহীর হইয়াছেন। আলহামদুলিল্লাহ্।
এ কুফর ও গোমরাহী কোথা হতে আসে এবং মানুষের মধ্যে এটা কিরূপে প্রবেশ করে, অতপর এ সম্পর্কেই আলোচনা করবো। কুরআন শরীফ এ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, মানুষের মধ্যে আল্লাহকে অমান্য করার ভাব তিনটি পথে প্রবেশ করে। প্রথম পথ হচ্ছে মানুষের নিজের নফসের খাহেশঃ
﴿وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾ (القصص: ٥٠ )
“আল্লাহর দেয়া বিধান পরিত্যাগ করে যে ব্যক্তি নিজের নফসের ইচ্ছামত চলে তার অপেক্ষা অধিক গোমরাহ করার মতো যত জিনিস আছে তার মধ্যে মানুষের নফসই হচ্ছে তার সর্বপ্রধান পথভ্রষ্টকারী শক্তি। যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছার দাসত্ব করবে, আল্লাহর বান্দাহ হওয়া তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কারণ যে কাজে টাকা পাওয়া যাবে, যে কাজ করলে সুনাম ও সম্মান হবে, যে জিনিসে অধিক স্বাদ ও আনন্দ লাভ করা যাবে, আরাম ও সুখ যে কাজে অধিক মিলবে সে কেবল সেসব কাজেরই সন্ধান করবে এবং যেসব কাজে তা দেখতে পাবে, কেবল সে কাজই করতে সে প্রাণ-পণ চেষ্টা করবে। সেসব কাজ করতে যদি আল্লাহ নিষেধও করে থাকেন, তবুও সে সেদিকে ভ্রক্ষেপ করবে না। আর এসব জিনিস যেসব কাজে পাওয়া যাবে না সেসব কাজ করতে সে কখনও প্রস্তুত হবে না। আল্লাহ তাআলা যদি সেই কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবুও সে তার কিছুমাত্র পরোয়া করবে না। এমতাবস্থায় একথা পরিষ্কার করে বলা যেতে পারে যে, সে আল্লাহ তাআলাকে তার খোদা রূপে স্বীকার করেনি বরং তার নফসকেই সে তার একমাত্র খোদার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। কুরআন শরীফে একথা অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছেঃ
﴿أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلاً - أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلاً﴾ (الفرقان: ٤٣- ٤٤)
“(হে নবী !) যে ব্যক্তি নিজের নফসের ইচ্ছাকে নিজের খোদা বানিয়ে নিয়েছে, তুমি কি তার সম্পর্কে ভেবে দেখেছ ? তুমি কি এ ধরনের মানুষের পাহারাদারী করতে পার ? তুমি কি মনে কর যে, এদের মধ্যে অনেক লোকই (তোমার দাওয়াত) মানে এবং বুঝে ? কখনও নয়। এরা তো একেবারে জন্তু-জানোয়ারের মত বরং তা অপেক্ষাও এরা নিকৃষ্ট।”
যে ব্যক্তি নফসের দাস, সে যে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ থাকতে পারেনা। কোনো পশুকে আপনারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘন করতে দেখবেন না। প্রত্যেক পশু সেই জিনিসই আহার করে যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য খায় যে পরিমাণ তার জন্য নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। আর যে জানোয়ারের জন্য যত কাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রত্যেক জানোয়ার সে কাজই করে যায়। কিন্তু এ মানুষ এমনই এক শ্রেণীর পশু যে, সে যখন নফসের দাস হয়ে যায়, তখন সে এমন সব কাজ করে যা দেখে শয়তানও ভয় পেয়ে যায়।
মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার এটাই প্রথম কারণ। দ্বিতীয় পথ হচ্ছে এই যে, বাপ-দাদা হতে যেসব রসম-রেওয়াজ, যে আকীদা-বিশ্বাস ও মত এবং যে চাল-চলন ও রীতিনীতি চলে এসেছে তার একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকার দরুন মানুষ তার গোলাম হয়ে যায়। আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষাও তাকে বেশী সম্মানের যোগ্য বলে মনে করে। সেই রসম-রেওয়াজের বিপরীত আল্লাহর কোনো কোনো হুকুম যদি তার সামনে পেশ করা হয়, তবে সে অমনি বলে ওঠে বাপ-দাদারা যা করে গেছে, আমার বংশের যে নিয়ম বহুদিন হতে চলে এসেছে, আমি কি তার বিপরীত কাজ করতে পারি? পূর্ব-পুরুষের নিয়মের পূজা করার রোগ যার মধ্যে এতখানি, আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হওয়া তার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। বাস্তব ক্ষেত্রে তার বাপ-দাদা এবং তার বংশের লোকেরাই তার খোদা হয়ে বসে। সে নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করলে তা যে মিথ্যা দাবী হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কুরআন মজীদে এ সম্পর্কে বড় কড়াকরিভাবে সাবধান করে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছেঃ
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللّهُ قَالُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئاً وَلاَ يَهْتَدُونَ﴾ ( البقرة-١٧٠)
“যখনই তাদেরকে বলা হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করে চলো, তখন তারা শুধু একথাই বলে উঠেছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলেছে, আমরা কেবল সে পথেই চলবো। কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা যদি কোনো কথা বুঝতে না পেরে থাকে এবং তারা যদি সৎপথে না চলে থাকে, তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে ?
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْاْ إِلَى مَا أَنزَلَ اللّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُواْ حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ شَيْئاً وَلاَ يَهْتَدُونَ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ لاَ يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ إِلَى اللّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعاً فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ ( الماﺌدة:۱۰٤-۱۰٥)
“ যখনই তাদেরকে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ যে বিধান পাঠিয়েছেন তার দিকে আস এবং রাসূলের দিকে আস, তখনই তারা বলেছে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলে গেছে, আমাদের পক্ষে তাই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের বাপ-দাদারা যদি আসল কথা জানতে না পেরে থাকে এবং তারা যদি সৎপথে না চলে থাকে তবুও কি তারা (অন্ধভাবে) তাদেরই অনুসরণ করে চলবে ? হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের চিন্তা করা উচিত। তোমরা যদি সৎপথে চলতে পার, অন্য লোকের গোমরাহীতে তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তোমাদের সকলকেই শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন আল্লাহ তাআলা তোমাদের কাজের ভাল-মন্দ তোমাদেরকে দেখিয়ে দেবেন।”-সূরা আল মায়েদাঃ ১০৪-১০৫
সাধারণভাবে প্রত্যেক যুগের জাহেল লোকেরা এ ধরনের গোমরাহীতে ডুবে থাকে এবং আল্লাহর নবীর দাওয়াত কবূল করতে এ জিনিস তাদেরকে বাধা দেয় । হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন সেই যুগের লোকদেরকে আল্লাহর শরীয়াতের প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন তখনও তারা একথাই বলেছেনঃ
﴿أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا﴾ (يونس: ٧٨)
“আমাদের বাপ-দাদারা যে পথে চলেছে তুমি কি সেই পথ হতে আমাদেরকে ভুলিয়ে নিতে এসেছো ?” – সূরা ইউনুসঃ ৭৮
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন তাঁর গোত্রের লোকদেরকে শিরক হতে ফিরে থাকতে বললেন, তখন তারাও একথাটি বলেছিলঃ
﴿وَجَدْنَا آبَاءنَا لَهَا عَابِدِينَ﴾ (الانبياء: ٣٥ )
“আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এই দেবতারই পূজা করতে দেখেছি।”
মোটকথা প্রত্যেক নবীরই দাওয়াত শুনে সেই যুগের লোকেরা শুধু একথাই বলেছে, “তোমরা যা বলছো তা আমাদের বাপ-দাদার নিয়মের বিপরীত। কাজেই আমরা তা মানতে পারি না।”
চলবে..... হাকিকত সিরিজ.....
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন