হাগুন যে এসেছে ধরায়!
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৪৯:১২ সকাল
মাস নিয়া উপনিবেশবাদিদের উপহাস মজাই লাগে। প্রাচীন কাল থেকে সাহিত্য-পুস্তকে দেখতাছি বাঙ্গালির রোমান্টিকতার প্রতীক ছিল বর্ষা! কালিদাস তার 'মেঘদূত' গ্রন্থে আষাঢ়ের প্রথম দিনে নতুন মেঘ দেখে যক্ষের মনে যে ভাবের উদ্রেক ঘটে তা বর্ণনা করেছেন। বুদ্ধদেব বসু, রবীন্দ্রনাথসহ সব প্রথিত যশা সাহিত্যিক-কবিরা বর্ষার রোমান্টিকতা নিয়ে লিখেছেন।
এখন আস্তে আস্তে বয়ান পরিবর্তন হচ্ছে। উপনিবেশিক চিন্তার ফসল স্বরূপ পশ্চিমাদের 'স্প্রিং'এর আছড় পড়তাছে আমাদের শহরবাসি কবিদের মাঝে! এখনকার কবিরা শীতের মধুমাখা রোদ, পিঠা খাওয়া ভুলে গেছে। শহরের ইট পাথরের চার দেয়ালের মাঝে থাকতে থাকতে জল-প্রকৃতি ভুলে গেছে, ভুলে গেছে বাংলার ঐতিহ্য। তাইতো ডিএইচ লরেন্স, উইয়িলিয়াম ব্ল্যাক, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, এমিলি ডিকেনসন, আর রবার্ট ফর্স্টদের পশ্চিমা ঢঙে এখানে এখন কবিতা লেখা হয়ঃ
" হে কবি নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়?"
''হৃদয়ে ফাগুন, এসেছে আগুন"
আমার সন্দেহ জাগে বাংলায় ফাগুন কি আসলেই প্রেমের মাস নাকি? 'জন্মদিনের রাজনীতি ও অর্থনীতি' প্রবন্ধে দেখেছিলাম, জন্মের হার মোটামুটি অন্যান্য মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেই বেশী। সে হিসেবে বলা চলে, রোমান্টিক প্রেমের প্রতীক বর্ষা আর কামের প্রতীক শীতকাল। সুতরাং পষ্ট যে, ফাগুন হচ্ছে উপনিবেশবাদিদের চাপিয়ে দেয়া রোমান্টিকতার মাস।
সেপ্টেম্বর/ অক্টোবরের জন্মের হার আড়াল করে আমাদের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ যেমন নিজের জন্ম তারিখ জানুয়ারিতে নিয়া আসছে (এক গবেষণায় দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭% ছাত্র-ছাত্রির জন্মমাস জানুয়ারি), ঠিক তেমনি রোমান্টিকতা আর প্রেম-কামের বয়ানকে বর্ষা আর শীত থেকে আড়াল করে ফাগুনে নিয়ে আসছে।
তাই বাঙলাদেশি হিসেবে এই ভূখণ্ডে আমি আজ পহেলা ফাল্গুন আর আগামী কালের ভ্যালেন্টাইন্স ডে নামক পশ্চিমা উপনিবেশবাদি রোমান্টিকতার বয়ান প্রত্যাখ্যান করলাম।।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফাগুন এসেছে ধরায়
হাগুন এসেছে বাঙ্গালী পাছায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন