০০০০০০০০০০এতিম০০০০০০০০০০০

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:৩৫:১৫ দুপুর



পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করা শ্রেষ্ঠ ছবিগুলোর মধ্যে একটি হল নিচের এই ছবিটি।

ছবিটি একটি ইরাকের এতিমখানা থেকে তোলা। বাচ্চাটির মা নাই ...মা কে কখনো সে দেখেনি। অনেক ইচ্ছা তার মায়ের কোলে ঘুমাতে। তাই মেঝেতে মা কে এঁকে তার কোলে ঘুমিয়ে পড়ে বাচ্চাটা।

ছবি সুত্র -বিবিসি জার্নাল

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ﴾

১) তুমি কি তাকে দেখেছো৷১ যে আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তিকে২ মিথ্যা বলছে ?৩

১ . ' তুমি কি দেখেছো ' বাক্যে এখানে বাহ্যত সম্বোধন করা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে । কিন্তু কুরআনের বর্ণনাভংগী অনুযায়ী দেখা যায় , এসব ক্ষেত্রে সাধারণত প্রত্যেক জ্ঞান - বুদ্ধি ও বিচার - বিবেচনা সম্পন্ন লোকদেরকেই এ সম্বোধন করা হয়ে থাকে। আর দেকা মানে চোখ দিয়ে দেখাও হয়। কারণ সামনের দিকে লোকদের যে অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে তা প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী স্বচক্ষে দেখে নিতে পারে। আবার এর মানে জানা , বুঝা ও চিন্তা ভাবনা করাও হতে পারে। আরবী ছাড়া অন্যান্য ভাষায়ও এ শব্দটি এ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন আমরা বলি , " আচ্ছা , ব্যাপারটা আমাকে দেখতে হবে। " অর্থাৎ আমাকে জানতে হবে। অথবা আমরা বলি , " এ দিকটাও তো একবার দেখো ।" এর অর্থ হয় , " এ দিকটা সম্পর্কে একটু চিন্তা করো । " কাজেই " আরাআইতা " ( আরবী -----------) শব্দটিকে দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহার করলে আয়াতের অর্থ হবে , " তুমি কি জানো সে কেমন লোক যে শাস্তি ও পুরস্কারকে মিথ্যা বলে ৷ " অথবা " তুমি কি ভেবে দেখেছো সেই ব্যক্তির অবস্থা যে কর্মফলকে মিথ্যা বলে ৷ "

২ . আসলে বলা হয়েছে : ( আরবী ------------) । কুরআনের পরিভাষায় " আদ দীন " শব্দটি থেকে আখেরাতে কর্মফল দান বুঝায়। দীন ইসলাম অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সামনের দিকে যে বিষয়ের আলোচনা হয়েছে তার সাথে প্রথম অর্থটিই বেশী খাপ খায় যদিও বক্তব্যের ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অর্থটিও খাপছাড়া নয়। ইবনে আব্বাস ( রা)) দ্বিতীয় অর্থটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ তাফসীরকার প্রথম অর্থটিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। প্রথম অর্থটি গ্রহণ করলে সমগ্র সূরায় বক্তব্যের অর্থ হবে , আখেরাত অস্বীকারের আকীদা মানুষের মধ্যে এ ধরনের চরিত্র ও আচরণের জন্ম দেয়। আর দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করলে দীন ইসলামের নৈতিক গুরুত্ব সুস্পষ্ট করাটাই সমগ্র সূরাটির মূল বক্তব্যে পরিণত হবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বক্তব্যের অর্থ হবে , এ দীন অস্বীকারকারীদের মধ্যে যে চরিত্র ও আচরণ বিধি পাওয়া যায় ইসলাম তার বিপরীত চরিত্র সৃষ্টি করতে চায়।

৩ . বক্তব্য যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে মনে হয় , এখানে এ প্রশ্ন দিয়ে কথা শুরু করার উদ্দেশ্য একথা জিজ্ঞেস করা নয় যে , তুমি সেই ব্যক্তিকে দেখেছো কি না। বরং আখেরাতের শাস্তি ও পুরস্কার অস্বীকার করার মনোবৃত্তি মানুষের মধ্যে কোন ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করে শ্রোতাকে সে সম্পর্কে চিন্তা- ভাবনা করার দাওয়াত দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এই ধরনের লোকেরা এ আকীদাকে মিথ্যা বলে সে কথা জানার আগ্রহ তার মধ্যে সৃষ্টি করাই এর লক্ষ। এভাবে সে আখেরাতের প্রতি ঈমান আনার নৈতিক গুরুত্ব বুঝার চেষ্টা করবে।

﴿فَذَٰلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ﴾

২) সে-ই তো ৪ এতিমকে ধাক্কা দেয় ৫

৪ . আসলে ( আরবী ----------) বলা হয়েছে। এ বাক্যে " ফা " অক্ষরটি একটি সম্পূর্ণ বাক্যের অর্থ পেশ করছে। এর মানে হচ্ছে , " যদি তুমি না জেনে থাকো তাহলে তুমি জেনে নাও " " সে - ই তো সেই ব্যক্তি " অথবা এটি এ অর্থে যে , " নিজের এ আখেরাত অস্বীকারের কারণে সে এমন এক ব্যক্তি যে ----------------"

৫ . মূলে ( আরবী --------) বলা হয়েছে এর কয়েকটি অর্থ হয়। এক , সে এতিমের হক মেরে খায় এবং তার বাপের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে বেদখল করে তাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। দুই , এতিম যদি তার কাছে সাহায্য চাইতে আসে তাহলে দয়া করার পরিবর্তে সে তাকে ধিক্কার দেয়। তারপরও যদি সে নিজের অসহায় ও কষ্টকর অবস্থার জন্য অনুগ্রহ লাভের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় । তিন , সে এতিমের ওপর জুলুম করে। যেমন তার ঘরেই যদি তার কোন আত্মীয় কথায় গালমন্দ ও লাথি ঝাঁটা খাওয়া ছাড়া তার ভাগ্যে আর কিছুই জোটে না। তাছাড়া এ বাক্যের মধ্যে এ অর্থও নিহিত রয়েছে যে, সেই ব্যক্তি মাঝে মাঝে কখনো কখনো এ ধরনের জুলুম করে না বরং এটা তার অভ্যাস ও চিরাচরিত রীতি সে যে এটা একটা খারাপ কাজ করছে , এ অনুভূতিও তার থাকে না। বরং বড়ই নিশ্চিন্তে সে এ নীতি অবলম্বন করে যেতে থাকে। সে মনে করে , এতিম একটা অক্ষম ও অসহায় জীব। কাজেই তার হক মেরে নিলে , তার ওপর জুলুম - নির্যাতন চালালে অথবা সে সাহায্য চাইতে এলে তাকে ধাক্কা মেরে বের করে দিলে কোন ক্ষতি নেই।

এ প্রসংগে কাজী আবুল হাসান আল মাওয়ারদী তাঁর " আলামূন নুবুওয়াহ " কিতাবে একটি অদ্ভুত ঘটনা বর্ণনা করেছেন । ঘটনাটি হচ্ছে : আবু জেহেল ছিল একটি এতিম ছেলের অভিভাবক। ছেলেটি একদিন তার কাছে এলো । তার গায়ে একটুকরা কাপড়ও ছিল না। সে কাকুতি মিনতি করে তার বাপের পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাকে কিছু দিতে বললো। কিন্তু জালেম আবু জেহেল তার কথায় কানই দিল না। সে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর শেষে নিরাশ হয়ে ফিরে গেলো । কুরাইশ সরদাররা দুষ্টুমি করে বললো , " যা মুহাম্মাদের ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কাছে চলে যা। সেখানে গিয়ে তার কাছে নালিশ কর। সে আবু জেহেলের কাছে সুপারিশ করে তোর সম্পদ তোকে দেবার ব্যব্‌স্থা করবে । " ছেলেটি জানতো না আবু জেহেলের সাথে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কি সম্পর্ক এবং এ শয়তানরা তাকে কেন এ পরামর্শ দিচ্ছে। সে সোজা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে গেলো এবং নিজের অবস্থা তাঁর কাছে বর্ণনা করলো। তার ঘটনা শুনে নবী ( সা) তখনই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাকে সংগে নিয়ে নিজের নিকৃষ্টতম শত্রু আবু জেহেলের কাছে চলে গেলেন। তাঁকে দেখে আবু জেহেল তাঁকে অভ্যর্থনা জানালো। তারপর যখন তিনি বললেন , এ ছেলেটির হক একে ফিরিয়ে দাও তখন সে সংগে সংগেই তাঁর কথা মেনে নিল এবং তার ধন - সম্পদ এনে তার সামনে রেখে দিল । ঘটনার পরিণতি কি হয় এবং পানি কোন দিকে গড়ায় তা দেখার জন্য কুরাইশ সরদাররা ওঁৎ পেতে বসেছিল। তারা আশা করছিল দু' জনের মধ্যে বেশ একটা মজার কলহ জমে উঠবে। কিন্তু এ অবস্থা দেখে তারা অবাক হয়ে গেলো। তারা আবু জেহেলের কাছে এসে তাকে ধিক্কার দিতে লাগলো। তাকে বলতে লাগলো , তুমিও নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছে। আবু জেহেল জবাব দিল , আল্লাহর কসম ! আমি নিজের ধর্ম ত্যাগ করিনি। কিন্তু আমি অনুভব করলাম , মুহাম্মাদের ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) ডাইনে ও বাঁয়ে এক একটি অস্ত্র রয়েছে। আমি তার ইচ্ছার সামান্যতম বিরুদ্ধাচরণ করলে সেগুলো সোজা আমার শরীরের মধ্যে ঢুকে যাবে। এ ঘটনাটি থেকে শুধু এতটুকুই জানা যায় না যে ,সে যুগে আরবের সবচেয়ে বেশী উন্নত ও মর্যাদা গোত্রের বড় বড় সরদাররা পর্যন্ত এতিম ও সহায় - সম্বলহীন লোকদের সাথে কেমন ব্যবহার করতো বরং এই সংগে একথাও জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত উন্নত নৈতিক প্রভাব কতটুকু কার্যকর হয়েছিল। ইতিপূর্বে তাফহীমূল কুরআন সূরা আল আম্বিয়া ৫ টীকায় আমি এ ধরনের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছি।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে জবরদস্ত নৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে কুরাইশরা তাঁকে যাদুকর বলতো এ ঘটনাটি তারই মূর্ত প্রকাশ ।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

176252
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩৯
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : তাফহীমূল কুরআন সূরা আল আম্বিয়া ৫ টীকা﴿لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ ۗ وَأَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِينَ ظَلَمُوا هَلْ هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ ۖ أَفَتَأْتُونَ السِّحْرَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُونَ﴾
৩) তাদের মন (অন্য চিন্তায়) আচ্ছন্ন৷ আর জালেমরা পরস্পরের মধ্যে কানাকানি করে যে, “এ ব্যক্তি মূলত তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কি, তাহলে কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর ফাঁদে পড়বে ?৫

৫. "পরে যেতে থাকবে"-ও অনুবাদ হতে পারে এবং দুটি অর্থই সঠিক। মক্কার যেসব বড় বড় কাফের সরদাররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের মোকাবিলা করার চিন্তায় বড়ই পেরেশান হয়ে পড়েছিল তারাই পরস্পর বসে বসে এই কানাকানি করতো। তারা বলতো, এ ব্যক্তি তো কোনক্রমে নবী হতেই পারে না। কারণ এতো আমাদেরই মতো মানুষ, খায় দায়, বাজারে ঘুরে বেড়ায়, স্ত্রী-সন্তানও আছে। কাজেই এর মধ্যে এমন নতুন কথা কি আছে যা তাকে আমাদের থেকে বিশিষ্ট করে এবং আমাদের মোকাবিলায় তাকে আল্লাহর সাথে একটি অস্বাভাবিক সম্পর্কের অধিকারী করে৷ তবে কিনা এ ব্যক্তির কথাবার্তায় এবং এর ব্যক্তিত্বের মধ্যে যাদু আছে। ফলে যে ব্যক্তি এর কথা কান লাগিয়ে শোনে এবং এর কাছে যায়, সে এর ভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই যদি নিজের ভালো চাও তাহলে এর কথায় কান দিয়ো না এবং এর সাথে মেলামেশা করো না। কারণ এর কথা শোনা এবং এর নিকটে যাওয়া সুস্পষ্ট যাদুর ফাঁদে নিজেকে আটকে দেয়ার মতই।
যে কারণে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে "যাদু"র অভিযোগ আনতো তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত প্রাচীন সীরাত লেখক মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (মৃত্যু ১৫২ হিঃ) তাঁর সীরাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, একবার উতবা ইবনে আবী রাবীআহ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর এবং কলিজা খাদক হিন্দার বাপ) কুরাইশ সরদারদেরকে বললো, যদি আপনারা পছন্দ করেন তাহলে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের সাথে সাক্ষাত করি এবং তাকে বুঝাবার চেষ্টা করি। এটা ছিল হযরত হামযার (রা) ইসলাম গ্রহনের পরবর্তীকালের ঘটনা। তখন নবী করীমের (সা) সাহাবীগণের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছিল। এবং এ অবস্থা দেখে কুরাইশ সরদাররা বড়ই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিল। লোকেরা বললো, হে আবুল ওলীদ! তোমার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তুমি অবশ্যি গিয়ে তার সাথে কথা বলো। সে নবী করীমের (সা) কাছে গিয়ে বললো, "হে ভাতিজা! আমাদের এখানে তোমার যে মর্যাদা ছিল তা তুমি নিজেই জানো এবং বংশের দিক দিয়েও তুমি একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তুমি নিজের জাতির ওপর একটি বিপদ চাপিয়ে দিয়েছো৷ তুমি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করেছো। সমগ্র জাতিকে বোকা ঠাউরেছো। তার ধর্ম ও উপাস্যদের দুর্নাম করেছো। মৃত বাপ-দাদাদের সবাইকে তুমি পথভ্রষ্ট ও কাফের বানিয়ে দিয়েছো। হে ভাতিজা! যদি এসব কথা ও কাজের মাধ্যমে দুনিয়ায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করাই তোমার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এসো আমরা সবাই মিলে তোমাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ দিয়ে দেবো যে, তুমি সবচেয়ে বড় ধনী হয়ে যাবে। নেতৃত্ব চাইলে আমরা তোমাকে নেতা মেনে নিচ্ছি। বাদশাহী চাইলে তোমাকে বাদশাহ বানিয়ে দিচ্ছি। আর যদি তোমার কোন রোগ হয়ে থাকে যে কারণে সত্যিই তুমি শয়নে-জাগরণে কিছু দেখতে পাচ্ছো, তাহলে আমরা সবাই মিলে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকের সহায়তায় তোমার রোগ নিরাময় করবো"। এসব কথা সে বলতে থাকলো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরবে সব শুনতে থাকলেন। যখন সে যথেষ্ট বলে ফেলেছে তখন নবী করীম (সা) বললেন, "আবুল ওলীদ! আপনি যা কিছু বলতে চান সব বলে শেষ করেছেন, নাকি এখনো কিছু বলার বাকি আছে৷" সে বললো, হাঁ আমার বক্তব্য শেষ। তখন তিনি বললেন, আচ্ছা, তাহলে এখন আপনি আমার কথা শুনুন,

---------------------

এরপর কিছুক্ষণ পর্যন্ত তিনি একনাগাড়ে সূরা হা-মীম আস সাজদাহ তেলাওয়াত করতে থাকলেন। এবং উতবা পেছনে মাটির ওপর হাত ঠেকিয়ে দিয়ে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকলো। আটতিরিশ আয়াতে পৌঁছে তিনি সিজদা করলেন এবং তারপর মাথা উঠিয়ে উতবাকে বললেন, "হে আবুল ওলীদ! আমার যা কিছু বলার ছিল তা আপনি শুনে নিয়েছেন, এখন আপনার যা করার আপনি করবেন"।

উতবা এখান থেকে উঠে কুরাইশ সরদারদের কাছে ফিরে যেতে লাগলো। লোকেরা তাকে দূর থেকে আসতে দেখে বললো, "আল্লাহর কসম, আবুল ওলীদের চেহারা পাল্টে গেছে। যে চেহারা নিয়ে সে এখান থেকে গিয়েছিল এটা সে চেহারা নয়। তার ফিরে আসার সাথে সাথেই লোকেরা প্রশ্ন করলো, "বলো, হে আবুল ওলীদ! তুমি কি করে এলে"৷ সে বললো, আল্লাহর কসম, আজ আমি এমন কালাম শুনেছি যা এর আগে কখনো শুনিনি। আল্লাহর কসম এ কবিতা নয়, যাদুও নয়, গণৎকারের ভবিষ্যদ্বাণীও নয়। হে কুরাইশ জনতা! আমার কথা মেনে নাও, এবং এ ব্যক্তিকে এর অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। এর যেসব কথা আমি শুনেছি তা একদিন স্বরূপে প্রকাশিত হবেই। যদি আরবরা তার ওপর বিজয়ী হয় তাহলে তোমাদের ভাইয়ের রক্তপাতের দায় থেকে তোমরা মুক্ত থাকবে, অন্যেরা তার দায়ভার বহন করবে। আর যদি সে আরবদের ওপর বিজয়ী হয় তাহলে তার শাসন কর্তৃত্ব হবে তোমাদেরই শাসন কর্তৃত্ব এবং তার সম্মান তোমাদেরই সম্মানে রূপান্তরিত হবে।" লোকেরা বললো, "আল্লাহর কসম, হে আবুল ওলীদ! তুমিও তার যাদুতে আক্রান্ত হয়েছো"। সে বললো, "এটা আমার ব্যক্তিগত মত। এখন তোমরা নিজেরাই তোমাদের সিদ্ধান্ত নেবে। (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, ৩১৩-১১৪পৃঃ) ইমাম বায়হাকী এ ঘটনা সম্পর্কে যেসব বর্ণনা সংগ্রহ করেছেন তার একটিতে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে যে, যখন নবী করীম (সা) সূরা হা-মীম সাজদাহ তেলাওয়াত করতে করতে এ আয়াতে পৌছে গেলেন-

-----------------------

(তবুও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দাও, আমি তো তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এমন একটি আকস্মিক আযাবে পতিত হওয়া থেকে, যেমন আযাবে পতিত হয়েছিল আদ ও সামুদ) তখন উতবাহ স্বতস্ফূর্তভাবে সামনের দিকে এগিয়ে এসে তাঁর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলে উঠলো, আল্লাহর দোহাই নিজের জাতির প্রতি করুণা করো।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ইবনে ইসহাক এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ একবার আরাশ গোত্রের একজন লোক কিছু উট নিয়ে মক্কায় এলো। আবু জেহেল তার উটগুলো কিনে নিলো। যখন সে দান চাইলো তখন আবু জেহেল টালবাহানা করতে লাগলো। আরাশী ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত একদিন কা'বার হারামে কুরাইশ সরদারদেরকে ধরলো এবং প্রকাশ্য সমাবেশে ফরিয়াদ করতে থাকলো। অন্যদিকে হারাম শরীফের অন্য প্রান্তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে ছিলেন। কুরাইশ সরদাররা তাকে বললো, "আমরা কিছুই করতে পারবো না। দেখো, ঐ দিকে ঐ কোণে যে ব্যক্তি বসে আছে তাকে গিয়ে বলো। সে তার কাছ থেকে তোমার টাকা আদায় করে দেবে"। আরাশী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কুরাইশ সরদাররা পরস্পর বলতে লাগলো, "এবার মজা হবে"। আরাশী গিয়ে নবী করীমের (সা) কাছে নিজের অভিযোগ পেশ করলো, তিনি তখনই উঠে দাঁড়ালেন এবং তাকে নিয়ে আবু জেহেলের গৃহের দিকে রওয়ানা দিলেন। সরদারর তাদের পেছনে একজন লোক পাঠিয়ে দিল। আবু জেহেলের বাড়ীতে কি ঘটে তা সে সরদারদেরকে জানাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোজা আবু জেহেলের দরজায় পৌছে গেলেন এবং শিকল ধরে নাড়া দিলেন। সে জিজ্ঞেস করলো "কে"৷ তিনি জবাব দিলেন, "মুহাম্মাদ"। সে অবাক হয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। তিনি তাকে বললেন, "এ ব্যক্তির পাওনা দিয়ে দাও।" সে কোন দ্বিরুক্তি না করে ভেতরে চলে গেলো এবং উটের দান এনে তার হাতে দিল। এ অবস্থা দেখে কুরাইশদের প্রতিবেদক হারাম শরীফের দিকে দৌড়ে গেলো এবং সরদারদেরকে সমস্ত ঘট্না শুনাবার পর বললো, আল্লাহর কসম, আজ এমন বিস্ময়কর ব্যাপার দেখলাম, যা এর আগে কখনো দেখিনি। হাকাম ইবনে হিশাম (অর্থাৎ আবু জেহেল) যখন গৃহ থেকে বের হয়ে মুহাম্মাদকে দেখলো তখনই তার চেহারার রং ফিকে হয়ে গেলো এবং যখন মুহাম্মাদ তাকে বললো, তার পাওনা দিয়ে দাও তখন এমন মনে হচ্ছিল যেন হাকাম ইবনে হিশামের দেহে প্রাণ নেই। (ইবনে হিশাম, ২ খন্ড, ২৯-৩০ পৃঃ)

এ ছিল ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের প্রভাব। আবার অন্যদিকে ছিল কালাম ও বাণীর প্রভাব, যাকে তারা যাদু মনে করতো এবং অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ লোকদেরকে এ বলে ভয় দেখাতো যে, এ লোকটির কাছে যেয়ো না, কাছে গেলেই তোমাদেরকে যাদু করে দেবে।
176274
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৩৯
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ইয়াতীমদের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদের প্রাপ্য হক্ব আদায় করা উচিৎ।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৮
129503
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : এতিমের সম্পদ ভক্ষন আঘুন ভক্ষনের সমতুল.....
176298
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:০৭
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : চোখের পানি এসে গেল লেখাটি পড়ে, যাদের মা নাই তারা বুঝে মায়ের মূল্য, আর আমরা হতভাগারা মাকে কষ্ট দিই, মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৮
129504
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : আমিন
176309
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৯
আলোকিত ভোর লিখেছেন : Sad Sad Sad Praying Praying Praying
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৮
129505
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : Praying Praying Praying
176324
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
আবু সাইফ লিখেছেন : স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকুমুল্লাহ . . " ||

"..স্মরণ করাও, আর স্মরণ করানোটা মুমিনদের জন্য কল্যানকর হয়ে থাকে|
176333
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:২৪
আহমদ মুসা লিখেছেন : কিছু কিছু ছবি ও ঘটনা চোখের পানি বের করে, ভাবনায় ছেদ পড়ে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File