. . . অস্ত্র চোরাচালান মামলা ও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যের প্রলাপ . . .
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৫৩:২৫ সকাল
আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নিন রাষ্ট্রপতির দেয়া বীরত্বসূচক পদক। হ্যাঁ, আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক মদদদান কৃত সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমার সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয় খেতাব “বীর প্রতীক” পেয়েছিলাম সেই পদকের কথাই বলছি।
গত ০৫ নভেম্বর ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ইবিআরসি প্যারেড গ্রাউন্ডে আনুষ্ঠানিক ভাবে উক্ত পদকটি আমাকে হস্তান্তর করা হয়। কিহবে আর এটাকে রেখে? কোথায় গর্ব করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলবো যে একসময় হায়েনার দল বাংলাদেশের একদশমাংস ভূমিদখল করতে এসেছিল, আমরা বাংলাদেশের সশস্রবাহিনীর সদস্যরা নিজের জীবন উৎসর্গ করে তা রক্ষা করেছি, কিন্তু তা তো হবার নয়। অবস্থা যা দেখছি তাতে মনে হয় কয়েকদিন পর যারা যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধ করেছে (সরকারী কর্তব্যে) তাদেরকে না আবার দেশদ্রোহী অপবাদ নিতে হয়।
গত ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখে ৭১টিভিতে অস্ত্র চোরাচালান মামলার উপর প্রচারিত আলোচনা অনুষ্ঠান দেখলাম। Syed Muhammad Ibrahim Sir তার বক্তব্যটি যেভাবে জোরালো যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করলেন তার জন্য উনাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছিনা। স্পেড কে স্পেড বলার সৎ সাহস ওনার আছে। আর একজনের কথা না বললেই নয় তিনি হচ্ছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যিনি ইতোপূর্বে তার একটি লেখায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার উপর আলোকপাত করেছেন। নিচে বাংলাদেশ প্রতিদিন এ তার লেখার লিংকটি দেয়া হলঃ
http://www.bd-pratidin.com/epaper_v1/pop_up.php?img_name=2011%2F07%2F05%2Fimages%2F04_109.jpg
এছাড়াও অধ্যাপক শহীদুজ্জামান, একজন নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞও বলেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নৈতিকতা যাচাইএর মানদণ্ড হবে জাতীয় স্বার্থে। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে নৈতিকতার চেয়ে বেশী বলে মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ ওনাকেও।
প্রবাদ আছে “প্রেম ও যুদ্ধ কোন নিয়ম নীতির ধার ধারেনা”, এখন তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবীদের (কিছু নব্য বুদ্ধিজীবীও আছেন) কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভিতরে অস্ত্র পাঠানো অনৈতিক কাজ। এরা কি জ্ঞানপাপী না অন্য কিছু? আমাদের দেশের ভিতর প্রতিবেশী রাষ্ট্র কর্তৃক তথাকথিত শান্তিবাহিনীর নিকট অস্ত্র পাঠিয়ে যখন আমাদেরকে হতাহত করে তখন এরা টু শব্দটিও করে না কারণ তাদের কাছে ওটা অনৈতিক কাজ বলে মনে হয় না। আর সে দেশটি আমাদের ক্ষতিকরার মানসে শুধু অস্ত্র পাঠিয়েই ক্ষান্ত দেয়নি আরও পাঠাচ্ছে ফেনসিডিল, সুস্থ সামাজিক রীতি বিরুদ্ধ টিভি সিরিয়াল, গার্মেন্টসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, চোরাই গরু, বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীন পন্য, ফালানির মত ঝুলন্ত লাশ, নির্বাচন সম্পর্কে অযাচিত উপদেশ, ইত্যাদি, ইত্যাদি ।
ঢাকা শহরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় অবস্থান করে অনেক বড় বড় কথা বলা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অরন্যে বিপদসংকুল এলাকায় বিভিন্ন প্রতিকুল পরিস্থিতিতে বসবাসের অভিজ্ঞতা যাদের নেই তাদের মুখ দিয়ে অনেক নীতিবাক্য শুনা যেতে পারে। কিন্তু আমার মত একজন যে জীবনের প্রায় সাড়ে ছয়টি বৎসর (২লেঃ হতে লেঃ কর্নেল পর্যন্ত প্রতিটি পদে) সুখ সাচ্ছন্দ, আরাম আয়েশ, পরিবার পরিজন ত্যাগ করে দেশ মাতৃকার সেবায় ঐ বিপদসংকুল এলাকায় টহল দিয়ে বেড়িয়েছি তার কাছে ঐ প্রবাদের বাক্যটিই ধর্তব্যের বিষয় – “যুদ্ধ কোন নিয়ম নীতির ধার ধারেনা” (তুমি আমাকে মারবে আমিও তোমাকে মারবো, নিজে না পারলে অন্যকে দিয়ে হলেও), এক্ষেত্রে আমিও রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে নৈতিকতার চেয়ে বেশী মুল্য দিতে পিছপা হবনা।
মনে পরে বিলাইছড়ি অঞ্চলের ত্রাস, কাপ্তাই হতে বিলাইছড়ি যাওয়ার পথে “এস ব্যান্ডে” লঞ্চের উপর এবং “রেস্ট হাটে” টহল দলের উপর আক্রমণ করে বহু পুলিশ সদস্যকে হতাহত করার নায়ক তথাকথিত মেজর বাবুলকে আমরা (দুর্ধর্ষ দশ) ধরেছিলাম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে প্রতিবেশী দেশের নিকট হতে ২ ট্রাক অস্ত্র পাওয়ার কথা আমাদেরকে বলেছিল। কই প্রতিবেশী দেশটি কিংবা আমরা তো সেকথা বিশ্ববাসীকে অবহিত করিনি কিংবা সেদেশের কাউকে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলেও শুনিনি, বরঞ্চ শুনেছি ফালানি হত্যার নায়ককে বেকসুর খালাস দেয়ার কথা।
আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকুরীকালীন সময়ে ৩টি অপারেশনে বহু গোলাবারুদ সহ মোট ১৫টি অস্ত্র আটক করেছিলাম (কে দিয়েছিল ঐ অস্ত্রগুলো), শান্তিবাহিনীর সাথে সন্মুখ যুদ্ধে বেশকয়েকজন হতাহতও হয়েছিল। প্রতিবেশী দেশ আমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য অস্ত্র দিলে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে, আর আমরা একই উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিলে ফাঁসীর সন্মুখীন হতে হবে এটা কোন বিচার?
অস্ত্র চোরাচালান মামলায় শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের কথা বাদই দিলাম, কিন্তু বাকী যারা চাকুরী করতে গিয়ে কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ শুনতে গিয়ে ফাঁসীর আসামী হয়েছেন (তাদের মধ্যে আমার একজন কোর্সমেটও আছেন) কি দোষ ছিল তাদের? চাকুরীর সুবাদে তারা ঐ সকল দায়িত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের দোষ কি তাও আমরা জানিনা। এখন যদি সরকারের তরফ হতে কোন আদেশ হয় সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তা অমান্য করার (যেমন করে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করেছিলেন “জনতার মঞ্চের” কুশীলবরা) শিক্ষা তো তাদের দেয়া হয় নাই।
এছাড়াও যদি শাস্তি দিতেই হয় তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়ীত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কোন অন্যায়ের শাস্তি লোকচক্ষুর অন্তরালে দেয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। কারন এ সকল বিষয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেশ স্পর্শকাতর বিষয়, এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। কিন্তু কাকে খুসী করার জন্য সারা পৃথিবীকে এই স্পর্শকাতর বিষয়টি জানানো হোল?
আমরা প্রশিক্ষণ পেয়েছি “বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে” যার মটো হল “ চির উন্নত মম শীর”, মাথা নত করব ঐ হায়েনাদের কাছে? যারা আমার ভাইকে মেরেছে? এক অপারেশনেইতো মেজর মহসিন সহ ২২ জনকে হারালাম। Maj Mannan Chowdhury তোমার লেখাটা পড়লাম, আমি দেখেছি তোমার ইউনিটের মেজর মহসিন এর লাশ (তার ইউনিফরমের একটি র্যাঙ্ক দুষ্কৃতিকারীরা ছিড়ে নিয়ে গিয়েছিল) পাশে আরেক নায়েব সুবেদারের লাশ, আমার চক্ষু এখন অশ্রু সজল, লিখছি আর চোখে পানি এসে যাচ্ছে। আজ যারা নৈতিকতার কথা বলছে তারা আমার জায়গায় হলে হয়তো বিষয়টা অন্য আঙ্গিকে দেখত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কোন কাপুরুষের স্থান নেই। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই সেনাবাহিনীর সদস্যরা কখনো পিছপা হয় নাই। তথাকথিত দালাল বুদ্ধিজীবীরা কি কখনো পরিসংখ্যান নিয়েছেন এই পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে কতজন সেনাসদস্য হতাহত হয়েছেন, কত জন ম্যালেরিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন? সেনাবাহিনীর এই কষ্টের জীবন যাত্রা দেখানোর জন্য ১৯৯৭/৯৮ সনে কিছু বুদ্ধিজীবীকে হেলিকপ্টারে করে ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে তার পরেও তাদের চৈতন্যদয় হয় নাই।
প্রতিবেশী দেশের ছত্রছায়ায় সংগঠিত শান্তিবাহিনীর নৃশংসতার ইতিহাস তো মুছে ফেলা হয়েছে। চট্টগ্রামে ডিভিশন সদর দপ্তরের উল্টোদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্রবাহিনীর অবদানের উপর একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটা আর দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে শান্তিবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা উঠলেই তাদের মদদ দাতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশকেই চিহ্নিত করা হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদানের কোন স্মৃতিচিহ্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রাখার ব্যবস্থা হয়েছে কি? এক সময় যে যাদুঘরটি তৈরী করা হয়েছিল সেখানে শান্তিবাহিনীর নিকট হতে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী প্রত্যেকের নাম সহ প্রদর্শিত ছিল, আমা কর্তৃক উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর পাশে আমার নামও ছিল, এখন আর সে স্মৃতি নেই। আমার বীরত্বসূচক উপাধি প্রাপ্তির কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। এখনকার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম (বিশেষ করে সেনা সদস্যবৃন্দ) জানতেও পারবেনা একসময় এই পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিবেশী দেশের লোলুপ দৃষ্টি ও নৃশংসতার কথা।
আমাদের দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশ কি না করেছে, আর আজ তারা আমাদের বন্ধু, হায়রে অভাগা দেশ ও দেশের জনগণ। শত্রু মিত্র চিনতে পারছিনা, নিজের নদী ভরাট করে বাংলাদেশের বুক চীরে তাদের চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি আবার বলছি এর জন্য টেক্স নেয়া অভদ্রতা।
মহান আল্লাহ্ তায়ালার নিকট আকুল আবেদন আপনি আমাদের সকলকে সুমতি দিন ও আমাদের কর্তাব্যক্তিদের সঠিক পথে পরিচালিত করে এদেশ ও জাতীকে রক্ষা করুণ, আমিন।
বিঃদ্রঃ
১- মিডিয়াকে বলছি – যে কোন সেনা সদস্য হলেই নিরাপত্তা বিশ্লেষক নাম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর তাদের মতামত নিতে যাবেন না। বিশেষ করে ঐ এলাকার উপর কথা বলতে তাদেরকেই ডাকুন যারা সেখানে (দুর্গম পার্বত্য এলাকায়) ২/৪ বৎসর অবস্থান করে টহল কার্যক্রম পরিচালনা ও যুদ্ধ করেছেন।
২- নিচের ছবিতে তথাকথিত ছাত্রদের হাতে যে অস্ত্র দেখা যাচ্ছে তাকি বৈধ? বৈধ না হলে কি তাদের ফাঁসি হবে?
লিঙ্কঃhttps://www.facebook.com/bp.sayeed
বিষয়: বিবিধ
১৭০৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরা দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তি যোদ্ধা ! দেশ রক্ষার যুদ্ধ করছে তারা ।
কেউ যেন তাদের নিষিদ্ধের দাবি না তোলে. . . . . "
এরা দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তি যোদ্ধা ! দেশ রক্ষার যুদ্ধ করছে তারা ।
কেউ যেন তাদের নিষিদ্ধের দাবি না তোলে. . . . . "
এরা দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তি যোদ্ধা ! দেশ রক্ষার যুদ্ধ করছে তারা ।
কেউ যেন তাদের নিষিদ্ধের দাবি না তোলে. . . . . "
এখন আমাদের অবস্থা হলো চোরের সাথে ভাত খাই আর দারোয়ানের চাকরি যা্য়।
তারা কিন্তু ধরা চুয়ার বাহিরে.।
১। আপনি নেশা করেন?
২। আপনি ধূমপান করেন?
৩। আপনি প্রেম করেন?
৪। চাদাবাজি/ছিনতাই করেন?
৫। পড়াশোনা করেন?
৬। নামাজ পড়েন?
৭। কুরআন,হাদিস, ইসলামী সাহিত্য পড়েন?
এবার এই প্রশ্নগুলোর আলোকে জামায়াত শিবির এবং অন্যন্য সংগঠন গুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন।
শুয়োর কারা কত প্রকার ও কি কি সব জানতে পারবেন, এমনকি আপনি নিজেও তাদের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন