চুলা নিভে যায়। জ্বলে বাংলাদেশ । দুইটি গল্প পড়বেন নিশ্চয়।
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:১৩:০৭ সকাল
রাতেই শিবির কর্মী ভাইটির 'মা ' আদর করে তাকে রাতের খাবার খেতে দিয়েছিল। 'মা ' জানতো তার ছেলে শিবির করে ,হয়তো তার ছেলে সকালের অবরোধে যেতে পারে | মা 'হয়তো এটাও বলেছে -'তুই, আগামীকাল এই সব মিছিলে যাস নে, গুলি করা হচ্ছে, তোর কিছু হয়ে গেলে, আমি মরে যাবো!
____________________________
মা ' হয়তো ভেবেছে, ছেলে কাল অগ্নি মিছিলে আর যাবেনা কারন ছেলে হয়তো তখন মায়ের ভালোবাসর সামনে মিছিলে যাবেনা বলে ওয়াদাও করেছিল। কিন্তু 'মা ' এটা ভাল করে কিন্তু জানতো তার ছেলে প্রিয় 'ইসরাইল ' বয়স মাত্র ২০ ; যার শরীরে তারুণ্যের গরম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে , সে যে কোন ভুল করে ফেলতে পারে ;তাই 'মা' অনেক ভয় নিয়ে সে রাতে ঘুমোতে গেছেন।শিবির কর্মী ভাইটির 'মা হয়তো এটা জানতোনা যে, তার ছেজে,'ইসরেল' শিবিরের অন্য তরুণ সাথীদের সাথে আগেই আনন্দোলনে যাবে বলে প্রতিজ্ঞা করে রেখেছে।
'মা ' হয়ত অজানা ভয় নিয়ে রাতে অনেকবার দেখেছে তার শান্ত ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা, দেখেছে তার প্রিয় আদরের সন্তান সত্যই ঘুমিয়ে পড়েছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজও পড়েছে ।আবার পরিবারের সাথে এক সাথে 'নাস্তা ' ও খেয়েছে, ছোট বোনটি কোন প্রয়োজনে ভাইয়া বলে কয়েকবার ডেকেও ছিল। কিন্তু কে জানতো বোনের জন্য এটাই হবে শেষ ডাক। হায় - আমি জানিনা -আর কে কে 'ইসরাঈল ' কে পিছন হতে মিছিলে না যেতে ডেকে ছিল কিন্তু ইসরাল ' শিবির করে, তার অন্য সাথীদের উপর জুলুম হয়েছে জানে, আরো জানে কত জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে শুধু শিবির করে বলে, ইসরাইল বয়সে তরুন হলেও আওয়ামীলীগ এর শয়তানি ভয়ানক প্ল্যান কি জানে, আরো জানতো আজও মিছিলে গুলি হবেই হবে কিন্তু 'আফসোস ' শিবিরের ভাইটি এটা জানতো না আজ গুলি তার গায়েই লাগবে, আজই আওয়ামীলীগ এর গুন্ডা বাহিনী এই স্বাধীন বাংলাদেশ হতে তাকে চির বিদায় করে দিবে, জানতো না তার রক্তই আজ রাজপথে বয়ে যাবে, জানতোনা আজ তার বিদায়ে পরিবারে কান্নার রুল পড়ে যাবে!
________' হা ', হা সেটাই হল, শিবির ভাইটির রক্ত মাখা ফটো নিউস হয়ে সামনে এসে গেল। এই রক্ত মাখা ছবি আমাকে ৫ মে হেফাজতে ইসলামের এর সেই রক্তাক্ত কান্নার ইতিহাস মনে করিয়ে দিল,আলেম -উলামার চিৎকার মনে করিয়ে দিল।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
________________________
আওয়ামীলীগ তো যাকে ইচ্ছা তাকে হত্যা করছে -শুধু শিবির নয়, বিএনপি নয়, আলেম -উলামা, জনতা সবাইকে হত্যা করে যাচ্ছে, মানুষ পুড়িয়ে অন্যের উপর দুষ দিচ্ছে ;ঠিক যেমন -কুরআন পুড়িয়ে হেফাজতে ইসলামের উপর দুষ চাপিয়ে ছিল।
_________________________
তাহলে, আওয়ামীলীগ কি দলীয় সন্ত্রাস এবং দলীয় সমর্থক পুলিশ দিয়ে এ দেশটা 'আবু গারিব 'বা গুয়াতনামা ' বানিয়ে নিল। আমরা কি শুধু তাদের হাতে মার খাবো? আমরা কি আআওয়ামীলীগের এর হাতে এ দেশে বন্দী? ২৪ ডিসেম্বর এ কথ আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে 'ইনশাআল্লাহ ', সেই অপেক্ষায় '।
____________________________
বন্ধুরা, আমি শুধু মানুষ হিসেবে, সাধারণ মুসলিম হিসেবে শিবিরের এই তরুন বন্ধুদের একের পর এক নির্মম ভাবে নিহত হওয়া মেনে নিতে পারিনা। কোন কওমিও যদি এই হৃদয় ভাংগা পোস্টে কোন অযুক্তিক বিতর্ক করে তাকেও আমি ঘৃনা করি। আরে শিবির না করি কিন্তু মানবতার আলো কি নিভে গেছে? কই নাস্তিকদের তো হত্যা করা হয়নি? ___________________________
আমি শেষ একটি কথা লিখে দিতে চাই - রক্তের উপর ভাসিয়ে জামায়াত -শিবিরকে এই বাংলাদেশের রাজনীতি হতে মুছে দেওয়া যাবেনা বরং মুজলুমের রক্তের ছোয়ায় তারা আগের চেয়ে আরো মুজবুত এবং আরো মুজবুত হবে। 'ইনশা আল্লাহ।
২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২২
মিঃ খালেদ,রাজনীতি মোটেও পছন্দ করেন না।এখনও বিয়ে করেন নি,সবে নতুন চাকরীতে জয়েন করেছেন।তার মতে রাজনীতিবিদদের এক মাত্র কাজ ভোট ভিক্ষা করা,আর পরে নিরীহ জনগনকে অশান্তিতে রেখে দেশ লুটপাট করা।
দেশ জুড়ে অবরোধ চলছে,অফিস খোলা থাকায় বাধ্য হয়ে অফিসে গেলেন।কর্মব্যস্ত দিনের পর সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরছিলেন খালেদ,বাসে সব যাত্রী উদ্বিগ্ন,সবার মাঝে চাপা ভয় কাজ করছে,খালেদেরও একই অবস্থা,চোখ জড়িয়ে আসছে।গাড়ী তখন শাহবাগে,এমন সময় হৈ-চৈ,মোটর সাইকেল থেকে কয়েক জন ছেলে পেট্রল বোমা ছুড়লো,খালেদ তাদের স্পষ্ট দেখলো হেড় লাইটের আলোতে।এরই মধ্যে বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে,কয়েক জনের শরীরে আগুন ধরে গিয়েছে,বিপদ দেখে খালেদ তাড়াতাড়ি জানালা দিয়ে লাফ দিল,পড়ে গিয়ে হাত রক্তে রন্জিত হয়ে গেল।
খালেদ হেটে হেটে বাড়ী ফিরছেন,সবে হাসপাতাল থেকে হাত ব্যান্ড়েজ করেছেন,এখনও অসহ্য ব্যাথা।
হঠাৎ পুলিশ পথ আগলে দাড়ালো।
-কি রে? হাতে ব্যান্ড়েজ কেন?
-বাস থেকে লাফ মেরে হাত কেটেছি।
-মিথ্যা বলার আর জায়গা পাস না? বল কোথায় ভাংচুর করেছিস? কোথায় ককটেল মেরে হাতের এই দশা করেছিস?
-কি বলছেন এসব?আমি এসব কিছু করি নাই। -চুপ শালা মিথ্যাবাদী।থানায় চল,রিমান্ড়ে নিলে সব স্বীকার করবি।
খালেদকে নিয়ে যাওয়ার পথে খালেদের উপর হামলে পড়লো ছাত্রলীগ কর্মীরা।পুলিশ থেকে ছিনিয়ে তারা খালেদকে মারধর করা শুরু করলো।খালেদ স্পষ্ট দেখলো ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে সেই মোটর সাইকেল আরোহীরাও আছে যারা শাহবাগে পেট্রল বোমা মেরেছিল।
পরের দিন সব পত্রিকায় খালেদের ছবি।শিরোনাম,'শাহবাগে বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপকারী সন্দেহে খালেদ নামের একজন গ্রেফতার।
খালেদ জেলের বদ্ধ রুমে শুয়ে আছেন,মুখ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে,হাত-পা সর্বর্ত ব্যাথা।ছাত্রলীগের মারধর,পুলিশের রিমান্ড়ের অকথ্য নির্যাতনের পরও যে তিনি বেঁচে আছেন,তা ভেবে তিনি নিজেই অবাক হচ্ছেন।
খালেদ মুক্তি পেয়েছেন,তবে অনেক টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
তিনি একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছেন।আজও অবরোধ চলছে বিরোধী দলের,দাবী একটাই,শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
জনগণের প্রানের দাবী,দাবী আদায়ে জনগণকেই মাঠে নামতে হবে।
এসব উপলব্ধি নিয়ে ভাবছেন খালেদ সাহেব।
হঠাৎ অশান্ত পরিস্থিতি,বিরোধী দলের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ,যে যে দিকে পারছে দৌড়াচ্ছে,অনেকে পাথর,ইট ছুড়ে বুলেটের জবাব দিচ্ছে সাহসিকতার সাথে।
খালেদ চুপ থাকতে পারলেন না,তিনিও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলেন।এক জন পেট্রোল বোমা নিয়ে দাড়িয়ে আছে,ছোড়ার অপেক্ষায়।খালেদ তার কাছ থেকে পেট্রল বোমা ছিনিয়ে নিয়ে রাজপথে ছুটে গেলেন,সম্মুখে থাকা পুলিশের গাড়ীতে সজোরে ছুড়ে মারলেন।
দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে গাড়ীতে,কয়েক জন পুলিশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে,বাকীরা পালিয়েছে।
গাড়ীর কাচ ভাঙ্গার শব্দ শুনা যাচ্ছে।খালেদ দাড়িয়ে গাড়ী পুড়ার দৃশ্য দেখছে।খালেদ কিছুটা শান্তনা পেলেও এক গাড়ীর আগুনেও তার মনের আগুন নিভে নি।
বিষয়: বিবিধ
১৮২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন