হে দেশবন্ধু জাতির পক্ষ হতে স্যালুট তোমায়।
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:১৫:৩০ সকাল
সময়ের প্রয়োজনে, সময়কে ধারন করে জাতির ভাগ্য কাননে ফুল হয়ে বিকশিত হলেন জনাব ফরহাত মজহার।এই রকম দেশ প্রেমিকের আজ বড়ই প্রয়োজন । যারা জাতির কান্ডারি হয়ে দাঁড়াবে জাতিকে মুক্ত করার প্রত্যয়ে। হে দেশবন্ধু জাতির পক্ষ হতে স্যালুট তোমায়।
দার্শনিককে নির্যাতনের তৎপরতা অশুভ। দার্শনিক কবি ফরহাদ মজহারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনে অশুভ তৎপরতা শুরু হয়েছে। মাঠে নেমেছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র।
তারা ইতোমধ্যে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার করার পর রাজধানীর তেজগাও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন। পুলিশও আরেকটি জিডি করেছে।
দুই জিডিকে সামনে রেখে ফরহাদ মজহারকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়ার চেষ্টা চলছে। যেকোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদায় বিশ্বাসী দেশের তরুণ চিন্তাবিদরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ফরহাদকে গ্রেফতার চেষ্টার সাথে মিডিয়ায় হামলার বিষয়ে তার মন্তব্যের কোনো যোগসূত্র নাই। এটি স্রেফ উছিলা মাত্র।
আসলে তারা পূরনো রাজনৈতিক বিরোধ ও বিতর্কিত সম্পৃক্ততার কারণেই দার্শনিককে হয়রাণি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এসব বিরোধের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় বিরোধী দল হিসেবে জাসদকে ছাপিয়ে সর্বহারা পার্টির উত্থান, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ফরহাদের পরিকল্পনায় তীব্র ছাত্র আন্দোলন, ওষুধনীতি প্রণয়ন করে বিদেশী কোম্পানিগুলোর মুনাফা লুণ্ঠন বন্ধ, নয়াকৃষি আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষিখাতে সার ও বিষ ব্যবসায় জড়িত বিদেশী কোম্পানিগুলোকে চাপে রাখা।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত থেকে ফরহাদ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন। একারণেও ফরহাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত একটি মহল।
বিগত এক এগারর জরুরি অবস্থার সাথে জড়িত সুশীল সমাজ ও ভূমিদস্যুতাসহ নানা লুণ্ঠনে জড়িত ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে জোরালো লেখালেখির কারণেও ফরহাদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোষানলে ছিলেন।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে ফরহাদ মজহার এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুঁকি মোকাবেলা করছেন প্রতিরক্ষা ইস্যুতে। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি হতে হবে 'গণপ্রতিরক্ষা নীতি'।
তিনি দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করে আসছেন। পাশাপাশি জঙ্গীবাদ দমনের নামে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের'ও একজন কড়া সমালোচক দার্শনিক ফরহাদ। আবার চীনের সাথে ফরহাদের সম্পৃক্ততাও দৃশ্যমান।
দুই জিডি
বুধবার রাতে সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও থানায় ফরহাদ মজহার ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজের নামে দুটি জিডি করা হয়েছে।
প্রথম জিডি করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, ‘একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে’ সাংবাদিক নেতাদের এমন অভিযোগের পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় জিডিটি করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সরকারপন্থী অংশের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ইংরেজি দৈনিক নিউ ন্যাশনের বিশেষ প্রতিনিধি অমিয় ঘটক পুলক।
তেজগাঁও থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মেজবাহ জানান, রাত ১০টা ৫০ মিনিটে থানায় ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে একটি জিডি করা হয়েছে, যার নম্বর-১৭০৩। সাধারণ ডায়েরিতে পুলক ঘটক অভিযোগ করেছেন, গত সোমবার একটি বেসরকারি টিভিতে ফরহাদ মজহার সাংবাদিকদের বোমা মারা উচিত বলে যে মন্তব্য করেছেন তা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে। আর হরতালে সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে এর সঙ্গে ফরহাদ মজহারের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে পুলক ঘটক ধারণা করছেন। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তিনি থানায় এ সাধারণ ডায়েরি করেন।
সাধারণ ডায়েরিতে তিনি ফরহাদ মজহারের গ্রেফতার দাবি করেছেন। এর আগেই তেজগাঁও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
উপকমিশনার বিপ্লব সরকার জানিয়েছেন, 'জিডি দায়েরের ব্যাপার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সরকারপন্থী অংশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফরহাদ মজহারকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়। সাংবাদিক নেতারা ফরহাদ মজহারকে ‘গণমাধ্যমের শত্রু’ হিসেবেও আখ্যা দেন।
তথ্যমন্ত্রীর ঘোষণা
তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন,' বোমা হামলার উস্কানিদাতা' আখ্যা দিয়ে ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার চট্টগ্রাম সফররত তথ্যমন্ত্রীর সাথে সরকারপন্থী চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের( সিইউজে) একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে ফরহাকে গ্রেফতার ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানানোর পর তথ্যমন্ত্রী এ ঘোষাণা দেন।
ইনু বলেন, 'ফরহাদ মজহারের বক্তব্য গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। গণমাধ্যম গণতন্ত্রের মিত্র। তাই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে গণমাধ্যমকে রক্ষা করতে হবে।'
থিয়েটার ইন্সটিটিউট, চট্রগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে গণসংলাপ শেষে টিআইসি চত্বরের (সিইউজে) প্রতিনিধি দলটি তথ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের শুরূতে সিইউজে সভাপতি শহীদ উল আলম ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ফরহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে একুশে টিভির 'একুশের রাত' টকশোতে ফরহাদ মজহার বলেন ‘বাংলাদেশে এখনকার যে গণমাধ্যমগুলো, তারা নিরপেক্ষ তো নয়ই, একই সঙ্গে তারা গণবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয়, আমি তাদেরই দায়ী করি। ...আমি তো মনে করি, এই পটকা ফোটানোটা খুব কমই হয়েছে। আরো বেশি হওয়া উচিত ছিল।’
ফরহাদের এই বক্তব্য নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রতিবেদন করতে থাকলে ফরহাদ মজহার এর প্রতিবাদ করেন। তিন বলেন, 'আমি সেদিন পরিষ্কার বলেছি, আমি একটা কথা বলতে চাই যেন দর্শকরা যেন আমাকে বোঝে। আমি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের ও ব্যাক্তি স্বাধীনতার পক্ষে। গণ মাধ্যমের ওপর কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ কারও থাকা উচিত না, যদি যিনি মত প্রকাশ করছেন, যার বিরুদ্ধে করছেন ওতে যেন কারও অপমান বা অমর্যাদা না হয়। সেটা রসুল হতে পারেন কিম্বা অন্য কেউ হতে পারেন। এটা ছাড়া যে কারুরই ব্যাক্তি স্বাধীনতার অধিকার আছে।'
তিনি আরো বলেন, 'আমি এর আগে যে বোমার কথা বলেছি এই অর্থে কথাটা বলেছি যে আমি স্বভাবতই কখনই চাইব না কেউ পটকা, নিন্দা বা ঢিলও কোন গণমাধ্যমের ওপর ছুঁড়ুক। এটা কথার কথা, rhetoric। আলোচনা করারা জন্য, যাতে আমরা বুদ্ধিজীবীরা গণমাধ্যমের কর্মীরা বুঝতে পারি যে এই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া একমাত্র দায়ী নয়। আমরা, আমাদের ভুমিকার কারণেই আজকে এই পরিস্থিতি আমরা তৈরী করেছি।'
ফরহাদ তার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারে অভিযুক্ত গণমাধ্যমের ব্যাপারে মন্তব্য করেন, 'আমার বক্তব্য খণ্ডিত ও বিকৃত ভাবে প্রচার করছে। উস্কানি দিয়ে নানান স্তরের সন্ত্রাসীদের আমা্র বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। এরা বাক, ব্যক্তি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এদের সন্ত্রাস আজ কোথায় ঠেকেছে তা আমার বিরুদ্ধে এবং‘একুশের রাত’-এর বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যা ও অপ-প্রচারের ধরণ দেখেই আপনারা বুঝতে পারবেন। এরা এভাবেই মিথ্যা অপপ্রচার ও উস্কানি দিয়ে তাদের বিরোধী গণমাধ্যম ও ব্যাক্তিদের দমন করে। এরাই মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেন ক্ষমতাসীনদের গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রচার করতে না পারে তার জন্য গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করে। এরা বিরোধী দলের কোন কন্ঠস্বর থাকুক তা চায় না। '
বিষয়: বিবিধ
১১২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন