কুরবানীর ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান।ধারাবাহিক-4
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:২৪:০৮ সকাল
কুরবানীর ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান।ধারাবাহিক-১
২।Click this linkকুরবানীর ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান।ধারাবাহিক-2
৩। Click this link কুরবানীর ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান।ধারাবাহিক-৩
কুরবানীর ওয়াক্ত বা সময়
কুরবানী নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কুরবানী আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসেবে আদায় করলে অন্য কথা।
যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কুরবানীর সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কুরবানীর পশু যবেহ করা হয় তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। যেমন হাদিসে এসেছে-
عن البراء بن عازب رضى الله عنه قال:سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب فقال: « إن أول ما نبدأ به يومنا هذا أن نصلى ثم نرجع فننحر فمن فعل هذا فقد أصاب سنتنا ومننحر فإنما هو لحم قدمه لأهله ليس من النسك في شئي»
আল-বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সা.) খুতবাতে বলেছেন, ‘এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানীর কিছু আদায় হলো না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৬৫,৫২২৬)।
সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কুরবানীর পশু যবেহ না করে সালাতের খুতবা দু‘টি শেষ হওয়ার পর যবেহ করা ভাল। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ রকম করেছেন। হাদিসে এসেছে-
قال جندب بن سفيان البجلي رضى الله عنه : « صلى النبي صلى الله عليه وسلم يوم النحرثم خطب ثم ذبح»
সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী (রা.) বলেছেন, নবী কারীম (সা.) কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু যবেহ করলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৮৫)।
عن جندب بن سفيان قال:شهدت النبي يوم النحر قال: «من ذبح قبل أن يصلى فليعد مكانها أخرى ومن لم يذبح فليذبح. »
জুনদাব ইবনে সুফিয়ান বলেন, আমি কুরবানীর দিন নবী কারীম (সা.) এর সাথে ছিলাম । তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি সে যেন যবেহ করে। (বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬২)
আর কুরবনীর সময় শেষ হবে যিলহজ্জ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএর কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় হলো চার দিন। যিলহজ্জ মাসের দশ, এগারো, বারো ও তেরো তারিখে। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।
কারণ,
প্রথমত: আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন-
﴿ لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ﴾ [الحج: ٢٨]
‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান কারেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।’ [সূরা হজ্জ্ব:২৮]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী (রাহ.) বলেন, ইবনে আববাস (রা.) বলেছেন: ‘এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কুরবানীর দিন ও তার পরবর্তী তিনদিন।’ (ফাতহুল বারী, ২/৫৬১)
অতএব এ দিনগুলো আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর পশু যবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন।
দ্বিতীয়ত: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
«كل أيام التشريق ذبح»
‘আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন যবেহ করা যায়।’ (আহমদ- ৪/৪২, হাদিসটি সহীহ)।
আইয়ামে তাশরীক বলতে কুরবানীর পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়।
তৃতীয়ত: কুরবানীর পরবর্তী তিন দিনে সওম পালন জায়েয নয়। এ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে এ তিন দিনে কুরবানী করা যাবে।
চতুর্থত: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আইয়ামে তাশরীক হলো খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর যিকর করার দিন।’
এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে, যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কুরবানীর পশু যবেহ করা যেতে পারে।
পঞ্চমত: সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কুরবানীর পরবর্তী তিনদিন কুরবানীর পশু যবেহ করা যায়।
ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেন, আলী ইবনে আবি তালেব (রা.) বলেছেন, ‘কুরবানীর দিন হলো ঈদুল আযহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কুরবানীর দিন হলো মোট তিন দিন-যিলহজ্জ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ এবং বার তারিখের পর যবেহ করলে কুরবানী হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত হয়নি। (যাদুল মা‘আদ, ২/৩১৯)
মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানী
মূলত কুরবানী যথাসময়ে জীবিত ব্যক্তির তরফ থেকেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য ইচ্ছা করলে তার সওয়াবে জীবিত অথবা মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও শরীক করতে পারে। যেহেতু আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনদের তরফ থেকে কুরবানী করতেন।
অনেকের ধারণা কুরবানী শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য বা তাদের পক্ষ থেকে করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে পৃথক কুরবানী করার কোন দলীল নেই। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরবানী করা জায়েয ও একটি সওয়াবের কাজ। কুরবানী একটি সাদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কুরবানীও দেয়া যায়। মৃতব্যক্তি এর দ্বারা উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ। উপরন্তু, মৃতব্যক্তি এ ধরনের পূণ্যকর্মের মুখাপেক্ষীও থাকে। যেমন, মৃত ব্যক্তির জন্য সাদকার বিষয়ে হাদীসে এসেছে
عن عائشة رضى الله عنها أن رجلا أتى النى صلى الله عليه وسلم فقال يارسول الله : « إن أمي اقتتلت نفسها ولم توصى وأظنها لو تكلمت تصدقت أفلها أجر إن تصدقت عنها قال نعم»-
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (রা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞের করল, ‘হে রাসূল! আমার মা হাঠাৎ ইমেত্মকাল করেছেন। কোন অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোন কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৪)।
মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তার জন্য উপকারী।
যদি কোন কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কুরবানী করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানী করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা যেতে পারে । যেমন হাদিসে এসেছে-
আয়েশা (রা.) ও আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কুরবানী দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দু‘টো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিংওয়ালা ,সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানী করলেন; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবারবর্গের জন্য কুরবানী করেছেন। (ইবনে মাজা, হাদিসটি সহীহ)
মৃত ব্যক্তি যদি তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কাউকে কুরবানী করার অসিয়ত করে যান, অথবা কিছু ওয়াকফ করে তার অর্জিত অর্থ থেকে কুরবানীর অসিয়ত করে যায়, তবে তার অসীর জন্য ঐ মৃতের কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কুরবানী না করে ঐ অর্থ সাদকাহ খাতে ব্যয় করা বৈধ নয়। করণ, তা সুন্নাহর পরিপন্থী এবং অসিয়তের রূপান্তর। অন্যথা, যদি কুরবানীর জন্য অসিয়তকৃত অর্থ সংকুলান না নয়, তাহলে দুই অথবা ততোধিক বছরের অর্থ একত্রিত করে কুরবানী দিতে হবে। অবশ্য নিজের তরফ থেকে বাকী অর্থ পূরণ করে কুরবানী করলে তা সর্বোত্তম । মোটকথা, অসীর উচিত, সূষ্ঠ ভাবে অসীয়ত কার্যকর করা এবং যাতে মৃত অসীয়তকারীর উপকারও লাভ হয় তারই যথার্থ প্রয়াস করা। উল্লেখ্য যে, রাসূল (সা.) কর্তৃক আলী (রা.) কে কুরবানীর অসিয়ত করার হাদীসটি যঈফ। (যঈফ আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫৯৬; যঈফ তিরমিজী, হাদীস নং ২৫৫; যঈফ ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৬৭২; মিশকাত, হাদীস নং ১৪৬২ এর টীকা দ্র.)।
একাধিক মৃতব্যক্তিকে একটি মাত্র কুরবানীর সওয়াবে শরীক করাও বৈধ; যদি তাদের মধ্যে কারো ওপর কুরবানী ওয়াজিব না হয়ে থাকে তবে। রাসূল (সা.) নিজের তরফ থেকে, পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে এবং তার উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন; যারা আল্লাহর জন্য তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তার জন্য রিসালাত বা প্রচারের সাক্ষ্য দিয়েছে। (মুসনাদ আহমদ, ৬/৩৯১-৩৯২) এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ সাক্ষ্য প্রদানকারী কিছু উম্মত তার যুগেই মারা গিয়েছিল। অতএব একই কুরবানীতে কেউ নিজ মৃত পিতা-মাতা ও দাদা-দাদীকেও সওয়াবে শামিল করতে পাবে।
তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, একটি কুরবানীকে নিজের তরফ থেকে না দিয়ে কেবলমাত্র মৃতের জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয় এবং এতে আল্লাহ তা‘আলার সীমাহীন করুণা থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। বরং উচিত হচ্ছে, নিজের নামের সাথে জীবিত-মৃত অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনকে কুরবানীর নিয়তে শামিল করা। যেমন- আল্লাহর নবী (সা.) কুরবানী যবেহ করার সময় বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এ (কুরবানী) মুহাম্মাদের তরফ থেকে এবং মুহাম্মাদের বংশধরের তরফ থেকে।’ সুতরাং তিনি নিজের নাম প্রথমে নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বংশধরদেরকেও তার সওয়াবে শরীক করেছেন।
রাসূল (সা.)-এর তরফ থেকে কুরবানী
তিরমিযী ও আবূ দাউদে আলী (রা.) বর্ণিত একটি যঈফ হাদীসে আছে যে, তিনি রাসূল (সা.) এর পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, তাকে রাসূল (সা.) ঐ কুরবানী দেওয়ার জন্য অসিয়ত করে গেছেন। (যঈফ আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫৯৬; যঈফ তিরমিজী, হাদীস নং ২৫৫; যঈফ ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৬৭২; মিশকাত, হাদীস নং ১৪৬২ এর টীকা দ্র.)
রাসূল (সা.)এর অসিয়ত সংক্রান্ত যঈফ হাদীসটি ব্যতীত এ পৃথিবীর আর কোন হাদীস কিংবা এক লাখেরও বেশী সাহাবীর জীবনী দ্বারা এটা জানা যায় না যে, কোন সাহাবী কিংবা তাবেঈ‘ ও কোন মুসলীম মনীষী নবী (সা.) এর তরফ থেকে কুরবানী দিয়েছেন। উপরোক্ত যঈফ হাদীসের ভিত্তিতে যদি কেউ নবী (সা.) এর তরফ থেকে কুরবানী দিতে চায় তবে সে দিতে পারে। কিন্তু রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) তার উম্মতের পক্ষ থেকে ইসালে-সওয়াবের মুখাপেক্ষী নন।
অংশীদারির ভিত্তিতে কুরবানী করা
অংশীদারির ভিত্তিতে কুরবানী কারাকে ‘ভাগে কুরবানী দেয়া’ বলা হয়। ভেড়া, দুম্বা, ছাগল দ্বারা এক পরিবারের পক্ষ থেকে একটা পশু কুরবানী করতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষ দ্বারা সাত জনের নামে সাতটি কুরবানী করা যাবে। তবে অংশীদারি ভিত্তিতে কুরবানী করার দু‘টি পদ্ধতি হতে পারে-
১.সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া। যেমন-কয়েক জন মুসলিম মিলে একটি বকরি ক্রয় করল। অত:পর একজনকে ঐ বকরির মালিক বানিয়ে দিল। বকরির মালিক বকরিটি কুরবানী করল। যে ক‘জন মিলে বকরি খরিদ করেছিল সকলে সওয়াবের অংশীদার হলো।
২. মালিকানার অংশীদারির ভিত্তিতে কুরবানী। দু‘জন বা ততোধিক ব্যক্তি একটি বকরি কিনে সকলেই মালিকানার অংশীদার হিসেবে কুরবানী করল। এ অবস্থায় কুরবানী শুদ্ধ হবে না। অবশ্য উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি জায়েয কি নাজায়েয অর্থাৎ উট বা গরুর এক সপ্তাংশ একটি পরিবারের তরফ থেকে যথেষ্ট হবে কি? - সে ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেন, যথেষ্ট নয়। কারণ, তাতে ৭ জনের অধিক ব্যক্তির শরীক হওয়া বৈধ নয়। তা ছাড়া পরিবারের তরফ থেকে একটি পূর্ণ ‘দম’ (জান) যথেষ্ট হবে। আর ৭ ভাগের ১ ভাগ পূর্ণ ‘দম’ নয়। (ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম, ৬/১৪৯)।
অনেকের মতে একটি মেষ বা ছাগের মতই এক সপ্তাংশ উট বা গরু যথেষ্ট হবে। (শুমাইমিরী, মাজালিসু আশরি যিলহাজ্জাহ, পৃ. ২৬; আল-মুমতে’ ইবনে উসাইমীন, ৭/৪৬২-৪৬৩)।
মূলত এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উলামাগণ দু‘ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন:
১ম পক্ষ: মুসাফির ও মুক্বীম উভয় অবস্থায় ১টি উট বা গরু বা মহিষে ৭ জন বা ৭টি পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করাকে যথেষ্ট মনে করেন।
২য় পক্ষ: মুসাফির অবস্থায় উট বা গরু বা মহিষে ৭ জন বা ৭জনের পক্ষ থেকে কুরবানী করাকে যথেষ্ট মনে করেন। কিন্তু এ পক্ষ মুক্বীম উভয় অবস্থায় ১টি উট বা গরু বা মহিষে ৭টি পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করাকে যথেষ্ট মনে করেন না। এদের মতানুযায়ী, মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশুই কুরবানী করতে হবে।
কুরবানীতে অংশগ্রহণ ও সাত ভাগা প্রসংগে প্রথম পক্ষের প্রমাণাদি ও বক্তব্য :
অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় কুরবানীকেও আল্লাহ বিভিন্নভাবে আদায় করার বিধান দান করেছেন। ফলে আমরা উট, গরু, ছাগল ,ভেড়া, দুম্বার যেকোন একটা কুরবানী করতে পারি, আবার সবগুলো একসাথেও করতে পারি। আবার এককভাবে উট, গরু, মহিষ কুরবানী করতে না পারলেও সাত জন অংশগ্রহণ করতে পারি। কিন্তু একটি জন্তুতে সাত জনের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে নানাবিধ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেমন বলা হয়ে থাকে, শুধু সফরের অবস্থায় সাত জন অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে তাদের একই পরিবারের অন্তর্ভূক্ত হতে হবে, বিভিন্ন পরিবারের হলে নয়। এ বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই-
ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূল (সা.)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম । এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলো। তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হলাম। (তিরমিযী নাসাঈ, ইবনু মাজাহ)।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একটি গরু সাতজনের পক্ষ কুরবানী করা যাবে...। (তিরমিযী)
হাদীসে বর্ণিত ‘সাতজনে একটি গরুতে শরীক হয়েছিলাম’ এ সাতজন শব্দের অর্থ বুঝতেই অনেকে ভূল করেছেন এবং মনে করেছেন একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাতের অধিক হলে সেই পরিবারের জন্য একটি গরু বা উট যথেষ্ট নয়; অথচ একটি গরু বা উট শুধু এক পরিবার নয়, বরং সাতটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট । আর সেই পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা যতই হোক না কেন। কারণ হাদীসে সাতজন বলতে সাতজন কর্তা ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যাদের প্রত্যেকে একেকটা পরিবারের মালিক। যেমন-
আপনি এক পরিবারের কর্তা, সুতরাং আপনার উপরই কুরবানীর বিধান বলবৎ হবে ।আপনার সন্তান ও স্এীর উপর এ বিধান বলবৎ হবে না। তবে হ্যাঁ তাদের কারো নামে যদি এ পরিমাণ সম্পদ থাকে যে, তারা কুরবানী দেয়ার সমর্থ্য রাখে। তবে কারো কারো মতে তাদের উপর কুরবানীর বিধান বলবৎ হয়ে যাবে। তিরমিযী শরীফে লিখিত আবু আইয়ুব হতে বর্ণিত সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথাই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, যা নিম্নরূপ:
আতা বিন ইয়াসার বলেন, আমি আবু আইয়ুব (রা.) কে প্রশ্ন করলাম যে, নবী (সা.) এর যুগে কুরবানী কিভাবে করা হতো? তখন তিনি বললেন, এক ব্যক্তি তার ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি একটি ছাগল কুরবনী করত, সেখান থেকে তারা খেত এবং অন্যদের খাওয়াত, আর মানুষ এভাবে আনন্দিত হতো ও গর্ববোধ করত। আর সে প্রথা বর্তমানকাল পর্যন্ত চলে আসছে।
ইমাম শাওকানী (রাহ.) নায়লুল আওতার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সঠিক কথা হচ্ছে যে, একটি ছাগল একটি পরিবারের থেকে যথেষ্ট হবে যদিও তারা ১০০ জনের পরিবার অথবা ততধিক হয়। নবী (সা.) এর সুন্নাতের এটাই ফায়সালা। (তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯২)।
ইবনুল কাইয়িম (রাহ.) বলেন, নবী (সা.) এর তরীক্বা হচ্ছে যে, একটি ছাগল এক ব্যক্তি ও তার পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে যদি তাদের সংখ্যা অনেক হয়। ( তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯১)।
নবী (সা.) এর যুগে এক ব্যক্তি যেহেতু একটি ছাগলের কুরবানীতে অংশগ্রহণ করত ও সাত ব্যক্তি একটি গরু কিংবা উটে অংশগ্রহণ করত, সুতরাং সাধারণ ভাবেই বুঝা যায় যে, একটি ছাগল এক ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য যখন যথেষ্ট ছিল, তখন সাত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু কেন যথেষ্ট হবে না।
ইবনে আববাস (রা.) এর হাদীসে বর্ণিত যে সমস্ত সাহাবায়ে কেরামগণ সাতজন করে একটি গরুতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের লোক ছিলেন।
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘গরু সাত জনের পক্ষ হতে এবং উট সাত জনের পক্ষ হতে কুরবানী করা যাবে।’ (মুসলিম, আবূ দাউদ)।
ভারতবর্ষের মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহ.) বলেন, ‘অবশ্যই উট এবং গরুর কুরবানীতে বিভিন্ন পরিবারের অংশগ্রহণ প্রমাণিত যেমন ছাগলে একই পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণ প্রমাণিত। (তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯৩)।
আল্লামা নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভুপালী (রাহ.) বলেন, উট এবং গরুর কুরবানীতে সাত ব্যক্তির অংশগ্রহণ সঠিক যদিও তারা বিভিন্ন পরিবারের হয়ে থাকে। (আর-রওযাতুন নাদিয়াহ, পৃ. ১২৮)।
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ রহমানী মুবারকপুরী (রাহ.) বলেন, ‘আর কুরবানী প্রসঙ্গে অধিকাংশ ইমামগণের মত হচ্ছে, কুরবানীতেও হাদী তথা হজ্জের পশুর ন্যায় অংশ গ্রহণ বৈধ যদিও অংশগ্রহণকারীগণ একই পরিবারের সদস্য হয়, কিংবা বিভিন্ন পরিবারের হয় এবং তারা নিজেদের মধ্যে আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয় হোক। তরে ইমাম আবু হানীফা (রাহ.) শর্তারোপ করেছেন যে, একই পশুতে বিভিন্ন জনের অংশগ্রহণ তখনই বৈধ যখন তারা পরস্পরের নিকটাত্মীয় হবে। (মির‘আতুল মাফাতীহ, ৫/১৭৭)।
ইমাম তিরমিযী (রাহ.) মন্তব্য করেন যে, ১টি জন্তুতে সাতজনের অংশগ্রহণের উপর বিজ্ঞ সাহাবা কেরামের আমল প্রমাণিত এবং পরবর্তীতে ইমাম সুফইয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফেয়ী, আহমাদ ও ইসহাক এর উপর আমল করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী, পৃ৮৮)।
তাছাড়া, একটি গরু যে সাতটি ছাগলের সমান তা নবী (সা.) এর নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত:
ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর কাছে এসে বলল যে, আমার উপর একটি হজ্জের পশু কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে আছে কিন্তু আমি তা ক্রয় করতে পারছি না। তখন নবী (সা.) তাকে নির্দেশ প্রদান করলেন যেন সে সাতটি ছগল ক্রয় করে সেগুলোকে যবেহ করে। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ)।
ইমাম নববী (রাহ.) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, একটি গরু সাতজনের পক্ষ যথেষ্ট হবে, আর প্রতিটা গরু সাতটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত হবে।
লক্ষনীয় যে, আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহ.), ওবায়দুল্লাহ রহমানী মুবারকপুরী (রাহ.), নবাব সিদ্দিক হাসান খান (রাহ.) প্রমুখ উলামায়ে কিরাম কেউই কুরবানীর ভাগাভাগিতে অংশগ্রহণের সাথে সফরের কোন শর্তের কথা উল্লেখ করেননি।
সৌদি আরবের ‘সর্বোচ্চ ওলাো পরিষদের স্থায়ী কমিটি’ নামক ফাতাওয়া বোর্ড ফাতাওয়া প্রদান করেছে যে, ‘একটি পরিবারের হোক কিংবা বিভিন্ন পরিবারের হোক এবং তারা আত্মীয়ই হোক কিংবা অনাত্মীয় হোক।’ (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ১১/৪০১)।
আল্লামা ইবনু উসাইমীন বলেন, ‘একটি ছাগল একজনের পক্ষে যথেষ্ট এবং উট এবং গরুর সাত ভাগের এক ভাগ ঐ পরিমাণ যথেষ্ট যে পরিমাণের জন্য একটি ছাগল যথেষ্ট। (আহকামুল উযহিয়্যাহ ওয়ায যাকাত, পৃ. ৭)।
দ্বিতীয় পক্ষের প্রমাণাদি ও বক্তব্য:
(ক) নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটি পশুই যথেষ্ট:
• এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসে মা আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন, .. অত:পর এ দু‘আ পড়লেন-
«بسم الله اللهم تقبل من محمد وأل محمد ومن أمة محمد»
(‘আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন।’ এরপর উক্ত দুম্বা কুরবানী করলেন। (সহীহ মুসলীম, হাদীস নং ১৯৬৭)।
• বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেন, ‘হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী ও আতীরাহ।’ ইমাম আবু দাউদ বলেন, ‘আতীরাহ’ প্রদানের হুকুম পরে বহিত করা হয়। [তিরমিযী, আবু দাউদ প্রভৃতি, মিশকাত, হা/১৪৭৮; এ হাদীসটির সনদ ‘শক্তিশালী’ (ইবনু হাজার, ফতহুল বারী, ১০/৬); সনদ হাসান, আলবানী, সহীহ নাসাঈ, হ/৩৯৪০; সহীহ আবু দাউদ, হা/২৪২১; সহীহ তিরমিযী, হা/১২২৫; সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/২৫৩৩]।
• সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পরিবার পিছু একটি করে বকরী কুরবানী করার রেওয়াজ ছিল। যেমন- সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানী দিতেন। অত:পর তা খেতেন ও অন্যকে খাওয়াতেন এবং এভাবে লোকেরা বড়াই করত। এ নিয়ম রাসূলের যুগ হতে চলে আসছে যেমন তুমি দেখছ। (সহীহ তিরমিযী, হা/১২১৬; সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/২৫৪৬; মির‘আত, ২/৩৬৭, ৫/১১৪) ।
• একই মর্মে ধনাঢ্য সাহাবী আবু সারীহা (রা.) হতে সহীহ সনদে বর্ণিত ইবনু মাজার একটি হাদীস উদ্ধৃত করে ইমাম শাওকানী বলেন,‘সঠিক কথা হচ্ছে, একটি বকরি একটি পরিবারের পক্ষ হতে যথেষ্ট, যদিও সে পরিবারের সদস্য সংখ্যা শতাধিক হয় এবং এভাবেই নিয়ম চলে আসছে। (সহীহ ইবনু মাজাহ, হ/২৫৪৭; নায়লুল আওতার, ৬/১৪৪)।
• মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রাহ.) বলেন, ‘যারা একটি ছাগল একজনের জন্য নির্দিষ্ট বলেন এবং উক্ত হাদীসগুলোকে একক ব্যক্তির কুরবানীতে পরিবারের সওয়াবে অংশীদার হওয়ার ‘তাবীল’ করেন বা খাস হুকুম মনে করেন কিংবা হাদীসগুলোকে ‘মানসূখ’ বলতে চান, তাদের এ সব দাবী প্রকাশ্য সহীহ হাদীসের বিরোধী এবং তা প্রত্যাখ্যাত ও নিছক দাবী মাত্র । (মির‘আত, ২/৩৫১, ৫/৭৬)।
• রাসূল (সা.) মদীনায় মুক্বীম অবস্থায় নিজ পরিবার ও উম্মতের পক্ষ হতে দু‘টি করে খাসি এবং হজ্জের সফরে মিনায় গরু ও উট কুরবানী করেছেন। (মুত্তাফাক্বুন আলাইহ, মিশকাত, হা/১৪৫৩; বুখারী, ১/২৩১; সহীহ আবূ দাউদ, হা/১৫৩৯)।
(খ) কুরবানীতে শরীক হওয়া:
• আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসূল (সা.)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলো। তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হলাম। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হা/১৪৬৯; সনদ সহীহ)।
• জাবির (রা.) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সাথে হজ্জ ও উমরার সফরে সাথী ছিলাম।..... তখন আমরা একটি গরু ও উটে সাতজন করে শরীক হয়েছিলাম। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮) সফরে সাত বা দশজন মিলে একটি পরিবারের ন্যায়, যাতে গরু ও উটের মতো বড় পশু যবেহ ও কুটাবাছা এবং গোশত বণ্টন সহজ হয়। জমহুর বিদ্বানগণের মতে হজ্জের হাদীর ন্যায় কুরবানীতেও শরীক হওয়া চলবে। (মর‘আত, ২/৩৫৫, ৫/৮৪)।
• আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হজ্জের সফরে মিনায় নিজ হাতে ৭টি উট (অন্য বর্ণনায় এরও অধিক) দাড়ানো অবস্থায় ‘নহর’ করেছেন এবং মদীনায় (মুক্বীম অবস্থায়) দু‘টি সুন্দর শিংওয়ালা খাসি কুরবানী করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সফরসঙ্গী স্ত্রী ও পরিবারের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেন। (বুখারী, ১/২৩১; সহীহ আবু দাউদ, হা/১৫৩৯) অবশ্য মক্কায় (মিনায়) নহরকৃত উটগুলো সাহাবীগণের পক্ষ থেকেও হতে পারে।
আলোচনা:
ইবনু আববাস (রা.) এর হাদীসটি নাসাঈ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহতে, জাবির (রা.) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও আবুদাউদে এবং আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসটি সহীহ বুখারীতে সংকলিত হয়েছে। সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারীতে যথাক্রমে ‘হজ্জ’ও ‘মানসিক’ অধ্যায়ে এবং সুনানে ‘কুরবানী’ অধ্যায়ে হাদীসগুলো এসেছে। যেমন-(১) তিরমিযী ‘কুরবানীতে শরীক হওয়া’ অধ্যায়ে ইবনু আববাস, জাবির ও আলী (রা.) থেকে মোট তিনটি হাদী এনেছেন। (২) ইবনু মাজাহ উক্ত মর্মের শিরোনামে ইবনু আববাস,জাবির, আবূ হুরায়রা ও আয়েশা (রা.) হতে যে পাঁচটি হাদীস (৩১৩১-৩৪ নং) এনেছেন, তার সবগুলোই সফরে কুরবানী সংক্রান্ত। (৩৬) নাসাঈ কেবলমাত্র ইবনু আববাস ও জাবির (রা.) থেকে পূর্বের দু‘টি হাদীস (২৩৯৭-৯৮ নং) এনেছেন। (৪) আবু দাউদ শুধুমাত্র জাবির (রা.) এর পূর্ববর্ণিত সফরে কুরবানীর হাদীসটি এনেছেন। তিনটি সহীহ সনদে (২৮০৭-৯ নং), যার মধ্যে ২৮০৮ নং হাদীরটিতে কোন ব্যাখ্যা নেই।
বিভ্রাটের কারণ:
মিশকাত শরীফে ইবনু আববাস (রা.) এর সফরের হাদীসটি (১৪৬৯ নং) এবং জাবির (রা.) বর্ণিত ব্যাখ্যাশুন্য হাদীসটি (১৪৫৮ নং ) সংকলিত হয়েছে। সম্ভবত জাবির (রা.) বর্ণিত ‘মুত্বলাক্ব’ বা ব্যাখ্যাশুন্য হাদীসটিকে ভিত্তি করেই মুক্বীম অবস্থায় গরু বা মহিষে সাতভাগা কুরবানীর নিয়ম চালু হয়েছে। অথচ, ভাগের বিষয়টি সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা ইবনু আববাস ও জাবির (রা.) বর্ণিত বিস্তারিত হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। (মিশকাত, হা/১৪৬৯; মুসলিম , হা/১৩১৮; বুখারী, ১/২৩১) আর একই রাবীর বর্ণিত সংক্ষিপ্ত হাদীসের স্থলে বিস্তারিত ও ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীস দলীলের ক্ষেত্রে গ্রহণ করাই মুহাদ্দিসগণের সর্ববাদীসম্মত রীতি।
তাছাড়া, মুক্বীম অবস্থায় মদীনায় রাসূল (সা.) বা সাহাবায়ে কেরাম কখনো ভাগে কুরবানী করেছেন বলেও জানা যায় না। ইমাম মালিক (রাহ.) কুরবানীতে শরীক হওয়ার বিষয়টিকে মাকরূহ মনে করতেন। (মুওয়াত্বা মালেক, পৃ. ২৯৯)।
উভয় পক্ষের প্রদানকৃত দলীল সমূহের পর্যালোচনা:
মুক্বীম অবস্থায় সাতটি পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ থেতে সাতটি ভাগ দিয়ে একটি উট বা গরু বা মহিষ ক্রয় করে করে কুরবানী করার ব্যাপারে উপরে উল্লেখিত উভয় পক্ষের উপস্থাপিত প্রমাণিত প্রমাণাদিকে বিশ্লেষণমূলক পর্যলোচনা করলে যে বিষয়টি আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে, জাবির (রা.) বর্ণিত আবু দাউদদের ব্যাখ্যা শূন্য হাদীসটির কারণেই মুসাফির ও মুক্বীম অবস্থায় কুরবানীতে ভাগাভাগি নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথমত: এ হাদীসটিতে কেবল বলা হচ্ছে, ‘গরুতে সাতজন আর উটে সাতজন’। এখানে সফর না মুক্বীম তা বলা হয়নি। কিন্তু এটি যে সফরের হাদীস তা জাবির (রা.) বর্ণিত অন্যান্য হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত।
দ্বিতীয়ত: জাবির (রা.) বর্ণিত সফরের হাদীসগুলো ইমাম আবূ দাউদ যে অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন এ ব্যাখ্যাশূন্য হাদীসটিও সে অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
সর্বোপরি, উভয় পক্ষের মতের স্বপক্ষে উপস্থাপিত দলীলাদি পর্যালোচনা করলে আমাদের সামনে তিনটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, তা হলে:
1. সফর ও মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই একমত।
2. ভাগে কুরবানী জায়েয।
3. সফর ও মুক্বীম অবস্থায় সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ভাগে একটি পশু কুরবানী করা যায়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়, তা হলো- হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘সাতজনের পক্ষ থেকে’ (মুসলিম, মিশকাত, হা/১৪৫৮), কিন্তু আমাদের সমাজে কুরবানী করা হচ্ছে সাত পরিবারের পক্ষ থেকে। বলা যায়, সফর অবস্থাতেও সাত পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি নেই। আরো স্পষ্ট হলো, সাত জনের প্রেক্ষাপট কেবল সফর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। মুক্বীম অবস্থায় কুরবানী পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন- রাসূল (সা.) করতেন। মূলত, এক্ষেত্রে সফরের হাদীসগুলোকে আম হিসেবে ধরা যাচ্ছে না। কারণ, এ হাদীসগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবীগণ (রা.) মুক্বীম অবস্থায় যে ভাগা কুরবানী করতেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন হাদীস নেই। রাসূল (সা.) প্রতি বছর দু‘টি করে খাসি কুরবানী করতেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/১৪৫৩) অথচ, দঃখের বিষয় বর্তমানে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়; বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের বর্তমানে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়; বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের ৭-এর অধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী দেওয়া হচ্ছে।
আজকাল পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানীর সাথে একটি গরুর ভাগা নেওয়া হচ্ছে মূলত গোশত বেশী পাবার স্বার্থে। ‘নিয়ত’ যখন গোশত খাওয়া, তখন কুরবানীর উদ্দেশ্য কিভাবে হাছিল হবে? কুরবানী হলো পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত, যা তিনি পুত্র ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে করেছিলেন। আর তা ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো একটি পশুর জীবন অর্থাৎ দুম্বা। অতএব ইবরাহীম ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে আল্লাহর রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কুরবানী দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয়।
পরিশেষে, মনে রাখতে হবে কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ও আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়, সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরীয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ বা শুধু সদকা (দান) নয়।। কুরবানীর উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।
(জ) কুরবানী দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন
সুন্নাহ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানীর পশু যবেহ না করা পর্যন্ত কুরবানীদাতার শরীরের কোন লোম বা চুল, নখ ও চর্মাদি না কাটা ওয়াজিব। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে-
عن أم سلمة رضى الله عنها أن النبى صلى الله عليه وسلم قال: « إذا رأيتم هلال ذى حجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره وأظفاره»
উম্মু সালামাহ (রা.) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে- ‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে ‘কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৭; নাসাঈ, মিশকাত, হাদীস নং ১৪৫৯)
বলিষ্ঠ মতানুসারে এখানে এ নির্দেশ ওয়াজিবের অর্থে এবং নিষেধ, হারামের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ, তা ব্যাপক আদেশ এবং অনির্দিষ্ট নিষেধ, যার কোন প্রত্যাহারকারীও নেই। (তাফসীর আযওয়াইল বায়ান, ৫/৬৪০; আল-মুমতি, ৭/৫২৯) তবে কেউ যদি জেনে-শুনে ইচছা করেই চুল-নখ কাটে, তবে তার জন্য জরুরী যে, সে যেন আল্লাহর নিকট ইসেত্মগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে। আর তার জন্য কোন কাফফারা নেই। সে স্বাভাবিকভাবেই কুরবানী করবে। আবার প্রয়োজনে যেমন- নখ ফেটে বা ভেঙ্গে ঝুলতে থাকলে বা মাথায় জখমের উপর চুল থাকলে এবং ক্ষতির আশঙ্কা হলে) কেটে ফেলতে কোন দোষ নেই। কারণ, সে মুহরিম যে হজ্জ বা ওমরার জন্য ইহরাম বেধেছে তার) অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যার জন্য অসুবিধার ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডিত করাও বৈধ করা হয়েছে।
কুরবানীদাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন, কুরবানী দাতা হজ্জ করার জন্য যারা ইহরাম অবস্থায় বয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা রাখতে পারেন।
ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেছেন, ‘কুরবানী দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কুরবানী করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এ জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’(ইবনে উসাইমীন, আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃ.৭৭)।
এমন কোন ব্যক্তি যার চাঁদ দেখার পর কুরবানী করার ইচ্ছা ছিল না, সে চুল বা নখ কেটে থাকলে এবং তারপর কুরবানী করার ইচছা হলে তারপর থেকেই আর তা কাটবে না।
কুরবানী করার জন্য কেউ যদি কাউকে ভার দেয় বা অসীয়ত করে, তবে সেও নখ-চুল কাটবে না। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা অসী এ নিষেধের শামিল হবে না। অর্থাৎ তাদের জন্য নখ-চুল কাটা দূষণীয় নয়। অনুরূপভাবে পরিবারের অবিভাবক কুরবানী করলে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল তার পক্ষে হবে; বাকী অন্যান্য স্ত্রী-পুত্র বা আত্মীয়দেরকে শামিল করবে না। তাদের জন্য নির্দিষ্ট কুরবানী না থাকলে তারা নিজেদের চুল-নখ কাটতে পারে। যেহেতু আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজ বংশধরের তরফ থেকে কুরবানী করতেন অথচ তিনি তাদেরকে নখ-চুল কাটতে নিষেধ করেছেন বলে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
(ঝ) কুরবানীর পশু যবেহ করার নিয়মাবলি
কুরবানীদাতা নিজের কুরবানীর পশু নিজেই যবেহ করবেন, যদি তিনি ভালোভাবে যবেহ করতে পারেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে যবেহ করেছেন। আর যবেহ করা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম । তাই প্রত্যেকের নিজের কুরবানী নিজে যবেহ করার চেষ্টা করা উচিত।
ইমাম বুখারী (রাহ.) বলেছেন,‘সাহাবি আবু মুসা আশআরী (রা.) নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানীর পশু যবেহ করেন।’ (ফাতহুল বারী, ১০/১৯) তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মেয়েরা কুরবানীর পশু যবেহ করতে পারেন। তবে কুরবানীর পশু যবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েয আছে। কেননা, সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) তেষট্টিটি কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করে বাকিগুলো যবেহ করা দায়িত্ব আলী (রা.) কে অর্পণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮)।
যবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়
১. পশুর প্রতি দয়া করা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা। আর তা নিমণরূপে সম্ভব:
• এমন ব্যবস্থা নিয়ে যবেহ করা,যাতে পশুর অধিক কষ্ট না হয় এবং সহজেই প্রাণ ত্যাগ করতে পারে।
• যবেহ যেন খুব তীক্ষ্ম ধারালো ছুরি দ্বারা করা হয় এবং তা খুবই শীঘ্রতা ও শক্তির সাথে যবেহ স্থলে (গলায়) পোঁচানো হয়।
মূলত; পশুর বিনা কষ্টে খুবই শীঘ্রতার সাথে তার প্রাণ বধ করাই উদ্দেশ্য নবী (সা হাদীসে এসেছে-
عن شداد بن أوس رضى الله عنه أن النبى صلى الله عليه وسلم قال: « إن الله كتب الإحسان على كل شيء فإذا قتلتم فأحسنوا القتل وإذا ذبحتم فأحسنوا الذبح وليحد أحدكم شفرته فليرح ذبيحته»
সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) বলেছেন: আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন যবেহ করবে তখনও তা সুন্দর ভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রাশান্তি দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৫৫)
বধ্য পশুর সম্মুখেই ছুরি শান দেওয়া উচিত নয় (মাকরূহ)। যেহেতু নবী (সা.) ছুরি শান দিতে এবং তা পশু থেকে গোপন করতে আদেশ করেছেন এবং বলছেন.‘যখন তোমাদের কেউ যবেহ করবে, তখন সে যেন তাড়াতাড়ি করে।’
(মুসনাদে আহমদ, ২/১০৮; ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৩১৭২; সহীহ তারগীব, ১/৫২৯)।
আর যেহেতু পশুর চোখের সামনেই ছুরি ধার দেওয়ায় তাকে চকিত করা হয়; যা বাঞ্ছিত অনুগ্রহ ও দয়াশীলতার প্রতিকূল। একইভাবে, একটি পশুকে অন্য একটি পশুর সামনে যবেহ করা এবং ছেচরে যবেহ স্থানে টেনে নিয়ে যাওয়াও মাকরূহ।
২. কুরবানীর পশু যদি উট হয় ( অথবা এমন কোন পশু হয় যাকে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়) তাহলে তাকে বাম পা বাধা অবস্থায় দাঁড় করিয়ে নহর করা হবে। কেননা আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেছেন-
﴿ فَٱذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَا صَوَآفَّۖ ﴾ [الحج: ٣٦]
‘সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।’ [সূরা হজ্জ (২২):৩৬]।
ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘এর অর্থ হলো তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাঁধা থাকবে। (তাফসীর ইবনে কাসির)।
যদি উট ছাড়া অন্যপশু হয় তাহলে তা বামকাতে শয়নাবস্থায় যবেহ করা হবে। যেহেতু তা সহজ এবং ডান কাতে ছুরি নিয়ে বাম হাত দ্বারা মাথায় চাপ দিয়ে ধরতে সুবিধা হবে। সম্ভব হলে পশুকে ডানকাতে শুইয়ে যবেহ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে পশুকে আরাম দেওয়াই উদ্দেশ্যে।
পশুর গর্দানের এক প্রান্তে পা রেখে যবেহ করা মুস্তাহাব। যাতে পশুকে অনায়াসে কাবু করা যায়। কিন্তু গর্দানের পিছনদিকে পা মুচড়ে ধরা বৈধ নয়। কারণ, তাতে পশু অধিক কষ্ট পায়। যেমন ইতোপূর্বে আনাস (রা.) বর্ণিত বুখারীর হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. যবেহকালে পশুকে কিবলামুখী করে শয়ন করাতে হবে। (আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ, ২/১০৪৩; তবে এ হাদীসটির সনদ নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।) অন্যমুখে শুইয়েও যবেহ করা সিদ্ধ হবে। যেহেতু বিবলামুখ করে শুইয়ে যবেহ করা ওয়াজিব হওয়ার কোন শুদ্ধ প্রমাণ নেই। (আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃ. ৮৮,৯৫)।
৪. যবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। কারণ, এটা বলা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ রাববুল‘আলামীন বলেন-
﴿ فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ ﴾ [الانعام: ١١٨]
‘যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।’ [সূরা আন‘আম (৬):১১৮]।
﴿ وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسۡقٞۗ ﴾ [الانعام: ١٢١]
‘এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার কারো না, এটা অবশ্যই পাপ।’ [সূরা আন‘আম(৬): ১২১]।
আর নবী (সা.) বলেছেন, ‘যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ করো।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৫৬; সহীহ মুসলিম , হাদীস নং ১৯৬৮)।
যবেহকালীন সময়ে ‘বিসমিল্লাহ‘র সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবূল করার দু‘আ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়। যেমন হাদিসে এসেছে-
عن جابر رضى الله عنه .. «.وأتى بكبش ذبحه رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده وقال:بسم الله و الله أكبراللهم هذا عني وعمن لم يضح من أمتي. »
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ..... একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন,
بسم الله و الله أكبراللهم هذا عني وعمن لم يضح من أمتي».
‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে । এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।’ (আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে এসেছে-
«ضحى رسول الله صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين أقرنين ويسمى ويكبر. »
রাসূলুল্লাহ (সা.) দুটি শিংওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ ও আল্লাহু আকবার’ বললেন। (সুনানে দারামী, হাদীস নং ১৯৮৮; হাদিসটি সহীহ)।
যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর –
«اللهم هذا منك ولك»
‘হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে তোমারই জন্য’। বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দু‘আ করা জায়েয আছে। এ ভাবে বলা ‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবূল করে নাও।’ যেমন হাদিসে এসেছে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন-
«بسم الله اللهم تقبل من محمد وآل محمد ومن أمة محمد»
‘আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৭)।
মূলত কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে বলবে, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়ালাক , আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।’ নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে, ‘....তাক্বাবাল্লাহ মিন্নী ওয়ামিন আহলি বাইতি।’ অপরের নামে হলে বলবে, ‘...তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে। (আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ, পৃ.৩৬)।
এ সময় নবী (সা এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়, বরং তা বিদ‘আত। (আল-মুমতে, ৭/৪৯২) যে ‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করাও সুন্নাত নয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দু‘আ ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু’ এর হাদীস যঈফ। (যঈফ আবূ দাইদ, হাদীস নং ৫৯৭)।
যবেহের ঠিক পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ জরুরী। এর পর যদি লম্বা ব্যবধান পড়ে যায়, তাহলে পুনরায় তা ফিরিয়ে বলতে হবে। তবে ছুরি ইত্যাদি হাতে নিয়ে প্রস্ত্ততি নেওয়ায় যেটুকু ব্যবধান পড়ে তাতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে অপর পশু যবেহ বৈধ নয়। বরং অন্য পশুর জন্য পুনরায় ‘বিসমিল্লাহ’ পরা জরুরী। অবশ্য ‘বিসমিল্লাহ’ বলার পর অস্ত্র পরিবর্তন করাতে আর পুনবায় পড়তে হয় না। উল্লেখ্য যে, পশু যবেহর পর পঠনীয় কোন দু‘আ নেই।
৫. যবেহতে রক্ত প্রবাহিত হওয়া জরুরী। আর তা দুই শাহরগ (কণ্ঠরালীর দু‘পাশে দুটি মোটা আকারের শিরা) কাটলে অধিকরূপে সম্ভর হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যা রক্ত প্রবাহিত করে, যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তা তোমরা খাও। তবে যেন (যবেহ করার অস্ত্র) দাত বা নখ না হয়।’ (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি, সহীহুল জামে’, হাদীস নং ৫৫৬৫) সুতরাং রক্ত প্রবাহিত ও শুদ্ধ যবেহ হওয়ার জন্য চারটি অঙ্গ কাটা জরুরী; শ্বাসনালী, খাদ্যনালী এবং পার্শ্বস্থ দুটি মোটা শিরা।
৬. প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে পশুর অন্য কোন অঙ্গ কেটে কষ্ট দেওয়া হারাম। যেমন- ঘাড় মটকানো, পায়ের শিরা কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি কাজ জান যাওয়ার আগে বৈধ নয়। একইভাবে, দেহ আড়ষ্ট হয়ে এলে চামড়া ছাড়াতে শুরু করার পর যদি পুনরায় লাফিয়ে ওঠে, তাহলে আরো কিছুক্ষণ প্রাণ ত্যাগ করার কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু পশুকে কষ্ট দেয়া আদৌ বৈধ নয়।
পশু পালিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও ঘাড় মটকানো যাবে না। বরং তার বদলে কিছুক্ষণ ধরে রাখা অথবা (হাঁস-মুরগীকে ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে) চেপে রাখা যায়।
যবেহ করার সময় পশুর মাথা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় তার খেয়াল করা উচিত। তা সত্ত্বেও যদি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়েই যায়, তাহলে তা হালাল হওয়ার ব্যাপাবে কোন সন্দেহ নেই।
যবাই ছেড়ে দেওয়ার পর (অসম্পূর্ণ হওয়ার ফলে) কোনো পশু উঠে পালিয়ে গেলে তাকে ধরে পুনরায় যবাই করা যায়। নইলে কিছু পরেই সে এমনিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর তা হালাল।
প্রকাশ থাকে যে, যবেহ করার জন্য পবিত্রতা বা যবেহকারীকে পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। যেমন-মাথায় টুপী রাখা বা মাথা ঢাকাও বিধিবদ্ধ নয়। অবশ্য বিশ্বাস ও ঈমানের পবিত্রতা জরুরী। সুতরাং কাফির, মুশরিক ও বেনামাযীর হাতে যবেহ শুদ্ধ নয়।
যেমন- যবেহ করার আগে কুরবানীর পশুকে গোসল দেওয়া, তার খুর ও শিঙে তেল দেওয়া অথবা তার অন্য কোন প্রকার তোয়ায করা বিদ‘আত।
উল্লেখ্য, যবেহকৃত পশুর রক্ত হারাম। অতএব তা কোন ফল লাভের উদ্দেশ পায়ে মাখা, দেওয়ালে ছাপ দেওয়া বা তা নিয়ে ছুড়াছুড়ি করে খেলা করা বৈধ নয়।
(ঞ) কুরবানীর গোশত বন্টননীতি:
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন-
﴿ فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ ٢٨ ﴾ [الحج: ٢٨]
‘অত:পর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাব গ্রস্থকে আহার করাও।’ [সূরা হজ্জ্ব,:২৮]।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর গোশত সম্পর্কে বলেছেন-
«كلوا وأطعموا وادخروا»
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ (বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭১)।
‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এব পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছে, ‘কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মুস্তাহাব (উত্তম)।
কুরবানীর গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’-বলে যে হাদিস বয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে।
তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হলো দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ জায়েয হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কুরবানী দাতা কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে।’ (ফাতহুল বারী, ১০/২৮; ইনসাফ, ৪/১০৭)।
কুরবানীর মাংস যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এমনকি ‘এক যিলহজ্জ থেকে আরেক যিলহজ্জ পর্যমত্ম সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। ( আহমাদ, হাদীস নং ২৬৪৫৮; সনদ হাসান: তাফসীরে কুরতুবী, হাদীস নং ৪৪১৩)।
কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সম্পূর্ণ গোশতকে বিতরণ করে দিতে পাবে। আর তা করলে উপরোক্ত আয়াতের বিরোধিতা হবে না। কারণ, ঐ আয়াতে খাওয়ার আদেশ হলো মুস্তাহাব বা সুন্নাত। সে যুগের মুশরিকরা তাদের কুরবানীর গোশত খেত না বলে মহান আল্লাহ উক্ত আদেশ দিয়ে মুসলিমদেরকে তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ খাওয়া ওয়াজিবও বলেছেন। (তাফসীর ইবনু কাসীর, ৩/২৯২, ৩০০; মুগনী, ১৩/৩৮০; মুমতে, ৫২৫) সুতরাং কিছু খাওয়া হলো উত্তম।
কুরবানীর গোশত হতে কাফেরকে তার অভাব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশী অথবা তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা। (মুগনী, ১৩/৩৮১; ফাতহুল বারী, ১০/৪৪২)
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রা.) তার ইহুদী প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন। (বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ১২৮; সনদ সহীহ) ‘তোমরা মুসলিমদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের আহার করিও না’- মর্মে যে হাদীস এসেছে সেটা যঈফ। (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৯১১৩)।
কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত দেয়া জায়েয নয়। হাদিসে এসেছে-
«ولا يعطى جزارتها شيئا«
‘তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না’ (বুখারী- ১৭১৬ সহীহ মুসলিম- ১৩১৭) তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা নাজায়েয হবে না।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ইখলাসের সাথে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরবানী ও সকল ইবাদাত করার তাওফীক দান করুন— আমীন!
চলবে......।
মূলঃসংকলন : ড. মোঃ আবদুল কাদের
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন