ব্লগার নুসরাতের জলবিম্ব
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২৭ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪৭:৪৯ সকাল
হাত দুটো নিশপিশ করে লেখার জন্য। কেন লিখব, জানিনা। ভাবনারা বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। চিন্তাগুলো যাও বা লেখার ছন্দে এসে ধরা দেয় – লিখতে গেলেই হারিয়ে যায়। কেন যে লেখা… কীসের জন্য যে লিখতে বসা – তাও মনে থাকেনা।
বছর তিনেক আগেও অনেক ছোট ছিলাম। সবুজ সবুজ লাগত সব। কার স্ট্যাটাসে যেন দেখলাম, সময় বয়স মাপবার মাপকাঠি নয় কখনই। অভিজ্ঞতা যার যত বেশি, সে তত বুড়ো।
আমি এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারি একদিন হঠাৎ করেই লেখা বিদায় নিল আমার হাত থেকে। লেখালেখি কে আমি আল্লাহর ব্লেসিং ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। সুতরাং লিখতে না পারা মানে আল্লাহ্ সে ব্লেসিং তুলে নিয়েছেন। কিন্তু তা যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আমি নিজেই খুইয়েছি। তাই এখন আনমনেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, কেন কী কারণে লেখালেখি কে বিদায় দিলাম।
আমার খুব ভালো মনে আছে, একই ধাঁচের লেখায় একঘেয়েমি পেয়ে বসল। ভাঙতে চাইলাম নিজেরই বানানো গন্ডিটা। গন্ডির মাঝে পড়তে বড্ড বিরক্ত লাগে। গন্ডিবদ্ধ মানুষগুলোকেও বিরক্ত লাগে। কিন্তু আমি আসলে ‘নাই বনে শেয়াল রাজা’ সেজে বৈচিত্রের ডাক ডাকি। কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঘুরে ফিরে ইন্ডিয়ান, এশিয়ানদের সাথেই আমার যত খাতির। সপ্তাহান্তে সোশ্যাল আওয়ারে ড্রিঙ্ক করে বলে চার বছরে একবার গেলাম না। ওদের কথা বলার টপিকগুলো আমি অনেক সময় ধরতেই পারিনা। পার্টিতে তো আর ভারিক্কি আলাপ করা যায় না! মিলতে চেয়েও মিলতে পারিনা বলে আস্তে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নিজের গন্ডিতে ফেরত আসি। গন্ডি ভাঙতে চাওয়ার সাময়িক দুঃসাহস ব্যর্থতায় হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
দেশ ছেড়ে আসার পর একটা গাছের উপমা খুব মনে পড়ত। একটা ট্রপিকাল এলাকার গাছ কে মূলটুলসহ উপড়ে শীতের একটা দেশে বসিয়ে দেয়া হল। শেকড়গুলো বেশি গভীরে যেতে পারেনি দেখে গাছটা বড়ই নড়োবড়ো। তার আর কখনও শেকড় গাঁড়া হল না। আর যে মাটি ছেড়ে এসেছে, সেখানে শূন্যতা আপন প্রয়োজনেই পূরণ হয়ে গেছে। শেকড়সুদ্ধ তরতাজা গাছটা ঝড়ে হাওয়ায় টালমাটাল হতে হতে একটা বুদবুদ হয়ে গেছে। বাতাসের তোড়ে ভাসতে ভাসতে সে শুধু দেখে, কোথাও নামে না; যদি টুস করে ফেটে যায়?
“অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।“
আমি বুদ্বুদ হতে চাইনি। আমার সকল ইচ্ছে পূরণ হয়েও… একটা গাছ হয়ে রোদ্দুর ছোঁয়ার স্বপ্ন আমাকে নির্ঘুম করে।
* অমলকান্তি -- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
* জলবিম্ব মানে বুদ্বুদ। Google translator থেকে পেলাম।
বিষয়: বিবিধ
১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন