আর বাংলাদেশে পশু গুলো মানুষের বিচার করছে।এবং জর্জ অরওয়েল এর অ্যানিমল ফার্ম বইটি।
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৪ জুলাই, ২০১৩, ১০:০৭:১৪ সকাল
যতসব বেজন্মার দল। তাদের কোটা ছাড়া হয়না ।
রেহনুমা বিনত আনিস আপু বাদল দিনের বন্ধুরা পোষ্টে লিখেছেন টিভিতে খবরে দেখলাম শুধু ক্যাল্গেরী নয়, আশেপাশের সমস্ত শহর প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে নৈসর্গিক দৃশ্যের লীলাভূমি ক্যানমোরে বাড়ীঘর থেকে রাস্তা পর্যন্ত সব টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে গিয়েছে। ক্যাল্গেরীর কিছু কিছু এলাকায় নদীপাড়ে বিলাসবহুল সব বাড়ীঘর দোতলা পর্যন্ত পানির নীচে, কিছু কিছু বাড়ী ভেসে গিয়ে নদীপাড়ে কিংবা ব্রিজের সাথে প্রচন্ড গতিতে ধাক্কা খেয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। ডাউনটাউনে তিনফুট পানি, যারা সকালে গিয়েছিল তাদের সবাইকে সাঁতার কেটে ফিরে আসতে হয়েছে, অফিসের সামনে নদীর ধারে যে পার্কে জেইন আর আমি প্রতিদিন হাঁটতে যাই সেসব জায়গায় প্রচন্ডবেগে নদী প্রবাহিত হচ্ছে আর তাতে হাঁসগুলো মনের আনন্দে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। শুনলাম চিড়িয়াখানার প্রানীগুলোকে কোর্ট বিল্ডিংয়ে স্থানান্তর করা হতে পারে। এই খবরে বেশ মজা পেলাম। কোর্ট বিল্ডিংয়ে সাধারনত এমন সব মানুষদের বিচার করা হয় যাদের মাঝে মানবিক অপেক্ষা পাশবিক গুনাবলী অধিকরূপে বিদ্যমান, আর এখন আদতেই সব পশুদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! এ অংশটুকু পড়ার পর আমার দেশের বিচার বিভাগের কথা মনে পড়ল। কি হচ্ছে আমাদের দেশে নিরাঅপরাধ লোকদের উপর ......।।সে বর্ণনা কি আমার দেওয়া লাগবে। মন্তব্য করলাম আর বাংলাদেশে পশু গুলো মানুষের বিচার করছে।
প্রতি মন্তব্যে আমাকে পরামর্শ দিলেন জর্জ অরওয়েল এর অ্যানিমল ফার্ম বইটি পড়ুন, অনেক মজা পাবেন ; আসুন দেখি সে বইতে কি আছে ।
ইংরেজি সাহিত্যের বিংশ শতাব্দীর এক বড় লেখকের জন্ম তখনকার ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে। শুধু তাই নয় ইংল্যান্ড থেকে এসে এই লেখক তার কর্মজীবনও শুর¤œ করেন ভারতবর্ষে। এই লেখকের নাম জর্জ অরওয়েল। যার আসল নাম এরিক আর্থার বে¯œয়ার। ১৯০৩ সালে ভারতের মতিহারে তার জন্ম। জর্জ অরওয়েলের সবচে বিখ্যাত দুটি উপন্যাস হল অ্যানিমেল ফার্ম (১৯৪৫) ও নাইনটিন এইটি ফোর (১৯৪৯)। অ্যানিমেল ফার্ম নিয়েই এই লেখা।
অ্যানিমেল ফার্মÑ পশুর খামার। নামটি থেকেই উপন্যাসের কাহিনীর কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। মানে সাদা কথায় উপন্যাসটি পশুপাখিকে কেন্দ্র করে। তাহলে উপন্যাসটি বাচ্চাদের জন্য? আদতে তা নয়। এ ধরনের উপন্যাসকে বলে রূপকধর্মী। প্রতীকের মাধ্যমে এখানে বলা হয় অন্য গল্প। অ্যানিমেল ফার্ম হল রূপকধর্মী একটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। স্ট্যালিনের সময়কার সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া এর পটভূমি।
উপন্যাসের গল্পটা সারসংক্ষেপ এরকম : মিস্টার জোন্সের একটি পশু-খামার রয়েছে। সেটির নাম ম্যানর ফার্ম। তার খামারের পশুরা তার উপর ভীষণ ক্ষ্যাপা। কেবল মিস্টার জোন্স নয়, দুপেয়ে সমস্ত মানুষের ওপরেই তারা —ক্ষ্যাপা। পশুদের নেতা ওল্ড মেজর। একটি বৃদ্ধ শূকর। এক রাতের সভায় সে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়।
পরদিনই তার মৃত্যু ঘটে। তার ভাষণের সারমর্ম হল : পশুর জীবন খুব করুণ , কষ্টকর এবং অল্প সময়ের। এই জীবনের পুরোটা জুড়ে তারা মানুষকে কেবল দিয়েই যায়। অথচ মানুষ এর বদলে তাদের প্রতি সদয় হওয়া তো দূরের কথা, যখন তারা বৃদ্ধ হয়, কাজে অক্ষম হয়ে যায় মানুষ তাদের কেটে খেয়ে ফেলে। এই হল পশুর জীবন। কিন্তু এইভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। ওল্ড মেজর বলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন এই পশুরা একদিন মানুষের কাছ থেকে মুক্তি ছিনিয়ে নেবে এবং নিজেদের একটি আলাদা সমাজ গড়বে। ওল্ড মেজর মারা যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ম্যানর ফার্মের সমস্ত পশুপাখিরা স্নোবল নামে একটি শূকরের অধীনে একজোট হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে
এবং মিস্টার জোন্সকে খামারবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। ম্যানর ফার্মের নাম পাল্টে তারা রাখে অ্যানিমেল ফার্ম। বিজ্ঞতার দিক দিয়ে খামারের পশুদের মধ্যে স্নোবল সেরা। মূলত সেই নেতা বিবেচিত হয়। খামারটিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর কাজে স্নোবল নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। পশুদের পড়াশুনা শেখানোর ব্যবস্থা করে, খামার কীভাবে চলবে সেসব নীতিমালা ঠিক করে। ধীরে ধীরে অ্যানিমল ফার্ম হয়ে ওঠে পশুদের সুখের রাজ্য। কিন্তু সুখ কি আর চিরদিন থাকে? নেপোলিয়ন নামে আরেক শূকর স্নোবলকে খামার থেকে উচ্ছেদ করে নিজে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। খামারে শুরু হয় দুঃখের দিন। শুরু হয় পশুতে পশুতে বৈষম্য।
শূকররা পরিণত হয় সুবিধাবাধী শ্রেণীতে। নেপোলিয়ন হয়ে ওঠে এক স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর শাসকের নাম।
খামারে খাদ্য সংকট বলে সব পশুদের খাদ্যের রেশন কমিয়ে দেয়া হয় কিন্তু শূকররা ক্রমেই বিলাসিতাতে গা ভাসিয়ে দেয়। যে দুপেয়ে মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না বলে আইন ছিল সেই মানুষজাতির সঙ্গে নেপোলিয়ন ব্যবসা আরম্ভ করে। ডিম, দুধ বিক্রি করে তার বদলে শূকরদের জন্য কেনা হতে লাগল মদ। আরো দুঃখজনক ঘটনা হল অ্যানিমেল ফার্মে বক্সার নামে সবচে পরিশ্রমী এবং নিবেদিতপ্রাণ ঘোড়াটি
আহত হয়ে কাজে অক্ষম হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তির নামে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। খামারের পশুরা একসময় বুঝতে পারে নেপোলিয়ন ও মিস্টার জোন্সÑএ দুই চরিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং মিস্টার জোন্সের চেয়ে নেপোলিয়ন আরো খারাপ। এবার আসা যাক, উপন্যাসের চরিত্রগুলি নিয়ে। ওল্ড মেজর নামে বৃদ্ধ শূকরের চরিত্রটি এখানে কাল মার্ক্সের প্রতীক। যে একটি একটি ইউটোপিয়ান পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। স্নোবল হল ট্রটস্কির প্রতীক। আর নেপোলিয়নকে উপস্থাপন করা হয়েছে স্ট্যালিনের চরিত্র দিয়ে। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই উপন্যাসের মূল মেসেজ হল যেসব বিপ¯œবী বিপ¯œবের মাধ্যমে দেশে একতন্ত্রের শাসন কায়েম করে, সময়ের ব্যবধানে তারা নিজেরাই এক সময় স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। কারণ তাদের —গমতা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তারা ধীরে ধীরে স্বার্থপর হয়ে ওঠে এবং আত্মোন্নয়নই তখন হয়ে ওঠে তাদের মূল ল—গ্য। এইভাবেই তারা বিপ¯œবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ঠিক যেমনটি করেছে অ্যানিমেল ফার্মের নেপোলিয়ন চরিত্রটি। জর্জ ওরঅয়েলকে বলা হয় আয়রনির মাস্টার। তার সম¯ত্ম লেখাই শোষক, শাসক ও অন্যায়ের বির¤œদ্ধে। নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন, অসহায়ত্বের চিত্র ধরা পড়ে তার লেখায়।
বিষয়: বিবিধ
৩৫১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন