অসহিষ্ণু মৌলবাদীর অপ্রিয়-কথা
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১২ জুন, ২০১৩, ০৮:৩৩:০০ সকাল
ভালোবাসাই সব নয়,ভালোবাসা যদি আত্মস্বার্থের পোষকতা ও বাণিজ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেটা পরিষ্কার মোনাফেকি বা স্বার্থতাড়িত কপটতা।স্বাধীনতার বয়িাল্লশি বছর অতিক্রান্ত হতে চললো। সময়টা কম নয়, এর চেয়ে অনেক কম সময়ে অনেক দেশ আশাতীত উনড়বতি লাভ করেছে। অথচ আমরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই অবস্থান করছি। আর এ নিয়ে কারো মধ্যে কোনো উদ্বেগই নেই, বরং যা দৃশ্যমান বাস্তব তা খুবই হতাশ্যাব্যঞ্জক। সবাই নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, এই দীর্ঘ সময়ে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে যতো কথা হয়েছে, কাজের কাজ তার এক-সহস্রাংশও হয়েছে কিনা সন্দেহ। মিল-মহব্বতহীন কলহপ্রিয় পরিবারে যেমন সুখ-শান্তি ও উনড়বতি ধরা দেয় না, আশাও করা যায় না; আমাদের দেশ ও জাতির ললাটেও এই একই দুর্ভাগ্যের লাঞ্ছনা। ঝগড়াই থামছে না, সুখ ও সচ্ছলতা আসবে কোথা থেকে? অথচ এই আত্মবিনাশী ঝগড়ার অবসান হওয়া প্রয়োজন, অন্যথায় স্বাধীনতার অর্থ ও অস্তিত্ব দুটোই ক্রমে ক্রমে বিলীন হয়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষ যা-ই ভাবুক, অন্তত নেতা-নেত্রীর উচিত বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করা; এবং এটাও অনুধাবন করা উচিত যে, মসনদ ও মসনদে উপবেশন-লিপ্সা যদি স্বাধীনতার গরিমা ও দেশপ্রেমকে পরাভূত করে, তাহলে দেশ ও জাতির জীবনে স্বাধীনতার মতো একটি মহার্ঘ বস্তু প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য। স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা থাকে না, কিছু প্রেমহীন আদর্শহীন মানুষের ভোগ্যপণ্যে পরিণত হয়।বস্তুতই মনে রাখা আবশ্যক যে, স্বাধীনতা আলাহপােকর একটা অত্যন্ত বড় নেয়ামত। অথচ আলাহপাকের কথা ভুলে গিয়ে এই নেয়ামতকে আমরা কদর তো করছিই না, বরং পদে পদে শুধু অমর্যাদা করছি। এই রকমের না-শোকরি আলাহপাক বেশিদিন বরদাশত করেন না। আর এজন্যই অবস্থা আজ এমন কুৎসিত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, খুন রাহাজানি সন্ত্রাস অপহরণ চাঁদাবাজি ধর্ষণ অশীলতা উৎকোচ কালোবাজারী, এসব নিয়ে বাঙলাদেশ এখন দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থানকারী একটি জ্বলন্ত জাহানড়বাম। আসলে এরকমই হয়। মানুষের মধ্যে থেকে, বিশেষ করে নেতা-নেত্রীদের মধ্যে থেকে আখিরাতের ভয়, দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ বিলুপ্ত হয়ে যখন মসনদপ্রীতি ও ধনলিপ্সা একমাত্র মাকসুদ হয়ে দাঁড়ায়, তখন এই লোভী ও দায়িত্বহীন মানুষদের দ্বারা শাসিতপরিচালিত দেশ ও সমাজ কখনো শান্তির জনপদ হতে পারে না। এরকম দেশে ও সমাজে আলাহ সার্বক্ষণিক ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার লেবাস পরিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ পেশ করতে চাই। কত দলের কত নেতা-নেত্রীর মধ্যে কত মতবৈষম্য ও অনৈক্য বিদ্যমান; অবস্থা এমন যে, একদল কিছু বলতে না-বলতেই, ভালো-মন্দ যা-ই হোক, অন্য দল তার প্রতিবাদ করবেই। এমনকি কেই যদি বলে, সবার জন্য জীবানুমুক্ত নির্মল জলের ব্যবস্থা করা আবশ্যক,
কোনো-না কোনোভাবে তারও প্রতিবাদ হবে। অথচ পার্লামেন্টে যখন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী-মিনিস্টারদের জন্য নানামুখী আর্থিক ও বৈষয়িক সুবিধা-প্রদানের বিল উত্তাপিত হয়, একটি ক্ষীণকণ্ঠের প্রতিবাদী আওয়াজও কোথাও শোনা যায় না যে, দারিদ্র্যসীমার বহুনিমেড়ব অবস্থানকারী শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষের এই হতদরিদ্র দেশে দেশসেবকদের জন্য এটা গ্রহণযোগ্য নয়, এটা মানবতার সমূহ অপমান।সত্যই কী রোমাঞ্চকর এই ঐক্যবোধ! মদের লাইসেন্স এবং হান্টার-μাউন নিয়ে অনেক আলেম-উলামা প্রায় ‘অনাথ শিশুদের’ মতো পথে পথে যদিও প্রতিরোধের কথা বলেন, কিন্তু যথাস্থানে বিশেষ কোনোরূপ প্রতিবাদ উচ্চারিত হয় না। বেগম জিয়ার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এসব নিষিদ্ধ হয় বটে, কিন্তু আমাদের প্রীতিভাজন নেতা-নেত্রীদের মধ্যে এ নিয়ে উলেখযোগ্য কোনো পেরেশানি লক্ষ করা যায় না।এটা একটা দুর্ভাগ্য। আর এতদসঙ্গে এটাও দুর্ভাগ্য যে, মদ্যপান ওহান্টার-μাউনকে নিয়ে যারা সওদাগরি করতে চায়, তারা কেউ দরিদ্র নয়, তারা অভাবনীয় সম্মদের অধিকারী অথচ তারাই আরো এবং আরো অর্থের নেশায় দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য ও উন্মত্তপ্রায়। আর এই উন্মত্ততা এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে একটি সর্বগ্রাসী রূপ লাভ করছে। অথচ আলাহর
রাসূল (সাঃ) বলেছেন : যারা অর্থের দাসত্ব করে তারা অভিশপ্ত।কেউ কেউ কষ্ট পাবেন, কেউ কেউ μুদ্ধ ও হতে পারেন, কিন্তু না-বলে উপায় নেই, এই অভিশপ্ত ব্যক্তিরাই এখন আমাদের প্রিয় স্বদেশভূমির প্রকৃত চালক ও নিয়ন্ত্রক। অতএব আলাহ তাঁর সকল বরকতের দ্বার যদি এখানে রুদ্ধ করে দেন, সেটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, অনাহারক্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে তামাশা করবার জন্য স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি; অথচ এই তামাশাই আজ দেশ ও সমাজের দৃশ্যমান সবাকচিত্র। আর এই দুঃখেই আমাদের এক বন্ধু কবি রফিক আজাদ প্রায় তিরিশ বছর আগে তাঁর একটি কবিতায় বলেছিলেন, ‘ভাত-দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো’। বড় তীব্র, বড় মর্মন্তুদ এই অভিব্যক্তি! হযরত উমর ফারুক (রাঃ) বলেছেন, ‘শাসকগোষ্ঠী যদি অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ন হয়, তখন সাধারণ মানুষ ও পালা দিয়ে বিগড়ে যায়, তারাও চরিত্রহীনতার পথে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে।আর সর্বাপেক্ষা অসভ্য নেতা সেই, যার ভ্রান্ত নীতির কারণে অনাচার বিস্তার লাভ করে। স্বাধীনতার যে-বয়িাল্লশি বছরের ইতিহাস, সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন,সেই ইতিহাস, কিছু ব্যতিμম বাদে, আদৌ সুখকর নয়; প্রায় পুরোটাই অযোগ্য অসভ্য নেতৃত্বের ইতিহাস!কোন সন্দেহ নেই, সকল নেতানেত্রীসহ আপামর জনগণ, আমরা সবাই আমাদের দেশকে ভালোবাসি, দেশের স্বাধীনতাকে ভালোবাসি। কিন্তু ভালোবাসাই সব নয়,ভালোবাসা যদি আত্মস্বার্থের পোষকতা ও বাণিজ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেটা পরিষ্কার মোনাফেকি বা স্বার্থতাড়িত কপটতা। আমাদের অন্তত এটুকু বোঝা উচিত, দেশের উনড়বতি মানে কিছু হাইরাইজিং বিল্ডিং নয়, রিক্সা-চলাচল নিষিদ্ধ কিছু ভিআইপি গমনাগমনের সড়ক নয়, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে ধার করা অর্থ দিয়ে কিছু মানুষের ঘৃত-সেবনের ব্যবস্থা করা নয়, জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে দেশে-বিদেশে নির্লজ্জ অট্টালিকা নির্মাণ নয়- এ-সবই এক একটা নির্মম তামাশা। আমাদের দেশপ্রেমকে যদি প্রকৃত অর্থবহ করে তুলতে হয়, তাহলে দেশ-বিদেশের কুলকার্ণি-ঋতুপর্ণাদের নিয়ে নৃত্যগীতের আসর সাজানো নয়, কতিপয় কুহকতাড়িত ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীর মনরক্ষা করা নয়, আমাদের উচিত হবে দেশের পঁচাশি শতাংশ তাওহিদী মানুষের আকাক্সক্ষা ও হৃৎস্পন্দনকে অনুভব করা; অর্ধাহারে অনাহারে ক্ষুধিত জঠরে যারা দিবারাত্রি কাজ করে যায়, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়নো, তাদের বিপনড়ব বিষনড়ব জীবনমানের উনড়বয়নকল্পে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি উদ্যোগ গ্রহণ করা। কিন্তু এসব কোনোকিছুই কি সম্ভব, যদি আমাদের মধ্যে আখেরাতের ভয় ও নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো না যায়! বাংলাদেশ নামক এই হাড্ডিসার কামধেনুটি আর পারচ্ছে না। দুধ নয়, দেশের দশ শতাংশ লোভী মানুষের নিষ্ঠুর দোহনে এই হতভাগা দুধেল গাভীর বাঁট থেকে এখন শুধু রক্তক্ষরিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে অন্যকিছু নয়, নির্দয় স্বাথান্ধ মানুষের অতিরিক্ত
লোভ থেকে আমাদের এই বাংলাদেশরূপী অবলা কামধেনুটিকে বাঁচানো এবং তার এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করার নামই দেশপ্রেম। (অসহিষ্ণু মৌলবাদীর অপ্রিয়-কথা,
পৃষ্ঠা, ১৪-২০) ‘সেই সৌখিন দেশপ্রেমিকরা যারা যুদ্ধ করার জন্য নয়, বরং প্রাণ বাঁচানোর জন্যই ভারতে গিয়েছিল তারা আজ সমাজের উচ্চাস্থানে অধিষ্ঠিত। মানুষকে প্রতারণা করার ক্ষমতা ওদের অনেক। অভিনয় নিখুঁত। ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির জন্যে জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে ওরা কুণ্ঠাবোধ করে না। বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, মহারথীরা আজো কোন এক অজ্ঞাত কারণে অদৃশ্য প্রভুদের অঙ্গুলী নির্দেশে চলতে বাধ্য। এই ঘটনাগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। জাতির জীবনে বিপর্যয়ের
মূলে অনেকাংশে আছে এই লোভী মানুষগুলোর অপরিণামদর্শী কার্যকলাপ। যে পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমরা করছি। জানিনা আর কত দিন করতে হবে।’
বিষয়: বিবিধ
১৯২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন