আল্লাহ এমন নগণ্য অবস্থা থেকে সৃষ্টির সূচনা করে তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তিনি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করতে অক্ষম হবেন কেন?
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ১৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৪০:১৮ সকাল
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ هَلْ أَتَىٰ عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذْكُورًا﴾
১) মানুষের ওপরে কি অন্তহীন মহাকালের এমন একটি সময়ও অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কোন জিনিসই ছিল না? ১
১ . আয়াতের প্রথমাংশ হলো ----------। এখানে অধিকাংশ মুফাস্সির ও অনুবাদক -----(হাল) শব্দটিকে -----(ক্বাদ) শব্দের অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং এর অর্থ করেছেন নিঃসন্দেহে মানুষের ওপরে এরূপ একটি সময় এসেছিল। তবে ------(হাল) আরবী ভাষায় মূলতঃ কির অর্থেই ব্যবহৃত হয়। সর্বাবস্থায় এর দ্বারা প্রশ্ন করা বুঝায় না। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাহ্যিক ভাবে প্রশ্নবোধক এ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে বলা হয়ে থাকে। যেমন,কখনো আমরা জানতে চাই যে,অমুক ঘটনা ঘটেছিল না ঘটেনি আর সে জন্য কাউকে জিজ্ঞেস করি, এ ধরনের ঘটনা কি ঘটেছিল৷ কোন কোন সময় আবার প্রশ্ন করা আমাদের উদ্দেশ্য হয় না, বরং উদ্দেশ্য হয় কোন বিষয় অস্বীকার করা। তখন যে বাচনভংগী ব্যবহার করে আমরা তা অস্বীকার করি তাহলো অন্য কেউও কি এ কাজ করতে পারে৷ কোন সময় আমরা কারো থেকে কোন বিষয়ে স্বীকৃতি পেতে চাই এবং এ উদ্দেশ্যে তাকে জিজ্ঞেস করি , আমি কি তোমার টাকা পরিশোধ করেছি৷ কোন সময় আবার শুধু স্বীকৃতি আদায় করাই আমাদের মুল উদ্দেশ্য হয় না। বরং তখন আমরা প্রশ্ন করি শ্রোতার মন মগজকে আরো একটি বিষয় ভাবতে বাধ্য করার জন্য যা তার স্বীকৃতির অনিবার্য ফল স্বরূপ দেখা যায়। যেমন আমরা কাউকে জিজ্ঞেস করিঃ আমি কি তোমার সাথে কোন খারাপ আচরণ করেছি৷ এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য শুধু এতটুকুই নয় যে, সে স্বীকার করুক, আপনি তার সাথে সত্যই কোন খারাপ আচরণ করেননি। বরং এর উদ্দেশ্য তাকে একথাও চিন্তা করতে বাধ্য করা যে, যে ব্যক্তি আমার সাথে কোন খারাপ আচরণ করেনি তার সাথে আমার খারাপ আচরণ করা কতটুকু ন্যায় সংগত৷ আলোচ্য আয়াতের প্রশ্নবোধক অংশটুকু প্রকৃতপক্ষে এ শেষ অর্থেই বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য মানুষকে শুধু এতটুকু স্বীকার করানো নয় যে,তার ওপরে এমন একটি সময় সত্যিই অতিবাহিত হয়েছে। বরং এর দ্বারা তাকে এ বিষয়ও চিন্তা করতে বাধ্য করা উদ্দেশ্য যে, যে আল্লাহ এমন নগণ্য অবস্থা থেকে সৃষ্টির সূচনা করে তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তিনি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করতে অক্ষম হবেন কেন৷
আয়াতের দ্বিতীয় অংশ হলো------------।(দাহরি )অর্থ -অন্তহীন মহাকাল যার আদি-অন্ত কিছুই মানুষের জানা নেই। আর----- (হিনা) অর্থ অন্তহীন এ মহাকালের বিশেষ একটি সময়, মহাকাল প্রবাহের কোন এক পর্যায়ে যার আগমন ঘটেছিল। বক্তব্যের সারমর্ম হলো, এ অন্তহীন মহাকালের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় তো এমন অতিবাহিত হয়েছে যখন মানব প্রজাতির আদৌ কোন অস্তিত্ব ছিল না। তারপর এ মহাকাল প্রবাহে এমন একটি সময় আসলো যখন মানুষ নামের একটি প্রজাতির সূচনা করা হলো। এ সময়-কাল প্রত্যেক মানুষের জন্য এমন একটি সময় এসেছে যখন তাকে শূন্য মাত্রা বা অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বদানের সূচনা করা হয়েছে।
আয়াতের তৃতীয় অংশ হলো ----------অর্থাৎ তখন সে কোন উল্লেখযোগ্য বস্তু ছিল না। তার একটি অংশ বাপের শুক্রের মধ্যে অণুবীক্ষণিক জীবাণু আকারে এবং আরেকটি অংশ মায়ের বীর্যে একটি অণুবীক্ষণিক ডিম্বের আকারে বর্তমান ছিল। দীর্ঘকাল পর্যন্ত মানুষ এ বিষয়ও জানতো না যে, একটি শুক্রকীট এবং একটি ডিম্বকোষের মিলনের ফলেই সে অস্তিত্ব লাভ করে। বর্তমানে অত্যন্ত শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সে এ দুটিকে দেখতে সক্ষম হয়েছে বটে, কিন্তু এখনো কেউ বলতে পারে যে, পিতার এ শুক্রকীটে এবং মায়ের ডিম্বকোষে কত সংখ্যক মানুষের অস্তিত্ব থাকে। গর্ভসঞ্চারকালে এ দুটি জিনিসের মিলনে যে প্রাথমিক কোষ(Cell) সৃষ্টি হয় তা পরিমাণহীন এমন একটি পরমাণূ যা কেবল অত্যন্ত শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেই দেখা যেতে পারে। আর তা দেখার পরেও আপাত দৃষ্টিতে কেউ একথা বলতে পারে না যে, এভাবে কোন মানুষ জন্মলাভ করছে কিংবা এ নগণ্য সূচনা বিন্দু থেকে বৃদ্ধি ও বিকাশ লাভ করে কোন মানুষ যদি সৃষ্টি হয়েও তাহলে সে কেমন দৈহিক উচ্চতা ও কাঠামো ,কেমন আকার -আকৃতি এবং কেমন যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বধারী মানুষ হবে তাও বলতে পারে না। সে সময় কোন উল্লেখযোগ্য বস্তুই ছিল না, এ বাণীর তাৎপর্য এটাই । যদিও মানুষ হিসেবে সে সময় তার অস্তিত্বের সূচনা হয়ে গিয়েছিল।
﴿إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا﴾
২) আমি মানুষকে এক সংমিশ্রণ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি ২ যাতে তার পরীক্ষা নিতে পারি৷ ৩ এর উদ্দেশ্যে আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী করেছি৷ ৪
২ . এক সংমিশ্রিত বীর্য দ্বারা অর্থ হলো, মানুষের সৃষ্টি পুরুষ ও নারীর দুটি আলাদা বীর্য দ্বারা হয়নি। বরং দুটি বীর্য সংমিশ্রিত হয়ে যখন একটি হয়ে গিয়েছে তখন সে সংমিশ্রিত বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে।
৩ . এটাই হলো দুনিয়ায় মানুষের এবং মানুষের জন্য দুনিয়ার প্রকৃত অবস্থান ও মর্যাদা। মানুষ নিছক গাছপালা বা জীব-জন্তু মত নয় যে, তার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য এখানেই পূরণ হয়ে যাবে এবং প্রকৃতির নিয়মানুসারে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার নিজের অংশের করণীয় কাজ সম্পাদন করার পর এখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাছাড়া এ দুনিয়া তার জন্য আযাব বা শাস্তির স্থান নয় যেমনটা খৃষ্টান পাদ্রীরা মনে করে, প্রতিদানের ক্ষেত্রেও নয় যেমনটা জন্মন্তরবাদীরা মনে করে ,চারণ ক্ষেত্রে বা বিনোদন কেন্দ্র নয় যেমনটা বস্তুবাদীরা মনে করে আবার দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম ক্ষেত্রেও নয় যেমনটা ডারউইন ও মার্কসের অনুসারীরা মনে করে থাকে। বরং দুনিয়া মূলত তার জন্য একটা পরীক্ষাগার। যে জিনিসেকে সে বয়স বা আয়ুস্কাল বলে মনে করে আসলে তা পরীক্ষার সময় যা তাকে এ দুনিয়ায় দেয়া হয়েছে। দুনিয়ায় যে ক্ষমতা ও যোগ্যতা তাকে দেয়া হয়েছে,যেসব বস্তুকে কাজে লাগানো সুযোগ তাকে দেয়া হয়েছে,যে মর্যাদা নিয়ে বা অবস্থানে থেকে সে এখানে কাজ করছে এবং তার ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তার সবাই মূল অসংখ্য পরীক্ষা পত্র। জীবনের সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরীক্ষা চলবে। এ পরীক্ষার ফলাফল দুনিয়ায় প্রকাশ পাবে না। বরং আখেরাতের তার সমস্ত পরীক্ষা পত্র পরীক্ষা ও যাঁচাই বাছাই করে ফায়সালা দেয়া হবে। সে সফল না বিফল।তার সফলতা ও বিফলতা সবটাই নির্ভর করবে এ বিষয়ের ওপর যে, সে তার নিজের সম্পর্কে কি ধারণা নিয়ে এখানে কাজ করছে এবং তাকে দেয়া পরীক্ষঅর পত্রসমূহে সে কিভাবে জবাব লিখেছে। নিজের সম্পর্কে সে যদি মনে করে থাকে যে,তার কোন আল্লাহ নেই অথবা নিজেকে সে বহু সংখ্যক ইলাহর বান্দা মনে করে থাকে , এবং পরীক্ষার সবগুলো পত্রে এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জবাব লিখে থাকে যে, আখেরাতে তাকে তার স্রষ্টার সামনে কোন জবাবদিহি করতে হবে না তাহলে তার জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড ভুল হয়ে গিয়েছে ।আর যদি সে নিজেকে একমাত্র আল্লাহর বান্দা মনে করে আল্লাহর মনোনীত পথ ও পন্থা অনুসারে কাজ করে থাকে এবং আখেরাতে জবাবদিহির চেতনা বিবেচনায় রেখে তা করে থাকে তাহলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেলো। (এ বিষয়টি কুরআন মজীদে এত অধিক জায়গায় ও এত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এখানে স্থানগুলোর নাম উল্লেখ করা বেশ কঠিন। যারা এ বিষয়টি আরো ভালভাবে বুঝতে চান তারা তাফহীমুল কুরআনের প্রত্যেক খণ্ডের শেষে সংযুক্ত বিষয়সূচীর মধ্যে পরীক্ষা শব্দটি বের করে সেসব স্থান দেখুন যেখানে কুরআন মজীদে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কুরআন ছাড়া পৃথিবীতে এমন আর কোন গ্রন্থ নেই যার মধ্যে এ সত্যটি এত বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪ . আসলে বলা হয়েছে আমি তাকে -----ও --------- বানিয়েছি। বিবেকবুদ্ধির অধিকারী করেছি বললে এর সঠিক অর্থ প্রকাশ পায়। কিন্তু অনুবাদে আমি ----শব্দের অর্থ"শ্রবণশক্তির অধিকারী" এবং-------শব্দের অর্থ "দৃষ্টিশক্তিতর অধিকারী"করেছি। যদিও এটিই আরবী ভাষায় এ দুটি শব্দের শাব্দিক অনুবাদ কিন্তু আরবী ভাষায় অভিজ্ঞ প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন যে,জন্তু-জানোয়ারের জন্য কখনো-------ও -----শব্দ ব্যবহৃত হয় না। অথচ জন্তু-জানোয়ারও দেখতে এবং শুনতে পায়।অতএব এখানে শোনা এবং দেখার অর্থ শোনার ও দেখার সে শক্তি নয় যা জন্তু-জানোয়ারকেও দেয়া হয়েছে।এখানে এর অর্থ হলো, শোনা ও দেখার সেসব উপায়-উপকরণ যার সাহায্যে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। তাছাড়া শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি যেহেতু মানুষের জ্ঞানার্জনের উপায়-উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তাই সংক্ষেপে এগুলোরই উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ যেসব ইন্দ্রিয়ের সাহায্য জ্ঞান অর্জন করে থাকে আসলে এসব ইন্দ্রিয়ের সবগুলোকেই এখানে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া মানুষকে যেসব ইন্দ্রিয় ও অনুভূতি শক্তি দেয়া হয়েছে তা ধরন ও প্রকৃতিগত দিক দিয়ে পশুদের ইন্দ্রিয় ও অনুভূতি শক্তি থেকে সমপূর্ণ ভিন্ন। কারণ মানুষের প্রতিটি ইন্দ্রিয়ের পেছনে একটি চিন্তাশীল মন-মগজ বর্তমান যা ইন্দ্রিয়সমূহের মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞান ও তথ্যসমূহকে একত্রিত ও বিন্যস্ত করে তা থেকে ফলাফল বের করে ,মতামত স্থির করে এবং এমন কিছু সিদ্ধান্ত করে যার ওপরে তার কার্যকলাপ ও আচরণের ভিত্তি স্থাপিত হয়। তাই মানুষকে সৃষ্টি করে আমি তাকে পরীক্ষা করেত চাচ্ছিলাম একথাটি বলার পর আমি এ উদ্দেশ্যেই তাকে ---ও --------- অর্থাৎ "শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী করেছি" কথাটি বলার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আল্লাহ তা"আলা তাকে জ্ঞান ও বিবেক -বুদ্ধির শক্তি দিয়েছেন যাতে সে পরীক্ষা দেয়ার উপুযুক্ত হতে পারে। বাক্যটির অর্থ যদি এটা নয় হয় এবং ---------ও --------বানানোর অর্থ যদি শুধু শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী বানানো হয় তাহলে অন্ধ ও বধির ব্যক্তিরা এ পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ে যায় অথচ জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি থেকে যদি কেউ পুরোপুরি বঞ্চিত না হয় তাহলে তার এ পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
﴿إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا﴾
৩) আমি তাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি৷ এরপর হয় সে শোকরগোজার হবে নয়তো হবে কুফরের পথ অনুসরণকারী৷ ৫
৫ . অর্থাৎ আমি তাকে শুধু জ্ঞান ও বিবেক -বুদ্ধি দিয়েই ছেড়ে দেইনি। বরং এগুলো দেয়ার সাথে সাথে তাকে পথও দেখিয়েছে যাতে সে জানতে পারে শোকরিয়ার পথ কোনটি এবং কুফরীর পথ কোনটি। এরপর যে পথই সে অবলম্বন করুক না কেন তার জন্য সে নিজেরই দায়ী। এ বিষয়টিই সূরা বালাদে এভাবে বর্ননা করা হয়েছে --------"আমি তাকে দু"টি পথ (অর্থাৎ ভাল ও মন্দ পথ) স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছি। " সূরা শামসে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবেঃ -------------"শপথ (মানুষের) প্রবৃত্তির আর সে সত্তার যিনি তাকে (সব রকম বাহ্যিক) ও আভ্যান্তরীণ শক্তি দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। আর পাপাচার ও তাকওয়া-পরহেজগারীর অনুভূতি দু"টোই তার ওপর ইলহাম করেছেন।" এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সামনে রেখে বিচার করলে এবং পৃথিবীতে মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা"আলা যেসব ব্যবস্থার কথা কুরআন মজিদে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন তাও সামনে রাখলে বুঝা যায় যে, এ আয়াতে পথ দেখানোর যে কথা বলা হয়েছে তার দ্বারা পথপ্রদর্শনের কোন একটি মাত্র পন্থা ও উপায় বুঝানো হয়নি। বরং এর দ্বারা অনেক পন্থা ও উপায়ের কথা বলা হয়েছে যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। যেমনঃ
একঃ প্রত্যেক মানুষকে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির যোগ্যতা দেয়ার সাথে সাথে তাকে একটি নৈতিক বোধ ও অনুভূতি দেয়া হয়েছে যার সাহায্যে সে প্রকৃতিগতভাবেই ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করে, কিছু কাজ-কর্ম ও বৈশিষ্টকে খারাপ বলে জানে যদিও সে নিজেই তাতে লিপ্ত। আবার কিছু কাজ-কর্ম ও গুণাবলীকে ভাল বলে মনে করে যদিও সে নিজে তা থেকে দূরে অবস্থান করে। এমন কি যেসব লোক তাদের স্বার্থ ও লোভ -লালসার কারণে এমন সব দর্শন রচনা করেছে যার ভিত্তিতে তারা অনেক খারাপ ও পাপকার্যকেও নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছে তাদের অবস্থাও এমন যে, সে একই মন্দ কাজ করার অভিযোগ যদি কেউ তাদের ওপর আরোপ করে, তাহলে তারা প্রতিবাদে চিৎকার করে উঠবে এবং তখনই জানা যায় যে, নিজেদের মিথ্যা ও অলীক দর্শন সত্ত্বেও বাস্তবে তারা নিজেরাও সেসব কাজকে খারাপই মনে করে থাকে। অনুরূপ ভাল কাজ ও গুণাবলীকে কেউ মূর্খতা, নির্বুদ্ধিতা এবং সেকেলে ঠাওরিয়ে রাখলেও কোন মানুষের কাছ থেকে তারা যখন নিজেরাই নিজেদের সদাচরণের সূফল ও উপকার লাভ করে তখন তারা সেটিকে মূল্যবান মনে করতে বাধ্য হয়ে যায়।
দুইঃ প্রত্যেক মানুসের মধ্যেই আল্লাহ তা"আলা বিবেক (তিরষ্কারকারী নফস) বলে একটি জিনিস রেখে দিয়েছেন। যখন সে কোন মন্দ কাজ করতে উদ্যত হয় অথবা করতে থাকে অথবা করে ফেলে তখন এ বিবেকই তাকে দংশন করে।যতই হাত বুলিয়ে বা আদর -সোহাগ করে দিয়ে মানুষ এ বিবেককে ঘুম পাড়িয়ে দিক, তাকে অনুভূতিহীন বানানোর যত চেষ্টাই সে করুক সে তাকে একদম নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম নয়। হঠকারী হয়ে দুনিয়ায় সে নিজেকে চরম বিবেকহীন প্রমাণ করতে পারে ,সে সুন্দর সুন্দর অজুহাত খাড়া করতে দুনিয়াকে ধোঁকা দেয়ার সব রকম প্রচেষ্টা চালাতে পারে, সে নিজের বিবেককে প্রতারিত করার জন্য নিজের কর্মকাণ্ডের সপক্ষে অসংখ্য ওজর পেশ করতে পারে; কিন্তু এসব সত্ত্বেও আল্লাহ তার স্বভাব-প্রকৃতিতে যে হিসাব পরীক্ষককে নিয়োজিত রেখেছেন সে এত জীবন্ত ও সজাগ যে,সে নিজে প্রকৃতপক্ষে কি তা কোন অসৎ মানুষের কাছেও গোপন থাকে না। সূরা আল কিয়ামাহতে একথাটিই বলা হয়েছে যে,"মানুষ যত ওজরই পেশ করুক না কেন সে নিজেকে নিজে খুব ভাল করেই জানে"।(আয়াত ১৫)।
তিনঃ মানুষের নিজের সত্তায় এবং তার চারপাশে যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত গোটা বিশ্ব-জাহানের সর্বত্র এমন অসংখ্য নিদর্শনাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে যে, এমনসব জিনিস কোন আল্লাহ ছাড়া হতে পারে না কিংবা বহু সংখ্যক খোদাএ বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টিকর্তা বা পরিচালক হতে পারে না। বিশ্ব চরাচরের সর্বত্র এবং মানুষের আপন সত্তার অভ্যন্তরে বিদ্যমান এ নিদর্শনাবলীই কিয়ামত ও আখেরাতের সুষ্পষ্ট প্রমাণ পেশ করেছে। মানুষ যদি এসব থেকে চোখ বন্ধ করে থাকে অথবা বুদ্ধি -বিবেক কাজে লাগিয়ে সব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা না করে অথবা তা যেসব সত্যের প্রতি ইংগিত করছে তা মেনে নিতে টালবাহানা ও গড়িমসি করে তাহলে তা তার নিজেরই অপরাধ। আল্লাহ তা"আলা নিজের পক্ষ থেকে তার সামনে সত্যের সন্ধান দাতা নিদর্শনাদি পেশ করতে আদৌ কোন অস্পূর্ণতা রাখেনি।
চারঃ মানুষের নিজের জীবনে ,তার সমসাময়িক পৃথিবীতে এবং তার পূর্বের অতীত ইতিহাসের অভিজ্ঞতায়, এমন অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং হয়ে থাকে যা প্রমাণ করে যে, একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর শাসন-কর্তৃত্ব তার ওপর এবং সমগ্র বিশ্ব-জাহানের ওপর কর্তৃত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন যাঁর সামনে সে নিতান্তই অসহায়। যাঁর ইচ্ছা সবকিছুর ওপর বিজয়ী এবং যাঁর সাহায্যের সে মুখাপেক্ষী। এসব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ বাহ্যিক ক্ষেত্রসমূহেই শুধু এ সত্যের প্রমাণ পেশ করে না। বরং মানুষের নিজের প্রকৃতির মধ্যেও সে সর্বোচ্চ শাসন-কর্তৃত্বের প্রমাণ বিদ্যমান যার কারণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে খারাপ সময়ে নাস্তিকরাও আল্লাহর সামনে প্রার্থনার হাত প্রসারিত করে এবং কট্টর মুশরিকরাও সব মিথ্যা খোদাকে পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহকে ডাকতে শুরু করে।
পাঁচঃ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও প্রকৃতিগত জ্ঞানের অকাট্য ও চূড়ান্ত রায় হলো অপরাধের শাস্তি এবং উত্তম কার্যাবলীর প্রতিদান অবশ্যই পাওয়া উচিত। এ উদ্দেশ্যে দুনিয়ার প্রত্যেক সমাজে কোন না কোন রূপে বিচার -ব্যবস্থা কায়েম করা হয় এবং যেসব কাজ-কর্ম প্রশংসনীয় বলে মনে করা হয় তার জন্য পুরষ্কার ও প্রতিদান দেয়ারও কোন না কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, নৈতিকতা এবং প্রতিদান বা ক্ষতিপূরণ আইনের মধ্যে এমন একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান যা অস্বীকার করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। একথা যদি স্বীকার করা হয় যে, এ পৃথিবীতে এমন অসংখ্য অপরাধ আছে যার যথাযোগ্য শাস্তি তো দূরের কথা যার আদৌ কোন শাস্তি দেয়া যায় না। এবং এমন অসংখ্য সেবামূলক ও কল্যাণমূলক কাজ আছে যার যথাযোগ্য প্রতিদান তো দূরের কথা কাজ সম্পাদনকারী আদৌ কোন প্রতিদান লাভ করতে পারে না। তাহলে আখেরাতকে মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তবে কোন নির্বোধ যদি মনে করে অথবা কোন হঠকারী ব্যক্তি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকে যে, ন্যায় ও ইনসাফের ধারণা পোষণকারী মানুষ এমন এক পৃথিবীতে জন্মলাভ করে ফেলেছে যেখানে ন্যায় ও ইনসাফের ধারণা একেবারেই অনুপস্থিত তবে সেটা আলাদা কথা, এরপর অবশ্য একটি প্রশ্নের জওয়াব দেয়া তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে পড়ে। তাহলো,এমন এক বিশ্বে জন্মলাভকারী মানুষের মধ্যে ইনসাফের এ ধারণা এলো কোথা থেকে৷
ছয়ঃ এসব উপায়-উপকরণের সাহায্যে মানুষকে হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে নবী পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। এসব কিতাব পরিস্কার ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে ,শোকরের পথ কোনটি এবং কুফরের পথ কোনটি এবং এ দুটি পথে চলার পরিণামই বা কি৷ নবী -রসূল এবং তাদের আনীত কিতাবসমূহের শিক্ষা জানা-অজানা, দৃশ্য-অদৃশ্য অসংখ্য উপায় ও পন্থায় এত ব্যাপকভাবে সমগ্র বিশ্ব ছড়িয়ে পড়েছে যে, কোন জনপদই আল্লাহ ও আখেরাতের ধারণা, সৎ ও অসৎ কাজের পার্থক্য বোধ এবং তাঁদের পেশকৃত নৈতিক নীতিমালা ও আইন-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ নয়, নবী -রসূলের আনীত কিতাবসমূহের শিক্ষা থেকেই তারা এ জ্ঞান লাভ করেছে তা তাদের জানা থাক বা না থাক ।বর্তমানে যেসব লোক নবী -রসূলগণ এবং আসমানী কিতাবসমূহকে অস্বীকার করে অথবা তাদের সম্পর্কে কোন খবরই রাখে না তারাও এমন অনেক জিনিস অনুসরণ করে থাকে যা মূলত ঐ সব শিক্ষা থেকে উৎসারিত ও উৎপন্ন হয়ে তাদের কাছে পৌছেছে। অথচ মূল উৎস কি সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন