অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলো ‘ব্লগার’ শব্দের অর্থ জানবে না এটাই স্বাভাবিক।

লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:২৮:০৫ সকাল





মাদ্রাসার ছাত্ররা যাই হোক না কেন, এদেশের কোটি কোটি মানুষ যে তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজটুকু পরতে পারে, এতেই কম কি। এদের বেচে থাকার জন্য সেনাবাহিনী হত্যা করতে হয় না, শেয়ার বাজারে দিনে দুপুরে ডাকাতি করতে হয় না। এদের কখনও সোনালী ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা চুরি করার প্রয়োজন পরে না, প্রয়োজন হয় না ডেসটিনির নামে মানুষকে ঠকাতে। এরা শাহবাগে বসে ফ্রী বিরিয়ানি খেতে অভ্যস্ত না, শিবির ধর জবাই কর, এমন উগ্রবাদি স্লোগান এরা দিতে পারে না। অশ্লীলতা আর অসভ্যতা এসব আনস্মার্ট ছাত্রদের দিয়ে হয় না। ব্লগ আর ফেসবুক এরা বোঝেনা। এরা শুধু বোঝে আল্লাহ আর তার রাসূলের সম্মান। আমাদের মত শিক্ষিত আর স্মার্টদের দূর্নীতির মহোৎসব এদের তথাকথিত সহিংসতার নিচে চাপা পড়ে যাই। এই জঙ্গিদের নাশকতা নাকি মা-বাবা হারানো মেঘের কান্না কেউ হার মানায়। বিশ্বজিতের করুণ আর্ত চিৎকার কখনই আমাদের কানে পৌছে না। প্রতিদিন ধর্ষিত হওয়া নারীর করুণ আহাজারির চেয়ে এই জঙ্গীদের পাঞ্জাবি-টুপি নাকি বেশি ভয়ংকর?

কিন্তু কখনও কি চিন্তা করার সুযোগ হয়েছে এই মাদ্রাসার ছাত্রগুলোর দিন কিভাবে কাটে? চিন্তা না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক তাই না? এদের কপালে কখনও ভাল কোচিং বা হাউজ টিউটর জোটে না। ভাল খাবার এরা মাসে একদিন চোখেও দেখেনা। ব্রান্ডের গাড়ি আর ল্যাপটপতো দূরে থাক। হ্যা, বলতে দ্বিধা নেই, এরা চলে মানুষের দানের টাকাই, চলে বছর শেষে মানুষের যাকাতের টাকাই। কুরবানির ঈদ আসলেই এরা মানুষের দ্বারেদ্বারে যাই এক টুকরো চামড়ার আশাই। মসজিদে মসজিদে মিলাদ পড়িয়ে আর ওয়াজ মাহফিল করেই এদেরজীবন চলে। এলাকায় কেউ মারা গেলেই এদের কদর বেড়ে যাই, ডেকে নিয়ে সারা দিন কোরআন খতম পড়িয়ে নেই, বিণিময়ে জোটে একবেলার খাবার। এভাবেই চলে এদের সাদামাটা জীবন। যারা কোনমতে খেয়ে-পরে বেচে থাকে, তাদের জীবনে কি ব্লগ আর ফেসবুক শোভা পাই?

তবে এদের জীবন থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। সুন্দর নিয়মতান্ত্রীক জীবনের এক অনন্য উদারণ এই ছাত্রগুলো। ফজরের আজানের সাথে সাথে এদের জীবন শুরু হয়, এরা ইমরান আর এদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের মত দুপুর গড়িয়ে বিকাল পর্যন্ত ঘুমাতে অভ্যস্ত না। ফজরের নামাজ পড়েই শুরু হয় এদের পড়াশোনা। ভোরবেলা কোরআনের পবিত্র ধ্বণি যেন বাতাসে কেপে কেপে দূরে কোথায় হারিয়ে যাই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ইমরানের সাঙ্গ-পাঙ্গরা কস্মিম কালেও সকালে বই পড়ার সুযোগ পাই না। একটু খোজ নিলেই দেখবেন এই ছাত্রগুলোর কোন কাজই রুটিনের বাইরে হয় না। সঠিক সময়ে খাওয়া, গোসল, নামাজ থেকে শুরু করে সবকিছুই এদের নিয়মের অধীনে। প্রতিদিন ডাল-ভাত খেয়ে বেচে থাকে, কিন্তু কোন দিন মুখ ফুটে প্রতিবাদ করে না। শুধু রাসূল (সাঃ) কে কেউ গালি দিলে এদের শরীরের প্রতিটি রক্ত বিন্দুতে প্রতিশোধের স্রোত বইয়ে যাই। কারণ এরাতো সব কিছুর চাইতে আল্লাহ আর তার রাসূলকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।

তবুও আমরা কারণে অকারণে এদেরকে গালি দিয়ে এক রকম তৃপ্তি অনুভব করি। আজ পর্যন্ত সরকার এদের শিক্ষার কোন মূল্য দিতে পারল না। চরম সফল শিক্ষামন্ত্রীকে এদের নিয়ে কোন ভাল কিছু বলতেশোনা গেল না। কিছুদিন পূর্বেও এদের নিয়ে কোন আলোচনা ছিল না। যেই নাকি এরা আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে তখনই এরা হয়ে গেল ধর্মান্ধ আর জঙ্গী। ইতিহাসকে ব্যাবচ্ছেদ করে এরা আবিস্কার করল এদের নেতা আল্লামা শফি ছিলেন আল-বদরের নেতা। এরা নাকি নারী বিদ্বেষী। এরা সেকেলে। এদের এই মিথ্যাচার দেখে আমরা অবাক হয়নি। কারণ ইতিহাস বলে, এই মিথ্যাচারই এদের এতদূর টেনে এনেছে। শাহরিয়ার কবিরের মত স্বত্সঃফূর্তভাবে মিথ্যা বলতে এরা অত্যন্ত বাকপটু।

গত ৪ এপ্রিল প্রথম আলো’তে ‘হেফাজতের কর্মীদের কাছে বার্তা দিলেন ইমরান’ শিরোনামে একটা লেখা ছাপা হয়। স্বভাবতই খুব আগ্রহ নিয়ে লেখাটা পড়লাম। পড়ে বুঝলাম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি(!) ইমরান এইচ সরকার খুব আগ্রহ নিয়েই হেফাজত কর্মীদের কাছে ব্লগার শব্দের অর্থ জানতে চেয়েছেন। মাদ্রাসায় পড়া অজপাড়াগায়ের এই অখ্যাত এবং অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলো ‘ব্লগার’ শব্দের অর্থ জানবে না এটাই স্বাভাবিক। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে প্রথম আলো সাধারণ মানুষের কাছে হেফাজতকে যে হাসির পাত্র করার এক নোংরা প্রয়াস চালিয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।

বিষয়টা অনেকটা এরকম, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস যদি রাস্তার এক টোকাইকে প্রশ্ন করে, উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেমটা তার কেমন লেগেছে, তাহলে বিল গেটস সম্পর্কে যেমন ধারণা হবে ইমরান সম্পর্কেও তেমন ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক। তবে আমি বাশের তৈরী বেড়ার মাঝে বড় হওয়া এই মানুষগুলোকে রাস্তার টোকাই এর সাথে তুলনা করতে চাই না। এরা তার চাইতেও অনেক বড় কিছু। এই দরিদ্র অসহায় আদম সন্তানেরা ইমরান এইচ সরকার মত পাচ তারকা হোটেলে রাত যাপনের সুযোগ পাই না, পাই না কখনও লাল পানির স্বাদ। এদের নিরাপত্তার জন্যে কখনও গানম্যানের প্রয়োজনও হয় না।

যারা কথাই কথাই মাদ্রাসার ছাত্রদের উগ্রবাদ, জংগীবাদ আর ধর্মান্ধ বলে গালি দেন তাদেরকে বলছি, আপনি কল্পনা করতে পারবেন না, এই মানুষগুলোকে জীবনে কতটা কষ্ট করে শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এই মাদ্রাসাগুলোই এদেশের লক্ষ লক্ষ অসহায় শিশুকে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এই গরীব, অসহায় আর মা-বাবাহীন এতিম শিশুগুলোর হাতে বই তুলে দিয়েছে, করেছে দু’বেলা ডাল-ভাতের ব্যবস্থা, দিয়েছে মাথা গোজার ঠাই। যারা বড় বড় কথা বলেন তারা অন্তত একজন এতিম শিশুকে মানুষ করে দেখান, তাহলে বুঝবেন কত ধানে কত চাল। অবাক লাগে যখন দেখি, যারা সামান্য টিউশনির বেতন নিয়ে মাছের বাজারের মত দরদাম করেন, আবার তারাই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে ফেসবুকে নব্য বুদ্ধীজীবীদের মত বুলি আওরায়।

একবার ভেবে বলুনতো ঢাকা শহরে বেড়ে উঠা একটা শিশুর পেছনে তার মা-বাবা মাসে কত খরচ করে? শহরের একটা ভাল বাংলা বা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মাসিক বেতন কত জানেন? শুধু তো স্কুল নয়, স্কুল শেষে বাসায় ফেরার পথে রয়েছে কোচিং নামক আর এক জন্তু। তারপর? শিশুটি বাসায় ফিরে নিশ্চয় দেখবে হাউজ টিউটর বসে বসে চা পান করছে। শিশুটির কত ব্যস্ততা তাই না? আর তার সারাদিনের ব্যস্ততাকে সহজ করে দিতে রয়েছে একটা ভাল ব্রান্ডের গাড়ি। শুধু কি শহরের ভাল স্কুল আর কোচিং দিয়েই জ্ঞানের গোডাউন ভরাট করা যায়? আসলেই যাই না। তার জন্য আরও লাগবে হাই কনফিগারেশনের ল্যাপটপ। এখনতো ল্যাপটপও ব্যাকডেটেট। আইপ্যাড ছাড়া এখন চলে না। টু-জি নেটওয়ার্কে এদের ইউটিউব ভিডি ঠিকমত দেখা যায় না, লাগে থ্রি-জি। এরপরে সুযোগ পেলেই কেএফসি অথবা পিৎজাহাটে পার্টিতো আছেই।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File