বিটি বেগুন: বেগুন না বিষ??? অবশেষে গিনিপিগ আমরা.....
লিখেছেন লিখেছেন পল্লবগ্রহিতা ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৫৬:১২ রাত
২২ জানুয়ারি’১৪ বর্তমান সরকার বাংলাদেশের কৃষকদের হাতে তুলে দিলো বিটি বেগুন। যেটার খাদ্যমান হিসেবে আমাদের নিত্যদিনের আহার্য সবজি বেগুন কি না এ নিয়ে আছে বিস্তর বির্তক। যে বেগুন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরূপ বিধায় ২০১০ সালে ভারত ও ২০১৩ সালে ফিলিপাইন আইন করে এ বেগুনের গবেষণা নিষেধ করেছে। যে বেগুনের ব্যাপারে ফরাজি বিজ্ঞানী Professor Gilles-Eric Seralini বলেছে, “বিটি বেগুন সবজির মধ্যে এমন প্রোটিন তৈরী করে যা এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধক অর্থ্যাৎ এন্টিবায়োটিকে তাদের কোন কাজ হবে না, যারা সবজি নামের বিষ এই বিটি বেগুন আহার করবে।”
নামকরণ: বগুনের একটি প্রধান শত্রু, ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পেকা দমনের জন্য অতি আধুনিক প্রযুক্তি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে Baccilus thuringenesis নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিস্টাল জিন বেগুনে সংযোজনের মাধ্যমে গবেষণালব্ধ আমাদের দেশীয় বেগুনের জিএম জাত। Baccilus থেকে ‘বি’ এবং thuringenesis থেকে ‘টি’ নিয়ে এর নামকরণ করা হয়েছে। এই জিনপ্রযুক্তিতে গাছের ভিতরেই একপ্রকার টক্সিন বা বিষ তৈরি হয়, যার কারণে পোকা গাছের ভিতরেই মরে যায়। মূলত এর ফলে আগে যে পোকা বাইরে থাকত এখন তা বেগুনে মিলে যাবে ফলে দেখা যাবে না। আমরা আমরা এ বিষ খেয়েই নিরবে প্রতারিত হবো যে, আমরা এক্কেবারে পোকামুক্ত বেগুন খাচ্ছি।
চলুন দেখা যাক বিটি বেগুন নামের বিষে নিয়ে কিছু কথা:
১. ভারত এ বেগুন ২০১০ সালে এবং ফিলিপাইন ২০১৩ সালে এ বেগুনের গবেষণা নিষিদ্ধ করেছে।
২. এ বেগুন এশিয়ার প্রথম জিএম ফসল। আর সেই জিএম ফসলের প্রথম উদাহরণ বিটি বেগুনের এক্সিপেরিমেন্ট হচ্ছে এশিয়াতেই প্রথম, এবং আমাদের সরল স্বাভাবিক মানুষগুলোর উপর, যাদের জিন প্রযুক্তি কেন শীতের দিনে কেন শীত পড়ে সে সম্পর্কেও জ্ঞান নেই।
৩. আন্তর্জাতিক আইনানুসারে কোন ফসলের আদিম ভূমিতে সেই ফসলের জিএম জাত ব্যবহার করা যাবে না। আর বেগুনের উৎপত্তি বা Origin of Diversity এই তিন বৃহৎ নদীর অববাহিকায়। আর এই আইন এ কারণেই যে, জিএম জাত আদিম ও আসল জাতকে দূষিত করে। ফলশ্রুতিতে আমাদের সোনার ফসলই এ টেলনিক্যাল জাতের কারণে বিলুপ্ত হবে।
৪. যেসব দেশীয় জাতকে বিটি করা হয়েছে যার লক্ষ্য নাকি পোকার আক্রমন থেকে মুক্তি পাওয়া, কিন্তু বাস্তব কথা হলো এসব দেশীয় জাতে(ঝুমকি, খটখটিয়া, ইসলামপুরী) পোকার আক্রমন একেবারেই কম। সেটা শতকরা ১ ভাগ থেকে ২০ ভাগের মধ্যে। তাই কৃষকদের ভালোর জন্য এ প্রযুক্তি তা বলা যায় না। এমন কি Integrated Pest Management(IPM)
বা সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে এ রোগ পুরোপুরি দমন করা সম্ভব যাতে কোন প্রকার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি নেই।
৫. গবেষণার সার্বিক সহযোগীতা করেছে ভারতের মহারাষ্ট্র হাইব্রিড বীজ কোম্পানি (মাহিকো) ও বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টো। যাতে বাংলাদেশের অবদান হলো তাদের হাতে আমাদের দেশি বেগুনগুলোর যে শুদ্ধ জাতগুলো তুলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। অথচ এই জাতগুলোর কারও অনুমতি ছাড়াই বিদেশি কোম্পানিকে জেনেটিক বিকৃতির ঘটানোর জন্য দেয়া ঘোরতর অন্যায়। আর কেনই বা কোন উদ্দেশ্যে বিদেশি কোম্পানি তাদের দেশগুলো বাদ রেখে আমাদের এ গবেষেণায় সহযোগীতা করবে, তা বোধগম্য নয়।
৬. এ বেগুন পরীক্ষার জন্য মাত্র তিন সময় দেয়া হয়েছে যেখানে কমপক্ষে ৯০ দিন সময় দেবার কথা। সেখানে এত বিতর্কের পরও কেন বা কোন উদ্দেশ্যে এ বেগুনের ছাড়পত্র দেয়া হলো। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা বিটি বেগুন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালেও কেন তা আমলে নেয়া হলো না?
৭. সবচেয়ে বড় প্রহসন হলো, আমরা যারা সাধারণ ভোক্তা তারা বেগুন দেখে চিনতে পারবো না কোনটা জিএম জাত বা বিটি বেগুন এবং কোনটা আমাদের আসল বেগুন। অবশ্য ছাড়পত্র দেবার সময় ন্যাশনাল কমিটি অন বায়ো সেফটি একটা কথা ‘শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন’ কথাটি জুড়ে দিয়েছে শুধুমাত্র দায় থেকে বাচার জন্য এবং আমাদের সরল কৃষকদেরকে বলির পাঠা বানানোর জন্য।
মূলত আমরা নিজেদের বেগুন এবং আমাদের কৃষককে উৎপাদক এবং মানুষকে ভোক্তা হিসেবে সহজে গিনিপিগ বানোনোর সুযোগ করে দিচ্ছি মাত্র।
পড়ুন: http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2014/01/30/49159
বিষয়: বিবিধ
২১০৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সচেতনতামূলক পোষ্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন