এ আগুনের শেষ কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন মুন্না ভাই ০৯ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৩০:১২ সকাল
রাজধানীর শাহবাগ চত্ত্বরে যে আগুন জ্বালানো হয়েছে জানিনা সে আগুনের লেলিহান শিখা কোথায় গিয়ে শেষ হবে। মোমবাতি আর মশালের শিখরে যে আগুনের উৎপত্তি তা আজ দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। যে উদ্দেশ্যেই আগুনের সূচনা হোক না কেন, তা একদিন সবকিছুকে ভষ্মিভুত করবেই। একটি বহুল আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়ে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল একজন অভিযুক্তের ব্যাপারে রায় ঘোষণা করল, ঠিক মুহুর্তের মধ্যেই শাহবাগ চত্ত্বরে ব্যানার, ফেস্টুন আর প্লাকার্ড হাতে নিয়ে জড়ো হয়ে গেল কতিপয় তরুণ। ব্লগারদের ব্যানারে আন্দোলনের সুত্রপাত হলেও পরবর্তীতে আন্দোলনের মাইক চলে যায় কতিপয় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে। আন্দোলন দেখতে ভীড় জমায় উচ্ছসিত তরুণ-তরুণী। আমাদের মিডিয়ার অতি উৎসাহী কর্মীরা ফলাও কওে জীবন্ত প্রচার করতে থাকে আন্দোলনের খবর।
দেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে একটি মাত্র দাবীতে আন্দোলনের সুত্রপাত দেখে সাধারণ জনগনের মনে সহসাই একটি প্রশ্ন জাগে যে কেন এই আন্দোলন ? কেনই বা পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আন্দোলন বেগবান করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে মিমাংশিত একটি ইস্যূকে কেন্দ্র করে দেশের পুরো বিচার ব্যবস্থার উপর প্রত্যক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি আমাদেও বিচার ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। শাহবাগের আন্দোলনকরীদের চাপের মুখে যদি আদালতের ঘোষিত রায় পরিবর্তন করতে হয় তাহলে দেশের সব সমস্যার সমাধান রাজপথেই হতে হবে। দেশের আইন-আদালত ও প্রশাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কী ? দেশের শান্তি প্রিয় সাধারণ জনগণ এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়।
সরকার যদি না বুঝে এ আন্দোলনের সমর্থন ও সহযোগিতা করে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু সরকার যদি বুঝে শুনে উদ্যেশ্য প্রনোদিত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ আন্দোলনের জ্বালানী সরবরাহ করে থাকে তাহলে আন্দোলনের এ আগুনে ক্ষমতাসীন সরকারই একসময় জ্বলে-পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাবে। সরকারকেই এর চরম মূল্য দিতে হবে। সরকার নিজে বুঝতে পারেছে না যে আন্দোলন শাহবাগে শুরু হয়েছে একটি দাবীতে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে আর কতক্ষণ ? বলা হচ্ছে দেশের তরূণ সমাজ এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। আর এ ডাকে সারা দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন পেশা, শ্রেণী ও বয়সের মানুষ একাত্বতা ঘোষণা করছে। সরকার সমর্থিত রাজনিতিকরাও তাদের সমর্থন ও একাত্বতা প্রকাশ করছে। তরুণ সমাজ যদি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ও তাদের দাবী আদায়ে এ আন্দোলনের সুত্রপাত করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে সাধুবাধ। দেশ ও দেশের জনগণ তাদের সাথে থাকবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার ষড়যন্ত্র করা হয় বা সরকারের অনিয়ম-দূর্নীতি ও ব্যর্থতাকে আড়াল করার অপচেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা হবে নিতান্তই বুমেরাং।
তরুণ প্রজন্ম বলতে আসলে কাদেরকে বুঝানো হচ্ছে ? দেশের কতভাগ তরুণ শাহবাগের এ আন্দোলনেকে বুঝে-শুনে সমর্থন করছে ? বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সুবাদে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রতিদিন হাতেগোনা নিদিষ্ট কয়েকজন তরুণ আন্দোলন মঞ্চ থেকে শ্লোগান দিচ্ছে। ঘুরে ফিরে কয়েকজন পরিচিত তরুণ-তরুণীর বক্তব্যই বারবার তুলে ধরা হচ্ছে মিডিয়াগুলোতে। দেশের বিভিন্ন জায়গার আন্দোলনের চিত্র প্রায় একই। শাহবাগ এলাকায় গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় যে আন্দোলনকারী তরুণদের চেয়ে সাধারণ দর্শনার্থী ও উৎসূক তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশী। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে এ আন্দোলনে সামিল হতে বাধ্য করা হচ্ছে। জানা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেকার যুবক-যুবতীদের দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে ভাড়া ও খাবার সরবরাহ করে আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখা হচ্ছে। সারারাত যুবক-যুবতী একই সাথে আন্দোলন মঞ্চে অবস্থান করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্য-কলাপের অভিযোগও উঠেছে।
শাহবাগ রাজধানীর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত এলাকা। এখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় দু’টি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিশুপার্ক সহ আরো গুরুত্বপূর্ন অনেক প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর অন্যতম এ শাহবাগ ক্রসিং। এখানে আন্দোলনের ফলে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের কোটি কোটি মানুষ। কর্ম শেষে ঘরে ফেরা রাজধানীর লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে। সাধারণ জনগণ এ আন্দোলনের কারণে অতিষ্ঠ। যে কোন মুহুর্তে জনগনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলে কারো কিছূ করার থাকবেনা। আন্দোলনকারী গুটি কয়েক তরুণদের প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সরকার লাখ জনতার জনরোশের শিকার হতে চলেছে।
তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের নামে সরকার আন্দোলনের যে গ্রাউন্ড তৈরী করে দিয়েছে আশা করা যায় আন্দেলনই অতি দ্রুত সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। রাজাকার বিরোধী আন্দোলনের নামে দেশকে একটি রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরী করা হচ্ছে। এবং ধীরে ধীরে দেশকে একটি নিশ্চিত গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আন্দোলনের মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক প্রতি হিংসা পরায়ণ হয়ে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে যার আশু পরিনতি হতে পারে রাজনৈতিক সংঘাত। বলা হচ্ছে আন্দোলনকারীরা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয় তবে তাদের কর্মকান্ড ও শ্লোগানের ভাষা থেকে জনগন সহজেই বুঝতে পারছে যে তারা বাম রাজনৈতিক দল সমুহের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই এ আন্দোলন শুরু করেছে। তারা সরকার ও বিরোধী দলকে বোকা বানিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। একটি বিচারাধীন ইসূকে সামনে এনে আমাদের পুরো বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। জনগনকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে তারা সরকার ও জনগণকে মুখোমুখি দাড় করানোর ষড়যন্ত্র করছে।
আন্দোলনের মঞ্চ থেকে দেশের একটি প্রধান বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক সহ অনেক বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। এ সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দেয়ার জন্যর সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে আন্দোলনকারীরা। দেশের নেতৃত্বদানকারী এ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভ্রান্তিমুলক প্রচারণা চালানো হলে তা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিরাট অশনি সংকেত। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে ও বহিঃবিশ্বে দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের মানুষ জন্মগতভাবে ধর্ম-ভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। তারা শান্তি প্রিয়। তারা তাদের ধর্মীয় আদর্শ ও মুল্যবোধ নিয়ে বাচতে চায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তরুণ সমাজের আন্দোলনের নামে তারা মুসলমানদের আদর্শ ও মূল্যবোধ পরিপন্থী শ্লোগান দিচ্ছে। তারা ইসলামী রাজনীতি বন্ধের দাবী করছে আন্দোলনের মঞ্চ থেকে। তারা এ দেশের ইসলামপন্থী ও আলেম ওলামাদের ব্যাপারে অশালীন মন্তব্য করছে ও কুৎসা রটনা করছে। সরকারও তাদের কথামত ধর্ম-প্রাণ এসকল মানুষদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা, অপকর্ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বিরোধী ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন ঠেকাতে সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যেখানে বিরোধী দলের আন্দোলন ঠেকাতে নেতাকর্মীদের উপর গুলি করতে কুন্ঠাবোধ করছেনা রাষ্টীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেখানে তরুণ সমাজের আন্দোলনে পুলিশ সরাসরি সহযোগিতা করছে। এর রহস্য কী ?
পরিশেষে বলতে চাই একটি অতি স্পর্শ কাতর ও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নশীল দেশে তা কাম্য নয়। তারুণ্য ও যুব সমাজ একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তারা অবশ্যই দেশকে নিয়ে ভাববে, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্দোলনের নামে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন ঘটাবে, দেশের জন্য বিপদ বয়ে আনবে তা কখনই কাম্য হতে পারেনা। সরকারকে আরো সুরদর্শী হতে হবে, আরো সহনশীলতা ও দায়ীত্বশীলতা নিয়ে সকল প্রতিকুল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। আসুন আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করি এবং একটি সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
বিষয়: বিবিধ
১২০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন