দাড়ি আর হিজাব
লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ১৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:২৭:৫৯ রাত
দাড়ি আর হিজাব অনেকের কাছে হট-টপিক। অথচ ইসলাম দাড়ি আর হিজাবের নাম নয়। আমরা অনেকে এ ধরণের বাহ্যিক বিষয়কে আসল বিষয় ভেবে এ গুলোর প্রতি মাত্রারিক্ত গুরুত্ দেই। কারণ কুরআন এবং মহানবী (স) এর জীবন থেকে আমরা সামাগ্রিক ভাবে ইসলাম জানার চেষ্টা করি না। কুরআনে আছে, গ্রামের লোকেরা বলে আমরা ঈমান এনেছি। হে নবী তুমি বলে দাও, ‘তোমরা বলো, আমরা ইসলাম কবুল করেছি। ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি।‘ আসলে বাহ্যিক আনুগত্যের নাম ঈমান নয়, ঈমান অন্তরের বিষয়। কারো অন্তরে জোর করে ঈমান ঢুকিয়ে দেয়া যায় না। এটা প্রত্যেকের উপলব্ধির বিষয়। অন্তরে ঈমান জীবন্ত না থাকার কারণে ঈমানদার দাবি করার পরও আমরা চুরি, খুন, মিথ্যাচার, ঘুষ ইত্যাদি কাজে বার বার জড়িত হই। অনেকের এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ ‘রাজনৈতিক আন্দোলন’, সামাজিক আন্দোলন্’, ‘বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন’ বা ‘ক্ষমতা দখলের রাজনীতি’ নয়। কুরআন কেন্দ্রিক জীবন গঠনের সাধনা এর একমাত্র ঔষধ। মুমিন হিসেবে এটাই আমাদের আসল কাজ। সাময়িক প্রয়োজন আমাদের এ আসল কাজ থেকে বিরত রাখে বা অন্য দিকে নিয়ে যায়। আমরা সহজ-প্রাপ্তি এবং সাময়িক সাফল্যের লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি না। আসল কাজকে মুলতবি করে আমরা নকল কাজের পেছনে সময় ও শক্তি ব্যয় করি। অনেক সময় ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেই। যারা আল্লাহকে চেনে না, রাসুলকে জানে না, আখেরাতে বিশ্বাস নেই তাদের কাছে আল্লাহর বিধানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যে লড়াই করি।
মানুষের মধ্যে এবং নিজের মধ্যে ঈমানের আলো প্রজ্জ্বলিত করতে হলে কুরআনকে ধারণ করে আমাদের দাঁড়াতে হবে। মক্কী আয়াতগুলো গভীর ভাবে অধ্যয়ন করলে আমরা দেখবো, মক্কার ২৩ বছর মহানবী (স) এ কাজই করেছেন। ঈমানের আলো একটা অশিক্ষিত ও বর্বর জনগোষ্ঠীকে সোনার মানুষে পরিণত করেছে।
ইসলাম মানুষকে সত্যিকার ‘মানুষ’ হতে শিক্ষা দেয়। আমি মানুষ কি না, এর প্রমাণ আমার নামাজ, দাড়ি বা হিজাব নয়। অন্যান্য মানুষ এবং সৃষ্টির অন্যান্য জীবের সাথে আমার আচরণ হচ্ছে মনুষ্যত্বের মাপকাঠি। আমার উপলব্ধি ভুল হতে পারে। তবে আমি মনে করি, শুধু আল্লাহর হক্ব আদায় করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করা যায় না। আর আমার কাজে আল্লাহ খুশি না হলে আমার চেষ্টায় যদি গোটা পৃথিবীতে খোদার বিধান কায়েম হয়ে যায় অথবা পৃথিবীর সকল মানুষ ইসলামী জীবনের অনুসারী হয়ে যায় তা হলেও আমি ব্যর্থ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'দাড়ি-হিজাব'ই ইসলামের পুর্ণাংগ মাপ-কাটি না! কথার সাথে অবশ্যই একমত!
কিন্তু এগুলো ইসলামের পালনীয় একটা গুরুত্ব পুর্ণ বিধান!
বিশেষ করে- হিজায তথা পর্দা তো ফরজই!
মক্কী জীবনের সাথে বর্তমান কে তুলনা কতটা গ্রহনযোগ্য তাও ভেবে দেখতে হবে!!
বাংলাদেশের জা-শির আন্দোলন তো আমাদেরকে এই কথাই শিখিয়ে আসছে। তাহলে রাজনীতি বা সামাজিক আন্দোলনকে কেন এ থেকে আলাদা করতে যাবো? এগুলো তো মাক্কী জীবনের ও তৎপরবর্তী মাদানী জিন্দেগীর দশ বছরের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে। আমি দাড়ি নিয়ে টানাটানি করছিনা। তবে পর্দা নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা অনেক। কারণ নারীর পর্দাহীনতা বর্তমান সমাজকে যে অনাচারের মধ্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তা থেকে বোধহয় মক্কার আইয়ামে জাহিলিয়ার যুগও মুক্ত ছিলনা। সেজন্যই রাসূল (সাঃ) এর জীবনেতিহাসে নারীমুক্তির ব্যাপারটি ঘরে বাইরে বেশী আলোচিত হয়েছে। পর্দাহীনতার বিষবাষ্প ক্রমেই ইসলাম পছন্দকারী পরিবারকেও গ্রাস করতে অগ্রসর হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে বলা/লিখা তথা সার্বিক জিহাদ চালিয়ে নেয়া ছাড়া বাঁচার দ্বীতিয় কোন পথ আছে বলে মনে হয়না। অর্থাৎ সামাজিক, পারিবারিক, ব্যাক্তিগত সবরকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সুবিজ্ঞ ব্লগার এবং পাঠকদের বোধদয়ের জন্য আমার নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে শুধু একটা উদাহরণ এর গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য এখানে পেশ করছি।
প্রায় দুই যুগ আগের কথা। কাজের প্রয়োজনে দিল্লীতে অবস্থান করছিলাম। আমার এক দেশী শিক্ষিত (বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী) সহকর্মী কথাপ্রসঙ্গে একদিন এমন এক বাক্য ছুঁড়ে মারলো যা আমার অন্তরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকবে এবং নারীর হিজাবের ব্যাপারে আমার শক্ত অবস্থানের কথা নিশ্চিত করতে থাকবে। তিনি বললেনঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন ছাত্র ছিলাম এবং মেছ এর অধিবাসী ছিলাম তখন ঢাকার রাস্তাঘাটে চলাফিরা করা সুন্দরীদের যে হারে মনে মনে কামনা করে বিছানায় নিয়ে গেছি, ব্যাপারটি যদি বাস্তবে ঘটতো, তাহলে আজকে আমার সন্তানের দ্বারাই ঢাকার রাস্তাঘাট কিলবিল করতো।"
ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন