হত্যা, ফাঁসি এবং ব্লেইম গেইম - ফরীদ আহমদ রেজা
লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩১:৪৮ বিকাল
ফাঁসি চাই বলতে বলতে এখন আমাদের গলায় সে ফাঁস এসে লেগে গেছে। আমরা বিচার চাই না, আমরা শুধু ফাঁসি চাই। চাই রাজাকারের ফাঁসি। চাই নাস্তিকের ফাঁসি। যারা ফাঁসি চাই বলে রাজপথে চিৎকার দেন তারা এর অর্থ কতটুকু বুঝেন আমরা জানি না। ফাঁসি চাওয়া মানে হচ্ছে আদালত কি রায় দিবে এর নির্দেশ প্রদান করা এবং আপনাদের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য রায় সেটাই হবে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ফাঁসির রায় হয়। আদালতের কাছে এ রকম দাবি জানানো ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আদালত সত্য-মিথ্যা যাচাই করে রায় দেবে। আমরা বিচার দাবি করতে পারি, রায় প্রদান করতে পারি না।
বাংলাদেশের আদালতের ব্যাপারে আরো কথা আছে। পয়সা থাকলে বা ক্ষমতাসীন হলে সেখানে আদালতকে নানা ভাবে প্রভাবিত করা যায়। স্বার্থের কারণে বা অর্থ ও সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে সেখানে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী পাওয়া যায়। ঘুষের বিনিময়ে পুলিশ প্রায় সকল তদন্ত-রিপোর্ট তৈরি করে। সেখানে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানানো যায়। অনেক অসৎ বিচারক ঘুষ খেয়ে অথবা ক্ষমতাধরদের অনুরোধে রায় বদলে দেন। অনেক উকিল মামলায় জিতিয়ে দেয়ার জন্যে বাদী বা বিবাদীকে অনৈতিক পরামর্শ দেন এবং স্বার্থান্ধ বাদী-বিবাদীরা সানন্দে তা গ্রহণ করে নেন। এটা বাংলাদেশের বিচার-ব্যবস্থায় বিদ্যমান বাস্তবতা। আদালত অবমাননা বা অন্য কোন কারণে আমরা তা অস্বীকার করতে পারি। কিন্তু আদালত পাড়ায় যাদের যাতায়াত আছে তাদের মন এ সত্যকে অস্বীকার করতে পারবে না। বিচার-ব্যবস্থার মান যেখানে এ রকম সেখানে কোন মানুষকেই ফাঁসি দেয়া বা কারো ফাঁসি হোক - এ দাবি উত্থাপন করা কোন বিবেকসম্পন্ন মানুষ সমর্থন করতে পারেন না। জনতার দাবির কারণে অথবা ক্ষমতাসীনদের চাপে পড়ে কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে যদি আদালত ফাঁসি দেয় অথবা শাস্তি প্রদান করে তা হলে তা হবে ন্যায়-বিচারের পরিপন্থী। এ ধরণের জুলুম যারা করবে এবং যারা এর প্রতি সমর্থন দেবে তাদের প্রত্যেককে এর জন্যে আল্লাহর আদালতে জবাবদিহি করতে হবে। এ কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশে মৃত্যুদন্ডের বিধান রহিত করার পক্ষে। যেখানে ন্যায়-বিচারের ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ আছে সেখানে মৃত্যুদন্ডের বিধান বহাল থাকলে বহু নিরপরাধ মানুষকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আইন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান রহিত করা উচিত। সকল মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠনকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া দরকার।
তবে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের অবিনাশী উচ্চারণ। তাঁর শান্ত এবং কঠিন উচ্চারণ প্রতিটি বিবেকবান মানুষের বুকে শেলের মতো এসে লেগেছে। মৃত্যু-উপত্যকায় দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই না। চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ কত বেদনা ও হতাশা থাকলে নিহত সন্তানের লাশ সামনে রেখে একজন পিতা এ ভাবে বলতে পারেন? কিন্তু হত্যা ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে তাঁর এ ক্ষোভকে আমরা কতটুকু মূল্যায়ন করতে পারছি?
বাংলাদেশে হত্যার মিছিলে সাম্প্রতিক সংযোজন ফায়সল আরেফিন দীপন। আক্রান্ত হয়েছেন কবি ও প্রকাশক আহমেদুর রশীদসহ আরো কয়েকজন। কপালগুণে তারা বেঁচে গেছেন। খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে ফেইস বুকে একটা স্ট্যাটাস দেই আতঙ্কিত হয়ে। সেখানে বলেছি, ‘কী হচ্ছে দেশে? ধর্মের নামে পরিচালিত অধর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে প্রকৃত ধার্মিকদের।’ এ স্ট্যাটাস কারো কারো ভালো লাগেনি। ক্ষুব্ধ মন্তব্য এসেছে, কেউ কেউ অবাক হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রীরা টুপি-দাড়ি দেখলেই আক্রমণের করার কথা বলছেন। তখন প্রকৃত ধার্মিকদের কী দায় ঠেকেছে যে তারা সহিংসতা প্রতিরোধ করবে? আমার জবাব ছিল, অধর্মের বিরুদ্ধে যদি ধার্মিকরা না দাঁড়ায় তা হলে কে দাঁড়াবে? টাউট, বাটপার, লুটেরা বা খুনীরা এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না। অন্যায় বা সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সকলেরই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
হত্যাকারীরা কে তা আমরা না জানলেও এটা জানি, পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মতো ওরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ব্লগার এবং প্রকাশকদের উপর হামলা করছে। এর চেয়ে বড় অধর্ম আর কী হতে পারে? এর বিরুদ্ধে ধার্মিকদের উচিত সর্বাগ্রে এগিয়ে আসা। প্রকৃত ধার্মিকদের বুঝতে হবে ধর্ম-ই আমাদের সব ধরণের জুলুম এবং অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিক্ষা দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে আস্তিক-নাস্তিক, মুসলিম-অমুসলিম কাউকে হত্যা করা যায় না। কেউ কোন অপরাধ করলে তাকে আদালতের হাতে সপোর্দ করতে হবে। অভিযুক্ত অপরাধীকে কি শাস্তি দেবে তা আদালত ফায়সালা করবে। সরকার বা কোন ব্যক্তিকে আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার অধিকার ইসলাম দেয়নি। নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বা ইসলাম বিরোধী বই প্রকাশের অভিযোগে যারা লেখক বা প্রকাশকে হত্যা বা আক্রমণ করছে তাদের সঠিক পরিচয় আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। তাই দায়েশের মতো দেশীয় বা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গুটি হিসেবে তারা অন্যদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে, সে সম্ভবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
বাংলাদেশে চলমান গুম, হত্যা এবং নানা ধরণের সহিংসতার পেছনে কারা দায়ী তা জানার ক্ষমতা জনগণের নেই, সেটা তাদের দায়িত্বও নয়। তদন্ত করে অপরাধীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। মনে হচ্ছে, সরকার জনগণকে অন্ধকারে রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। তাদের দোষারোপের রাজনীতি প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করে রেখেছে। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জান-মালের হেফাজত করা। অপরাধীকে চিহ্নিত করে এবং পাকড়াও করে আইনের মুখোমুখি করা। সরকার অপরাধীকে পাকড়াও না করে এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। সাথে সাথে নিহতদের পরিবারের সাথে সরকারের কোন কোন দায়িত্বশীল অশোভন আচরণ করছেন। মানুষ কতটুকু নিষ্ঠুর ও অমানবিক হলে শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সাথে এ রকম আচরণ করতে পারে? খবর এসেছে, নিহত দীপনের বাবাকে হুমকি দিয়ে এ নিয়ে বেশি কথা বলতে নিষেধ করা হয়ছি। তিনি এখন নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এ থেকে অনুমান করা যায়, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটুকু খারাপ। সন্ত্রাসীদের আক্রমণে নিহত সন্তানের লাশ দাফনের পর দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তিনি এখন নিজের জীবনের ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আল - কায়দা দীপন হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর এসেছে। এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য কেউ বলতে পারে না। এর আগেও তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এক সময় সরকার কথায় কথায় আল-কায়েদা, জঙ্গি, দায়েশ ইত্যাদি উচ্চারণ করলেও সম্প্রতি এটা তাদের গলায় আটকে গেছে। সবাই মিলে চিৎকার করে বিশ্ব-সম্প্রদায়কে বলছেন, বাংলাদেশে আল- কায়েদা বা জঙ্গি নেই। যে সকল হত্যা বা সহিংস ঘটনা ঘটছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের প্রশ্ন, যারা একটার পর একটা হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা বিদেশে নয়, বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের পুলিশ নানা কারণে-অকারণে হাজার হাজার লোককে জেলে পুরে রেখেছে। তাদের মধ্যে অনেক আছেন যাদের নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ঘরে বসে কেউ পকিল্পনা করলেও সে খবর পুলিশ জেনে যায়। আর মাসের পর মাস চলে যায়, খুনীদের তারা ধরতে পারে না, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
ব্লগারদের মধ্যে সর্বপ্রথম নিহত হন আহমেদ রাজীব হায়দার। এর পর গত নয় মাসে শুধু ব্লগার নিহত হয়েছেন পাঁচজন। আসিফ মহিউদ্দিনকেও হত্যার চেষ্টা করা হয় । এপ্রিলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফ রহমানকে হত্যা করা হয়। সিলেটের সুবিদবাজারের খুন হন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয়কে। শেখ হাসিনার সাথে তাল দিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিটি খুনের জন্যে দায়ী করছেন বিএনপি-জামাতকে। পুলিশ কখনো বলছে এর পেছনে আল-কায়েদা বা আনসার আল ইসলাম অথবা দায়েশ, আবার কখনো বলছে বিএনপি-জামাত। দেশের প্রতিটি জেলখানায় কয়েদীদের উপচে-পড়া ভিড়। বিনাবিচারে পুলিশের হেফাজতে থেকে মানুষ মারা যাচ্ছে। ধরে নিয়ে গুম করে ফেলা হচ্ছে। কাউকে ভারতে পাচার করা হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা আসামীর দোহাই দিয়ে চলছে পুলিশের বেপরোয়া ঘুষ-বানিজ্য। হত্যার এ মিছিল কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। খুন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার মিছিল চলছে। পুলিশ শুধু শহরে নয়, গ্রামে গ্রামে গ্রেফতার-বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ ঘুষ-বানিজ্যের লাইসেন্স তারা পেয়েছ। এ কারণেই সরকার এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার।
বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ঘুষ-বানিজ্যের সাথে শাসক দলের পক্ষে রাজনৈতিক দলের ভাষায় সাফাই দিয়ে বক্তব্য রাখার নতুন উপসর্গ সেখানে যোগ হয়েছে। এর পরও আমাদের বিশ্বাস, খুনীচক্র যদি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে না গিয়ে থাকে তা হলে বাংলাদেশের পুলিশ ইচ্ছা করলে তাদের পাকড়াও করতে সক্ষম। অপরাধী চক্রের যাদের আটক করা হয়েছে তাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মূল অপরাধীদের খুঁজে বের করা বাংলাদেশের পুলিশের জন্যে কোন কঠিন কাজ নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো পুলিশ তা করতে পারছে না অথবা করছে না। এটা কি পুলিশের অক্ষমতা, না কি কোন অদৃশ্য শক্তির হাতে পুলিশের হাত-পা বাঁধা রয়েছে? হতে পারে, সরকারই পুলিশকে তা করা থেকে বিরত রেখেছে। কোন একটি ব্লগার হত্যা-মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। প্রতিটি হত্যাকান্ডের জন্যে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপর দায় চাপিয়ে তাদের নেতাকর্মীকে পাইকারী হারে গ্রেফতার করছে। খুনীচক্রকে খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নয়, সরকারের কর্মতৎপরতা এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের কথাবার্তা থেকে জনগণ এ বার্তাই পাচ্ছে। অপরাধীদের পাকড়াও করার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকলে পুলিশী-তদন্ত খুব দ্রুত শেষ করা সম্ভব। সরকারের বুঝা দরকার, ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। এক সময় তাদের অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তখন প্রতিটি অপকর্ম এবং নৃশংসতার জন্যে তাদের জনতার আদালতে জবাবদিহি করতে হবে।
অপরাধীদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে পুলিশের ব্যর্থতা, তদন্ত ও বিচারকার্য সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ-সুত্রিতা এবং প্রধান নির্বাহীসহ সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালিত অব্যাহত ‘ব্লেইম গেইম’ থেকে মানুষের মনে একটি বিশ্বাস দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভাবছে, এর মাধ্যমে সরকার বিরোধী দলের প্রতি আরো অনমনীয় এবং কঠোর হবার উপলক্ষ তৈরি করছে। মুক্ত-মনা, ব্লগার ইত্যাদি ব্যানারের সাথে যারা একাত্মতা পোষণ করেন এবং যারা সহিংসতা পছন্দ করেন না তাদের সাথে বিরোধী দলের বিরোধ ও সংঘাত সৃষ্টি করে সরকার নিজের নড়বড়ে আসনকে পাকা-পোক্ত করতে চায়।
ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ অবশ্য বিষয়টাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করছেন। তাদের মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে একটা বিষয় লক্ষণীয়। একটা সংকট বা বড় ঘটনার রেশ শেষ হবার আগেই আরেকটা বড় ঘটনা এসে পূর্বের ঘটনাকে নিচে ফেলে দেয়। সরকার এ ভাবে অত্যন্ত কৌশলের সাথে নিজের উদ্দেশ্যের অনুকুলে বড় বড় কাজ সম্পন্ন করে চলেছে। দীপন হত্যা এবং টুটুলের উপর আক্রমণকে সে আলোকে বিচার করতে হবে। সরকার একটা বড় কোন কাজ করার প্রস্তুতি হিসেবে তা সম্পন্ন করেছে। সেটা হতে পারে কাউকে ফাঁসি দেয়া বা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে নতুন কোন চুক্তি সম্পাদন করা।
বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালকে সরকার স্কাইপ-কেলেঙ্কারীর পরও বহাল রেখেছে এবং ইতোমধ্যে অপ্রমাণিত অপরাধে এ ট্রাইবুনাল দু জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে তা কার্যকর করে ফেলেছে। সে সময় সরকার দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কারো কথার তোয়াক্কা করেনি। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, কথিত অপরাধের অভিযোগে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তারা এক সময় আওয়ামী লীগের খুব কাছের লোক ছিলেন। তারা এক সাথে মিলে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, একই মঞ্চে বসে বক্তৃতা দিয়েছেন। ৭১’র পর কখনো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। এ কারণে দেশের মানুষের কাছে এটা পরিষ্কার, নিছক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের অন্যায় ভাবে দন্ডিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি আরো কয়েকজনকে ফাঁসি দেয়ার পথে সরকার এগিয়ে চলেছে। তাঁদের বিচার প্রক্রিয়া বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। ভাবসাব দেখে মনে হয়, ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চারিত দেশী-বিদেশী কোন সতর্কবার্তার প্রতি সরকার এবারও কর্ণপাত করবে না। দীপন হত্যার সুত্রধরে বাদ-প্রতিবাদ এবং পরস্পর বিরোধী মিছিল-মিটিং এর ফাঁকে ফাঁসির রায় কার্যকর করার প্রস্তুতি হয়তো সরকার গ্রহণ করছে। অবশ্য আমাদের অনুমানের বাইরে অন্য কোন উদ্দেশ্যও সেখানে থাকতে পারে।
সদ্য সন্তানহারা পিতার সাহসী এবং দার্শনিক উচ্চারণকে নিয়ে যারা ব্যঙ্গ করছেন বা এর বিকৃত ব্যাখ্যা করছেন তাদের বিবেক-বুদ্ধির প্রতি করুণা করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। দেশে বছরের পর বছর ধরে বিনাবিচারে হত্যা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। যে দেশে ক্ষমতা ও অর্থের বিনিময়ে বিচার ক্রয় করা যায়, পুলিশের তদন্ত-রিপোর্ট বদলে দেয়া যায় এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হয় সে দেশে কার কাছে মানুষ বিচারপ্রার্থী হবে?
হত্যা এবং ব্লেইম গেইম কোন দেশে অনন্তকাল চলতে পারে না। সরকার বা রাষ্ট্র এ দায় না নিলে এ দায় গোটা দেশের। দায় যাদের দায়মুক্তির দায়িত্ব তাদেরই পালন করতে হয়। সমাজবিজ্ঞানের এটাই বিধান। দেয়ালের এ লিখন কী শাসকগোষ্ঠী পাঠ করছেন? নিহত দীপনের শ্রদ্ধেয় পিতা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের আবেগঘন উচ্চারণের সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত হোক।
লন্ডন, ৫ অক্টোবর ২০১৫
বিষয়: বিবিধ
১৪১৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে একটা বিষয় লক্ষণীয়। একটা সংকট বা বড় ঘটনার রেশ শেষ হবার আগেই আরেকটা বড় ঘটনা এসে পূর্বের ঘটনাকে নিচে ফেলে দেয়। সরকার এ ভাবে অত্যন্ত কৌশলের সাথে নিজের উদ্দেশ্যের অনুকুলে বড় বড় কাজ সম্পন্ন করে চলেছে" সেটা হতে পারে কাউকে ফাঁসি দেয়া বা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে নতুন কোন চুক্তি সম্পাদন করা।"
জাযাকাল্লাহ খায়রান
আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক,
দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত হোক।
আমীন
যথার্থ বিশ্লেষণে সহমত!
সকল হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার হলেই এ ধারা থেকে মুক্তি পাওয়া যেত!
দোষারোপের অপরাজনীতি উস্কে দিচ্ছে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা!
আপনি একটা কন্ক্লুসিভ স্টেইটমেন্ট দিয়েছেন -
এটার সাথে আমি একমত না কারণ আপনি নিশ্চিত করে বলছেন।
সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যাবহার করেওত এ'কান্ড করতে পারে।
অভিজিৎ এমেরিকান নাগরিক - সেক্ষত্রে বিদেশী প্রচার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
নাস্তিকদের খুন করলে ধর্মীয় গোষ্ঠিগুলোকে আগেই চাপে রাখা যাবে। সাথে বিদেশে প্রচার করা যাবে এর পিছনে জামাত-বিএনপির উসকানী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন