সংঘাত নয়, আলোচনা করতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৫:০২:০০ সকাল
সরকার যখন তাড়াহুড়া করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করে তখন দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী সরকারকে সাবধান করেছেন। সে সময় পত্রপত্রিকা ও টক শো’তে তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। তা থেকে আমাদের ধারণা হয়েছে, দেশের সংখ্যা-গরিষ্ঠ মানুষ সরকারের এ পদক্ষেপকে সমর্থন করেনি। শুধু তাই নয়, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আপিল ডিভিশনে যখন শুনানি চলে তখন আদালত আটজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের পরামর্শদাতা) নিয়োগ দেন। আট জনের মধ্যে সাতজন অ্যামিকাস কিউরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দেন। শুধুমাত্র একজন বিপক্ষে মত দেন। একইভাবে সংবিধান সংশোধনের জন্য যে সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিলো সেখানেও আওয়ামীলীগসহ যারা মতামত দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত উপেক্ষা করে সরকার আদালতের আংশিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে নেয়। তখনই সবাই ধারণা করেছেন, নির্বাচনের সময় এ নিয়ে বিরোধী দলের সাথে একটা জটিলতা সৃষ্টি হবে। এখন সরকার সে বাস্তবতার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বা বিশ্বাস নেই। এর প্রেক্ষিতেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে কিছুটা সঙ্গতিহীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এখানে চালু করা হয়। আওয়ামী লীগ এক তরফা ভাবে এবং অভিজ্ঞ মহলের মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তা বাতিল করে দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকারী দল স্পষ্ট ভাবে বার বার বলছে, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলয়ীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাবার কোন সুযোগ নেই। বিরোধী দল চাইলে অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। তবে সে সরকারের প্রধান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। বিএনপি বা ১৮দলীয় জোট এ প্রস্তাব প্রথম দিন থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা পরিস্কার বলে দিয়েছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেনা।
এটা সুস্পষ্ট যে বাংলাদেশে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ - এ দু দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এর প্রতি দেশের মানুষের কোন আস্থা থাকবেনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও তা মোটেই গ্রহণযোগ্য হবেনা। নির্বাচন নিয়ে এ জটিলতা সরকারী দল আওয়ামী লীগের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে এবং তা নিরসনের দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই পালন করতে হবে। এ সরল হিসাব আওয়ামী লীগ যদি না বুঝে তা হলে দেশ ও জাতির কাছে এর খেসারত তাদেরই দিতে হবে। বুদ্ধিজীবীদের অনেকে বারবার আগামী নির্বাচন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি অবস্থানে পৌঁছাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক বলেন, “নির্বাচন এসে গেছে। আট মাস বাকি আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না অন্তবর্তীকালীন সরকার—কারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা ঠিক করতে হবে। এখনই উপযুক্ত সময়। এখন সরকার ও বিরোধী দলকে মিলেমিশে আলোচনা করে এটি ঠিক করতে হবে।” ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের সাথে দেশের সবাই একমত যে সরকার এবং বিরোধী দল মিলেই এ সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে যেতে হবে। সংঘাত নয়, আলোচনার পথই গণতন্ত্রের পথ।
বিষয়: বিবিধ
৮৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন