সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের নেপথ্য-কারণ

লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:৩১:১৯ দুপুর

গত ২৯ আগষ্ট বৃটিশ পার্লামেন্ট এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। সিরিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্যে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামারোনের প্রস্তাব অধিকাংশ এমপি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বৃটিশ পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্ত যুদ্ধবাজ মার্কিন সরকারকে একটু বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। জর্জ বুশ বা বিল ক্লিনটনের সময় আমেরিকা যা করেছে তাতে অন্ধের মতো সমর্থন করেছে বৃটেন। ভিয়েতনাম, নিকারাগুয়া, বসনিয়া-কসোভো, ইরাক বা আফগানিস্থান আক্রমণের সময় বৃটেন আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে সিরিয়া আক্রমণ পিছিয়ে দিয়েছেন বারাক ওবামা।

ডেভিড ক্যামারোন তাঁর প্রস্তাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য সিরিয়া দখল বা সেখানকার শাসক বদল করা নয়। রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের বিরুদ্ধে বৃটেনের অবস্থান সুস্পষ্ট করা।’ এর জবাবে কোন কোন টোরি এমপি এমন কথাও বলেছেন যা খুব সুখকর নয়। তাদের প্রশ্ন, মার্কিনীদের সহযোগী হবার চিন্তা না করে সামরিক অভিযানের পরিণতি এবং বৃটিশস্বার্থ আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। তারা স্মরণ করিয়ে দেন, ইতোপূর্বে মার্কিনীদের সহযোগী হয়ে বৃটেনকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। লেবার পার্টি নেতা মিলিব্যান্ড তার বক্তব্যে পরিণতি বিবেচনার সাথে সাথে জাতিসংঘের অনুমোদনের উপর জোর দিয়েছেন। কোয়ালিশন সরকারের সহযোগী লিব-ডেম-এর অনেক এমপি নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরোধী। টোরি-পার্টির অনেক গুরুত্বপূর্ণ এমপি সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্কবানী উচ্চারণ করেছেন।

সিরিয়ায় সামিরক অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট ওবামা এখন মিত্রদেশগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। আমাদের ভয় ছিল, দুয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সামরিক অভিযান শুরু করবে। এ উদ্দেশ্যে বৃটেন গতকাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া এবং চীনের প্রতিনিধি সামরিক অভিযানের প্রস্তাবকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছে। সিরিয়া প্রশ্নে রাশিয়ার অবস্থান সামনে রাখলে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে তারা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো প্রয়োগ করবে। এর অর্থ হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের পক্ষে জাতিসংঘের অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হবে।

রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা একটি যুদ্ধাপরাধ। নিজ দেশের বেসামরিক মানুষ এবং শিশুদের উপর যদি বাশার সরকার তা ব্যবহার করে থাকে তা হলে সেটা আরো মারত্মক ধরণের যুদ্ধাপরাধ, বাশার আল-আসাদের এ জন্যে অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা নিছক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে হঠাৎ করে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্যে মরিয়া হয়েছে বলে ভাবার কারণ নেই। বাশার সরকার দু বছরের অধিক সময় থেকে নিজ দেশের মানুষকে নির্যাতন, হত্যা ও বিতাড়ন করছে। এর আগে তার পিতা হাফিজ আল-আসাদও অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। এত দিন মার্কিন সরকার এবং তার সঙ্গীরা কোথায় ছিলেন? এখন হঠাৎ করে কেন তারা ঘুম থেকে জেগে উঠছেন?

আসলে পাশ্চাত্যের সত্যিকার মাথাব্যথা ইরানকে নিয়ে। সিরিয়ার আসাদ সরকারকে রক্ষার ব্যাপারে ইরান বদ্ধপরিকর। যদি বাসার সরকার শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করেন তা হলে তা হবে ইরানের বিজয়। আসাদ যে ভাবে ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্দয়ভাবে হত্যা করছেন তাতে পাশ্চাত্য শক্তি ভাবছে, বাশার হয়তো শেষ পর্যন্ত টিকে যেতে পারেন। ইরান তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। বাশার টিকে যেতে পারলে এ সাফল্য হবে ইরানের। পার্শ্ববর্তী দেশের হিজবুল্লাহর সাথেও ইরানের সখ্যতা রয়েছে। পাশ্চাত্যের মোড়লরা ইরানের সাফল্য ও শক্তিবৃদ্ধি মেনে নিতে পারে না। যুদ্ধের নাকাড়া এ জন্যেই এখন বাজানো হচ্ছে। দামেস্ক এবং সিরিয়ার অন্যান্য শহরের উদ্দেশ্যে ক্রুজ মিসাইল চালালে সামরিক-বেসামরিক অনেক মানুষ নিহত হবে। শুধু তাই নয়, সিরিয়া প্রাচীন সভ্যতার লীলভূমি। সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করে বাগদাদের মতো সিরিয়ার অনেক ঐতিহ্যবাহী শহর ধ্বংস করে দেয়া হবে। সিরিয়ার পতন দেখে ইরান নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। ইরান কোন ধরণের তৎপরতা শুরু করলে ইরানে হামলা করা একটা অজুহাত সৃষ্টি হবে।

১৯৮৮ সালে ইরাকের সাদ্দাম সরকারের ব্যাপারে যুক্তরাস্ট্রের ভূমিকা আমাদের মনে আছে। আজ সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে, তখন হালাবজায় কুর্দিদের উপর সাদ্দাম সরকার একই অস্ত্র প্রয়োগ করে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে। তখন সাদ্দাম ছিলেন আমেরিকার বিশ্বস্ত বন্ধু। আমেরিকা তখন সাদ্দামের বিরুদ্ধে টু শব্দ করেনি। বরং তারা সাদ্দামকে এ অভিযোগ থেকে রক্ষা করার জন্যে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে হালাবজা হত্যাযজ্ঞের জন্যে ইরানকে অভিযুক্ত করেছে। সাদ্দাম তখন আমেরিকার পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৮২ সালে লেবাননে হামলা চালিয়ে ইসরাইল ১৭ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। আমেরিকা তখন যথানিয়মে ইসরাইলকে কিছু বলেনি। শুধু তাই নয়, আমেরিকা প্রশাসন ইসরাইল-প্যালেস্টাইনের শান্তি আলোচনা দীর্ঘায়িত করে ইসরাইলকে ফিলিস্তিনীদের নিশ্চিহ্ন করার সুযোগ দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো জর্দান দখল করে সেখানে ফিলিস্তিনীদের বাস করতে দেয়া হবে। এটাই মনে হয় মার্কিন-ইসরাইল কৌশলী পরিকল্পণা।

আরেকটি বিষয় মার্কিন বিবেচনায় রয়েছে। সিরিয়ায় যারা বাশার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের শক্তিশালী করার জন্যে আল-কায়েদার সাথে জড়িত বা তাদের চিন্তাধারার সাথে সমভাবাপন্ন বিভিন্ন দল-উপদল কাজ করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। এটা আরব বিশ্ব, বিশেষ করে সৌদি আরবসহ আমীর ও শেখ শাসিত দেশগুলোর শাসকদের শঙ্কিত করে তুলেছে। সৌদি সরকার সিরিয়া প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ থাকার শর্তে রাশিয়াকে বড় ধরণের ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে অন-লাইন মিডিয়া খবর প্রকাশ করেছে। পাশ্চাত্য সহযোগিতায় বিদ্রোহীরা বিজয়ে হয়ে গেলে নতুন রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকবে, এ ধরণের কোন নিশ্চয়তা নেই। বিদ্রোহীদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণের রাখার লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা দ্রুত সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পণা গ্রহণ করেছে।

এ দিকে তুরস্কসহ সিরিয়ার অনেকগুলো পার্শ্ববর্তী শরণার্থীদের ভারে জর্জরিত। কোন কোন দেশে বোমা ও বিমান হামলার শিকারও হয়েছে। তারা দ্রুত বাশার সরকারের পতন চায়। বাশার সরকারের পতন চাচ্ছে ইরান-বিরোধী উপসাগরীয় দেশগুলোও। দীর্ঘমেয়াদী গৃহযুদ্ধের পরও বাশার সরকার এখনো টিকে রয়েছে। তুরস্ক এবং আরব লীগ তাই সর্বশেষ বিকল্প সামরিক হস্তক্ষেপের উপর জোর দিচ্ছে। সিরিয়ার রাসায়নিক হামলার জন্য আসাদ সরকারকে দায়ী করেছে আরব লিগ ও পশ্চিমা শক্তিগুলো। কিন্তু অপর দুই বিশ্বশক্তি রাশিয়া ও চীন তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছে। ইরান ও রাশিয়া সিরিয়ায় হামলার পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ ওই অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সংকটের ব্যপারে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানায় রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটানোর প্রচেষ্টা এবং ওই অঞ্চলে আবারো সামরিক হস্তক্ষেপের কৃত্রিম ভিত্তিহীন অজুহাত সৃষ্টি সিরিয়ায় নতুন করে দুর্ভোগ ডেকে আনার সমূহ আশংকা রয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের অপরাপর দেশ ও উত্তর আফ্রিকার জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনবে।

আমাদের প্রশ্ন, সামরিক হস্তক্ষেপ কি সিরিয়ায় কোন কল্যাণ স্থায়ী বয়ে আনতে পারবে? ইরাক এবং আফগানিস্থানের তিক্ত দৃষ্টান্ত আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। সিরিয়া কসবো নয়। কসবো’র প্রশ্নে রাশিয়া বা ইরানের কোন মাথাব্যথা ছিল না। সিরিয়ার সাথে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ, রাশিয়া, ইরান এবং আরববিশ্বের ঘনিষ্ট স্বার্থ জড়িত রয়েছে। রাশিয়ার সাথে সিরিয়ার বানিজ্য, অস্ত্র এবং কৌশলগত চুক্তি রয়েছে। ইরাক, আফগানিস্থান এবং মিশর নিয়ে রাশিয়া মাথা না ঘামালেও সিরিয়ার ব্যাপারে রাশিয়া কোন ছাড় দিতে প্রস্তুত বলে মনে হয় না। মধ্যপ্রাচ্যেকে পুরোপুরি মার্কিন কব্জায় ছেড়ে দেয়া রাশিয়া মেনে নিতে পারে না। তাই সিরিয়ায় সামরিক হামলার সাথে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ত সংশ্লিষ্টতাকে পশ্চিমা দেশগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। নিরাপত্তা পরিষদে ব্যাপারটা উত্থাপিত হলে রাশিয়া সেখানে ভেটো প্রয়োগ করবে। আবার জাতিসংঘের অনুমতি ব্যতিরেকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোপূর্বে যে করেছে। অন্য কোন বৃহৎ শক্তিও ভবিষ্যতে এটা অনুসরণ করতে পারে। বিশ্বশান্তির জন্যে আগামীতে তা হুমকি হয়ে থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে পাশ্চাত্যের মোড়লদের লুকোচুরি মনোভাব মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিস্কার। মার্কিন-ইসরাইল পরিকল্পণার অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। সিরিয়ায় সামরিক অভিযানকে সে পরিকল্পণার অংশ হিসেবেই অনেকে দেখছেন। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এর অংশীদার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বৃটিশস্বার্থ নিশিচত করতে চান।

কিন্তু যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়ার সাথে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রথম প্রভাব অনুভূত হচ্ছে তেলের বাজারে। যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়ার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করেছে তেলের দাম। এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ার বাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। তেলের দামের সাথে বেড়েছে স্বর্ণের দামও। বৃটেনের মানুষের জন্যে এটা অশনি সঙ্কেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর ধকল সহ্য করতে পারলেও বৃটেন পারবে কি না তা বিবেচনায় নিতে হবে। ইরাক ও আফগানিস্থানের ব্যাপারে মার্কিন তাবেদারীর খেসারত বৃটেন এখনও বহন করছে। আরেকটি যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা বৃটেনের নেই। বৃটিশ এমপিরা তা অনুধাবন করেই যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে মার্কিন ও ইসরাইলী লবি বসে নেই। বৃটেনে যাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ তাদের উপর এ দু লবির প্রভাব খুব বেশি। তাই শেষ পর্যন্ত ক্যামারোন সরকার কি করবে তা নিশ্চিত নয়।

সিরিয়ায় সামরিক হামলা পরিচালিত হলে এর মিত্র দেশগুলো কি পদক্ষেপ নেবে তা এখনো পরিস্কার নয়। রাশিয়া, ইরান এবং আরব বিশ্ব এতে জড়িয়ে পড়লে এর পরিণতি বিশ্বসম্প্রদায়কে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সিরিয়া নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ লক্ষ্য করে বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের মনে সে আশংকাই বার বার উঁকি দিচ্ছে। মানুষ স্বৈরাচারী বাশার সরকারের পতন কামনা করে। কিন্তু সামরিক হস্তক্ষেপ সে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ বা বিশ্ববাসীকে বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিক তা কারো কাম্য হতে পারে না।

লন্ডন ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩

বিষয়: বিবিধ

১৬১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File