‘I may not agree with what you say, but to the death I will defend your right to say it.‘ - Voltaire

লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৩:৪৯ রাত



অবশেষে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সরকার গ্রেফতার করেছে। তাঁকে গ্রেফতার করা হবে এ রকম গুজব বেশ কিছুদিন থেকে আমরা শুনে আসছি। শোনা যায়, গত কয়েকমাস থেকে তিনি গ্রেফতার ও গুম হওয়ার আশঙ্কায় আমার দেশ অফিসে রাত্রি যাপন করছিলেন। আজ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে এবং পুলিশের দাবির প্রেক্ষিতে আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আদালতে মাহমুদুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে উলঙ্গ করে দিয়েছে। তিনি আদালতের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এখানে আমার পক্ষে অনেক আইনজীবী উপস্থিত আছেন। তারা কেউ আমার পক্ষে কথা বলবেন না। কারণ আমি তাদের কাউকে আমার পক্ষে নিয়োগ করছি না। আইনজীবী নিয়োগ করলে তারা আমার রিমান্ড বাতিল এবং জামিন চাইবেন, যা আপনি নিতে পারবেন না। আপনার প্রতি সরকারের যে নির্দেশ আছে আপনি তা পালন করুন।’ তার এ কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি দেশের বিচারব্যবস্থা কতটুকু অধঃপতিত হয়েছে।

সংবাদপত্রের একজন সম্পাদককে যে ভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ড দেয়া হয়েছে তা কোন স্বাধীন দেশে কল্পণা করা যায় না। ঢাকার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, পুলিশ যখন জোর করে তার কামরায় প্রবেশ করে তখন তিনি চা পান করছিলেন। চা শেষ না করেই তাকে পুলিশের সাথে উঠতে হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলার এবং দু’রাকাত নামাজ পড়ার সুযোগও তার মেলেনি। পত্রিকার কোন সম্পাদক দোষ করলে তার নামে মামলা-মোকদ্দমা এবং তাকে আদালতে উপস্থিত হবার জন্যে শমন জারি করা যেতে পারে। সভ্য দেশে এটাই নিয়ম। শমন পেয়ে তিনি অবশ্যই আদালতে হাজির হতেন, পালিয়ে যেতেন না। কমান্ডো স্টাইলে পত্রিকা অফিসে হামলা করে তাকে ধরে এনে তড়িঘড়ি করে জেলে পুরে দেয়া কোন সভ্য দেশের আচরণ হতে পারে না। তিনি কি খুন অথবা ডাকাতি মামলার পলাতক আসামী? তাঁর অপরাধ তিনি সরকারের কঠোর সমালোচক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে এ ভাবে নিপীড়ন করা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দেশের সকল সচেতন নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা সংবাদপত্রের কন্ঠরোধের এ ধরণের ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন বলে আমরা আশা করছি।

সম্প্রতি সরকার বিভিন্ন ব্লগে ইসলাম বিরোধী লেখার অভিযোগে কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে। আমরা লক্ষ্য করছি, যারা ব্লগারদের গ্রেফতারকে স্বাধীন মতামতের কন্ঠরোধ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। মুক্তবুদ্ধি এবং প্রগতির ফেরিওয়ালা হিসেবে চিহ্নিত এক শ্রেনীর লোকের এ ধরণের আচরণ দেখে আমাদের বিস্ময় লাগে। আমাদের মতে, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারে সকল দল ও মতের লোকের আপোসহীন ভুমিকা রাখতে হবে এবং সকল মতের মানুষের এখানে সমান অধিকার থাকতে হবে। সরকারী দল, বিরোধী দল, শাহবাগ মঞ্চ, হেফাজতে ইসলামসহ দেশের সকল নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি। অবশ্য মতামত প্রকাশের নামে কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা অথবা কারো গণতান্ত্রিক কর্মসূচী পুলিশের ছত্র-ছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রতিহত করা সুস্থ গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির পরিপন্থী। মতামতের স্বাধীনতার ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই ‘ট্রাফিক লাইট’ মেনে চলতে হবে।

বাংলাদেশের জন্যে আজকাল গ্রেফতার এবং রিমান্ড কোন খবরই নয়। বাংলাদেশে ডাকাত এবং খুনিরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়ায়, সন্ত্রাসীরা বুক ফুলিয়ে হাঁটে, কিন্তু দেশে রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে । পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি রয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুসারে দেশের কারগারগুলোতে মোট ধারণক্ষমতা ৪১৯০৭ জন। আর কারাগারগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে দেশে বর্তমান বন্দির সংখ্যা ৮১৩০৫ জন। এর বাইরে বিএনপি এবং জামাতের প্রায় দেড়লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাদের একটা ছোট অংশ গ্রেফতার হলেও তাদের আটক করে রাখার জন্যে সরকারকে নতুন করে দেশের বেশ কিছু স্থাপনাকে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। অবশ্য বিরোধী মতামতকে সরকার যে ভাবে হামলা-মামলার মাধ্যমে দমন করতে চেষ্টা করছে তাতে মহাজোটের বাইরের লোকদের জন্যে পুরো দেশটা কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না।

বাংলাদেশে এক সময় শুধু খুন-ডাকাতির মত ফৌজদারী অপরাধের সাথে জড়িতদের রিমান্ডে নেয়া হতো তদন্তের স্বার্থে, আরো তথ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে । বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের আটক করে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। রিমান্ডে নেয়ার পর অভিযুক্তদের লোমহর্ষক পন্থায় নির্যাতন করা হয়। রিমান্ডের নামে আসামীদের উপর পুলিশের অকথ্য নির্যাতনের খবর বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় এসেছে। পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে অপরাধ না করলেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে দেয়। অনেকে সারা জীবনের জন্যে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয়। দুঃখের বিষয়, রিমান্ডের নামে এ ধরণের পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছে না। আমাদের কথাকথিত মানবাধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজ এ ব্যপারে বিস্ময়কর নিরবতা পালন করছেন। রিমান্ডে যারা নির্যাতিত হন তারা আরো নির্যাতনের ভয়ে এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতেও পারছেন না। ইতোপূর্বে মাহমুদুর রহমানকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন তাকেও অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা রিমান্ডের নামে সকল প্রকার পুলিশী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকার ৬০টির বেশি মামলা করেছে। শাহবাগ মঞ্চ থেকে অনেক দিন থেকে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হচ্ছে। গত চার মাস থেকে তিনি কার্যতঃ আমার দেশ অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। এতদিন পর হঠাৎ করে তাকে কেন গ্রেফতার করা হলো তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পণা রয়েছে। পুলিশের বরাতে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি প্রকাশ, কথিত ধর্মীয় উস্কানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। কিন্তু এ সকল অভিযোগের কোনটাই নতুন নয়। অনেক দিন থেকে সরকারের নেতা-নেত্রীর কন্ঠে তার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে চাইনি। কিন্তু তিনি (মাহমুদুর রহমান) আমাদের বাধ্য করেছেন।’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, ‘ধর্ম অবমাননা করায় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ ধরণের অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা কি বলেন, আমরা তা দেখার অপেক্ষায় আছি।

আজকের (১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার) দৈনিক আমার দেশ-এ ‘উকিলিকসে শেখ মুজিবের শাসনকাল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন রয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘অতি গোপনীয় নথি ফাঁস করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী ওয়েবসাইট উইকিলিকস এবার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালের নানা দিক। .. .. গোপন এসব নথিতে রয়েছে সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ, দেশে জরুরি অবস্থা জারিসহ সেই সময়কার প্রতিটি ঘটনারই নির্মোহ বিশ্লেষণ। নথিতে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ, ঢাকায় জুলফিকার আলী ভুট্টোকে বীরোচিত সংবর্ধনা ও সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের মৃত্যু সম্পর্কেও রয়েছে বহু অজানা তথ্য।’ আগামীকাল ‘শেখ মুজিব: দি নিউ মোগল’ শীর্ষক প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ হবার ঘোষণাও সেখানে দেয়া হয়। অনেকের মতে সর্বশেষ এ ঘোষণার কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ে’র কথিত দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে গ্রেফতার করে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় সরকার।

আমরা জানি না, ‘শেখ মুজিব: দি নিউ মোগল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে কি অজানা তথ্য রয়েছে। তবে যারা বাকশালের শাসন দেখেছেন এবং জাসদসহ বামপন্থীদের যারা আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নির্যাতন ভোগ করেছেন তারা এখনো সবকিছু ভুলে যাননি। কিন্তু যাদের জন্ম স্বাধীনতার পরে হয়েছে তারা বর্তমানে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা আওয়ামী লীগের সে শাসন দেখেননি। হাসানুল হক ইনু, মতিয়া চৌধুরী, নুহ-উল-আলম লেনিন প্রমুখ বিরোধী দলে থাকলে বর্তমান প্রজন্ম তাদের নিকট থেকে অনেক কিছু জানতে পারতো। আগামীকাল ‘শেখ মুজিব: দি নিউ মোগল’ শীর্ষক প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলে এ ব্যাপারে আরো জানার জন্যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঔৎসক্য সৃষ্টি হবে। সরকার হয়তো ভাবছে, এটা প্রকাশিত হলে আগামী ভোটের রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। এ কারণে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হয়নি, গোয়েন্দা পুলিশ তার কক্ষে থাকা ব্যবহৃত ল্যাপটপ, কয়েকটি পেনড্রাইভ, দুটি হার্ডডিস্ক, একটি সিপিইউ জব্দ করে নিয়ে যায়। হতে পারে এ সকল সিডি বা পেনড্রাইভের মধ্যে ‘উকিলিকসে শেখ মুজিবের শাসনকাল’ সংক্রান্ত ডকুমেন্টসও ছিল। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ আমার দেশ অফিসে এসে সংবাদকর্মী ও ছাপাখানার কর্মচারীদের বের করে দিয়ে ছাপাখানায় তালা মেরে দেয়। ছাপাখানায় তালা মারা থেকে আমরা বুঝতে পারি, আগামীকাল আমার দেশ পত্রিকা বের হোক তা সরকার চায় না।

কোন কোন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে কয়েকদিনের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আরো কয়েকজন জামাত-নেতার বিচারের রায় ঘোষণা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা তুলনামূলক ভাবে শান্ত থাকলেও দেশের বিভিন্নস্থানে হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারী দলের কর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। চট্টগ্রামের ফটিক ছড়িতে আওয়ামী লীগ-হেফাজত সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে এবং বহুলোক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দেশের আরো কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। আগামী দিনে তা আরো ছড়িয়ে যেতে পারে। মানবতা বিরোধী আদালতের রায় ঘোষণার পর জামাত-শিবির নতুন উদ্যমে মাঠে নামার চেষ্টা করবে। মাহমুদুর রহমান বা আমার দেশ পত্রিকা হেফাজতে ইসলাম এবং জামাত-শিবিরের খবর প্রচারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম। সরকার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে আমার দেশকে প্রথমে দুর্বল করতে চায় এবং পরবর্তীতে হয়তো কোর্টের রায়ের মাধ্যমে আমার দেশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। অতীতে আওয়ামী লীগের সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ইতিহাস আছে। বাকশাল-এর সময় মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে আর সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। অসংখ্য সাংবাদিক বেকার হয়ে নানা দুর্ভোগের শিকার হন। আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে সে সময় জাসদের গণকন্ঠ এবং মাওলানা ভাসানীর হককথা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। বেগম জিয়া মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সরকার বাকশালের পথে এগোচ্ছে। দেশের মানুষ অভিজ্ঞতার আলোকে বেগম জিয়ার এ মন্তব্যের সত্যতা অন্বেষণ করবে।

সরকারের অনেক ভুল পদক্ষেপ এবং হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সকল মানুষের মধ্যে একটা মারাত্মক ধরণের বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি নিজে এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। ঢাকার সাংবাদিকদের মধ্যেও বিভাজনের খবর আসছে। সরকার হয়তো ভাবছে, বিরোধী দলের সবচেয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর আমার দেশকে বন্ধ করার এটাই মোক্ষম সময়। সরকারের হিসাব অনুযায়ী আমার দেশ রক্ষার জন্যে শিবির-বিভক্ত সাংবাদিকরা ঐকবদ্ধ কোন আন্দোলনে যেতে পারবেন না। আমাদের মতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমার দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে না আসেন তা হলে সংবাদ পত্রের স্বাধীনতার জন্যে তা হবে আত্মহত্যার নামান্তর। একটি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের কোন বিকল্প নেই। সরকারের দমননীতির কারণে আজ আমার দেশ বন্ধ হয়ে গেলে আগামী কাল বাংলাদেশের কোন সাংবাদিক বা সংবাদপত্র সরকারের সমালোচনা করতে সাহস পাবে না। আমার দেশের সম্পাদকীয় নীতি, খবর প্রকাশের ধরণ বা সাধারণ ভাবে পত্রিকার মানের ব্যাপারে আমাদের অনেকের দ্বিমত রয়েছে, থাকাটা স্বাভাবিক। আমরা আমার দেশের সমালোচনা করবো, পছন্দ না হলে এ পত্রিকা পড়বো না বা সেখানে বিজ্ঞাপন দেব না। কিন্তু আধুনিক মানুষ হিসেবে আমার দেশের ভিন্নমত পোষণের অধিকারকে আমরা সংরক্ষণ করবো, মানব সমাজের বুদ্ধির মুক্তি এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এটা অনিবার্য দাবি। ইউরোপীয় রেনেসাঁর অন্যতম অগ্রনায়ক ফরাসী চিন্তাবিদ ভল্টেয়ার বলেন, ‘ভিন্নমতের কারণে যে অপরকে নির্যাতন করে সে দানব। আমি আপনার সাথে একমত না হতে পারি, কিন্তু জীবন দিয়ে আমি আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারের জন্যে লড়াই করে যাব।’

আমরা মুক্তবুদ্ধি-সম্পন্ন মানুষ হবো, না দানব হবো সে সিদ্ধান্ত আমাদেরই গ্রহণ হবে।

লন্ডন ১১ এপ্রিল ২০১২

বিষয়: বিবিধ

১২৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File