সরকার বনাম ব্লগার-জামায়াত-হেফাজত

লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৫৫:১০ রাত

অবশেষে মনে হল সরকার হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিতে যাচ্ছে। সরকার নির্বিঘেœ হেফাজতকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করার সুযোগ দিতে চায়। কারণ, যদি কোনোভাবে একে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তাহলে হেফাজতের অসংলগ্ন ঢেউ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার বাধাহীন কর্মসূচী পালনের অবকাশ দেওয়া হলে লংমার্চে এসেই হেফাজতের মুরোদ ক্ষয়ে যাবে।

হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক কোনো সংগঠন নয়। তাদের সুদূর প্রসারী কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও নেই। ব্লগে ধর্মবিষয়ক নেতিবাচক লেখালেখির প্রতিক্রিয়া হিসাবেই এ আয়োজন ও কর্মসূচী। এ কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তাদের ভেতরে জমে-থাকা ক্ষোভ প্রশমিত হবার অবকাশ পাবে। সরকার ও দেশবাসী এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবে।

সংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ-এজেন্ডাভিত্তিক সংগঠন না হলেও তৃণমূল পর্যায়ে হেফাজতের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। এর সমর্থকরা আবার গো-মূর্খ টাইপের। সামান্য বাধার মুখে এরা আবেগের বশবর্তী হয়ে সহজেই সংগঠিত হবার ক্ষমতা ও প্রবণতা রাখে। বাধার মুখে না পড়লে মোটামুটি একটি সমাবেশ করে জনতার উপস্থিতি দেখে এরা তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরে যাবে। পরবর্তী কোনো কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামতে গেলে যে কাঠখড় পোড়াতে হবে, তা এদের সংগ্রহে নেই। ইতোমধ্যে লংমার্চ করতে গিয়েই অন্য অনেকের সব জ্বালানি নষ্ট হয়ে গেছে বোধহয়।

ব্লগারদের ব্যাপারেও সরকারের অবস্থানকে নেতিবাচক বলা যায় না। কখনো ব্লগারদের তালিকা করার কমিটি, কখনো কোনো ব্লগকে সাময়িকভাবে বন্ধ করার তোড়জোরের মাঝেই কাউকে কাউকে গ্রেফতার করছে, করবেও। সরকারের এ সব আচরণ ব্লগারদেকে মেনে নিতে হবেই। কারণ, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো ছাতার আশ্রয়ে তাদের কাক্সিক্ষত প্রশান্তি মিলবে না। এই আপাত উৎপাতকে নিজেদের প্রতি আশীর্বাদই বলতে হবে। কারণ, ছয় তারিখের চাপ হালকা করার জন্য সরকারকে এতটুকু পদক্ষেপ নিতেই হয়। সরকার আবার আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর আক্রমণকারী হিসাবে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এসব আচরণ দিয়ে সরকার বুঝিয়ে দিচ্ছে, ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক লেখালেখি যেমন পছন্দ নয়, তেমনই এর জের ধরে সহিংসততাকেও সমর্থন করা যায় না। এভাবেই মনে হয়, শ্যাম-কুল দুটি রক্ষা পেতে পারে।

জামায়াতের ব্যাপারে সরকারের কঠোরতার বিকল্প নেই। কারণ, জামায়াত অত্যন্ত সংগঠিত দল, আবার তথাকথিত আদর্শবাদী। আর কিছু না হোক, আদর্শের দোহাই দিয়ে নিজ সমর্থকদের অন্ধ করে রাখতে পারে। এই আদর্শকে আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগসহ অন্য কোনো বুর্জোয়া দলেরই নেই। ষাট-সত্তরের দশকে বাম দলগুলোর সে ক্ষমতা ছিল। এখন সে তো শুধুই ইতিহাস। জামায়াত-শিবিরে যদি থাকে আদর্শের ভুল ব্যাখ্যা, বিপথগামিতা, তাহলে অন্যসব দলগুলোতে রয়েছে আদর্শহীনতার পঁচা দুর্গন্ধ। জামায়াত চাপের মুখেও, বৈরি আবহাওয়ার মাঝেও প্রণোদনার প্রমাণ রাখছে। তাই এদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত না করতে পারলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে। কারণ, জামায়াত আওয়ামী লীগকে সবসময়ই শত্র“ হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। এই হুমকি অতিক্রমণের উপায় হল কঠোর জবরদস্তি। অন্যদের কাছে তা হঠকারিতা মনে হলেও, এটা অবিকল্প উপায়। এ-নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর।

বিএনপি বিপর্যস্ত; জাতীয় পার্টি, বাম-ঘরানাদলসহ পীর-মাশায়েখের নানা গ্র“প সরকারের পকেটস্থ। হঠাৎ মাথাছাড়া দিয়ে ওঠা এই হেফাজতই যা একটু গোবলেট পাকিয়ে দিচ্ছিল। একে উত্তেজিত না করে, সমর্থনের মাধ্যমে প্রশমিত করতে পারলেই আওয়ামী লীগের কেল্লা ফতেহ।

জয় বাংলা, জয় আওয়ামী লীগ...

বিষয়: রাজনীতি

১০১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File