রোহিঙ্গাদের মুক্তির পথে বাধা কে/ কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ০৭:২৩:৪৫ সন্ধ্যা
তিন দশকের বেশি সময় পার হয়ে গেল বার্মার অন্তর্গত ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের দেশহীন নাগরিকত্বহীন জীবনব্যবস্থার। শুধু দেশহীন হলে হয়-তো মানা যেত, এখানে সঙ্কটের গভীরতা হল, শাসক শ্রেণি তাদেরকে নানাভাবে নিপীড়নের, যার একমাত্র উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করা, আইন প্রণয়ন করে তা বেশ সফলভাবেই প্রয়োগ করে যাচ্ছে। আর এভাবেই ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এমন করে চলতে থাকলে সামনের পঞ্চাশ বছরও অপেক্ষা করতে হবে না যে, হয়-তো রোহিঙ্গা নামের কোনো প্রজাতিই এ অঞ্চলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরিপূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমার আজকের লেখার বিষয় হল, এই যে একটি জাতির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম, তা কেন এবং কীভাবে হল? এখানে বার্মিজ জান্তা বড় একটা ফ্যাক্টর, তা অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু এর বাইরে আর কী কী প্রতিবন্ধকতা বা উপাদান রয়েছে, যা তাদের জীবনকে আরো সঙ্কটের মুখে ফেলে দিয়েছে এবং বার্মিজ জান্তার বাধাবিপত্তি কাটিয়ে উঠতে কোনো সহায়তাই করছে না?
এখানে গুটিকয় বর্ণনা করা হবে, যা ইতিহাস-পাঠের ফল। এর বাইরেও আরো থাকতে পারে। পাঠক যদি মন্তব্যের মাধ্যমে তা সংযোজন করেন, তাহলে যারা এ নিয়ে ভাবছেন, তাদের জন্য পথ রচনা করা সহজ হবে। তাই সত্যি যদি এনিয়ে কারো মানবিক কোনো চিন্তা-চেতনা কাজ করে, তাহলে উপস্থিত ক্ষোভ নিয়ে নয়, আবেগতাড়ি হয়ে নয়; নয় অতীতের আক্ষরিক অনুসরণে কিংবা শাস্ত্রের প্রথাগত বিশ্লেষণে; বরং জগত-জীবনের নিয়ম অনুসারে এর সমাধানে, প্রকৃত ও মূল কারণগুলো তুলে ধরা উচিত এবং সে অনুসারেই রোহিঙ্গা মুক্তির পথ রচিত হতে পারে। এবার তাহলে কারণগুলোর আলোচনা শুরু করা যাক।
১। এখন রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার। কিন্তু যখন সুযোগ-সুবিধা ছিল, তাদের নাগরিকত্ব ছিল, তখন তারা আত্ম-গঠনে খুব একটা আগ্রহ বা সচেতন ছিল বলে মনে হয় না। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতেই জাগরণের জোয়ার শুরু হয়, হয়ত প্রকারান্তরে তা ইউরোপীয় জাগরণের রেশ। তখন পৃথিবীর সর্বত্র, দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে, পড়াশোনা করে নিজ এবং জাতির জন্য কিছু করার মতো মানুষ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রশ্ন হল, তখন কতজন রোহিঙ্গা এ পথে গিয়েছেন? আজ তাদের চিহ্ন কই? অর্থাৎ বলার উদ্দেশ্য হল, রোহিঙ্গাদের মাঝে আত্মজাগরণের কোনো মানসিকতা নেই। অতীতে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মনে হয়, এটাই তাদের মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
২। অতীতে না-হয় ছিল না, ঐতিহাসিক কারণে তা হয় নি। কিন্তু কাল-পরম্পরায় বিশ্বে যখন জাগরণের ঢেউ শুরু হল, বিশেষত ব্রিটিশ শাসনের পর, তখন তারা জাগতে পারে নি কেন? এবং বর্তমানেও তা হচ্ছে না কেন? এর একটি সহজ উত্তর হতে পারে, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে আসার পর তারা শুধু দৌড়ের ওপর আছে। স্থির হয়ে চিন্তা করার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। সত্য, ১০০% সত্য। কিন্তু একটি জাতির মুক্তির কথা চিন্তা করতে হলে দৌড়ের ওপর থেকেও জগত ও জীবনের উপাদান সংগ্রহ করতে হয়। আত্মজাগরণসহ জাতীয় জাগরণের মূল যে মন্ত্র, অর্থাৎ শিক্ষা এর ব্যাপারে কোনো রকমের আপোষ মানেই হল নিশ্চিত পরাজয়। গভীরতর নিপীড়নের মুখে তারা নানা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেও শিক্ষার্জনের ব্রত নেয় নি কেউ। তাই তাদের অন্ধকার কাটছে না। এটা তাদের মুক্তির পথে অন্যতম বাধা।
৩। তাদের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষা আছে। বিশেষত বাংলাদেশে প্রচলিত কওমি ধারার শিক্ষার সঙ্গে তাদের খানিকটা হলেও পরিচয় আছে। সেই সুবাদেই এদের কেউ কেউ, একেবারে নগণ্য যদিও, মধ্য প্রাচ্যের ধর্মীয় বিষয়-আশয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষা সারা বিশ্বেই এক রকমের গ-িবদ্ধ জীবন-চর্চার মাধ্যম হয়ে আছে, যা বৃহত্তর জীবন-ব্যবস্থার পথে নিয়ে যেতে পারে নি, পারবেও না। এই একান্ত ধর্মীয় শিক্ষা-ই তাদেরকে মূল ধারায় গা মেলাতে বাধা প্রদান করে। তাই তারা জগতবিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে নিপতিত হয়। এই অন্ধকার তো অন্যের জাদু বলে কাটার নয়, তা তাদের কে বোঝাবে?
৪। কোনো কোনো লেখায় দেখা যায়, ব্রিটিশ-শাসনের শেষ পর্বে এরা জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। জিন্নাহ কোন কারণে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন নি, তা জানা নেই। কিন্তু এরপর এরা, বোধহয়, বার্মার শাসক-জনতার সাথে আর খাপ খাওয়াতে পারে নি। সে চেষ্টাও করে নি। আর সংখ্যগরিষ্ঠ জনতার শাসনে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না-পারাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা। সে না-হয়, সে সময়ে ছিল। এর পরবর্তীতেও এরা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারেন নি। আর তাই সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর বার্মার জান্তা তাদেরকে দুষ্ট গরু হিসাবে চিহ্নিত করে গোয়াল শূন্য করার নিপীড়নমূলক নীতি ঘোষণা করে বসে।
৫। যখন তাদেরকে রাষ্ট্রে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হল, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হল, তখন তারা কূটনৈতিক তৎপরতার আশ্রয় না নিয়ে হঠকারী সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। এর পেছনের মূল কারণ অবশ্যই অশিক্ষা! এতে স্থানীয় রাখাইনরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের আত্ম-অধিকারের আন্দোলনে যদি প্রতিবেশী সম্প্রদায় রাখাইনদের সমর্থন আদায় করতে পারতো, তাহলে তা তাদের জন্য বেশ উপকারী হত এবং আজকের পরিস্থিতি হয়ত তৈরি হতো না। কিন্তু নিকট প্রতিবেশীকে নিপীড়নের মাধ্যমে দূরে ঠেলে দেওয়া তাদের বড় রকমের ভুল।
৬। আশির দশকে যখন পুঁজিবাদী বিশ্বের সাহায্যে আফগানে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে, তখন ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত রোহিঙ্গা তরুনরাও এতে উৎসাহিত হয়। যেহেতু পূর্ব থেকেই তারা দেওবন্দি ধারার শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত এবং এই দেওবন্দি ধারা-ই রুশ-আফগান যুদ্ধে বড় রকমের ভূমিকা পালন করে, তাই এতে তাদের স্বপ্ন ডানা মেলে উড়তে থাকে। এমন-কি শোনা যায়, এরা আরাকান অঞ্চলসহ বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কিছু অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন আরাকানের জন্য ব্যর্থ চিন্তায় মগজ ধোলাই করতে থাকে। অর্থাৎ এভাবেই তারা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ তথা হুজি, আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে সম্যক জ্ঞাত। এটাও তাদের ভেতরে এবং বাইরে সমর্থন হারানোর বড় কারণ।
৭। আশির দশকে যখন তাদের ওপর প্রচ- নিপীড়নের সূচনা, তখন কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশই তাদের জন্য কর্ম ও নাগরিকত্বের সুবিধা উন্মোচিত করে। সে সময়ে অসংখ্য, কোনো কোনো হিসাব মতে, খোদ সৌদি আরবেই প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসিত করা হয় এবং এরা সেখানকার সৌখিন জীবনের অংশীদার। এর বাইরের সুনিশ্চিত তথ্য জানা নেই। তাহলে এই নিপীড়িত জাতির মধ্য থেকে সুবিধা-প্রাপ্ত লোকেরা নিজেদের আত্ম-উন্নয়নের জন্য কী করেছেন? তারা জাতীয় মুক্তির জন্য কী করেছেন? তারা এমন কোনো ব্যক্তির জন্ম দিতে পেরেছেন, যিনি তাদের স্বপ্ন নিয়ে, দুঃখগাঁথা নিয়ে বিশ্ব দরবারে পেশ করতে পারেবন? শোনা যায়, তাদের কিছু অংশ অতীত ইতিহাস ও জাতিকে ভুলে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাকিদের কেউ কেউ অযৌক্তিক ধর্মীয় জঙ্গিবাদেই মুক্তির স্বপ্ন দেখতে থাকে। এই সীমাবদ্ধ চিন্তাটাও তাদের মুক্তির পথে বড় রকমের বাধা।
৮। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের ভেতরে এবং বাইরে অনেক নেতা এবং পাতি নেতা রয়েছে। বাইরের যে সমস্ত সাহায্য আসে, তা তাদের হাত হয়েই সাধারণ নিরীহ রোহিঙ্গার কাছে পৌঁছয়। এই সব নেতা-পাতি নেতারা একে ব্যবসা বা ধান্ধ হিসাবে গ্রহণ করে। তারা-ই এ ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে চায়। যদি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তাহলে তাদের নেতৃত্ব ও ওপরি-পাওনার ঘাটতি হবে। দেশে ফিরে তাদের এই সুবিধা লোপ হতে পারে, এই আশঙ্কায় তারা যে-কোনোভাবে আশ্রয় শিবিরেই থাকতে চায়। আর এই ইচ্ছা-পরবাসের তো কোনো ওষুধ নেই!
৯। রোহিঙ্গারা ভাগ্যের ফেরে এখানে আশ্রয় নেওয়ার কারণে এদেশের কিছু লোকের কপাল খুলে যায়। বিশেষত সেই সব ইসলামি ব্যক্তিদের, মধ্যপ্রাচ্যে যাদের সামান্য পরিচিতি রয়েছে। মোটা দাগে বড় বড় ইসলামি দলের নেতারা তো এর জন্য বেশ বড় অঙ্কের সাহায্য বাগিয়ে নিতে পেরেছেন। দালিলিক কোনো প্রমাণ লাগবে না, আশ্রয় শিবিরের আশে-পাশে, হাওয়ায় হাওয়ায় এই সমস্ত সংবাদ এখনো ঘুরে বেড়ায়। আরো নিচে আসি, চিটাগাং অঞ্চলে ব্যাপক ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার সুবাদে আরবি-জানা লোকের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। অর্থাৎ তথাকথিত সেই সব আলিম-ওলামা রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশার কথা বলে কিছু দিন পরপর ধনাঢ্য শাইখদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে আসতেন। তা সামান্য কিছু বিলিয়ে দিয়ে ছবি তোলে শাইখকে দেখিয়ে আরো সাহায্য খসানোর ধান্ধায় থাকতেন। মাঝে মাঝে তো শাইখরা তা সরেজমিনে দেখতেও আসতেন। যেহেতু কতিপয় রোহিঙ্গা নেতা-পাতি নেতার সঙ্গে এ নিয়ে যোগ-সাজস করা থাকতো, তাই শাইখকে সন্তুষ্ট করায় ঘাটতি হতো না। এই দালালিই রোহিঙ্গা ইস্যুকে ডুবিয়েছে।
১০। এ-পর্যায়ে আসি অ-আলেম স্থানীয় নেতা-মোড়লদের প্রসঙ্গে। তারা এই মানব স্রোতকে নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ব্যবহারের পথ করে নিয়েছে। উপায়ান্তরহীন এই সব ভেসে-আসা জনতাকে নানা অপরাধের কাজে ব্যবহার করা যায়। রোহিঙ্গা মেয়েদেরকে বেশ্যাপল্লীতে খুব সহজেই বিক্রি করা যায়। তারা এখানে এসে যেহেতু ব্যাপক অভাব অনটনের শিকার, তাই স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করানো যায়। আবার রোহিঙ্গাদের সঞ্চিত টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশ পাঠানোর মতো আদম ব্যবসা করা যায়। এমন-কি যেহেতু বার্মিজ ভাষা ও অঞ্চলের ব্যাপারে তাদের জানাশোনা বেশি, তাই নানা চোরাচালানিসহ ইয়াবা আমদানির সহজ মাধ্যম হিসাবে তাদের ব্যবহার করা যায়। এই যে, অপরাধের নানা পর্যায়ে তাদের জড়িয়ে পড়া, তা তাদের ভবিষ্যতকে আরো অন্ধকার করে তোলে।
১১। রোহিঙ্গাদের সমস্যাটা যতটা রাজনৈতিক, ততটা কিন্তু ধর্মীয় না। কারণ, বার্মায় অন্যান্য অঞ্চলে মুসলিমরা নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করছে। এটা একান্ত রোহিঙ্গাদের সমস্যা। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী যেহেতু একটি সুনির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং সেই ধর্মের পুরোহিত-কর্তৃক শাসকগোষ্ঠী সমর্থিত, তাই এদেশে ছুটে-আসা রোহিঙ্গারা স্থানীয় সেই ধর্মাবলম্বীদের প্রতি এক ধরনের অসহিষ্ণুতা পোষণ করে থাকে। আশ্রিত অঞ্চলের সাধারণ ধর্মানুসারীরাও একে ধর্মের আদলেই বিবেচনা করে থাকে। আর এজন্যই আশ্রয়দাতা অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এক ধরনের অস্বস্তিতে থাকে। ধর্মীয় আদলে তথা সমস্যাকে খ-িতভাবে দেখার কারণেই বৃহত্তর জনসমাজের সমর্থন তাদের পক্ষে কাজ করছে না। আর এই খ-িত সমর্থন তাদের জন্য বড় কোনো প্লাট ফর্ম তৈরি করতে দিচ্ছে না।
এই সমস্ত বাধা-বিপত্তি নিয়ে চুলচরো বিশ্লেষণ হতে পারে। কাট-ছাটও হতে পারে। কিন্তু এগুলো চিহ্নিত করতে হবে নির্মোহভাবে। সমস্যা যত নির্ভুলভাবে চিহ্নিত হবে, সমাধানও তত নির্ভুল হবে, যদি সদিচ্ছা থাকে। এখন দেখা যাক, আমাদের আবেগী ভাইদের থেকে কী পাওয়া যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাইনাস
মাইনাস
PM Hasina is the part of problem not the solution.
Thanks
সত্য কথায় কেউ নয় রাজি, কেবল দেখি তা না না না
প্রশ্ন হল, তাহলে এ অত্যাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন? এর নেপথ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি এবং মিয়ানমারে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলোর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ। ভারতের দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, ‘চীনকে ঘেরাও করো’- এ মার্কিন ও পশ্চিমা নীতি বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার ভূখণ্ড প্রয়োজন এবং সে কারণে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলো মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। তাদের স্বার্থবাদী নীতির কাছে মানবতাবাদ হচ্ছে পরাজিত। আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি যেমন ভারত ও চীন সম্ভবত একই ভূ-কৌশলগত এবং পাশ্চাত্যের সঙ্গে তাদের পররাষ্ট্রিক সংশ্লিষ্টতার কারণে মিয়ানমারের প্রতি তোষণনীতি অনুসরণ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি ভারত পাশ্চাত্যের বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-এশীয় নতুন মিত্ররাষ্ট্র। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফোর্টিফাই চায়না’ নীতির সমর্থক হিসেবে তথা কৌশলগত পার্টনার হিসেবে সম্ভবত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তেমন সোচ্চার হবে না। আর দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার পরাশক্তি চীনও তার স্ট্র্যাটেজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নির্যাতন মেনে নেবে। চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে জ্বালানি পাইপলাইনটি রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার নিচ দিয়ে প্রসারিত। ২০১২ সাল থেকে মিয়ানমার সরকার এ পাইপলাইনের নিরাপদ স্থাপনার জন্য এ অঞ্চলের বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যক্রম হাতে নেয়, যার চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে সম্ভবত এবার। তেল-গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে নিজ স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থেই চীন হয়তো এখন নীরব থাকবে। তাছাড়া উইঘুরে (চীনের একটি স্বশাসিত অঞ্চল) মুসলিম নির্যাতনের রক্তে রঞ্জিত চীন সরকারের নৈতিক অধিকারও নেই মিয়ানমারকে শাসানোর। উল্লেখ্য, চীন ও মিয়ানমার উভয় রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।মিয়ানমারের কাছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে উদ্যোগ নিতে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এ সবকিছু সত্ত্বেও বর্মী সেনাবাহিনী ও উদ্ধত রাখাইন যুবকদের নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগ এবং জোরালো কূটনীতিই পারে মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে বাধ্য করতে। আমরা কি সেই সুবিচার দেখতে পাব। http://www.banginews.com/web-news?id=81520a6e0677ba8011b4d4a9895a03373afd7690
SO NO COMMENTS
সবল হওয়ারও কিন্তু পথ আছে। সে পথেই এগুতে হবে। অন্ধকার তাড়ানোর জন্য লাঠি ব্যবহার করলে হয় না, দীপ জ্বালাতে হয়।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন