কওমি মাদরাসা: প্রকৃতি-বিকৃতি-স্বীকৃতি
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ০৪:৩২:১৮ বিকাল
"মনের মধ্যে নিরবধি শিকল গড়ার কারখানা।
একটা বাঁধন কাটে যদি বেড়ে ওঠে চারখানা॥
কেমন ক’রে নামবে বোঝা, তোমার আপদ নয় যে সোজা
অন্তরেতে আছে যখন ভয়ের ভীষণ ভারখানা॥
রাতের আঁধার ঘোচে বটে বাতির আলো যেই জ্বালো,
মূর্ছাতে যে আঁধার ঘটে রাতের চেয়ে ঘোর কালো।
ঝড়-তুফানে ঢেউয়ের মারে তবু তরী বাঁচতে পারে,
সবার বড়ো মার যে তোমার ছিদ্রটার ওই মারখানা॥
পর তো আছে লাখে লাখে, কে তাড়াবে নিঃশেষে।
ঘরের মধ্যে পর যে থাকে পর করে দেয় বিশ্বে সে।
কারাগারের দ্বারী গেলে তখনি কি মুক্তি মেলে।
আপনি তুমি ভিতর থেকে চেপে আছ দ্বারখানা॥
শূন্য ঝুলির নিয়ে দাবি রাগ ক’রে রোস্ কার ’পরে।
দিতে জানিস তবেই পাবি, পাবি নে তো ধার ক’রে।
লোভে ক্ষোভে উঠিস মাতি, ফল পেতে চাস রাতারাতি
আপন মুঠো করলে ফুটো আপন খাঁড়ার ধারখানা॥"
বর্তমান কওমি শিক্ষা-ব্যবস্থা ভারতের উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ মাদরাসার আক্ষরিক সম্প্রসারণ মাত্র। মুসলিম শাসনামলে যে নেজামিয়া, কিংবা ফিরিঙ্গিমহল্লি শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তা এর ভিন্নতর রূপ। অবশ্য, একে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, তা দরসে-নেজামির মাদরাসা বা খারেজি মাদরাসা। আবার প্রথাগত দেওবন্দ-পড়ুয়া সবাই বলে থাকেন যে, তা শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলবির চিন্তাধারা রক্ষার এক মহান দূর্গ। ওপরে যা বলা হল, এর কোনোটাই পুরোপুরি সত্য নয়। তবে সবকিছুর আংশিক ছাপই এতে রয়ে গেছে। তাই নানাভাবে চিহ্নিত করার খণ্ডিত এই প্রয়াস।
নেজামিয়া মাদরাসা ছিল নেজামুল মুলক নামক মন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শিক্ষা-ধারার নাম। তা দেওবন্দি ধারার মতো কোনো বৈরি পরিবেশে তৈরি হয় নি। বরং তা যেন সংরক্ষিত দেয়ালে জন্ম নেওয়া সন্তান। তৎকালীন মুসলিম সরকার ও জমিদারগণের দান-দক্ষিণার হাত ধরে এই সব মাদরাসাগুলো পরিচালিত হত। ফিরিঙ্গিমহল্লি মাদরাসাও ভারতে মুসলিম শাসনের প্রায় অন্তিম পর্যায়ে মোল্লা কুতুব শহিদের দু সন্তান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময়ে তা অক্সফোর্ড-ক্যাম্ব্রিজের তুল্য ছিল। সময়ের ব্যবধানে এই দুই ধারার অবলুপ্তি ঘটে। তবে এ দু-ধারার পাঠ্যক্রমের অবশেষ এখনো কওমি ধারায় বিদ্যমান। আর আমাদের এই দেশে খারেজিদের অস্তিত্ব ঐতিহাসিকভাবে ছিল কি-না, বা আছে কি-না, তা জানা নেই। তবে মনে হয়, কওমির কোনো কোনো সদস্য সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে খারেজিদের মতো চাপাচাপি করতে থাকে বিধায় নিন্দুকরা এ নাম দিয়েছে।
ভারতীয় উপ মহাদেশে শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলবি ইসলাম ধর্মীয় সিলসিলার এক অফুরন্ত উৎস। তার চিন্তা এতো গভীর ও বহুধা বিস্তারী যে, সবাই নিজেকে এর উত্তরসূরী দাবি করতে পারে অনায়াসেই। এক শিয়া ছাড়া বাদ-বাকি বেরেলবি, সালাফি ও দেওবন্দি- সব ইসলামি দল-উপদলই এ কথার দাবিদার। দেহলবির বিপুলতা অনুধাবন ও ধারন করার সক্ষমতা পরবর্তী কোনো উত্তরসূরীরই হয় নি। এই রকম প্রতিভা হাজার বছরে একজন জন্মায়। অনুধাবন করতে না পারলে অনুসরণ বা তা রক্ষার প্রশ্নই তো আসে না। আর তাই দেওবন্দি শিক্ষা-ব্যবস্থা-ই দেহলবি চিন্তার একমাত্র বাহন, তা ঠিক নয়।
দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ভারত থেকে বেনিয়া ব্রিটিশ শাসকদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে, তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। অর্থাৎ নামে থাকবে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে এবং শিক্ষাও চলবে। তবে তা শিক্ষার জন্য শিক্ষা নয়। বরং লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় বা কার্যত তা হবে বিজাতীয়দের বিতাড়নের আঁতুরঘর। রাজনৈতিকভাবে দেওবন্দ এখানে সফল। ভারতের অপরাপর গোষ্ঠীগুলোর মাথায় যখন এ-ভাবনা অঙ্কুরিত হবার অবকাশ পায় নি, তখনই কতিপয় মহা পুরুষ দুঃসাহসী একটি ছক বাধায় সফল হন। যদিও ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের জোয়ার যখন তুঙ্গে, তখন আলেম সমাজ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। নানা কারণে দ্বিধা-ত্রিধা বিভক্ত। উপরন্তু যোগ্য নেতৃত্বেরও প্রশ্ন। এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসে ভারতীয় কংগ্রেস, পরবর্তীতে মুসলিম লীগ। চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখা গেল আলেমদের কোনো অবস্থান নেই, ইতিহাসের এক প্রান্তে সামান্য উপস্থিতি ছাড়া।
বিজাতীয় ধর্ম ও নীতিনৈতিকতা বর্জনের লক্ষ্যে দেওবন্দ ছাড়াও আরো নানা রকমের প্রয়াস সে সময়ে সক্রিয় ছিল। মাওলানা মুহাম্মদ আলী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জামিয়া মিল্লিয়া দীনিয়াও ঠিক সে ধারার প্রতিষ্ঠান। এখানে উল্লিখিত ‘মিল্লিয়া’ শব্দের অর্থও ‘জাতীয়’। এটি উদ্বোধন করেন শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান। বাংলা অঞ্চলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামেও একটি প্রতিষ্ঠান হয়েছিল, যার প্রধান ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ। নামের মাঝেই নিহিত ছিল পরিচয় ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। মানে, ভারতে বিজাতীয় (ব্রিটিশ) শিক্ষার প্রতিরোধই ছিল এর প্রধান কাজ। এ প্রবণতা অনুসারেই ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার দেওবন্দি ধারাকে কওমি (জাতীয়) শিক্ষা হিসাবে নামকরণ করা হয়। আর এ জন্যই বাংলাদেশে যখন কলেজগুলোকে সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিয়ে এর নাম দেওয়া হয় ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’, তখন এ নামের বিরোধিতা নীতিনির্ধারকের অনেকেই করেছেন এই যুক্তিতে যে, এখন তো বিজাতীয় প্রভাবের কোনো পরিস্থিতি নেই, তাহলে এই নাম কেন? কিন্তু কে শোনে কার কথা আর কেই-বা দেবে উত্তর! তবে মাদরাসার নাম এখনো কেন ‘কওমি’ এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের মাথায় আছে কি-না, বা এর উত্তর কি, তা নিয়েও খুব একটা মাথা ব্যথা নেই, বোধহয়।
দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠা ইংরেজ বিরোধিতার লক্ষ্যে হলেও এক সময়ে তা এই বিরোধিতার অবস্থান থেকে সরে আসে। আর এ অভিযোগ দায়ের করেই শাইখুল হিন্দ মাদরাসার শিক্ষকতার পদে ইস্তফা দেন। এর পূর্বে কানপুরে ইংরেজ কর্তৃক মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় সারা ভারত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মাদরাসা-কর্তৃপক্ষ ও শাসক-প্রতিনিধির মাঝে যে সমঝোতামূলক আলোচনা হয়, তাতে শাইখুল হিন্দকে রাখা হয় নি। বলা ভালো, সে আলোচনায় শাইখুল হিন্দ ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ- উভয়েরই প্রবেশাধিকার ছিল না। তখন পঠন-পাঠনই হয়ে উঠে মাদরাসার একমাত্র লক্ষ্য। শাইখুল হিন্দ পঠন-পাঠনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান নি। দেওবন্দের লক্ষ্যহীন পথচলার এই হল সূচনা! যদিও মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজ ব্যক্তিত্ব দিয়ে পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করেছেন যথাসাধ্য, কিন্তু ততদিনে নদীর জল অনেক গড়িয়েছে। দেওবন্দ পড়ুয়া সবার মানসিকতা-ই ততদিনে অনেকটা পরস্পর-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আবার ভারতীয় আলেমদের একটি অংশ দেওবন্দের পাঠ্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না শুরু থেকেই। তাদের মতে, আলীগড় কলেজ (পরে বিশ্ববিদ্যালয়) মুসলিম মানসিকতার পরিপোষণে ব্যর্থ, তেমনই দেওবন্দ মাদরাসা ব্রিটিশ শিক্ষা-চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অসমর্থ। এই সব বিবেচনায় তখন তারা উত্তরপ্রদেশেই ‘দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা’ প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ তাদের চিন্তা ও চেষ্টা এক জায়গায় স্থানু-গতিহীন হয়ে পড়ে থাকে নি। কারণ, প্রতিষ্ঠান উদ্দেশ্য নয়, সে হলো উপায় আর মাধ্যম মাত্র। এই সব মহৎ প্রচেষ্টার ইতিহাস জানার পর তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় যে কারো মাথা নুইয়ে আসবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠা এবং বেঁচে থাকা-ই তো সব নয়। লক্ষ্যপূরণ ও কার্যসিদ্ধিই মূল কথা। যদি লক্ষ্যপূরণে ও কার্যসিদ্ধিতে ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে সেই কার্যসিদ্ধি ও উদ্দেশ্য-পূরণের শর্তগুলো যোগ করতে হবে, সকল রকমের দ্বিধা-সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে। অথচ শর্তযোগকরণের বেলাতেই যত গণ্ডগোল! ধর্মীয় তথা মাদরাসা শিক্ষা-ব্যবস্থার এই সঙ্কটটিই দৃশ্যমান হচ্ছে বারবার। অথচ ইতিহাস বলে, বেঁচে থাকতে হলেও পরিবেশ-উপযোগী হতে হবে। পরিবেশ উপযোগী না হওয়ার দরুণ অতিকায় ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটেছে; দিব্যি বেঁচে আছে তেলাপোকা, চামচিকে ও টিকটিকি।
এটা মান্য, যে কোনো প্রতিষ্ঠানই কিছু কাল পেরুনোর পর প্রতিষ্ঠাকালীন মানসিকতা বহন করতে পারে না। এমন কি, সে মানসিকতার সন্ধানে সবাই তখন তালগোল পাকিয়ে ফেলে। কওমিতেও এর ভিন্নতা হয় নি। এখন সবাই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, আর স্বতন্ত্র রাস্তা তৈরি করছেন। এটা মন্দ নয়, যদি তা লক্ষ্যে পৌঁছানোর সহায়ক হত। কিন্তু এ পর্যন্ত তা কি সম্ভব হয়েছে? ভবিষ্যতেও কি এর কোনো সম্ভাবনা আছে?
জ্ঞানজাগতিক তৎপরতায় দেওবন্দ হালকা রকমের পরিবর্তন আনয়নে সফলতা অর্জন করেছে, এটা অস্বীকার করার জো নেই। যে ভারতে হাদিস পড়ার কোনো প্রচলন বা রীতি ছিল না, আবদুল হক দেহলবি পুরো জীবন বিনিয়োগের পরও যেখানে হাদিস পাঠের প্রতি ধারাবাহিক কোনো প্রবণতা তৈরি হয় নি, সেখানে দেওবন্দের কারণে আজ ভারতের সর্বত্র হাদিস চর্চা হচ্ছে। এই চর্চার রকমফের থাকতে পারে, এর মান নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের বদ্ধ দরোজা খোলে দেওয়া স্বাভাবিক কথা নয়।
দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পূর্বে এদেশে ফিকহকেন্দ্রিক পাঠ ছিল। হানাফি মাজহাবের আল-হিদায়াহ গ্রন্থটি পর্যন্ত ছিল ধর্মপিপাসুদের চূড়ান্ত দৌড়! এখানে মুসলিম হাদিস বিশারদ আবু তাওয়ামাসহ আরো অনেক মুহাদ্দিসিনদের উপস্থিতি দিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। স্বীকার্য যে, ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে এখানে মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু সে শিক্ষা, বোধহয়, ‘আম-সিপারা’র ঊর্ধ্বে ছিল না। তা না হলে আবু তাওয়মার মতো ব্যক্তির কাছে পাঠ নেওয়ার পরও পড়ুয়াদের কোনো নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে না কেন বা নেই কেন? আবার দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পর হাদিসভিত্তিক ফিকহ পাঠের কারণে ফিকহি চিন্তায় প্রসারতা তৈরি হয়, যা পূর্বে ছিল কল্পনাতীত। অন্য মাজহাবগুলোর ব্যাপারে নেতিবাচকতা পোষণের প্রবণতা হ্রাস পায়। এর পূর্বে বৃহত্তর ভারতবর্ষে ইসলাম মানেই ছিল একমাত্র হানাফি চর্চা। এর বাইরে সকল চর্চাই ছিল অধর্ম বা ধর্ম-বহির্ভূত!
দেওবন্দের সব চেয়ে বড় গুণ এর সম্প্রসারণের ক্ষমতা। কারণ, এর জন্য সরকারের প্রতি হাত পাততে হয় না। আবেগপ্রবণ জনগণের চেতনা-ই হল এর চালিকা শক্তি। ভারতের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠে শত শত মাদরাসা। এখন যদিও ইউরোপ আমেরিকায় এর সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর শাখা; কিন্তু এই সব সম্মিলিত উদ্যোগও গভীর কোনো স্রোত তৈরি করতে পারে নি। মানে, জ্ঞানজাগতিক পরিসরে কোনো ঢেউ তুলতে পারে নি। বরং এরা যে সংকীর্ণ পথের পথিক ছিল, তা এখনো সংকীর্ণই রয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, তা আরো সঙ্কীর্ণতর গলিতে প্রবশে করছে দিনের পর দিন। অর্থাৎ তা উদার বা বিস্তৃত হবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতে তা হবে, এমন কল্পনা করারও ভরসা নেই।
এর ব্যাখ্যা স্বরূপ এভাবে বলা যায় যে, আরববিশ্বে যদি ইবনে তাইমিয়া ধর্মীয় জ্ঞানজগতের শক্তিধর কাণ্ডারী হয়ে থাকেন, তাহলে ভারতবর্ষে হলেন শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলবি। তাদের কোনো বিকল্প আজও তৈরি হয় নি। সে হল দেওবন্দ পূর্ববর্তী সময়ের কথা। অনেক পরে দেওবন্দ পর্বে এসে আল্লামা কাশ্মীরির সাক্ষাৎ মেলে। কিন্তু যে স্মৃতিধর হিসাবে তার খ্যাতি, সে অনুপাতে তার রেখে যাওয়া কর্মসমূহের উপস্থিতি কই? এবং এটা তাহলে হয় নি কেন? ঘাটতিটা কোথায়? এক সালাফি ‘আলবানি’ যে স্রোতের তৈরি করতে পেরেছেন এককভাবে, দেওবন্দ-ঘরানার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও তা হয় নি এবং হবেও না। কারণ, সৃজনশীলতার চেয়ে দেওবন্দ প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতি আগ্রহী বেশি।
হাম্বলি মাজহাব আর সালাফিবাদ হাত ধরাধরি করে চলে। যদিও সালাফিরা তুলনামূলক উগ্র, হঠকারী। কিন্তু হাদিস চর্চা-ই যেহেতু তাদের মূল লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য অনুসারে তারা তৃপ্তও। শাফেয়ি মাজহাবও হাদিস চর্চার দিক থেকে হাম্বলিদের কাছাকাছি। আরববিশ্ব তাদের চর্চাকেন্দ্র হওয়ায় তাদের সুবিধা অনেক। মালেকি মাজহাবের প্রসার যদিও আফ্রিকার ভরকেন্দ্রে, তবু চর্চার ভাষাটা আরবি। আবার এতে হাম্বলি-শাফেয়ির মতো কঠোরতা নেই। বরং চিন্তা-চেতনার সুযোগ এতে বেশি, প্রায় হানাফি মাজহাবের মতোই। দেওবন্দি ঘরানা হানাফি, কট্টর হানাফি। কিন্তু ভাষার দূরত্ব তাদের পিছু ছাড়ছে না। এই দূরত্ব বাংলাদেশের কওমি মাদরাসায় আরো দুস্তর। কারণ, ভারত-পাকিস্তানে শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষা উর্দুর সিঁড়ি বেয়ে আরবিতে আরোহণ করতে পারে সহজেই। বাংলাদেশে ঢাকার গুটিকয় মাদরাসা ছাড়া প্রায় সর্বত্রই শিক্ষামাধ্যম হিসাবে এখনো মাতৃভাষা বাংলা পুরোপুরি জায়গা করে নিতে পারে নি। আরবি তো দিল্লির মতো ‘হনুজ দুর-অস্ত’!
আজহারি সমাজ ধর্মীয় জ্ঞানজাগতিক পরিসরে আলোড়ন তুলতে পারেন, জায়তুনার মাশায়েখগণ নতুন পথের সন্ধান দিতে পারেন; ভাষা তো অবশ্যই- একই সঙ্গে বোধগভীরতার জোরে। এমনকি এই কাছের ভারত বা পাকিস্তানের দেওবন্দি ঘরানার আলেমরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, নিজের পথ আলোকিত করার প্রত্যাশায়, কোনো রকমের হীনম্মন্যতায় না ভোগে। কিন্তু বাংলাদেশি কওমিরা পারেন না। তারা ভীরু, দুর্বল, সদা ভয়ে মুহ্যমান। থাকেন কাঁচের ঘরে। ভীরুতা ও দুর্বলতা যে অপনোদনযোগ্য এবং এই সময়ে সকল বিষয়েই যে লোহার, ন্যূনতম পক্ষে কাঠের আবাস তৈরি করা যায়, তা তারা বুঝেন না; বুঝতে চান না। নিজেরা বুঝলেও অপরকে বুঝতে দেন না, পাছে নিজেদের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পায় এই শঙ্কায়।
আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে এভাবে বলতে হয় যে, হানাফি ফিকহ নিয়ে অগোছালো ও অবিন্যস্ত ইলাউস সুনান ছাড়া আর কী আছে, যা বিশ্বদরবারে মাজহাবি আলোচনার সময় পেশ করা যায়? এধারার মৌলিক তাফসির গ্রন্থ কয়টি বা কোনটি, যাকে এ যাবৎকাল প্রচলিত ও রচিত যে কোনো তাফসিরের মুখোমুখি রেখে, তুলনা করে বলা যাবে যে, তা অনন্য? হাদিসের বিস্তৃত আলোচনা তাকী উসমানির নানা গ্রন্থে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বটে, কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েও ফিকহুস সুন্নাহর মতো বড় মাপের কোনো কাজ কি আছে? অথচ এধারায় যেমন শাইখুল হাদিসের অভাব নেই, তেমনই কমতি নেই শাইখুত তাফসির ও মুফতিয়ানে কিরামদের! বিদেশি শাসনের কবল থেকে মুক্তির পর জায়তুনা-সন্তান এক ‘ইবনে আশুর’ মাকাসিদে শারিয়া নামে উসুলে-ফিকহে যে যুগান্তকরী রচনার সংযোজন ঘটান, তার তুলনা কই পুরো দেওবন্দি ধারায়?
এবার আসি জাগতিক প্রসঙ্গে। যে ব্রিটিশি আন্দোলনের সূচনা আলেমদের হাতে, তা কংগ্রেস বা বিজাতীয় শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাতে গেল কীভাবে? একি উলামায়ে দেওবন্দের যোগ্যতার পরিণতি, না এর বিপরীতমুখী শিক্ষায় শিক্ষিতদের বিচক্ষণতার ফসল? ভারত-বিভক্তির পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়েও বলা যায়, যারা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলেন, তাদের সেই প্রভাব কই পাকিস্তানের ইতিহাসে? লিখিত ইতিহাসে নয়, বাস্তবের কর্মক্ষেত্রের পাতায়? পাকিস্তানের এই যে, অধঃগতি এর জন্য দায়ী কারা? আরো নিকটের প্রশ্ন, একাত্তরে পাকিস্তানি নিপীড়নের সময় দেওবন্দি ধর্মবোধ কোথায় ছিল? হয়ত উদাহরণ টানা হবে মুফতি মাহমুদ সাহেবকে দিয়ে। কিন্তু এই মুফতি মাহমুদকে জেলে পুরার সাহস কোত্থেকে পেয়েছিল সেই জালিম সরকার?
খোদ দেওবন্দের ভেতরেই চোখ মেলে দেখা যাক, তারা নিজেদের অতিক্রম করতে পারছে কি-না। ক্ষয়রোগে আক্রান্ত রোগীর মতো অনবরত দুর্বল সন্তানই প্রসব করে যাচ্ছে, বিশেষত বাংলাদেশে। আর তাই 'সদর সাহেবে'র কোনো বিকল্প তৈরি হয় না। 'মুফতি ফয়জুল্লাহ'র মতো গভীর শাস্ত্রবোধ কারো জন্মায় না। 'আতহার আলী' বা 'সিদ্দিক আহমদে'র মতো কর্মী পুরুষ চোখে পড়ে না। কেন পড়ে না? সে প্রশ্ন সাহস সঞ্চয় করে কওমিরা নিজেরাই নিজেদেরকে করুক। এর উত্তরও বের করতে হবে নিজেদেরই। যে মা বলিষ্ট সন্তান জন্মদানে অক্ষম, অন্যের সন্তানকেও প্রয়োজন মতো সেবাশুশ্রূষা দিতে পারে না, তাকে নিয়ে প্রলাপসদৃশ গর্ব করার কিছু নেই। তাকে বিনা চিকিৎসায় পর্দায় ঘিরে রাখাও বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়। বদ্ধ, এঁদো পুকুর নিয়ে গর্ব করা বোকাদেরই মানায়। আর স্রোতের সঙ্গে গা মেলালে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যায়, তা শুধু মাত্র অন্ধদেরই বোঝানো সম্ভব। বটে, নদীর পানিও ঘোলা হয়, দুর্গন্ধও। কিন্তু স্রোতের মাঝেই এমন একটি প্রণোদনা আছে, যা একই সঙ্গে ঘোলাটে ভাব ও দুর্গন্ধ দূর করে দেয়। এই সব যুক্তি যাদের মাথায় ঢুকে না, তাদের কূপমণ্ডুক বলা-ই শ্রেয়।
এখানে ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যাক ভিন্ন একটি অধ্যায় থেকে। ইউনুসের সুদ ব্যবসার কথা খোদ শেখ হাসিনাও বলেন। কিন্তু ইউনুস যে মেধাবী, কর্মী পুরুষ এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মরহুম অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে তো কারো কোনো প্রশ্ন নেই। তার বিদেশি বন্ধুদের দুঃখ হল, তিনি গরিব দেশে আশ্রয় নিয়ে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হলেন। গরিব একটা দেশের একটি এনজিও বিশ্বের প্রায় বারোটি দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্যার ফজলে হাসান আবেদের নেতৃত্বে। অথচ ৪৭-এর পর একে একে ভাল ভাল হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক চলে যাওয়ার পর নিন্দুকরা বলতে শুরু করেছিলেন যে, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সত্যি সত্যি মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে! না, তা হয় নি। নিন্দুকের চোখে-মুখে চুন-কালি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বমহিমায় দণ্ডায়মান। এ পর্যন্ত, ভারত-পাকিস্তানসহ কওমি মাদরাসা পড়ুয়া কেউ তো এমন উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন নি। ন্যূনতম পক্ষে ইসলামি বিশ্বের নোবেল খ্যাত ‘ফয়সাল পুরস্কার’ও তো বাগাতে পারেন নি কেউ। পুরস্কার বাগানো তো দূর কি বাত, তাদের সঙ্গে জ্ঞানজাগতিক পরিসরে কোনো সংলাপও জুড়তে পারেন নি এবং পারেন না। শুধু অন্ধকার গলির মাঝে অন্ধ সমর্থকদের নিয়ে আলো নিভিয়ে নর্তন-কুর্দন করতে পারেন। এতে আবার আত্মতৃপ্তিও খুঁজে পান!
কওমি মাদরাসার প্রসার হচ্ছে। কিন্তু যেই সব স্থানে প্রসার হচ্ছে, সেই স্থানের চাহিদাকে মেনে, না অস্বীকার করে? প্রশ্নটা এখানেই। ভারত-পাকিস্তানে যেভাবেই হোক, কওমি মাদরসার শিক্ষার্থীরা মূল ধারার সঙ্গে গা মেলাতে পারে। আর পারে বলেই, সীমিতভাবে হলেও সেখানকার ধর্মচিন্তা ও গবেষণা অনেক অগ্রসর। পাকিস্তানে কওমি মাদরাসার সংখ্যা বেশি হলেও অনুসারীর সংখ্যা বেরেলির তুলনায় অনেক কম। তবুও তারা অপাঙক্তেয় নয়। অন্তত নিজ দেশের যে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে আলাপ জুড়তে পারেন। শুধু কওমিতেই সেঁধিয়ে থাকা যে-সব অন্ধরা সেখানকার জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত; এদের বাইরেও উচ্চ পর্যায়ে, শান্তির পক্ষে বিদ্বান আলেম-ওলামা আছেন। কিন্তু তাদের আওয়াজ ধর্মান্ধরাই বড় হতে দেয় না। সরকার ও সামরিক কর্মকর্তারাও তাদের আড়াল করে রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশের কওমি ধারায় এমন গঠনমূলক চিন্তকের দেখা মেলা ভার। কারণ, চিন্তার পরিপোষণের জন্য যে শিক্ষা-সংযোগ দরকার, তা তাদের নেই। প্রচলিত শিক্ষাধারার সঙ্গে গা মেলানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না, হবে বলে কল্পনা করতেও ইচ্ছে হয় না। আবার গা মেলালেই যে খুব লাভ হবে, তেমন ভরসা আগেও ছিল না, এখনো নেই। কারণ হল দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রশ্ন, যা তাদের নেই এবং হবেও না। আর এজন্যই তাদের মোক্ষম অজুহাত, সরকারের স্বীকৃতি নিলে, উসুলে হাশতে-গানা, মার খাবে। আর তা সম্ভব নয়। ভাবখানা এমন, ‘সবার ওপরে উসুল সত্য তাহার ওপরে নাই’!
কারো কারো সন্দেহ, স্বীকৃতির হাত ধরে কওমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়তে পারে। প্রশ্ন হল, সুদূর অতীতে মুসলিম শাসনামলে যে ধর্মীয় শিক্ষা-ব্যবস্থা ছিল, তা সরকারি চাপমুক্ত ছিল কখনো? তাহলে ফিকহের মাঝে সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কোনো বাক্য নেই কেন? কেন বারবার বলা হলো, শাসক ফাসেক হলেও তাকে মান্য করতে হবে? একটি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফাকে জীবনের অন্তিম মুহূর্তে কেন তাহলে নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হল? তখন কি আবু হানফিার সেই তৎকালীন মাদরাসা, আলোচনা-গবেষণার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হয় নি? আবু হানিফা কি কখনো সরকারের আওতাধীন ছিলেন? তারপরেও তাকে কেন এই নিপীড়ন সইতে হল? অথচ শাইখুল আজহার ইমাম আবু জাহরা তো সরকারি চাকুরেই ছিলেন। যখন তৎকালীন শাসক তাকে কুরআন-হাদিসের বিপক্ষে নয়, তবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সরকারের পক্ষে সামান্য কিছু বলার জন্য অনুরোধ করে, তিনি তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন। কই, তার তো চাকরি যায় নি! শাইখ আবদুল হালিম মাহমুদও ইখওয়ানের দুর্দিনে তথা জামাল আবদেল নাসেরের দমনমূলক নীতির সম্মুখে মুরগি যেভাবে বাচ্চাদের আগলে রাখে, ঠিক সেভাবে আজহারের ছাত্রদের ছায়া দিয়েছেন। সরকার-পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও তা পারলেন কীভাবে? এখানে পার্থিব দু-একটি উদাহরণ দিই, তাহলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। বদরুদ্দিন ওমর তো বামপন্থী মানুষ, হয়তা-বা নাস্তিকও। তিনি আইয়ুবশাহীর বিরোধিতা করে চাকরি করার চেষ্টা করেন, সুদৃঢ় নীতিগত অবস্থান থেকেই। যখন দেখলেন যে, তা সম্ভব হচ্ছে না, তখন ইস্তফা দেন। সরদার ফজলুল করিম তো পার্টির আদর্শ মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় চাকরিটাই ছেড়ে দেন। এমন নজির আছে কোনো? এই হল চেতনা! বলতে পারবেন, এরা কোন কওমিতে পড়েছেন? কোন কাঠামোয় বেড়ে উঠেছেন?
আসলে ভেতর থেকেই ক্ষয়ে গেছে বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা এবং অনেক আগেই। এখন একে স্বীকৃতি দিলেও যা, না দিলেও তা। এতে ইসলামের ক্ষতিও হবে না, লাভও না। হ্যাঁ, ব্যক্তিবিশেষের লাভ-ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। একেকটি কওমি মাদরাসা একেক জন স্বৈরাচারের আস্তানা, একেকটি কওমি বোর্ড মধ্যযুগীয় জমিদারি। যদি সরকারি স্বীকৃতি আসে, তাহলে তাদের স্বৈরাচারী আচরণ ও জমিদারি প্রথা বাধাগ্রস্ত হবে। এ আশঙ্কা থেকেই তাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও বিরোধিতা! সে অবস্থা দেখেই মনে পড়ে নজরুলের সখেদ উচ্চারণ:
"ভিতরের দিকে যত মরিয়াছি, বাহিরের দিকে তত,
গুনতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি গরু-ছাগলের মত।"
তুরস্কেও কামাল অতাতুর্কের পর প্রথাগত পশ্চাদপদ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধর্মশিক্ষা কখনো বন্ধ হয় নি, তবে বাড়াবাড়ি রকমের অনুচিত সংস্কার করা হয়েছিল, যা তৎকালীন মোল্লা-মৌলবিদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। অথচ দেখুন, আজকের গুলেনকে নিয়ে সারা পৃথিবীর কী মাতামাতি! সে গুলেন কিন্তু আতাতুর্কের ব্যবস্থা থেকেই উঠে এসেছে। সে কি যেই সেই উঠে আসা? বলা হয়ে থাকে যে, বিংশ শতাব্দিতে তার মতো সফল সংগঠক বা ব্যক্তিত্ব আর নেই! সে কীভাবে সম্ভব হল? কোন মাদরাসার জোরে? হতে পারেন তিনি 'নুরসি'। কিন্তু পুরো কওমিতে একজন 'নুরসি' কই?
আসলে বর্তমান কওমি ব্যবস্থাটা ইংরেজ আমলে ইংরেজদের বিরোধিতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। এখন সেদিন গেছে। চলছে মুসলিম শাসনামল। শাসন-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং থাকবেও। কিন্তু একটি ধর্মীয় শিক্ষা-ব্যবস্থার রূপ কী হতে পারে এই সময়ে? এর ভেতেরে এবং বাইরে কী রকম সংস্কার দরকার, তা নিয়ে সবাইকেই, বিশেষত তরুণদের কাজ করতে হবে। পড়ো ঘর নিয়ে বসে থাকা জীবনের জন্য নিরাপদ নয়। বরং তা ঘাড়ে পড়ে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে। তাই নিজেরাই ভেঙে প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও টিকে থাকতে পারে মতো সুন্দর করে নির্মাণ করতে হবে। তাদেরকে সমস্বরে গেয়ে উঠতে হবে:
"খুলব দুয়ার মত্ত বলে,
তোদের বুকের পাষাণ-তলে
বন্দিনী যে ঝর্ণাধারা
মুক্তি দেবো মুক্তি তায়।
হারিয়ে গেছে দোরের চাবি,
তাই কেঁদে কি লোক হাসাবি?
আঘাত হেনে খুলব দুয়ার,
আয় যাবি কে সঙ্গে আয়।
দ্বারের মায়া করে তোরা
বন্দী রবি নিজ কারায়?
নায় ক চাবি, হাত আছে তোর,
খুলব দুয়ার তার সে ঘায়।"
সর্বশেষে মহান আল্লাহ তায়ালার চিরন্তন বাণী:
إِنَّ اللَّهَ لا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ
"কোনো জাতি স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের পরিবর্তন সাধনে সক্রিয় না হলে আল্লাহ তায়ালা তাদের পরিবর্তন করেন না।" (আল-রা’দ-১১)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন