কাশ্মীরের মুক্তি কোন পথে?
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ০৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০৫:১৪:৩৩ বিকাল
কাশ্মীরের বর্তমান দুর্ভোগের মূল ৪৭-এর দেশভাগ পর্বে নিহিত। দেশভাগের ছুতো ধরেই এই ভূখণ্ডটি পাকিস্তানের ভাগে পড়বে, না ভারতের অন্তুর্ভক্ত হবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্বের এক সময়ে পাকিস্তান পুরো কাশ্মীর দখল করার মনস্থির করে এগুতে থাকলে ভারত অধিকাংশ কাশ্মীর হাতিয়ে নেয়। পাকিস্তানের দখল-করা অংশের নাম আজাদ কাশ্মীর আর ভারতের দখল করা অংশের নাম জম্মু-কাশ্মীর। বর্তমানে রক্তের যে হোলি খেলা বা মরণ-মারণের যজ্ঞ চলছে, তা শুধু জম্মু-কাশ্মীরেই। কিন্তু কেন?
ধর্মভিত্তিক ভারত-বিভাজনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি ঘটে হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের মাঝে। কারণ, পাক-ভারত সীমারেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বত্র অভিন্ন রীতি মানা হয় নি। কোথাও কোথাও ছিল গণভোটের সিদ্ধান্ত, অন্য বেশ কিছু রাজ্যে আবার তা হয় নি। বরং তা ছেড়ে দেওয়া হয় সেই সব রাজ্যের রাজা-মহারাজার খেয়াল-খুশির ওপর। কাশ্মীর ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতাভুক্ত। কাশ্মীরের তৎকালীন রাজা ভারত-ভুক্তির পক্ষে রায় দেন বিধায় ভারতের পক্ষে তা হস্তগত করা সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে পাকিস্তান এখানে নিজের দিকে ঝোল টানতে থাকে সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সমর্থনের যুক্তিতে। সংঘাতের মূল এখানেই লুক্বায়িত।
ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া একাধিক রাজ্যে শুরু থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বা স্বাধীনতাকামীদের তৎপরতা অব্যাহত ছিল বা এখনো আছে। কিন্তু সেই সব রাজ্যের সঙ্গে কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান একেবারেই ভিন্ন। একমাত্র কাশ্মীরের সঙ্গেই ভারতের জন্মবয়সী শত্রু পাকিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত রেখা। তা ছাড়া রয়েছে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা, যে দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ হবার অবকাশ পায় নি। অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় তাই কাশ্মীরের স্পর্শকাতরতা অনেক অনেক বেশি।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কিস্তু পাকিস্তানেও ছিল এবং এখনো চলমান। সে সব অঞ্চলের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক অবস্থা শান্তিপূর্ণ প্রদেশগুলোর তুলনায় ভিন্ন হবে, এটা অভাবিত নয়। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়া বর্তমান বাংলাদেশ তার জাজ্বল্য প্রমাণ। বর্তমান বেলুচিস্তানের অবস্থাও ঠিক উত্তপ্ত কড়াইয়ের মতো। আর তাই দেখা যায়, দীর্ঘ চল্লিশ বছর পরও পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বেলুচ নেতৃবৃন্দকর্তৃক শেখ মুজিবের ছয়দফা দাবি উত্থাপিত হয়!
বলেছি, এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী /স্বাধীনতাকামী আন্দোলন ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও বিদ্যমান। যদিও সে সব আন্দোলন এখন প্রায় স্তিমিত। স্তিমিত হওয়ার পেছনে কাজ করেছে ভারতের প্রাজ্ঞ চিন্তার ‘ধীরে চলো নীতি’ এবং 'অপার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা'। উপরন্তু সেই সব প্রদেশে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী কোনো ইন্ধনদাতার প্রত্যক্ষ মদদ ছিল না বা নেই। তাহলে কি বলা যায়, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পাকিস্তানের ইন্ধনই একামাত্র দায়ী?
প্রধান দায়ভার পাকিস্তানের না হলেও ইস্যুটা জিইয়ে রাখার ব্যাপারে পাক সরকার এবং জনগণের যথাক্রমে স্বার্থনীতি ও ধর্মীয় আবেগের প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। ভারত যেভাবে সমগ্র কাশ্মীরকে নিশ্ছিদ্র পাহারা দিচ্ছে, তাতে এতোদিনে অন্যান্য প্রদেশের মতো এখানেও শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় নি। বরং থেকে থেকে অগ্নিগিরির লাভা উদ্গীরণ হয়। এই উদ্গীরণ রোধ কার জন্য ভারতকে সব চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। তবুও ভারত সরকার যেমন সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছে না, তেমনই কাশ্মীরি জনতাও মুক্তি বা শান্তির সন্ধান পাচ্ছে না। তাহলে গলদাটা কোথায়?
বিচ্ছিন্নতাবাদী বা স্বাধীনতা আন্দোলন মানে শুধু সশস্ত্র তৎপরতা নয়। লড়াইয়ের অপরাপর দিকগুলোর ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে শুধু অস্ত্র ব্যবহার করে, প্রাণ দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে, আর যায় হোক, রাজনৈতিক সফলতা লাভ করা যায় না। এতে আবেগী চিন্তার পরিতৃপ্তি থাকতে পারে। সাময়িকভাবে সুবিধাও অর্জিত হতে পারে; কিন্তু তা হয় বুদ্বুদের মতো, কোনোভাবেই স্থায়ী হয় না। রাজনৈতিক লড়াইকে অব্যাহত রাখার জন্য কর্মী-সমর্থকদেরকে সমকালীন সকল কৌশলেই দক্ষ হতে হয়। আর এর জন্য দরকার হল মৌলিক শিক্ষা। অন্তত নিজেেেদর জীবনের মান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা ও বুদ্ধিচর্চার বিকল্প নেই। কাশ্মীরিরা এ ব্যাপারে একান্ত পিছিয়ে। মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমের মতোই তাদের জনশিক্ষার চালচিত্র। আর তাই সাত দশকের আন্দোলনে তাদের প্রাপ্তি একেবারেই শূন্য।
ভারতের অপরাপর সাতটি রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স নামে খ্যাত অঞ্চলে) মুক্তিকামী নেতা-কর্মীরা নিজেদের শুধু সশস্ত্র আন্দোলনেই নিয়োজিত করেন নি। একই সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিতকরণের পথও সমানভাবে উন্মুক্ত রেখেছেন। বরং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকর্মীদের অনেকেই বিশ্বস্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলোকপ্রাপ্ত। তাই তারা যেমন অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতে সক্ষম, তেমনই জ্ঞান-জাগতিক পরিসরেও প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখায় পারঙ্গম। আবার সেই সাতটি রাজ্যের জীবন-মান কোনোভাবেই অপরাপর রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে নেই। তাদের উত্তর-প্রজন্মের বিদ্যা-বুদ্ধিগত অর্জন তো ঈর্ষার করার মতো। অথচ কাশ্মীরের জনতার দিকে তাকিয়ে দেখুন, কী এক অপরিসীম স্বপ্নহীন অন্ধকার জগতে তাদের বসবাস!
অধিকৃত গাজার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারাও কিন্তু শিক্ষায় পিছিয়ে নেই। এরা আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের বক্তব্য নিজেরাই পেশ করতে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতারা তা পারে না, তাদের তেমন নেতা নেই। কাশ্মীরি মুসলিমদেরও ঠিক অনুরূপ অবস্থা। অবশ্য তাদের নেতা আছে বটে। কিন্তু তাদের পরিচিতি শিক্ষার মতোই একান্ত সীমিত, খুপড়িবদ্ধ! রোহিঙ্গারা যেহেতু নাগরিকত্বহীন, তাদের এ-অবস্থাটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু কাশ্মীরি মুসলিমদের তো সে পরিস্থিতি নেই। তারা ভারতীয় নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে প্রচলিত ও প্রথাগত শিক্ষার শক্তিতে নিজেদের বলিয়ান করতে পারেন, আসন নিতে পারেন জ্ঞানজাগতিক পরিসরের শীর্ষ শিখরে। যেমনটা করছেন পাকিস্তানের অন্তর্গত বেলুচ নেতারা। তারা বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলন করতে গিয়ে কেউ সমকালীন শিক্ষা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেন নি। এগুলো ভাবলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, কাশ্মীরে শুধু অন্ধকার, জমাট বাঁধা অন্ধকার। কিন্তু কেন?
এ কথা কে না জানে যে, কাশ্মীর ভূখণ্ডে স্বতন্ত্র স্বাধীনতার দাবিদার জন-সাধারণও বিদ্যামন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার, তাদের কোনোভাবেই পুছে না। পাকিস্তান বরং তাদেরই বেশি মূল্যায়ন করে, যারা পাকিস্তানের শলাপরামর্শে কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের সঙ্গে মেলাতেই বেশ উৎসাহী ও তৎপর। এবং ভবিষ্যতে কোনোভাবে কাশ্মীর যদি স্বাধীন হয়েই যায়, তাহলেও যেন কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তানের তল্পিবাহক হয়েই থাকে, সে চেষ্টা ও মানসিকতা বরাবরের মতোই বিদ্যমান। তাই পাকিস্তান কাশ্মীরি জনতার মনোজাগতিক পুষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয় না। পাকিস্তান নিজের দেশ আধুনিক চিন্তা ধারায় পরিচালনা করলেও কাশ্মীরে তাদের অনুসারীদের মাঝে আধুনিক শিক্ষা নয়, ধর্মীয় শিক্ষার বাতাবরণে হাওয়া দেয়। ধর্মীয় আবেগে নিজেদের আটকে রাখে বলে কাশ্মীরিরাও কোনো আলোর সন্ধান পায় না। আর তাই দীর্ঘ সত্তর বছরে পাকিস্তানের আশ্রিত আজাদ কাশ্মীরও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো আদর্শ অবস্থানে পৌঁছাতে পারে নি। ধর্মীয় অন্ধ আবেগ দিয়ে জনতাকে যেভাবে টোপের মাঝে বন্দি রাখা যায়, শিক্ষার আলো চোখে লাগলে তা আর সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, ভারতের অভ্যন্তরে উত্তপ্ত রাজ্যগুলোতে শিক্ষার আলো বিতরণে ভারত সরকারের যে উদ্যোগ চলমান, তা জম্মু-কাশ্মীরে সেভাবে নেই। সেখানকার সাধারণ জনতা পাকিস্তানি কওমি মাদরাসার শিক্ষার প্রতি যতটা আগ্রহী, ততটা নয় ভারতীয় জাতীয় শিক্ষার প্রতি। তাই কাশ্মীরের অন্ধকার শেষ হয় না।
বিষ্ময়কর হলেও সত্য, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী/ স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ ধর্মীয় জঙ্গি নেতাই দেওবন্দি ঘরানার শিক্ষায় শিক্ষিত। পরিবর্তিত বিশ্বজগত সম্পর্কে তাদের বিষম অনীহা। বলা ভালো, আফগান তালেবান এবং কাশ্মীরি ধর্মীয় জঙ্গি নেতাদের মানসিকতার মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তালেবানরা আফগানের বিবদমান দলগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে ক্ষমতা হাতিয়ে নিতে পারলেও বিশ্ব-জনতার সমর্থনের অভাবে টিকে থাকতে পারে নি। ভারতের দাপুটে নীতির কাছে কাশ্মীরের সে সব ধর্মান্ধ নেতারা কখনোই সুবিধা করতে পারে নি, তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও কোনো সুনজর নেই। তাহলে কি কাশ্মীরি জনতা আলোর সন্ধান পাবে না?
পাবে, আলবত পাবে। কিন্তু এর জন্য যে পদ্ধতি ও কৌশলের দরকার, তা তাদের রপ্ত করতে হবে। এর জন্য যে চোখের দরকার, তা অর্জন করতে হবে এবং তা ফুটিয়ে তোলারও ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং এ-সব কিছুর যত্ন নিতে হবে অব্যাহতভাবে। কাশ্মীরি জনতা যদি নিজেদের প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে, তাহলে অন্যের তাবেদার না হয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে জীবন ধারন করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে, তা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবেন। অর্থাৎ শিক্ষাই তাদের অফুরান জীবনী শক্তির পথ খুলে দেবে।
নাগা, ত্রিপুরা, মনিপুরি ইত্যাদি উপজাতি গোষ্ঠী যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চালিয়ে প্রচলিত শিক্ষা-দীক্ষায় সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, কাশ্মীরিরা তাহলে পারবেন না কেন? পাহাড় জয় করার সময় আরোহীরা যদি আহার-জলপান বন্ধ না রাখে, তাহলে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্ম-সচেতনতা সৃষ্টির উপায় ও পথগুলো বন্ধ থাকবে কেন? আর মুসলিম বলেই কাশ্মীরিরা নিপীড়নের শিকার, এমন অযৌক্তিক সমীকরণ বর্তমানে অচল। কেরালা রাজ্যের মুসলিমরা সংখ্যালঘু হয়েও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারছে তাদের শিক্ষা আছে বলে। আবার পাকিস্তানের বেলুচ নেতারা মুসলিম হয়েও পাকিস্তানের মুসলিম শাসকদের হাতেই নিপীড়নের শিকার। তাই ধর্ম নিয়ে আবেগী আওয়াজ না তুলে আত্মপ্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পাকিস্তান নিজে উদ্যোগী হয়ে সে কাজ কখনো করবে না। বরং তারা কাশ্মীরিদের আলোর পথে বাধা হয়েই থাকবে। এতেই তাদের লাভ। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক এখতিয়ার কাশ্মীরি জনতার। তারা যদি পাকিস্তানি রাজনীতির ক্রীড়নক না হয়ে স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, চিন্তা করে, তাহলে চলমান মুক্তি আন্দোলনের সাথে নিজেদের পুষ্টির নানা উদ্যোগগুলো কার্যকর করতে হবে এবং শিগ্গিরই। এখানে ভারতের সহযোগিতা লাগলেও সতর্কভাবে তা গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, প্রতিপক্ষের সহযোগিতায় যদি নিজের উন্নতি ও মুক্তির পথ উন্মোচিত হয়, তাহলে এতে পিছিয়ে থাকা এবং আপত্তি করা এক রকমের বোকামি।
আর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ, এখন যে সব অন্ধকারের মোকাবেলা তাদেরকে করতে হচ্ছে, বিশেষত কাশ্মীরি জনতার অন্ধতা ও অশিক্ষা, তা তারা শিক্ষার আলো পেলে আর থাকবে না। তখন তাদের মানসিকতার অনেক উন্নয়ন ঘটবে। তাদের সঙ্গে যে কোনো রকমের সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, যা ভারতের নিজ স্বার্থেই করা দরকার। কাশ্মীরে স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
কাশ্মীরের বর্তমান দুর্ভোগের মূল ৪৭-এর দেশভাগ পর্বে নিহিত। দেশভাগের ছুতো ধরেই এই ভূখণ্ডটি পাকিস্তানের ভাগে পড়বে, না ভারতের অন্তুর্ভক্ত হবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্বের এক সময়ে পাকিস্তান পুরো কাশ্মীর দখল করার মনস্থির করে এগুতে থাকলে ভারত অধিকাংশ কাশ্মীর হাতিয়ে নেয়। পাকিস্তানের দখল-করা অংশের নাম আজাদ কাশ্মীর আর ভারতের দখল করা অংশের নাম জম্মু-কাশ্মীর। বর্তমানে রক্তের যে হোলি খেলা বা মরণ-মারণের যজ্ঞ চলছে, তা শুধু জম্মু-কাশ্মীরেই। কিন্তু কেন?
ধর্মভিত্তিক ভারত-বিভাজনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি ঘটে হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের মাঝে। কারণ, পাক-ভারত সীমারেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বত্র অভিন্ন রীতি মানা হয় নি। কোথাও কোথাও ছিল গণভোটের সিদ্ধান্ত, অন্য বেশ কিছু রাজ্যে আবার তা হয় নি। বরং তা ছেড়ে দেওয়া হয় সেই সব রাজ্যের রাজা-মহারাজার খেয়াল-খুশির ওপর। কাশ্মীর ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতাভুক্ত। কাশ্মীরের তৎকালীন রাজা ভারত-ভুক্তির পক্ষে রায় দেন বিধায় ভারতের পক্ষে তা হস্তগত করা সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে পাকিস্তান এখানে নিজের দিকে ঝোল টানতে থাকে সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সমর্থনের যুক্তিতে। সংঘাতের মূল এখানেই লুক্বায়িত।
ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া একাধিক রাজ্যে শুরু থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বা স্বাধীনতাকামীদের তৎপরতা অব্যাহত ছিল বা এখনো আছে। কিন্তু সেই সব রাজ্যের সঙ্গে কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান একেবারেই ভিন্ন। একমাত্র কাশ্মীরের সঙ্গেই ভারতের জন্মবয়সী শত্রু পাকিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত রেখা। তা ছাড়া রয়েছে চীনের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা, যে দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ হবার অবকাশ পায় নি। অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় তাই কাশ্মীরের স্পর্শকাতরতা অনেক অনেক বেশি।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কিস্তু পাকিস্তানেও ছিল এবং এখনো চলমান। সে সব অঞ্চলের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক অবস্থা শান্তিপূর্ণ প্রদেশগুলোর তুলনায় ভিন্ন হবে, এটা অভাবিত নয়। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়া বর্তমান বাংলাদেশ তার জাজ্বল্য প্রমাণ। বর্তমান বেলুচিস্তানের অবস্থাও ঠিক উত্তপ্ত কড়াইয়ের মতো। আর তাই দেখা যায়, দীর্ঘ চল্লিশ বছর পরও পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বেলুচ নেতৃবৃন্দকর্তৃক শেখ মুজিবের ছয়দফা দাবি উত্থাপিত হয়!
বলেছি, এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী /স্বাধীনতাকামী আন্দোলন ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও বিদ্যমান। যদিও সে সব আন্দোলন এখন প্রায় স্তিমিত। স্তিমিত হওয়ার পেছনে কাজ করেছে ভারতের প্রাজ্ঞ চিন্তার ‘ধীরে চলো নীতি’ এবং 'অপার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা'। উপরন্তু সেই সব প্রদেশে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী কোনো ইন্ধনদাতার প্রত্যক্ষ মদদ ছিল না বা নেই। তাহলে কি বলা যায়, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পাকিস্তানের ইন্ধনই একামাত্র দায়ী?
প্রধান দায়ভার পাকিস্তানের না হলেও ইস্যুটা জিইয়ে রাখার ব্যাপারে পাক সরকার এবং জনগণের যথাক্রমে স্বার্থনীতি ও ধর্মীয় আবেগের প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। ভারত যেভাবে সমগ্র কাশ্মীরকে নিশ্ছিদ্র পাহারা দিচ্ছে, তাতে এতোদিনে অন্যান্য প্রদেশের মতো এখানেও শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় নি। বরং থেকে থেকে অগ্নিগিরির লাভা উদ্গীরণ হয়। এই উদ্গীরণ রোধ কার জন্য ভারতকে সব চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। তবুও ভারত সরকার যেমন সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছে না, তেমনই কাশ্মীরি জনতাও মুক্তি বা শান্তির সন্ধান পাচ্ছে না। তাহলে গলদাটা কোথায়?
বিচ্ছিন্নতাবাদী বা স্বাধীনতা আন্দোলন মানে শুধু সশস্ত্র তৎপরতা নয়। লড়াইয়ের অপরাপর দিকগুলোর ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে শুধু অস্ত্র ব্যবহার করে, প্রাণ দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে, আর যায় হোক, রাজনৈতিক সফলতা লাভ করা যায় না। এতে আবেগী চিন্তার পরিতৃপ্তি থাকতে পারে। সাময়িকভাবে সুবিধাও অর্জিত হতে পারে; কিন্তু তা হয় বুদ্বুদের মতো, কোনোভাবেই স্থায়ী হয় না। রাজনৈতিক লড়াইকে অব্যাহত রাখার জন্য কর্মী-সমর্থকদেরকে সমকালীন সকল কৌশলেই দক্ষ হতে হয়। আর এর জন্য দরকার হল মৌলিক শিক্ষা। অন্তত নিজেেেদর জীবনের মান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা ও বুদ্ধিচর্চার বিকল্প নেই। কাশ্মীরিরা এ ব্যাপারে একান্ত পিছিয়ে। মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমের মতোই তাদের জনশিক্ষার চালচিত্র। আর তাই সাত দশকের আন্দোলনে তাদের প্রাপ্তি একেবারেই শূন্য।
ভারতের অপরাপর সাতটি রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স নামে খ্যাত অঞ্চলে) মুক্তিকামী নেতা-কর্মীরা নিজেদের শুধু সশস্ত্র আন্দোলনেই নিয়োজিত করেন নি। একই সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিতকরণের পথও সমানভাবে উন্মুক্ত রেখেছেন। বরং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকর্মীদের অনেকেই বিশ্বস্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলোকপ্রাপ্ত। তাই তারা যেমন অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতে সক্ষম, তেমনই জ্ঞান-জাগতিক পরিসরেও প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখায় পারঙ্গম। আবার সেই সাতটি রাজ্যের জীবন-মান কোনোভাবেই অপরাপর রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে নেই। তাদের উত্তর-প্রজন্মের বিদ্যা-বুদ্ধিগত অর্জন তো ঈর্ষার করার মতো। অথচ কাশ্মীরের জনতার দিকে তাকিয়ে দেখুন, কী এক অপরিসীম স্বপ্নহীন অন্ধকার জগতে তাদের বসবাস!
অধিকৃত গাজার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারাও কিন্তু শিক্ষায় পিছিয়ে নেই। এরা আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের বক্তব্য নিজেরাই পেশ করতে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতারা তা পারে না, তাদের তেমন নেতা নেই। কাশ্মীরি মুসলিমদেরও ঠিক অনুরূপ অবস্থা। অবশ্য তাদের নেতা আছে বটে। কিন্তু তাদের পরিচিতি শিক্ষার মতোই একান্ত সীমিত, খুপড়িবদ্ধ! রোহিঙ্গারা যেহেতু নাগরিকত্বহীন, তাদের এ-অবস্থাটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু কাশ্মীরি মুসলিমদের তো সে পরিস্থিতি নেই। তারা ভারতীয় নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে প্রচলিত ও প্রথাগত শিক্ষার শক্তিতে নিজেদের বলিয়ান করতে পারেন, আসন নিতে পারেন জ্ঞানজাগতিক পরিসরের শীর্ষ শিখরে। যেমনটা করছেন পাকিস্তানের অন্তর্গত বেলুচ নেতারা। তারা বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলন করতে গিয়ে কেউ সমকালীন শিক্ষা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেন নি। এগুলো ভাবলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, কাশ্মীরে শুধু অন্ধকার, জমাট বাঁধা অন্ধকার। কিন্তু কেন?
এ কথা কে না জানে যে, কাশ্মীর ভূখণ্ডে স্বতন্ত্র স্বাধীনতার দাবিদার জন-সাধারণও বিদ্যামন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার, তাদের কোনোভাবেই পুছে না। পাকিস্তান বরং তাদেরই বেশি মূল্যায়ন করে, যারা পাকিস্তানের শলাপরামর্শে কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের সঙ্গে মেলাতেই বেশ উৎসাহী ও তৎপর। এবং ভবিষ্যতে কোনোভাবে কাশ্মীর যদি স্বাধীন হয়েই যায়, তাহলেও যেন কাশ্মীর কার্যত পাকিস্তানের তল্পিবাহক হয়েই থাকে, সে চেষ্টা ও মানসিকতা বরাবরের মতোই বিদ্যমান। তাই পাকিস্তান কাশ্মীরি জনতার মনোজাগতিক পুষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয় না। পাকিস্তান নিজের দেশ আধুনিক চিন্তা ধারায় পরিচালনা করলেও কাশ্মীরে তাদের অনুসারীদের মাঝে আধুনিক শিক্ষা নয়, ধর্মীয় শিক্ষার বাতাবরণে হাওয়া দেয়। ধর্মীয় আবেগে নিজেদের আটকে রাখে বলে কাশ্মীরিরাও কোনো আলোর সন্ধান পায় না। আর তাই দীর্ঘ সত্তর বছরে পাকিস্তানের আশ্রিত আজাদ কাশ্মীরও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো আদর্শ অবস্থানে পৌঁছাতে পারে নি। ধর্মীয় অন্ধ আবেগ দিয়ে জনতাকে যেভাবে টোপের মাঝে বন্দি রাখা যায়, শিক্ষার আলো চোখে লাগলে তা আর সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, ভারতের অভ্যন্তরে উত্তপ্ত রাজ্যগুলোতে শিক্ষার আলো বিতরণে ভারত সরকারের যে উদ্যোগ চলমান, তা জম্মু-কাশ্মীরে সেভাবে নেই। সেখানকার সাধারণ জনতা পাকিস্তানি কওমি মাদরাসার শিক্ষার প্রতি যতটা আগ্রহী, ততটা নয় ভারতীয় জাতীয় শিক্ষার প্রতি। তাই কাশ্মীরের অন্ধকার শেষ হয় না।
বিষ্ময়কর হলেও সত্য, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী/ স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ ধর্মীয় জঙ্গি নেতাই দেওবন্দি ঘরানার শিক্ষায় শিক্ষিত। পরিবর্তিত বিশ্বজগত সম্পর্কে তাদের বিষম অনীহা। বলা ভালো, আফগান তালেবান এবং কাশ্মীরি ধর্মীয় জঙ্গি নেতাদের মানসিকতার মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তালেবানরা আফগানের বিবদমান দলগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে ক্ষমতা হাতিয়ে নিতে পারলেও বিশ্ব-জনতার সমর্থনের অভাবে টিকে থাকতে পারে নি। ভারতের দাপুটে নীতির কাছে কাশ্মীরের সে সব ধর্মান্ধ নেতারা কখনোই সুবিধা করতে পারে নি, তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও কোনো সুনজর নেই। তাহলে কি কাশ্মীরি জনতা আলোর সন্ধান পাবে না?
পাবে, আলবত পাবে। কিন্তু এর জন্য যে পদ্ধতি ও কৌশলের দরকার, তা তাদের রপ্ত করতে হবে। এর জন্য যে চোখের দরকার, তা অর্জন করতে হবে এবং তা ফুটিয়ে তোলারও ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং এ-সব কিছুর যত্ন নিতে হবে অব্যাহতভাবে। কাশ্মীরি জনতা যদি নিজেদের প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে, তাহলে অন্যের তাবেদার না হয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে জীবন ধারন করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে, তা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবেন। অর্থাৎ শিক্ষাই তাদের অফুরান জীবনী শক্তির পথ খুলে দেবে।
নাগা, ত্রিপুরা, মনিপুরি ইত্যাদি উপজাতি গোষ্ঠী যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চালিয়ে প্রচলিত শিক্ষা-দীক্ষায় সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, কাশ্মীরিরা তাহলে পারবেন না কেন? পাহাড় জয় করার সময় আরোহীরা যদি আহার-জলপান বন্ধ না রাখে, তাহলে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্ম-সচেতনতা সৃষ্টির উপায় ও পথগুলো বন্ধ থাকবে কেন? আর মুসলিম বলেই কাশ্মীরিরা নিপীড়নের শিকার, এমন অযৌক্তিক সমীকরণ বর্তমানে অচল। কেরালা রাজ্যের মুসলিমরা সংখ্যালঘু হয়েও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারছে তাদের শিক্ষা আছে বলে। আবার পাকিস্তানের বেলুচ নেতারা মুসলিম হয়েও পাকিস্তানের মুসলিম শাসকদের হাতেই নিপীড়নের শিকার। তাই ধর্ম নিয়ে আবেগী আওয়াজ না তুলে আত্মপ্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পাকিস্তান নিজে উদ্যোগী হয়ে সে কাজ কখনো করবে না। বরং তারা কাশ্মীরিদের আলোর পথে বাধা হয়েই থাকবে। এতেই তাদের লাভ। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক এখতিয়ার কাশ্মীরি জনতার। তারা যদি পাকিস্তানি রাজনীতির ক্রীড়নক না হয়ে স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, চিন্তা করে, তাহলে চলমান মুক্তি আন্দোলনের সাথে নিজেদের পুষ্টির নানা উদ্যোগগুলো কার্যকর করতে হবে এবং শিগ্গিরই। এখানে ভারতের সহযোগিতা লাগলেও সতর্কভাবে তা গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, প্রতিপক্ষের সহযোগিতায় যদি নিজের উন্নতি ও মুক্তির পথ উন্মোচিত হয়, তাহলে এতে পিছিয়ে থাকা এবং আপত্তি করা এক রকমের বোকামি।
আর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ, এখন যে সব অন্ধকারের মোকাবেলা তাদেরকে করতে হচ্ছে, বিশেষত কাশ্মীরি জনতার অন্ধতা ও অশিক্ষা, তা তারা শিক্ষার আলো পেলে আর থাকবে না। তখন তাদের মানসিকতার অনেক উন্নয়ন ঘটবে। তাদের সঙ্গে যে কোনো রকমের সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, যা ভারতের নিজ স্বার্থেই করা দরকার। কাশ্মীরে স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন