পাক-ভারত (সম্ভাব্য) যুদ্ধ এবং এর পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:০৪:২৪ বিকাল
পাক-ভারত যুদ্ধ হোক বা না হোক, এক শ্রেণির প্রচার মাধ্যম ব্যস্ততার খোরাক পেয়েছে বোধহয়। সংবাদের ধরন দেখে মনে হয়, এতেই এদের লাভ। আগাম এবং সম্ভাব্য সেই যুদ্ধের ব্যাপারে দেশদ্বয়ের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারকদের চেয়ে এ নিয়ে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেক অনেক বেশি। আবার পাক-ভারত সীমান্ত যেহেতু সদা উত্তাপপ্রবণ অঞ্চল, তাই তাদের সে সুযোগ বরাবরের মতোই আছে, থাকবেও হয়তো-বা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যি কি বাঁধতে যাচ্ছে সেই যুদ্ধ? অথবা মিডিয়া যেভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার স্বপ্ন দেখছে, বা অন্যদের দেখাচ্ছে, তাতে কি পাক-ভারত নীতি-নির্ধারক মহলে যুদ্ধের উন্মাদনা তৈরি হবে, নাকি নিজের মতো করে ভাবার কোনো ফুরসত হবে তাদের? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, উত্তেজনা থাকবে; বরং উত্তাপ আরো বাড়তে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ হবে না। আমার দাবির সমর্থনে ভারতের পক্ষ থেকে অনুমিত কারণগুলোর কয়েকটি হলো:
ক) এ পর্যন্ত একাধিকবার পাক-ভারত যুদ্ধ হয়েছে। এতে কোনো রাষ্ট্রই নিখাদ তৃপ্তি লাভের সুযোগ পায় নি। ৭১-এর কথা-ই ধরা যাক, সেখানে পাকিস্তান পরাজিত বটে। কিন্তু ভারতকেও কি কম মূল্য দিতে হয়েছে? অতি অল্প সময়ে কত সেনাকে তখন প্রাণ দিতে হয়েছে, তা কি ভুলে যাবার মতো? জয়-পরাজয়ের নিক্তিতে আবেগী চিন্তার বেলুন ফুলে উঠলেও প্রাণঝরানোর বেদনায় তা সত্যিই ম্লান! তাই ভারত এ ধরনের পথে এগুবে বলে মনে হয় না।
খ) ভারত তুলনামূলক বৃহৎ দেশ। এর ধারাবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একে আজ উন্নত ও পরাশক্তির কাতারে নিয়ে গেছে। এখন অযাচিত যুদ্ধে তাদের যে ক্ষয়-ক্ষতি হবে, তাতে উন্নতির মহা সড়কে বিরাট রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে, তা বোকাও বুঝতে পারবে। তবে হ্যাঁ, অভ্যন্তরীণ জনগণকে একটু ফুলিয়ে রাখতে হয় বিধায় উত্তেজনা ধরে রাখতে হয়।
গ) ভারতের জনসংখ্যা প্রায় একশো তিরিশ কোটি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈষম্যও সমান হারে বাড়ছে। অধিকাংশ নাগরিকের জীবনের মান এখনো অনেক নিচে। জীবন-মান উন্নত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন সাধনার দরকার। আপতিক যুদ্ধ সে সাধনার অন্তরায়।
ঘ) অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ধর্মান্ধ বা ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী বিজেপি এখন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। যুদ্ধের দামামা দেশের নানা ক্ষেত্রে, বিশেষত অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। এতে মসনদ ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই শেষপর্যন্ত তারাও যুদ্ধের দিকে যাবে না। তবে ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার জন্য জনতা-মাতানো বক্তব্য চলতেই থাকবে।
অপরপক্ষে পাকিস্তানের দিক থেকে অনুমিত কারণগুলোর কয়েকটি হলো:
ক) একটা সময় পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনীতি অর্থাৎ ক্ষমতার স্বাদ সেনা অফিসার ও এলিট শ্রেণির মাঝেই সীমিত ছিল। তখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় যে রস গড়িয়ে পড়ত, তাতে অন্য কারো ভাগ বসানোর সুযোগ ছিল না। এখন আবার তাদের পরম্পরাগত নির্বুদ্ধিতার দরুণ ভয়ঙ্কর পিঁপড়ের জন্ম হয়েছে। আর তা হল পাক তালেবানসহ জঙ্গিবাদী অপরাপর গোষ্ঠীগুলো। এখন যুদ্ধের কোনো নিট ফল, বিশেষত কাশ্মীরের মতো জায়গার সুফল এককভাবে সেনা বা এলিট শ্রেণির কেউ ভোগ করার সুযোগ পাবে না। তাই প্রথাগত কোনো খেলায় মেতে ওঠে ক্ষমতার স্বর্ণ-আপেল খোয়াতে চাইবে না।
খ) অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের উপস্থিতি ও গুরুত্ব ভারতের তুলনায় এখন অনেক সংকোচিত। সীমান্ত প্রদেশগুলোতে সেই বিষ পিঁপড়ের দংশনের পর দংশনের কারণে পাকিস্তান এমনিতেই পর্যুদস্ত। এখন কোনো যুদ্ধ মানেই হলো সরকার বা সেনা সংস্থার দুর্বল হয়ে আসা। কিন্তু ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোর শক্তি পূর্ববৎ থাকবে বা এই সুযোগে আরো চাঙ্গা হবে। কিন্তু কে নেবে এই ঝুঁকি?
গ) কাশ্মীরে যুদ্ধ করতে হলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি থাকবেই। কারণ, এগুলো পাক সরকারের দুধ-কলায় পোষা গোষ্ঠী। নানা কারণে এরা এখন নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে পাক তালেবানরা এদের সহায়ক হয়ে দাঁড়াবে। তখন যুদ্ধের লাগাম কোনোভাবেই পাক সরকারের হাতে থাকবে না। কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপস্থিতি ও সম্পৃক্তি মানেই হলো সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক সমাজের অনীহা। তখন পাকিস্তানের পায়ের নিচে মাটি থাকবে না এই ভয়ে তারা সামনে এগুবে না।
ঘ) বেলুচিস্তান তো দীর্ঘদিন থেকে উত্তপ্ত। কিন্তু নানাভাবে পাক সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করছে। এবারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদিও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন। এতে বোঝা যায়, তাওয়া বেশ গরম। এখন শুধু রুটি শেকানোর পালা। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান যদি ব্যতি ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে ভারতও বেলুচদের ব্যাপারে আরো সক্রিয় হবে। যুদ্ধব্যস্ত হয়ে পাক সরকার কতটা বেলুচ সমস্যাকে সামাল দিতে পারবে, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
শেষ কথা হল, যুদ্ধ-পরিস্থিতি আছে এবং থাকবে। কিন্তু এতে যদি বাইরের ইন্ধন এগিয়ে আসে তাহলে মোড় ঘুরতেও পারে। কারণ, এখন পরিস্থিতিটা শুধু পাক-ভারতকেই ভাবতে হচ্ছে। যে সমস্ত দেশ এই গরম অবস্থায় এদিক-সেদিক পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হলে তাদের লাভ বেশি। কারণ, তাদের অস্ত্র-বাজার চাঙা হবে। ক্ষয় হবে, ছাই হবে শুধু পাক-ভারতের মাটি ও মানুষ। নিজের স্বার্থ রক্ষায় পাক-ভারত কতটা সক্ষম ও সফল, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
বিষয়: বিবিধ
১২১৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যুদ্ধ লাগার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ কারণ রাশিয়ার মিডিয়ার উদৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান নাকি মোদিকে বলেছেন যে তার সৈন্যরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয় । এরকমও শোনা গেছে যে সেনারা নাকি ছুটির আবেদন করেছেন । অন্যদিকে পাকিস্তানের মিত্র চীন নাকি ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ড্রিল করা শুরু করে দিয়েছে ।
তবে যুদ্ধ যদি বেঁধে যায় পাকিস্তানের ক্ষতির চেয়ে ভারতের ক্ষতি বেশী হবে কারণ পাকিস্তান অলরেডি ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে বসা একটি দেশ আর ভারতে সেরকম গন্ডগোল নেই ।
উত্তর পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বেঁধে গেলে উত্তর-পূর্ব সীমান্তে চীনও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে , সাথে সেভেন সিস্টার্সদেরও আবার মাথানষ্ট হয়ে বসতে পারে।
ভারতকে তাই এই সময়ে মুখ বুজে অনেক কিছু হজম করে যেতে হচ্ছে।
'রাশিয়া নাকি', 'ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান নাকি', 'সেনারা নাকি', 'চীন নাকি' এই সব নাকানাকিতে মন্তব্যের শুরুটা ধারহীন এবং ভারহীন!
পরের দুটি প্যারার সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। কিন্তু এক বাক্যের শেষ প্যারা সম্পর্কে কথা হল, যেভাবেই হোক যুদ্ধ হচ্ছে না। মুখ বুঝে সহ্য করার চেয়েও মূল কথা হল, উরির হামলার জন্য আদতে দায় কার? কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো গোষ্ঠী করে থাকলে, তারা দায় স্বীকার করার কথা। অতীতে এ রকমই হয়েছে। পাক সরকারকে দায়ী করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাব রয়েছে। ইরাক আক্রমণের জন্য যে মিথ্যা অজুহাত বুশ-ব্লেয়ার ব্যবহার করেছে, সে পথা মোদি পা রাখে নি। অন্যদিকে,'ভারতে জীবন-মান উন্নত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন সাধনার দরকার। আপতিক যুদ্ধ সে সাধনার অন্তরায়।'
ধন্যবাদ।
হাসালেন ভাই। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন