বৈশাখি ফতোয়া!
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ১৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৫:০৯:৫৭ বিকাল
ক। পহেলা বৈশাখের উৎপত্তিটা আসলে কোথায়? এর উদ্ভব কি হিন্দুর হাতে, না মুসলিমের হাতে? এর উদ্ভাবনটা ছিল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, না জীবন-বাস্তবতার নিরিখে? এই সব কিছু না জেনেই ধর্মের ফেরিওয়ালারা এ-নিয়ে হিন্দুয়ানি হিন্দুয়ানি বলে চিৎকার করছে। ভাগাড়ের কাকের চেয়েও এদের চিৎকার ধ্বনি বেশ তীব্র!
সম্রাট আকবর যদি এর উদ্ভাবক হয়ে থাকেন, তা যে কারণেই হোক, এর কৃতিত্বের দাবিদার মুসলিমরা। কিন্তু আত্মরতিতে ক্লান্ত মুসলিম-সমাজের এ-নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। কারণ, ইতিহাসের সদর রাস্তা ছেড়ে এরা তথাকথিত ধর্মান্ধতার (?) আশ্রয়েই প্রশান্তি খুঁজে পায়। তাই তাদের উদ্ভাবিত বর্ষ-প্রথা এখন বেহাত হচ্ছে। এই ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য ফতোয়ার জিগির তুলছে। যদিও ফতোয়ার প্রভাব সমাজে খুব একটা নেই।
খ। সামন্ত-ব্যবস্থার অনেক প্রথা-ই পুঁজির গ্রাসে আপন চরিত্র হারাতে বসেছে। এই মুসলিমদের ঈদের কথা-ই ধরা যাক। ঈদ যখন আসে, তখন আমরা কতজন আসলে একে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করি? হ্যাঁ, নতুন পোশাক ও হরেক রকম খাবার-দাবারের ব্যাপারে কারোই বিতৃষ্ণা থাকে না। অথচ ইতিহাস ঘাটলে, রাসুলের হাদিসের ভাষ্য খুঁজলে সহজেই চোখে পড়বে, শুকরিয়া আদায়ের উচ্চতর স্তর হল এই ঈদ উৎসব! অর্থাৎ ঈদ আসে, ঈদ যায়, কিন্তু ইসলামের শিক্ষা আমরা তোড়াই কেয়ার করি। এ-নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন জাগে না। প্রশ্ন জাগে, ধর্মকেন্দ্রিক নয়, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক উদ্ভাবিত একটি সার্বজনীন উৎসবের ব্যাপারে!
গ। এখন ঈদও পুঁজির কবলে পড়ে এর মূল শিক্ষা হারাতে বসেছে। হিন্দুদের পুঁজাও। বৎসরের সূচনায় সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষও পুঁজির স্রোতে পড়ে ভেসে যাচ্ছে। এই স্রোতে সকল মানুষই হারিয়ে যাবে। ধর্ম এখানে কোনো বাধাই তৈরি করতে পারবে না। ইসলাম ধর্মের ভেতরে অবশ্য সেই শক্তি ও ক্ষমতা ছিল। দুঃখজনক হল, ধর্মের ফেরিওয়ালারা সে বিষয়ে অজ্ঞ। এ জন্যই আজ এ অবস্থা। এরা ধর্ম গেল, ধর্ম গেল রব তুললেও মানুষ নীরবে পুঁজির কোলেই গড়িয়ে পড়ে, এর বাঁধনে জড়িয়ে পড়ে। কারণ, পুঁজি মানুষকে আকৃষ্ট করার নানা পন্থা অবলম্বন করে। পুঁজি কেন এবং কীভাবে মানুষকে টেনে নেয়, এর খোঁজ এরা নেয় না; বোঝেও না। আর তাই এরা পাল্টা স্রোত বা বাঁধ তৈরি করতে ভাষণভাবে অক্ষম। আর পৃথিবীতে অক্ষমরাই হঠকারী রকমের কাজ করে মানুষের মনে বিরক্তি উৎপাদন করে থাকে অহরহ।
ঘ। বাংলাদেশে যেই দিন পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়, হিন্দুরা সেই দিন চৈত্র-সংক্রান্তি পালন করে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে এরা এর পরের দিন পহেলা বৈশাখ পালন করে। তাহলে দেখা গেল, বাংলাদেশে যে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়, এর সঙ্গে অন্তত হিন্দু ধর্মের কোনো সংযোগ নেই। ১৪ তারিখে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ পালিত হলেও কলাকাতর হিন্দুরা তা পালন করে ১৫ এপ্রিল। তবুও ফেরিওয়ালাদের চিৎকারে কান জ্বালাপালা!
ঙ। অশালীনতা, বেলেল্লাপনা কোনো কালে, কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পহেলা বৈশাখের উৎসবকে এই সব ফেরিওয়ালারা বেলেল্লাপনার দিন বলে অভিহিত করে এর থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। ওদের কথা হল, এই সমস্ত বেলেল্লাপনার জন্যই ধর্ষণ হয়! ধর্ষণের মনস্তত্বটা আসলে ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন মানসিকতায়। কারণ, প্রবল পর্দা-প্রথার মাঝেও এবং খোদ রাসুলের যুগেও জিনা হয়েছে। বোরকাপরা নারীও সৌদি আরবে ধর্ষণের শিকার হয়। আবার বিজু-বৈসাবি ইত্যাদি পাহাড়ি উৎসবে কখনো কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে নি। তাই ধর্ষণকে শুধু উৎসবের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে চিৎকার করাটা অযৌক্তিক!
চ। বৈশাখে যে শাড়ি পরা হয়, কপালে টিপ পরা হয়, এগুলো নিয়েও কারো কারো আপত্তি। তাদের মতে, এগুলো হিন্দুয়ানি রীতি। যে কোনো সমাজবাহিত রীতি ধর্মসম্পৃক্ত হতেই পারে। কিন্তু এ যদি মূল ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে এ নিয়ে এলার্জি প্রদর্শনের বোধ হয় খুব একটা প্রয়োজন নেই। রাসুলের হাদিসে যে সাদৃশ্যের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা ধর্মীয় প্রতীককেন্দ্রিক। অর্থাৎ যা অন্য ধর্মের প্রতীক, সে বিষয়ে কেউ অনুসরণ করতে পারবে না। শাড়িকে কিন্তু হিন্দু ধর্মের প্রতীক বলা যাবে না, যেমন সেলোয়ার কামিজকেও মুসলমানি পোশাক বলা যাবে না। এগুলো হল দেশকালগত কৃষ্টি। একই সঙ্গে নারীদের কপালে গোল টিপ পরাও হিন্দু ধর্মের আচার-প্রথার অংশ নয়। হ্যাঁ, সিঁথি বরাবর লম্বা লাল দাগটি ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মাচারের অন্তর্ভুক্ত। এটা কোনো মুসলিম নারী করে না।
ছ। মানুষের প্রবৃত্তিটাই ভোগোন্মত্ততার বিশাল আকর। তাই কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনভাবে ধর্ম থেকে দূরে সরে যেতে পারে। পুঁজির তোড়ে ভোগবাদিতার জোয়ারে ভেসে যেতে পারে। কিন্তু তখন ফতোয়ার সঙ্গীন নিয়ে খাড়া হলে মানুষ দৌড়ে পালাবে। তখন সঙ্গীন নয়, প্রয়োজন ভেতর থেকে উপচে-ওঠা দরদের। দূরদর্শী আলেম ও গুণীদের উচিত হবে, নেতিবাচক তড়িৎ কোনো মন্তব্য না করে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু মাত্র এভাবেই সাধারণ মানুষকে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে। নিজ বিদ্যা-বুদ্ধি ও চরিত্র দিয়ে কাউকে আকর্ষণ করতে না পারলে শুষ্ক নীতিবাক্য কোনো কাজে আসে না। প্রবাদ আছে, শুকনো কথায় চিড়ে ভিজে না। তাই দরদি আলেমকে তরল বাক্য দিয়েই মানুষের মনজয় করার চেষ্টা করতে হবে।
পুনশ্চ:- বোম্বাই চানাচুর সবারই প্রিয়। বোম্বাই জিলাপিও। কোনো এক মাওলানার মুখ থেকে শুনেছি, আগের দিনে হজে যাওয়ার সময় হাজী সাহেবরা বোম্বাইতে গিয়ে জাহাজে উঠতেন। কেউ কেউ বাঙাল মুলুক থেকে বোম্বাই পৌঁছানোর আগেই হজের জাহাজ মক্কার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। তখন এই জাহাজই ছিল শেষ ভরসা। জাহাজ-ফেল-করা বাঙালরা সে-বছর আর মক্কায় যেতে পারতেন না। কিন্তু যেহেতু হজের নিয়তে বাড়ি ছেড়েছেন, তাই বাড়ি ফেরার পরে তাদেরও হাজী বলা হত। শুধু হাজী নয়; বরং বোম্বাই হাজী অর্থাৎ এরা মূল গন্তব্যে না পৌঁছাতে পারলেও হাজী নাম ধারন করেছেন। তারা আবার সমাজের নানা বিষয়ে খুঁত ধরতেন। সেই রকমভাবে এখন, বোধহয়, সমাজে ব্যাপক হারে বোম্বাই মুফতি তৈরি হচ্ছেন। আর তাই এতো ফতোয়ার ঝনঝনানি!
বিষয়: বিবিধ
১২৩৩ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সম্রাট আকবর উদ্ভাবক হলে এর দাবিদার মুসলমান হবে কেন?
সম্রাট আকবর মুসলমানদের কে?
দ্বিতীয় কথা হলো- আপনারা যখন এ গুলো পালন করেন তখন বলেন বাংলার ঐতিহ্য। এখন আমার প্রশ্ন হলো সম্রাট আকবর ছিলেন মঙ্গোলিয়ান। মঙ্গোলিয়ানদের তৈরী করা নিয়ম কানুন বাংলার ঐতিহ্য্ কি করে?
তৃতীয় কথা- সম্রাট আকবর যখন বাংলা নববর্ষের চালু করলেন। তখন কি বক্ষ প্রদর্শন ও ছায়া উত্তেলন চালু করেছেন। এখন আপনার যা করছেন? বাংলা নববর্ষ চালু হয়েছিলো অর্থনৈতিক কারণে। যেটা এখন ধীরে ধীরে অশ্লীলতায় রুপান্তর করছে।
এবার টিপ নিয়ে বলা যাক, টিপ প্রথার প্রচলনের কাহিনী জানেন না অথচ এ বিষয়ে ফতুয়া দিয়া দিলেন ?
জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ) এর আমলে টিপ ব্যবস্থার চালু হয়। একটি চরক দিয়ে হযরত ইবরাহিম (আ) কে অগ্নিকান্ডে নিক্ষেপের জন্য আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্ত চরকটি ফেরেস্তাদের কারনে আনতে পারছিলো না। তাই শয়তানের বুদ্ধিতে কিছু মেয়ে এনে উলঙ্গ নৃত্য করালে ফেরেস্তারা চলে যায়। আর তখন যারা উলঙ্গ নৃত্য করেছিলো তাদের চিহ্নিত করতে তাদের কপালে টিপ পড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। আর সেই থেকে টিপ প্রথার প্রচলন। (সংক্ষিপ্ত ভাবে বললাম)
এখন যদি আপনার ইচ্ছা হয় টিপ পড়তে পড়ুন আমাদের আপত্তি নেই।
পর্দাই ধর্ষনকে কমায়। ইসলামি শাষন যেখানে আছে যেখানে ধর্ষণ হওয়া পরিসংখ্যানটা দেখুন।
আর মোদ্দাকথা হলো আপনি যে জাহাজ ফেল করা হাজি সাহেবদের কথা বলেছেন। আমার মনে হয় বিষয়টি আপনার জন্য প্রযোজ্য।
২- ইতিহাস বলে, মুসলিম শাসকরা স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। এটাই নাকি তাদের বড় কৃতিত্ব! আপনি তা অস্বীকার করছেন। তা করুন। কিন্তু পেছনে ওপরের কারণটি কাজ করছে না? করলেও আপত্তি নেই!
৩- সম্রাট আকবরের উদ্ভাবনে যদি অশালীনতা না থাকে, তাহলে তা এখন সংযুক্ত হল কাদের ব্যররথতায়? এবং সে ব্যররথতার কারণ কী? রূপ কী? স্বীকার করছি, আমারও দায় আছে এতে। তাই চটবার কিছু নেই।
৪- টিপ পরানোর ইব্রাহিমীয় কাহিনি এখানে না জুড়লেই ভাল। এগুলো গ্রাম্য মোল্লা-মৌলবির ওয়াজের উপাদান। গ্রামেই রেখে দিন। ফেরেশতাদের খেলো করার মানে নেই।
৪-বিচারের শাসন, নৈতিকতার পরিবেশ অবশ্যই ধর্ষণ কমায়। উদাহরন-তো আমার লেখায় আছে।
৫- অবশ্যই আমি জাহাজ-ফেল করা। কিন্তু ফিরে সমাজে ঝনঝনানির সৃষ্টি করিনি। বন্দরে বসে অন্যদেরও চিহ্নিত করি, এবং তা নির্ভুল!
ধন্যবাদ আপনাকে
আপনি না বুঝেছেন ইসলাম আর না বুঝেছেন আধুনিকতা,প্রগতিশীলতা, বুঝেছেন হিন্দুত্ববাদ।
ইসলামের কিছু বেসিক কনসেপ্ট আছে, সেটার সাথে অন্য সাষ্কৃতি যতটুকু মিলে ইসলাম ততটুকু গ্রহন করতে বলে। বাংলা সাল কে তৈরী করেছে তাতে কিছু এসে যায় না। সেখানে কি ঘটছে এটাই ইসলামের মূল বিষয়। বাংলা সাল নিয়ে ইসলামের মাথা ব্যাথা নেই,ভাষা নিয়েও নয়। ১লা তারিখে বা বৈশাখে যে হালখাতার প্রচলন হয় তা নিয়েও সমস্যা নেই। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে বাংগালীপনার নামে নারী পুরুষের যে অবাধ বিচরণ শুরু হয়েছে সেটা নিয়েই ইসলামের বিরোদীতা স্বাভাবিক। আর ইসলাম শরীর ও চোখের পর্দা করতে বলে এবং গুপ্তাঙ্গকে হেফাজত করতে বলে। এর ফলে সমাজ হয় নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ধর্ষন বন্ধ হয়, বরং তা একেবারেই কমে যায়। রসূলের(সাঃ) সময়ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে,ধর্ষককে মৃত্যুদন্ডও দেওয়া হয়েছে। এখনকার দিনে এসে ধর্ষন ডালভাত হয়ে গেছে।
ইসলাম যা বলে তাই সত্য,সঠিক এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। কারন তা এসেছে সব কিছুর স্রষ্টা আল্লাহর কাছ থেকে। স্রষ্টার বিধানই সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষ অনুমানের উপর নির্ভর করে যে বিধান তৈরী করেছে,তাতে ভুলের পরিমানই বেশী এবং তা কল্যানকর নয়
২- ইসলাম নিয়ে বা শরিয়ত নিয়ে প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হল কাঠমোল্লাদের চিন্তা চেতনা ও আচরণ নিয়ে। সম্ভব হলে লেখাটি আবার পড়ুন, আরো ভাবুন।
"গুণীদের উচিত হবে, নেতিবাচক তড়িৎ কোনো মন্তব্য না করে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু মাত্র এভাবেই সাধারণ মানুষকে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে। নিজ বিদ্যা-বুদ্ধি ও চরিত্র দিয়ে কাউকে আকর্ষণ করতে না পারলে শুষ্ক নীতিবাক্য কোনো কাজে আসে না।"
না, এ সব বিষয় নিয়ে আমার কখনোই রাগ হয় না। তবুও আপনি যে উদারতার পরিচয় দিলেন, তাতে আমি মুগ্ধ। আল্লাহ তায়ালা আমার-আপনার সহায় হোন। আমিন।
নিজে নাস্তিক হয়ে সব ধর্মকে সমান চোখে দেখে নিজেকে বেশ নিরপেক্ষ ও বিজ্ঞ মনে করেন এই লোক।
আপনার লিখা দেখে স্পষ্ট আপনার বিষয়ের পরিধি কলকাতার আঙিনা পর্যন্ত।
বাংলার কোন হাজি কি ফতোয়া দিল কিংবা বাংলা বর্ষ কে আবিস্কার করল তার সাথে ইসলামের সার্বজনিনতার সম্পর্ক করলে বুঝাই যাচ্ছে চিন্তার পরিধি।
উপদেশ থাকলে সামর্থ্য থাকলে কয়েকটি ভিন্ন কালচার/দেশ ঘুরে আসুন, ইসলামকে আরো জানুন।
২- ইসলামের সার্বিজনীনতা সম্পর্কে আরো পড়ুন, আরো ভাবুন ছোট-খাটো বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত লাফালাফির প্রবণতা ও পরিণতি! চোখ বন্ধ করে নয়। 'এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা।'
ইসলামের উদার আঙিনায় আপনাকে স্বাগতম!
আমি তার এক পুলকিত পরিব্রাজক।
যতনা পুলকিত 'নিজে' পরিব্রাজক হয়ে, তার চেয়েও অধিক এর বিস্তৃতি ভেবে।
আমি স্বাগতম বলবনা, বলার আমি কেউ নই। কিন্তু পথের সহযাত্রী ভেবে বলতে পারি সালাম।
Let's explore This vast universe is really exciting
কবির কথায় বলতে হয়, 'নানান বরণ গাভীরে ভাই, একই বরণ দুধ!' আপনি শব্দের বাঁধনে পড়ে থেকে তৃপ্ত হলে আমার আপত্তি নেই। শব্দের বাঁধন আমায় টানে না। ইসলামি উদারতার পরিব্রাজক হিসাবে আপনাকে অভিনন্দন!
যাক তবুও দুইটি কথা বলিঃ
১। সম্রাট আকবর মুসলমান ছিলেন না। না না চিতপটাং হয়ে যাবেন না কিন্তূ একটু ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করুণ, পেয়ে যাবেন।
২। উইকিপিডিয়াতে গিয়ে একটু দেখে আসুন বাংলা নববর্ষের ইতিহাস।
The History Of Bangla New Year ( Pôhela Bôishakh.):
The origin of Bônggabdô or Bengali Year (Bangla Year) is debated, with primarily two hypotheses. The development of the Bengali calendar is often attributed to King of Gour, Shashanka as the starting date (12 or 14 April 594 CE) falls squarely within his reign The solar calendar is based on the Surya Siddhanta, a Sanskrit astronomical text.[
Another theory is that the calendar was developed by Alauddin Husain Shah (reign 1494–1519), a Hussain Shahi sultan of Bengal by combining the lunar Islamic calendar (Hijri) with the solar calendar, prevalent in Bengal.
All theories agree that the Mughal Emperor, Akbar (reign 1556 – 1605) was instrumental in "promulgating" the Bengali calendar. Akbar modified, developed and re introduced the Bengali Calendar in order to make tax collection easier in Bengal. The calendar was then called as Tarikh-e-Elahi (তারিখ-ই ইলাহি).
জানি এর উত্তর আপনি দেবেন না,কারণ আপনারা প্রশ্ন করতে ভালবাসেন উত্তর দিতে নয়।
২- আত্মবিশ্বাস যখন হ্রাস পায়, জ্ঞানের পরিধি যখন ক্রমান্বয়ে সীমিত হতে থাকে, অন্যের প্রতি আস্থা কমে যায়। আপনজন্দেরও আপন মনে হয় না। যেমন একদল মওদুদিকে, আরেক দল আলা হজরত বেরেলবিকে, অপর দল মাদানিকে আপন মনে করে না। অ-মুসলিম বা অমুসলিমদের দালাল মনে করে। সুতরাং সম্রাট আকবরকে যদি আপনার ভিন্ন কাতারের মনে হয়, আমি অবাক হব না।
৩- বাংলা সনের উৎপত্তি নিয়ে একাধিক বক্তব্য থাকলেও এখানে মুসলমানদের যে অবদান আছে, তা যদি আপনার কাছে গুরুত্ব বহন না করে, আমার কি করার আছে? আপনি শাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। আর অ-মুসলিমরা একে উপলক্ষ করে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক। আপনাকে ধন্যবাদ।
অতঃপর আপনি যে তিন গ্রুপের কথা বলেছেন, তাদের কাউকে আমি অমুসলিম মনে করিনা। এমন কি এই সব ছোট খাট বিষয়ে তর্ক করা ও পছন্দ করিনা । আমি ফলো করি কুরআন - হাদিস কি বলে ।
বাবর, হুমায়ন ছিলেন অনেক বড় মাপের মুসলিম কিন্তু আকবর ?? আমির যুক্তিতে আমি তাকে গ্রেট ও বলিনা মুসলিমও বলিনা। সম্রাট বাবর অনেক দিক দিয়ে গ্রেট হওয়ার পরও আমাদের সমাজ আমাদেরকে, আকবর কে গ্রেট বলতে শিখিয়েছে !!
আমি বাঙ্গালী উৎসবের বিরোধী নয় !! কিন্তূ
আকবরকে নিয়ে নানা কটূক্তি অনেক শুনেছি। বোধহয়, গত বছর আকবরকে অসিয়ত করে লেখা তার পিতার চিঠিটি চোখে পড়ে, তাও আবার মাওলানা মাদানির মতো কট্টর মানুষের জবানিতে। একই সঙ্গে সে সময়কার মোল্লা-মৌলবির বাড়াবাড়ির বিষয়গুলোও। তখনই মনে হতে থাকে, কৃষ্ণপক্ষ চাঁদের অন্ধকারই শেষ কথা নয়; অপর দিকে আলো আছে। কিন্তু তা আমাদের চোখের বাইরে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আর মহা মান্য আকবরের হিন্দু স্ত্রীদের সম্পর্কে যদি একটু জানান তাহলে এই অধম কিছুটা উপকৃত হত। কারণ একজন মুসলমানকে কাফের বলা অনেক বড় গুনাহ। প্লীজ আমাকে একটি গুনাহ থেকে বাঁচান । ধন্যবাদ ।
২- আর কাফের বলার, অন্যকে খারিজ করার প্রবণতা ইসলামের ইতিহাসে অনেক পুরনো। এই ছোট্ট ভারতে বেরেলিরা দেওবন্দি-সালাফিদের কাফের বলে! সালাফিরাও অ-সালাফিদের কাফির-মুশরিক বলে? এমন-কি সুন্নি ঘরানার এক মাজহাবের লোকেরা এক সময় অন্য মাজহাবের লোকদেরকে ইসলামি গণ্ডির বাইরের হিসাবে বিবেচনা করত। সুতরাং চোখে ধাঁধা লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ভাইজান, সময় বেশি নিলাম। ক্ষমা চাই, দোয়া চাই। আমিন।
বৈশাখে চরক নিয়া লাফালাফির কি আছে এইটা কি চরকের বৈশাখ ?
বাঙ্গালীর উত্সব করুক বাঙ্গালী আপত্তি নাই কিন্তু ইলিশ পান্তা ভাতের সংস্কৃতি কোথা থেইকা আসল ?
২- ইলিশ-পান্তার প্রতি আপনার এতো বিরাগ কেন ভাইজান? আপনি এখানে বিরানির আয়োজন করুন। মৌ মৌ গন্ধে উৎসব মাত হয়ে যাবে। চড়ক না এনে গরুর বা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আসুন। তবু আপনার অংশগ্রহণ থাকুক। অন্ধকার লাঠি দিয়ে তাড়ানো যায় না। আলো জ্বালতে হয়। সে আলোকবর্তিকা থাকবে আপনাদের হাতেই। আমিন।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন