পহেলা বৈশাখের তীব্র ঝাপটা, একটি অভিনব অথচ যৌক্তিক প্রস্তাব!
লিখেছেন লিখেছেন রওশন জমির ১৮ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:১৬:৪৪ রাত
বৈশাখি উৎসবের আয়োজনে এবারে বস্ত্রহরণসহ যৌন-নিপীড়নের যে ঘটনা ঘটে গেল, তাকে নিন্দা জানানোর কোনো ইচ্ছে নেই, রুচিও নেই। শুধু একটি প্রস্তাব রেখে যাবো। দেশের রাজধানী এই ঢাকায়, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের পদপ্রান্তে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার চোখের সামনে, ভ্রাম্যমান টহল পুলিশ ও উৎসবোচ্ছল অসংখ্য মানুষের ভিড়ের মাঝে তা ঘটে গেল। বস্ত্রহরণ বা জনপথের যৌন-নিপীড়ন এমন এক স্পর্শকাতর বিষয়, যার বিষয়ে ভিকটিম কোনো দিন বিচারের আবেদন নিয়ে দাঁড়াবে না। অন্য কেউ দাঁড়াতে গেলে তাকে সহায়তা করা হবে না। কারণ, সমাজ একে গোপনীয় হিসাবেই দেখে। বরং ভিকটিম ও তার পরিবারের শান্ত¦না: যাক বাবা, শুধু কাপড় টানাটানিই হল, অন্য কিছু নয়!
এনিয়ে অন্তর্জালে বিষ ঢালা হয়েছে সামান্য। যার প্রভাবে বাস্তবে কিছুই হবে না, লোক-দেখানো তদন্ত-টদন্ত, বক্তৃতা-বিবৃতি ও কলাম-টলামের সয়লাব বয়ে যাবে মাত্র। যারা একটু মৌলবাদী কিসিমের, তারা এতে নিজেদের পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাবে। এদের কেউ কেউ তুড়ি মেরে কথা বলতে উৎসাহী হবে। যারা সরকার-বিরোধী, তারা এতে আমোদ পাবে বেশ। এ-সব ঘটনায় সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। তাদের জন্য এ-ও এক মস্ত পাওনা! সরকার এনিয়ে আগে বাড়বে না কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে, এই ভয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর যে বক্তব্য দিলেন, তাতে বোঝা যায়, ঠাকুর-ঘরের কলা কেউ খায় নি! নারী-অধিকার সংগঠনগুলোও গলা তুলবে না, ভাসুরের নাম নিতে নেই বলে! তাহলে?
না, তাই বলে পহেলা বৈশাখ-পালন বন্ধ হয়ে যাবে না। যা উৎসবের রূপ ধারন করেছে, যাতে জোয়ারের হাওয়া লেগেছে ভীষণভাবে, তাতে আর ভাটা পড়বে না। তবে যারা নিপীড়নের শিকার, তারা হয়ত আর বের হবে না। কিন্তু সারা বাংলাদেশে বা পুরো ঢাকায় তো এ কয়জন তরুণী/নারীই বসবাস করে না। সুতরাং আগামী উৎসবেও তরুণী/নারীরা সেজেগুজে বের হবে। আর হ্যাঁ, আবারও এমন বিদঘুটে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। দেখেও না দেখার ভাণ করবে সবাই। কারণ, উপস্থিত কতিপয় সাহসী তরুণ যে-কয়জনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল অভিযুক্ত হিসাবে, তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে, ক্লোস-সার্কিট ক্যামেরার রেকর্ড যাচাই করে অপরাধীদের চিহ্নিত ও বিচার করার যে দায়িত্ব ছিল, তা হয় নি, কষ্মিনকালেও হবে না। এজন্যই ভবিষ্যতে আরো বড় রকমের ঘটনা ঘটতে থাকবে। কারণ, বিচারের বাণী তো সবসময়ই নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। এবারে এর অন্যথা হতে যাবে কেন?
তিন তিনটি মাস অবরুদ্ধ থাকার পর বৈশাখকে উপলক্ষ করে মানুষ যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিল, তা বাধাগ্রস্থ হল বিকৃত মানসিকতার অধিকারী কতিপয় ধর্ষকামী হায়েনার কারণে। একই দিনে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এক তরুণের বাম হাত বাঘিনীর থাবায় ছিন্ন হয়ে যায়। সেখানে তরুণ নিজেই সীমানা অতিক্রম করে বাঘ-বাঘিনীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে এক ধরনের মজা (?) নিতেছিল। এখানে কোনো নারী/তরুণী কোনো পশুকে উত্যক্ত করে নি। তারপরও এ-সব নারী-শিশু ঊত্যক্ত, নিপীড়িত, সম্ভ্রম-ছিন্ন হল মানুষরূপী পশু-কর্তৃক। সাফারি পার্কের বাঘিনী আর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিচরণরত সেই সব কামোন্মাদী তরুণদের মাঝে পার্থক্য আছে কি কোনো? আকৃতিগত থাকলেও, স্বভাবগত নেই। পার্থক্য একটা আছে, তবে অন্যদিকে। বাঘের থাবায় পড়েও ছেলেটি মুখ লুকাবে না। কিন্তু মানুষরূপী হায়েনাদের থাবায় পড়া নারী কোনোদিন মুখ খুলবে না!
ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় হল বটে। কিন্তু যাকে বলে অ-সামাজিক তথা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, তা চেপে গেল কী নিদারুণভাবে, তা ভাবলে সত্যপ্রকাশে উন্মুখ (?) সেই নীতিবাগীশদের মুখে দলাপাকানো থুথু দিতে ইচ্ছে করে। জানি, এরপর ওরাই আবার চড়া গলায় কথা বলবে! কলামে কলামে ভরিয়ে দেবে পত্রিকার পাতা। শুরু হয়ে গেছে অবশ্য। এভাবেই সামাজিক মাধ্যমে যারা এনিয়ে সোচ্চার হলেন, তাদের ঢেকে দেওয়ার নানা পাঁয়তারা হবে।
পুনশ্চ: এই দেশে বাঙালিদের মতো করে পাহাড়িরা প্রতি বছর বিজু, বৈসাবি ইত্যাদি নানা রকমের উৎসব পালন করে থাকে। এদের এমন সুবৃহৎ ও জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান রাজধানীতে হয় না। বড় কোনো বিদ্যাপীঠের আশ্রয়ও থাকে না। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা এবং সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু তাদের সেই উৎসবে কেউ যৌন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে, এমন শোনা যায় নি।
প্রস্তাব: যারা মানুষদের কামড়ে দেয়, হামলে পড়ে কাপড় খুলে নিতে চায় সামান্য সুযোগ পেলেই, তাদেরকে মানব-সমাজের কোনো পর্যায়ে না রেখে, খাঁচায় বা সুনির্দিষ্ট বেষ্টনীর মাঝেই রাখা হোক। নতুন কোনো জায়গায় বা পুরাতন কোনো পার্কে নয়। বিশাল ভূমিতে গড়ে-তোলা অসাধারণ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেই রাখা হোক! সেখানে বিস্তর জায়গা আছে। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করেও হিং¯্র কোনো প্রাণীর খাঁচাতেই রাখা যেতে পারে। স্বভাবে এরা হিং¯্র প্রাণীর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। আর না হয়, এদের জন্য ভিন্ন বেষ্টনীর, ভিন্ন খাঁচা তৈরি করা যেতে পারে। এ হবে এক নতুন সংযোজন। এ-সব দু-পেয়ে হিং¯্রদের উপস্থিতিতে সাফারি পার্কের শোভা বর্ধন হবে নিশ্চয়। আমিন।
বিষয়: রাজনীতি
১৩২১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আগাইয়া চলো.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন